Sagnik Bandyopadhyay

Classics

2  

Sagnik Bandyopadhyay

Classics

পাশ-ফেল

পাশ-ফেল

2 mins
855


শিক্ষা জীবনের সাথে পাশ-ফেল অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত একটি বিষয়। আর বর্তমানকালে পাশ ফেল এর উপরই পুরো শিক্ষাব্যবস্থাটি নির্ভরশীল। আমরা যেন কল দেয়া পুতুলের মতো হয়ে যাচ্ছি। বইয়ের পড়া মুখস্ত করছি আর পরীক্ষার খাতায় উগড়ে দিচ্ছি। আর বড়রা কোন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করলে আমাদের একটাই উত্তর,"কাকু ওটা তো আমাদের নোটে ছিলনা। তাই ওই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই।" যেন আমাদের লক্ষ্য শুধু পাশ করলেই জীবন ধন্য। পারমিতা খুব ভালো পড়াশোনায়। আমার সহপাঠী। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সব প্রশ্নের উত্তর সবার আগে বলে দেয়। কিন্তু আমাদের মতো পারমিতা নোট ভিত্তিক পড়াশোনা করে না। তাই ওর রেজাল্ট আমাদের থেকে একটু খারাপ হয়েছিল একবার। ওর মন খারাপ, কিন্তু ওর ভেতরে পড়াশুনা নিয়ে তীব্র আগ্রহ। পারমিতাকে রতন বলে,"আরে এত পড়াশুনা করিস না। আমাদের মতো নোটভিত্তিক পড়াশোনা কর, দেখবি পরের পরীক্ষায় পুরো ১০০ তে ১০০ পেয়ে পাশ করবি।" শুনে পারমিতা তৎক্ষণাৎ বলে উঠল,"আমি অত নম্বর চাই না, আমার কাছে পাস ফেলই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়। আমি চাই, যে বিষয় নিয়ে পড়ছি তার সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে। আর আমি যদি ফেলও করি তাহলেও নোট ভিত্তিক পড়াশোনা করব না।" শুনে আমার খুব ভাল লাগল। কিন্তু এখন শিক্ষাব্যবস্থার যা অবস্থা নোট ভিত্তিক পড়াশোনা না করলে বেশি নাম্বার পাওয়াই মুশকিল। আমরা স্কুলের গণ্ডি পেরিয়েছি। স্কুলে নাকি পাশ ফেল তুলে দিলে আমাদের শিক্ষার মান খুব ভালো হবে, এই ধরনের কথাবার্তাও সমাজে ঘুরপাক খাচ্ছে। একদিন দেখি আমারই পাশের পাড়ার ভাই সুমন স্কুলের সময় বন্ধুদের নিয়ে মাঠে খেলছে। তার মা ডাকছেন,"সুমন স্কুলে যা।" শুনে সুমন বলে ওঠে," আজ আমি স্কুল যাবো না মা।" তৎক্ষণাৎ আমি সুমনকে ডাকি," কেন স্কুল যাবিনা আজ?" বলে ওঠে,"দাদা স্কুলে গেলেও পাশ না গেলেও পাশ করব।" বলেই ও খেলতে চলে যায়। অবাক হয়ে ভাবতে লাগলাম এই শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য রবি ঠাকুর, বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ প্রমুখেরা সচেষ্ট হয়েছিলেন? একদিকে আমরা বাধ্য হয়ে নোটভিত্তিক পড়াশোনা করে প্রকৃত জ্ঞানার্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছি, অন্যদিকে রতনের মত ছেলেরা না পড়ে পাশ করার আশায় স্কুলেই যাচ্ছে না। হায়! একি আমাদের সমাজ?


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics