ফেলুদা বনাম জটাদা: প্রথম পর্ব
ফেলুদা বনাম জটাদা: প্রথম পর্ব


ফেলুদা বনাম জটাদা: পর্ব ১
"তখন সুপ্রিম কোর্ট ছিলো এই কলকাতায়, ফোর্ট উইলিয়ামে। সেখানে যিনি প্রধান বিচারপতি ছিলেন, স্যার এলিজা বারওয়েল ইম্পে, তার হরিণ পোষার শখ ছিলো খুব। তারই উদ্যোগে তার বাসভবনের কাছে হরিণ রাখার জন্য একটা বনভূমি তৈরী করা হয়। হরিণ রাখা হতো বলে সেই জায়গার নাম হয়েছিলো ডিয়ার পার্ক। আর তাই থেকে এই রাস্তার নাম হলো পার্কস্ট্রিট।"
পার্কস্ট্রিট মেট্রো থেকে নেমে একটু হেঁটে আমরা রাসেল স্ট্রিট ধরে এগোচ্ছিলাম। সবে সবে বড়দিন পার হয়েছে কালকে। এখনো এখানের প্রত্যেকটা রাস্তা রংবেরঙের সব বেলুন আর ক্রিসমাস-ট্রিতে সাজানো। গাড়ি ঢুকতে দিচ্ছে না। বেজায় ভিড়। এবছর শীতটাও জব্বর পড়েছে। সেই শীতের আমেজ গায়ে মেখে উৎসবের আনন্দে লোকজন নেমে পড়েছে রাস্তায়।
আমরা যাবো তেইশের-দুই মিডলটন রো-তে একটা ফ্ল্যাটে। জটাদার পরিচিত। আমি ঠিক চিনি না। শুনলাম কোনো এক অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান ফ্যামিলি। কিছু একটা খুনের ব্যাপার ঘটেছে। ডিটেলস জানি না এখনো আমরা। সন্ধ্যেবেলা একটা ফোন পেয়েই জটাদা বেরিয়ে পড়লো আমাকে নিয়ে। পথিমধ্যে এই পুরোনো কলকাতার গল্প বলছিলো।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, "সেই হরিণ এর পার্ক এখন আর নেই ?"
"না," জটাদা বললো, "সে তো প্রায় আড়াইশো বছর আগের কথা। আমরা যেখানে যাচ্ছি, মিডলটন রো, সেইখানেই ছিলো স্যার এলিজা ইম্পের বাসভবন। এই এলিজা ইম্পে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি থাকাকালীন তাঁরই নির্দেশে মহারাজা নন্দকুমারের ফাঁসি হয়। পরে তাই নিয়ে অনেক জলঘোলা হয় এবং এলিজা ইম্পেকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়। হরিণগুলোকে তখন শিকার করে ফেলা হয়, কিছু কিছু হয়তো পালিয়ে যায়। এইখানে প্রচুর কবরস্থান তৈরী হয় তারপর। আস্তে আস্তে গাছপালা কেটে ফেলা হতে থাকে। শেষপর্যন্ত সেই পার্কের আর অস্তিত্বই রইলো না।"
"মহারাজা নন্দকুমারের কথা আমি সম্ভবত পড়েছি। পলাশীর যুদ্ধের সময় উনি সেখানে যুক্ত ছিলেন কি ?"
"একদম কারেক্ট। উনি প্রথমে মুর্শিদাবাদ রাজবাড়ীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, পরে ইংরেজদের সঙ্গে হাত মেলান। ইংরেজরা তাকে উঁচু পদে বসায়। কিন্তু নতুন পদে বসে তিনি ওয়ারেন হেস্টিংসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন। এই ওয়ারেন হেস্টিংস আবার ছিলেন বিচারপতি এলিজা ইম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সহপাঠী। অতএব দুয়ে দুয়ে চার হয় এবং বিচারে নন্দকুমারকেই উল্টে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। নন্দকুমারের বিরুদ্ধে সাক্ষী জোগাড় করা হয় এবং তার ফাঁসি হয়। তখনকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অনেক চেষ্টা করেও তার ফাঁসি আটকাতে পারেননি। পুরোনো কলকাতার এই এরিয়াগুলোতে ভালো করে দেখলে দেখবি, সেই সময়ের একটা ছাপ এখনো যেন চোখে পড়ে। চলে আয়, আমরা পৌঁছে গেছি।"
দুইদিকে দুটো উঁচু বিল্ডিংয়ের মাঝখানে ছোট্ট জমির উপর তিনতলা একটা ফ্ল্যাট। দেখলে বোঝা যায় বাড়িটার বেশ বয়স হয়েছে। জরাজীর্ণ হাল। সদর দরজা ভেজিয়েই রাখা ছিলো। আমরা সিঁড়ি বেয়ে সোজা দোতলায় উঠে এলাম। জটাদা কলিং বেল টিপলো। নেমপ্লেটে দেখলাম লেখা আছে, স্যামুয়েল জন ডিসুজা।
বেলের আওয়াজ শুনে যিনি আমাদের দরজা খুলে দিলেন, তিনিই সম্ভবত মিস্টার ডিসুজা। বেশ লম্বা হাইট, পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়স। নীল রঙের একটা স্যুট পরে আছেন। দরজা খুলে তিনি আমাকে চিনতে না পারলেও জটাদাকে দেখে হাত মেলালেন, "আসুন মিস্টার মিত্র।"
ঘরে ঢুকে বোঝা গেলো এখানে একটা শোকের আবহ চলছে। সামনের ঘরেই একটা সোফায় বসলাম আমরা। মিস্টার ডিসুজা আলাপ করিয়ে দিলেন ঘরের বাকিদের সাথে। মিসেস ডিসুজা ছিলেন সেখানে, ঘরোয়া চুড়িদারে কিচেনের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এক যুবক বসে ছিলো আমাদের উল্টোদিকে, একটু চাপা গায়ের রঙ। জটাদা হাত বাড়াতে সেও করমর্দন করে বললো, "নাইস টু মিট ইউ।"
"এর নাম অ্যালিস্টার।" ডিসুজা সাহেব পরিচয় করালেন। "আমার মেয়ের সাথে এনগেজমেন্ট হয়েছে গত মাসে, হি ইজ কাইন্ড অফ আ মেম্বার অফ দিস ফ্যামিলি নাউ।"
"আচ্ছা, বসুন মিস্টার ডিসুজা।" জটাদা নিজেও সোফায় বসতে বসতে আমাকে দেখিয়ে বললো, "এ আমার দূর সম্পর্কের এক ভাই, ঋভু। আমার সবসময়ের সঙ্গীও বলতে পারেন।"
আমি একটু ঝুঁকে ওনাদের সাথে করমর্দন করলাম। তারপর জটাদার পাশে বসে পড়লাম। জটাদা মিস্টার ডিসুজার উদ্দেশ্যে বললো, "ফোনে আপনি কিছু একটা খুনের কথা বলছিলেন -"।
"হ্যাঁ।" ডিসুজা সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, "ভেরি স্যাড ইনসিডেন্ট। এই বাড়ির একতলায় একটি ফ্যামিলি থাকে। তাদের ১০ বছরের একটা মেয়ে কাল আমাদের এখানে মারা গেছে। ইফ দ্য রিপোর্ট ইজ টু বি বিলিভ্ড, ইট ইজ আ কেস অফ পয়জনিং। বিষক্রিয়ায় মৃত্যু।"
আমি আমার ডায়েরিটা খুলে নোট নিতে শুরু করলাম। ডিসুজা সাহেব সেইদিকে একবার দেখে নিয়ে পুরো ঘটনাটা যেভাবে বর্ণনা করলেন, আমি সংক্ষেপে সেটা লিখছি।
মিস্টার ও মিসেস ডিসুজার একটিই মাত্র কন্যা, নাম মারিয়া। গতকাল ছিলো ২৫ শে ডিসেম্বর, এবং মারিয়ার জন্মদিন। সেই উপলক্ষ্যে একটা ঘরোয়া পার্টির আয়োজন করা হয়েছিলো। সামান্য কিছু লোকজন এসেছিলো। মারিয়ার দু-তিনজন বন্ধু আর মিস্টার ডিসুজার এক পারিবারিক বন্ধু। পার্টির মুডেই ছিলো সবাই। নাচ-গান চলছিলো। রাত্রি সাড়ে আটটা নাগাদ জন্মদিনের কেকটা কাটা হয়। তার একটু পরেই হঠাৎ নিচের ফ্ল্যাটের বাচ্চা মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পরে। মাটিতে শুয়ে পরে সে। তাকে ধরাধরি করে তুলে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারকেও ডাকা হয়। আধঘন্টার মধ্যে ডাক্তার চলে আসেন। মেয়েটির আর কোনো হুঁশ ছিলো না। ডাক্তার এসে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তারপর পুলিশ আসে।
"বিষক্রিয়ায় ব্যাপারটা কখন জানা যায় ?" জটাদা জিজ্ঞাসা করলো।
"আজ বিকেলের দিকে।" মিস্টার ডিসুজা বললেন, "অফিসিয়াল পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট এখনো আসেনি, কিন্তু বিকেলে পুলিশ এসে সবকিছুর স্যাম্পেল নিয়ে গেলো ফরেনসিকের জন্য। ওরাই বলাবলি করছিলো যে পোস্ট মর্টেমে নাকি বিষ পাওয়া গেছে শরীরে। আমি তারপর অনেক ভাবনা-চিন্তা করে আপনাকে ফোন করলাম।"
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে জটাদা বললো, 'আপনি কি এই ভয় পাচ্ছেন যে পুলিশ হয়তো আপনাদেরকে হ্যারাস করতে পারে, যেহেতু মেয়েটি আপনাদের বাড়িতেই কিছু খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো। আর তাই আপনি আমাকে -।"
মিসেস ডিসুজা এসে এই সময় আমাদের সবার জন্য চা দিয়ে গেলেন। চায়ের কাপ হাতে তুলে নিয়ে মিস্টার ডিসুজা বললেন, "না মিস্টার মিত্র। আমি আপনাকে সেই জন্য ডাকিনি। ইট ইজ নো ডাউট আ স্যাড ইনসিডেন্ট। পুলিশ সেটার তদন্ত করছে করুক। কিন্তু আমার ধারণা এই খুনটা ভুল করে হয়েছে।"
জটাদা ভুরু কুঁচকে শুনছিলো। কিছু বললো না। মিস্টার ডিসুজা নিজেই আবার বলতে শুরু করলেন, "ভেবে দেখুন, একটা দশ বছরের বাচ্চা মেয়েকে কেউ কেন মারতে চাইবে ? কী লাভ ? হয়তো খুনটা অন্য কাউকে করাটা উদ্দেশ্য ছিলো। বাচ্চা মেয়েটা ভুল করে তার শিকার হয়েছে।"
"আপনার কি মনে হয় খুনটা আপনাকেই করতে চেয়েছিলো কেউ ?" জটাদা এতক্ষণে জিজ্ঞাসা করলো।
"পসিবল।" মিস্টার ডিসুজা চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন, "আপনি তো জানেন আমাদের পৈতৃক বাড়ি বিডন স্ট্রিটে। ওখানে আমাদের বাড়ি ও আশেপাশের বেশ কয়েকটা পুরোনো বাড়ি ভেঙে একটা শপিং মল উঠছে। তাই এখানে আমরা শিফট করেছি কয়েক বছরের জন্য। শপিং মল তৈরী হলে ওখানে আমরা একটা ছোট দোকান পাবো, ১৮০ স্কোয়ার ফুটের। আর শপিং মলের পিছনে রেসিডেন্সিয়াল ফ্ল্যাট তৈরী হবে, সেখানেও দুটো ফ্ল্যাট আমরা পাবো। প্রোমোটারের সাথে এইরকম চুক্তি হয়ে আছে। কিন্তু ওখানকার বাজারে আগুন লাগার পর থেকে সেসব কাজ বন্ধ হয়ে গিয়ে এখন ওমনিই পড়ে আছে। কবে যে আবার কাজ শুরু হবে, কবে আদালতের ছাড়পত্র পাওয়া যাবে, কেউ জানে না। প্রোমোটারকে আমাদের পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দেওয়া আছে। এখন আমার অবর্তমানে আমাদের জায়গাটার পুরো দখল প্রোমোটার নিতে পারবে। কে জানতো যে আগুন লেগে পুরো জিনিষটা এইভাবে পিছিয়ে যাবে। এই প্রোমোটার ভদ্রলোক আমাদের এলাকায় বেশ পরিচিত। অত্যন্ত খারাপ লোক, রাজনৈতিক মহলে বিশাল হাত আছে। তাকে আমার একটুও বিশ্বাস হয় না। সেইজন্য চিন্তা হচ্ছে যে এই খুনটা আসলে অন্য কিছুর কভার-আপ নয় তো ?"
"আপনারা এই বাড়িতে আছেন কতোদিন হলো ?"
'এই তো, গত বছর জুলাই মাসে আমরা আসি এখানে। দেড় বছর হলো ধরুন।"
জটাদা একটু ভেবে নিয়ে বললো, "কালকের পার্টিটা কি এই ঘরেই হয়েছিলো ?"
অ্যালিস্টার উত্তর দিলো, "হ্যাঁ, এটাকেই আমরা সাজিয়ে নিয়েছিলাম। আর ডিনারের ব্যবস্থাটা ওই ওই-দিকটায় ছিলো।" ডাইনিংয়ের একটা কর্নার দেখালো অ্যালিস্টার।
"ডিনার তখনো শুরু হয়নি বললেন, তাই তো ?"
"না, কেক কাটা হয়েছিলো সবে। কোল্ড ড্রিঙ্কস ছিলো। আর চিকেনের একটা স্টার্টার। ডিনার করেনি কেউ তখনো। ইন ফ্যাক্ট, ওই ঘটনার পর পুরো পরিবেশটাই পাল্টে যায়। গেষ্টরাও আস্তে আস্তে চলে যেতে থাকে। সমস্ত খাবারই শেষমেশ নষ্ট হয়। ডিনার করার মতো পরিস্থিতিই ছিলো না।"
"অর্থাৎ আপনার কথামতো ডিনার থেকে বিষক্রিয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই, তাই তো ?"
"সেরকমই তো মনে হয়।" ডিসুজা সাহেব উত্তর দিলেন, "এক ওই কেক। কিন্তু কেক তো আমরা সবাই খেয়েছি অল্পবিস্তর। কেউ তো অসুস্থ হইনি। আর চিকেন ললিপপ বা কোল্ড ড্রিঙ্কস ছিলো। সেও তো সবাই ভাগ করেই খাওয়া হয়েছে। মনে করুন যে বোতল থেকে কোল্ড ড্রিঙ্কস নেওয়া হয়েছে, সবই দু'লিটারের বোতল ছিলো। সেটা থেকে অন্যরাও খেয়েছে। সেখানে একজনেরই বিষক্রিয়া হলো, অন্যদের কিছু হলো না - এই ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত। পুলিশ অবশ্য আজ সব কিছুরই স্যাম্পেল নিয়ে গেছে। ফরেনসিক টেষ্টে ধরাই পড়বে যদি কিছু থেকেও থাকে।"
"আচ্ছা, কেকটা কোথা থেকে আনা হয়েছিলো ?"
অ্যালিস্টার বললো, "এই তো, কাছেরই একটা দোকান থেকে, আমিই অর্ডার দিয়েছিলাম। ২৫ শে ডিসেম্বরের সময়, বুঝতেই পারছেন কেকের কীরকম চাহিদা থাকে। তাই তিন-চারদিন আগে থেকেই অর্ডার দেওয়া ছিলো। সন্ধ্যে আটটার মধ্যে ডেলিভারি দেবার কথা। গাড়িঘোড়ার জন্য আসতে লেট হচ্ছিলো। আমি দু'বার দোকানে ফোনও করেছিলাম। ওরা বললো, বেরিয়ে গেছে কেক নিয়ে। সাড়ে আটটা নাগাদ এলো ফাইনালি।"
"আর বাকি খাবার-দাবার, যেমন চিকেন ললিপপ ?"
"চিকেন ললিপপ সামনেই মোড়ের একটা দোকান থেকে কিনে আনা হয়েছিলো। আর বাকি ডিনারের ব্যবস্থা বাড়িতেই হয়েছিলো।"
জটাদা চায়ের কাপ শেষ করে টেবিলের উপর নামিয়ে রেখে ডিসুজার উদ্দেশ্যে বললো, "আপনি অযথা ভয় পাবেন না। আমি দেখছি ব্যাপারটা। যদি এই ব্যাপারে আর কিছু আপনার বলার থাকে তাহলে আমাকে জানাতে পারেন।"
ডিসুজা সাহেব একটু কিন্তু-কিন্তু করে বললেন, "একটা ব্যাপার... এমন কিছু নয় অবশ্য... কিন্তু জিনিষটা মনের মধ্যে খচ করে আছে।"
"কী ব্যাপার ?"
"একটা সিগারেট কেস।"
"সিগারেট কেস ?" জটাদার সাথে সাথে আমিও উৎকর্ণ হলাম। ডিসুজা বলতে লাগলেন, "সিগারেট রাখার একটা কাঠের বাক্স। বহু পুরোনো, আমাদের বাড়িতে পৈতৃক আমল থেকেই ছিলো। জিনিষটা এমনি দামি কিছু না। কিন্তু আমার খুব প্রিয় ছিলো, জানেন। কালকের ঘটনার পর থেকে সেটা আর পাচ্ছি না। এই ঘরেই রাখা ছিলো, ওই ফ্রিজের মাথায়। রাত্রিবেলা দেখি আর নেই। তারপর ঘরে অনেক খোঁজাখুঁজি করা হলো, কোথায় গেলো কে জানে! কেউ নিয়ে গেলো কিনা -। কিন্তু সামান্য একটা কাঠের বাক্স, তাও পুরোনো, কে নেবে ? ব্যাপারটা সামান্যই, কিন্তু মনের মধ্যে খটকা বেঁধে আছে। আপনি বলতে বললেন, তো এইটার কথা মনে এলো।"
"কত বড়ো হবে বাক্সটা ? মানে, মাপটা।" জটাদা জানতে চাইলো।
"তা, ধরুন প্রায় তিন ইঞ্চি বাই পাঁচ ইঞ্চি হবে। ছোটই, খুব বড়ো কিছু নয়। দাঁড়ান, ছবি দেখাই।" এই বলে ডিসুজা সাহেব ভিতরের ঘরের উদ্দেশ্যে বললেন, "বেটা মারিয়া, ওই ছবিটা এদের একবার দেখাও তো, সিগারেট কেসের ছবিটা -।"
ঘরের দরজায় পর্দা টাঙানো ছিলো। বাইশ-তেইশ বছরের এক যুবতী ডিসুজা সাহেবের ডাকে বেরিয়ে এলো। বেশ ছিমছিমে সুন্দরীই বলা যায়। মেয়েটি সম্ভবত মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, কারণ তার হাতে ধরা মোবাইলের স্ক্রিন দেখলাম অন আছে।
"এই যে আমার মেয়ে, মারিয়া -।" ডিসুজা সাহেব আলাপ করিয়ে দিলেন, তারপর জটাদাকে দেখিয়ে মেয়েকে বললেন, "ইনিই মিস্টার মিত্র, তোমাকে বলেছিলাম না ? ওনাকে একবার তোমার মোবাইল থেকে আমার ওই সিগারেট কেসের ছবিটা দেখাও তো।"
মেয়েটি জটাদার উদ্দেশ্যে দু'হাত নমস্কার করে বললো, "আপনিই কি বিখ্যাত সেই ফেলুদার -।"
জটাদা উত্তরে হাত জড়ো করে বললো, "নমস্কার। আমার নাম প্রজ্জ্বল মিত্র। হ্যাঁ, প্রদোষ মিত্র আমারই বাবার নাম। উনি একটা কার অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছেন বেশ কিছু বছর হলো। আপনি ছবিটা বরং আমাকে হোয়াটসঅ্যাপ করে দিন।"
জটাদার কথা শেষ হতেই আমি হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারটা বলে দিলাম মেয়েটিকে। জটাদা ডিসুজাকে বললো, "কাল যারা যারা পার্টিতে ছিলেন, তাদের একটা লিষ্ট আমাকে পাঠিয়ে দেবেন প্লিজ।"
"শিওর। পুলিশও তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে শুনলাম।"
"ঠিক আছে, রুটিন কাজটা পুলিশ করুক। আমি দরকার হলে ওদের সাথে যোগাযোগ করে নেবো। আরেকটা কথা -নিচের যে পরিবারের মেয়েটি মারা গিয়েছে, তাদের সাথে একবার যদি -।"
"হ্যাঁ হ্যাঁ, নিশ্চয়ই, চলুন চলুন।" ডিসুজা সাহেব আগ্রহের সাথে আমাদেরকে নিচে নিয়ে গেলেন। তখনও আমরা জানি না যে কীসের খোঁজে নেমে কী খুঁজে পেতে চলেছি আমরা।
(এরপর আগামী সংখ্যায়)