নলজাতক
নলজাতক
অষ্টম পর্ব
বদমাশ বাঁড়ুজ্যে শ্যামলকে যেমন যেমন নির্দেশ দেয় ; শ্যামল অনুরূপ কাজ সেরে রিপোর্ট করে । অনিরুদ্ধ কমিশনের টাকা দেয়নি । এতে আমার একটা আক্রোশ চেপে যায় ।
একদিন সশরীরে হাজির হই হিলটন রোডের বাড়িতে। সেদিন ছিল রবিবার । অফিস আদালতের ছুটির দিন ।
বাড়িতে পৌঁছে সঞ্চারীকে ফোন করি । জানতে পারি ওরা হিলটন রোডের বাড়িতে থাকে না । অন্যত্র বাসা নিয়েছে।
নিজেকে কেমন বোকা বোকা মনে হয় । শ্যামল সব খবর রাখে ; আর এই খবর পেল না কেন জানতে ইচ্ছে করে ।
ফোনে শ্যামলকে ধরতেই ও বলে সে এখন অনিরুদ্ধের বাড়িতে টাকা আদায়ের জন্য এসেছে ।
বলি - পেয়েছিস কি ?
- না দাদা, এখনও পাইনি । অনিরুদ্ধ এ টি এমে গেছে । বলেছে টাকা তুলে নিয়ে আসি ।
হো হো করে হাসলাম । বললাম - ব্যাটা তোকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছে ।
- কোথায় আর পালাবে দাদা ! আমি তো ওর বাড়িতেই ওর রুমে বসে আছি ।
বলি - ওরে পাগলা, চলে আয় । তোর বসে থাকাই সার হবে । আর ওকে পাবি না ।
- বল কি দাদা ? দু তিন লাখ টাকার জন্য বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাবে ?
- হ্যাঁ যাবে, বাড়ি কেন বডি ছেড়েও যেতে পারে।
কয়েক মুহুর্ত চুপ থেকে বললাম - দেখ তো ওই অ্যাপার্টমেন্টে আর কে কে থাকে ?
শ্যামল বলে - পতা লাগাচ্ছি দাদা ।
আমি বললাম - খুব সাবধানে খোঁজ নিবি । আমার মনে হয় ওই ফ্ল্যাটে বা পাশাপাশি অন্য কোন ফ্ল্যাটে সঞ্চারীরাও থাকতে পারে । যদি থাকে তবে অনিরুদ্ধ অবশ্যই ওখানে গা ঢাকা দিয়েছে ।
শ্যামল বলল - আচ্ছা দাদা, দেখছি ।
- আমাকে খবর দিস। মনে হচ্ছে আমাকেও যেতে হতে পারে।
- তুমি আসবে দাদা ? অতদূর থেকে কি করে আসবে ?
- সে আমি বুঝব । তুই তোর কাজ কর ।
চললাম গড়িয়াহাটের দিকে । সঞ্চারী বলেছিল আলাদা থাকে ঢাকুরিয়া ব্রীজের কাছে ।
আন্দাজ যে সঠিক হবে ওখানে পৌঁছেই বুঝে গেলাম ।
পাশাপাশি দুটো ফ্ল্যাট নিয়েছে ওরা । একটায় অনিরুদ্ধ অন্য ফ্ল্যাটে ভূপেশ ও সঞ্চারী ।
শ্যামল ঠিক খুঁজে বের করেছে ।
দরজায় আড়ি পেতে শুনছি শ্যামলের তর্জনগর্জন আর অনিরুদ্ধের চিৎকার । নেহাৎ ফ্ল্যাট বলে অন্যেরা ততটা গা করেনি । নইলে গ্রাম হলে ভিন গাঁ থেকেও লোক এসে জড়ো হয়ে যেত ।
জোরে ফ্ল্যাটের দরজায় ধাক্কা দিলাম ।
অনিরুদ্ধ হয়তো ভেবেছে প্রতিবেশীরা এসেছে। দরজা খুলতে যাচ্ছিল । শ্যামল ঝটকা মেরে হঠিয়ে দিয়ে বলল - কি ভাবছিস ? পাড়ার লোক এসে বাঁচাবে ? মাল ছাড় । আর দেখবি কে এসেছে ?
বলে দরজা খুলে দিতেই আমি হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লাম। ঢুকেই শ্যামলকে একটা নকল চড় মেরে বললাম - কি করছিস কি ? জানিস ও আমার বাল্যবন্ধু !
অনিরুদ্ধ হাঁপাতে হাঁপাতে বলল - বাল্যবন্ধু ! এই তার নমুনা?
হেসে হেসে বললাম - এবার তবে আমি একটা ডেমো দিই?
পকেট থেকে কালো কুচকুচে পিস্তল বের করে অনিরুদ্ধের মাথায় ধরলাম ।
- এক থেকে দশ গুনব । এর মধ্যে কমিশনের টাকা অনলাইনে ট্রান্সফার করবি । নইলে ....
অনিরুদ্ধ মোবাইল ব্যাঙ্কিঙ এর সাহায্যে দু'লাখ ট্রান্সফার করে দিল ।
বললাম - হবে না । এই তিন বছরে অন্তত তিনগুন হয়ে যায় । আচ্ছা দেখি ! কত ব্যালান্স আছে তোর ?
অনিরুদ্ধ ব্যালেন্সের এমাউন্ট দেখাতেই আমার চক্ষু চড়কগাছ । পঁচাত্তর লাখ এখনও ব্যালান্স ।
বললাম - পুরোটাই দে । নইলে সঞ্চারীর কীর্তি ফাঁস করে দেব ।
ভূপেশ আর সঞ্চারী এসে করজোড়ে অনুনয় বিনয় করতে লাগল ।
ভূপেশের প্রতি আন্দাজেই একটা ঢিল ছুঁড়ে দিলাম ।
- আরে স্যার, আপনাকে তো সেদিন কবরডাঙায় দেখেছিলাম। কি করছিলেন ওখানে ?
ভূপেশ আপাদমস্তক আমাকে দেখে নিল । আমার ঈশারায় শ্যামল ওকে জাপটে ধরল ।
হঠাৎ পট পরিবর্তনের জন্য ঘাবড়ে গেল ভূপেশ । ভয়ে ভয়ে বলল - আমি কি করলাম ?
আমি বললাম - তুমিই তো নাটের গুরু মহারাজ ! অনিরুদ্ধের বোনের প্রেমে তো হাবুডুবু খেলে ! ফল কি হল ? সেই তো ফার্টিলিটি সেন্টারে যেতে হল ।
ভূপেশ যেন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল । সঞ্চারী লজ্জায় সেখান থেকে পালিয়ে গেল ।
- মাসীমাকে জানিয়ে দিই সব কথা ?
ভূপেশের হাত পা যেন ঠাণ্ডা হয়ে গেল ।
( ক্রমশ )
