Sonali Basu

Classics

3  

Sonali Basu

Classics

ফিরে পাওয়া বন্ধুত্ব

ফিরে পাওয়া বন্ধুত্ব

3 mins
570


প্রতিদিনের মতো আজও ছাত্র পড়ানো থেকে অবসর পেতে সায়ন্তন কলেজ থেকে বেরিয়ে পড়লো। মাঝেমাঝেই ও করে এটা, তবে গেটের বাইরে অব্দিই। গেটের থেকে ঠিক দু কদম ডাইনে গেলে হরির চা চপ সিগারেটের দোকান। ওখানে দাঁড়িয়ে কখনো সিগারেটে সুখটান দেয় আবার কখনো খিদে বা তেষ্টা পেলে হরির থেকে এক কাপ চা বা চপ নিয়ে থাকে। তারপর সেগুলো গলধঃকরণ করে আবার স্টাফরুমে ফেরে পরের ক্লাসের জন্য। আজ অবশ্য সেরকম ব্যাপার নেই। ওর সব ক্লাস শেষ হয়ে গেছে আজকের মতো তাই বেরিয়ে এলো কলেজ থেকে। তারপর বাসস্টপে দাঁড়ানোর বদলে হাঁটতে শুরু করলো বাঁদিকের রাস্তা ধরে। খানিকটা এগিয়ে যেতে বেশ ঘন গাছপালা কিছুটা এলাকা জুড়ে তারপর প্রথম সারির কোয়ার্টার শুরু। এক বেসরকারি লোহা কারখানার কোয়ার্টার এগুলো। কারখানা যতদিন রমরম করে চলেছে ততদিন এইসব কোয়ার্টারগুলোও আলো ঝলমলে ছিল বাসিন্দাদের হাসিকান্না কথাবার্তায় গমগম করতো। তারপর একসময় কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে কোয়ার্টারগুলোও তাদের ঝকমকে ভাব হারিয়ে ফেলল। বাসিন্দারাও কেউ কেউ চলে গেলো কোয়ার্টার ছেড়ে। কারণ বাসিন্দাদের যে সব সুযোগ সুবিধা দেওয়া হত কোয়ার্টারে সেগুলো আস্তে আস্তে বন্ধ করে দেওয়া হল। যাদের সুযোগ ছিল বা অন্য কোথাও কাজ জুটিয়ে নিতে পারলো তারা চলে যেতে থাকলো। তার মধ্যে সায়ন্তনের বাবাও ছিলেন। কলকাতা শহরে গিয়ে বাকি পড়াশোনাটা শেষ করেছে ও আর ওর দিদি সায়নী। পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর দিদির বিয়ে হয়ে গেলো।

সায়ন্তন নানা জায়গায় চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার সাথেসাথে কলেজে পড়ানোর পরীক্ষা দিলো। পরীক্ষা সবকটা ভালোই দিয়েছিল। এরপর অপেক্ষার পালা। কলেজে পড়ানোর ডাক এলো আগে। মৌখিক পরীক্ষা খুব ভালো হতে ওকে জিজ্ঞেস করা হল ওর পছন্দের কলেজ। যেখানে থাকতো সেখানকার কলেজের জন্য এ্যাপ্লাই করলো। কপাল ভালো পেয়েও গেলো।

হাঁটতে হাঁটতে কখন যে ওরা যে কোয়ার্টারে থাকতো সেখানে এসে দাঁড়িয়েছে সায়ন্তন তা খেয়াল করেনি। করলো একজনের ডাকে। “ও দাদা, এখানে দাঁড়িয়ে যে, কাউকে খুঁজচ্ছেন?”

সায়ন্তনের চমক ভাঙতে তাকালো বক্তার দিকে। যাকে দেখলো তাকে পরনে খুব সাদামাটা জামাকাপড়, চুলও পরিপাটী করে আঁচড়ানো নয়। কিন্তু চেহারাটা বেশ চেনাচেনা মনে হল ওর। কিন্তু বুঝতে পারলো না কোথায় দেখেছে! মুখে বলল “না কারো খোঁজ করছি না। আসলে আমরা বহু বছর আগে এই কোয়ার্টারে থাকতাম তো তাই দেখছি দাঁড়িয়ে” তারপর কি মনে হতে ও জিজ্ঞেস করলো “আচ্ছা আপনি কি এখানেই থাকেন?”

“হ্যাঁ”

“আপনি কি পলাশকে চেনেন, পলাশ ঘোষ, বাবা রাধারমণ ঘোষ?”

নামটা শুনে লোকটি বেশ খানিকক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর বলল “চিনি, আমিই পলাশ কিন্তু আপনাকে তো চিনলাম না”

“তুই পলাশ…” উচ্ছসিত সায়ন্তন বলল “আরে আমি সায়ন্তন রায়, এখানকার রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠে পড়তাম। তোর ক্লাসে তোরই সেকশনে। মনে নেই সেবার ক্লাস নাইনে ইন্টার ক্লাস ফুটবল ম্যাচে তুই দুটো গোল দিয়েছিলি ক্লাস টেনকে। আমি তোকে এর কারণে রসগোল্লা খাইয়েছিলাম”

খানিক চুপ করে তাকিয়ে থেকে পলাশ বলল “হ্যাঁ চিনেছি”

“চিনেছিস… যাক আমি নিশ্চিন্ত হলাম”

পলাশ বলল “চিনেছি আমি আগেই। তুই এই কলেজে জয়েন করার পরই তোকে আমি দেখেছি। কলেজের কাছে যে ছোট মার্কেট সেখানে আমি সব্জি বিক্রি করি। তোকে দেখার পর চেনাচেনা লাগাতে আমি খোঁজ নিই। তারপরেই জানতে পারি তুই আবার এখানে”

সায়ন্তন অবাক হয়ে বলে “তুই চেনার পরেও আমার সাথে যোগাযোগ করিসনি, আর আমি এখানে আসার পর থেকে তোর কত খোঁজ করেছি। তুই কি ভুলে গেলি আমাদের বন্ধুত্বের কথা? ছোটবেলায় তুই আমার প্রিয় বন্ধু ছিলি”

“এখনো আছি রে তবে তুই এতো বড় হয়ে যাওয়ার পরও আমাকে মনে রাখবি এটাই ভাবতে পারিনি তাই …”

সায়ন্তন বলল “বন্ধুত্ব কি টাকাপয়সা বড়লোক গরীবের ওপর নির্ভর করে? না করে না! আয় কোলাকুলি করি”

পলাশের চোখে জল চলে এসেছিলো, কোনমতে মুখে হাসি টেনে ও সায়ন্তনের আলিঙ্গনে ধরা দিলো।     


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics