নলজাতক
নলজাতক
নবম পর্ব
ফুটফুটে একটি পুত্রসন্তান নিয়ে যেদিন সঞ্চারী হিলটন রোডের বাড়িতে প্রবেশ করল ঋতাভরী দেবী আনন্দে নাচতে নাচতে এলেন নবজাতককে বরণ করতে ।
ভূপেশ এবং সঞ্চারী দু'জনেই বেশ খুশী। অনিরুদ্ধও ভীষণ খুশী তবে বদমাশ বাঁড়ুজ্যের কথা মনে পড়লেই কেমন যেন আড়ষ্ট বোধ করে ।
লোকটা যে মনুষ্যত্বহীন জান্তব প্রকৃতির এ'কথা কেউ বুঝুক না বুঝুক; অনিরুদ্ধ সম্যক বুঝে গেছে । দু'লাখের বদলে দশ লাখ খুইয়ে তার আফশোষের সীমা নেই ।
এবার শিকার হতে চলেছে তার বোন এবং ভগ্নিপতি উভয়ে । ভূপেশও জানে এই ধরণের লোকেরা সমাজের পক্ষে কতটা ভয়ঙ্কর।
শ্যামল ওরফে কিষাণলাল ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা । আদপে সে নানারকম বুজরুকিতে সিদ্ধহস্ত । তার যাদুবিদ্যার কিছু কিছু সে সঞ্চারিত করেছে বাঁড়ুজ্যের মধ্যে ।
আর সেই সুযোগে বাঁড়ুজ্যের বাঁদরামি বেড়েছে বই কমেনি । একদিন শ্যামল ও রূপেশ্বর ব্যানার্জী পৌঁছে গেল হিলটন রোডের বাড়িতে ।
সেই সময় অনিরুদ্ধ বাড়িতে ছিল না । ভূপেশ নিত্যকার মত দিনের বেলায় বেরিয়ে গেছে। বাড়িতে শিশুপুত্রসহ সঞ্চারী এবং ভূপেশের মা ঋতাভরী দেবী দুপুরে ভাতঘুম দিচ্ছিলেন ।
বদমাশ বাঁড়ুজ্যে কলিং বাজাল । সঞ্চারী ভাবল ভূপেশ এসেছে ; খুলতেই যাচ্ছিল , ঋতাভরী দেবী তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন - ছেলে ছেড়ে কিছু করবে না মা । আমি দেখছি কে এসেছে ?
সঞ্চারী ফিরে গিয়ে ছেলের কাছে বসল । চোখ দু'টো কিন্তু সিংদরজার দিকে তাকিয়ে থাকল । ঋতাভরী দেবী দরজা খুলে দু'জন অপরিচিত যুবককে দেখে ভয় পেয়ে গেলেন ।
- কে তোমরা ? কাকে চাও।
বদমাশ বাঁড়ুজ্যে ইচ্ছে করেই সঞ্চারীর নাম বলল না। বলল - এটা কি মিঃ ভূপেশ গুপ্তের বাড়ী ?
ঋতাভরী বললেন - হ্যাঁ, কিন্তু তোমরা ?
শ্যামল বলে উঠল - মৌসীজী ! আপ মুঝে নেহি পহচানোগি ।
বদমাশ বাঁড়ুজ্যে বলল - ও সব হিন্দিমিন্দি ছাড় তো !
আমাকে বুঝিয়ে বলতে দে !
তারপর ঋতাভরী দেবীকে বলল - ভূপেশ আমার একজন সহকর্মী বন্ধু । ওকে কিছুক্ষণ আগে কবরডাঙায় বসে থাকতে দেখলাম । ওই জায়গায় তো সচরাসচর কেউ যায় না ; তাই আপনাকে জানিয়ে দিতে এলাম । ওকে বলবেন যেন ওই জায়গায় আর না যায় ।
ঋতাভরী দেবী বললেন - তোমাদের নাম কি বাবা ? আর ভূপেশ তো আমার তেযন ছেলে নয় ! যাই হোক , বাড়ি আসুক তখন বলে দেব ।
শ্যামলের চোখ দু'টো তখন বাড়ির অন্দরে ঘোরাফেরা করছে।
অট্টালিকার মত বিশাল বাড়ি । সামনে লন । সুন্দর ভাবে সাজানো । দেখলে মনে হয় যেন ইন্দ্রকানন।
একটা প্রশস্ত রাস্তা দরদালান পর্য্যন্ত চলে গিয়েছে। সঞ্চারী ওদের দেখতে না পেলেও ওদের কথাগুলো সব শুনতে পেয়েছে।
ভূপেশ কবরডাঙায় যায় - এ কথাটা তারও বিশ্বসনীয় হয় না । আবার সত্যি যদি যেয়ে থাকে সে নিয়ে ভূপেশকে কোন প্রশ্ন করারও সাহস নেই তার ।
শ্যামল ও বদমাশ বাঁড়ুজ্যে এ'কথা বলেই চলে যাচ্ছিল । ঋতাভরী দেবী বললেন - দাঁড়াও বাবারা ! তোমাদের নাম দু'টো তো জানতে পারলাম না।
শ্যামল বলল - জরুরী ভি নেহি। আপ উনকো সমঝাইয়েগা। ব্যস !
বলে ওরা চলে গেল । ঋতাভরী দেবীর কেমন যেন সন্দেহ হল । ছেলে দু'টো ফ্রড নয় তো ! ভূপেশের নাম নিয়ে বাড়িটা দেখে গেল না তো !
আবার দরজা বন্ধ করে তিনি ভিতরে এলেন । সঞ্চারী বলল - কে এসেছে মা ?
- দু'টো উটকো ছোঁড়া ! বলে কি না ভূপেশকে কবরডাঙায় বসে থাকতে দেখেছে ।
সঞ্চারীর মনে সন্দেহ হল । প্রতিদিন নিয়ম করে দিনের বেলায় ও বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় কেন ? দাদাও বলছিল প্রতিদিন বারোটা বাজলেই ভূপেশ লাঞ্চের নাম করে অফিস থেকে চলে যায় । দু'তিন ঘন্টা পর আবার অফিসে ফেরে । আবার বাড়িতে থাকলেও তাই করে ! তা'হলে ব্যাপারটা কেমন দু'য়ে দু'য়ে চার হয়ে গেল না ?
ঋতাভরী দেবী বললেন - যাও বউমা । ছেলের কাছে থাকো সব সময় ।
ঋতাভরী দেবীর ভয় ছেলে না কিডন্যাপ হয় ! যাক গে ও সব নিয়ে ভাবার সময় নেই। আগে ছেলেটা ভালোয় ভালোয় বাড়ি ফিরুক । তারপর না হয় জেনে নেওয়া যাবে ও সত্যিই কবরডাঙায় গেছে কি না !
( ক্রমশ )
