নলজাতক
নলজাতক
সপ্তম পর্ব
দু'বছর বিয়ে হয়েছে সঞ্চারীর । প্রথম বছর ঋতাভরী দেবী সন্তান বিষয়ে চুপ করে আছেন । দু'বছরের শেষেও যখন কোন লক্ষণ দেখতে পেলেন না মনে মনে ক্ষুব্ধ হলেন । তাঁর একটা খেলার সাথী চাই - বলে সঞ্চারীকে অতিষ্ঠ করে তুললেন ।
সঞ্চারী কোন উত্তর দিতে পারেনি। কি বলবে ! ভূপেশের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে, এক বিছানায় শুয়ে থাকে । স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে কোন ঘাটতি নেই । কন্ট্রাসেপটিভ পিলও ব্যবহার করে না এমনকি কেউই অন্য কিছু ডিভাইসও ইউজ করে না । তথাপি পেটে কেন এখনও সন্তান আসছে না - সঞ্চারীও চিন্তিত হয়েছে।
শাশুড়ি একদিন ভূপেশের সামনেই কটু কথা বলে দিলেন ।
- আজকাল দেখছি একটা ফ্যাশন হয়ে গেছে । কেউ চট করে ছেলেপুলে নিতে চায় না । বলি, ব্যাপারটা কি ?মানুষ করার ভাবনা ? তার জন্য তো আমি রয়েছি রে বাবা !
অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বললেন ঋতাভরী দেবী ।
ভূপেশ ও সঞ্চারী পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে মাথা নীচু করে রইল ।
ঋতাভরী দেবী কপট রাগ দেখিয়ে তখনকার মত চলে গেলেন ।
সঞ্চারী বলল - তোমার মা তো অন্যায় কিছু বলেননি। কি ভাবছ ?
ভূপেশ ম্লান হেসে বলল - এখন থাক না এ সব । মা হয়তো বলেছেন; তা বলে এখনই ----
- আমি কিন্তু চাই ভূপেশ । আমারও তো মা হতে ইচ্ছে করে ।
ভূপেশ বলল - আচ্ছা ঠিক আছে। দেখা যাবে'খন ।
সঞ্চারী দেখল ভূপেশ এ ব্যাপারে সিরিয়াস নয় । বাধ্য হয়ে চুপ করে থাকল ।
রাতে ঘুমানোর সময় সঞ্চারীকে জড়িয়ে ধরল ভূপেশ । সঞ্চারী ভেবে নিল ভূপেশ হয়তো মনস্থির করে ফেলেছে। সেইজন্য নিজেকে নি:শেষে সমর্পণ করে দিল ।
এভাবে দিন মাস বছর কেটে গেলেও যখন ওদের কোন সন্তান হল না ; অপবাদ গিয়ে পড়ল সঞ্চারীর উপর ।
সঞ্চারী নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবার জন্য মেডিক্যাল টেস্ট করাবে বলে সিদ্ধান্ত নিল । এই অপবাদ এমনি এমনি মেনে নেওয়া যায় না ।
ভূপেশকেও তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিল । বলল - চল না , একবার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আসি ।
ভূপেশ বলল - ঠিক আছে চল ।
ওরা কলকাতার বিখ্যাত ফার্টিলিটি সেন্টারে গিয়ে নিজেদের পরীক্ষা করিয়ে নিল ।
দু'তিন দিন পর রিপোর্ট নিতে ওরা আবার সেখানে গেল। ডাক্তারবাবু বললেন - মিসেস সঞ্চারী গুপ্তার ওভামে বড় রকমের গোলমাল থাকায় বাচ্চা পেটে আসছে না । এমন কেস হাজারে একটাই আসে । অপারেশন করিয়েও এর নিশ্চয়তা নেই ।
সঞ্চারী কাঁচুমাচু মুখে বলল - তাহলে কি আমাদের ছেলেপুলে হবার কোন আশাই নেই ?
ডাক্তারবাবু বললেন - পরীক্ষা করে যা দেখলাম তাতে আপনাদের বাচ্চা না হবার কারণ এটাই। তবে যদি আপনারা চান তো ব্যবস্থা করে দিতে পারি ।
ভূপেশ ইন্টারেস্টেড হয়ে বলল - কি করে ?
- দেখুন আপনাদের শক্তিশালী যৌনজীবন রয়েছে। উভয়েই সক্ষম। যদি মনে করেন তো আপনার শুক্রাণু এবং আপনার মিসেসের ডিম্বানু টেস্ট টিউবে নিষিক্ত করে জাতক বা জাতিকার জন্ম হতে পারে ।
ভূপেশ মনে করল ' গুড আইডিয়া ' । কারও কোন অসুবিধা হবে না । অথচ আপন সন্তান লাভও সম্ভব হবে ।
ওরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল । কিন্তু ঋতাভরী দেবী কি মেনে নেবেন এই ব্যবস্থা ?
ভূপেশ তার নিদানও বলে দিল । অনিরুদ্ধকে কলকাতার অন্য কোন জায়গায় থাকতে হবে কোন বাহানা দেখিয়ে । আর বাড়ি গিয়ে মাকে জানিয়ে দিতে হবে সঞ্চারী ইজ প্রেগন্যান্ট। ব্যস মিটে গেল ঝামেলা ।
লক্ষণ দেখা দিতে অন্তত তিনমাস । আজই রাতে সঞ্চারীকে বমি বমি ভাব দেখাতে হবে । এমনি করে বেশ কিছুদিন পর অনিরুদ্ধ তার নতুন ফ্ল্যাটে সঞ্চারীকে নিয়ে যাবে - বাপের বাড়ি যাচ্ছি বলে । তারপর টেস্ট টিউব বেবি নিয়ে হিলটন রোডে চলে এলেই হবে ।
সঞ্চারী মন দিয়ে কথাগুলো শুনল । এ বিষয়ে অনিরুদ্ধের সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন । ওকে বুঝিয়ে বলতে হবে আবার ঋতাভরী দেবীকেও বুঝিয়ে দিতে হবে ।
অনেক প্রত্যাশা নিয়ে ভূপেশ ও সঞ্চারী বাড়ি ফিরে এল ।
রাতে বমির ভান করে রেস্টুরেন্টের খাবার খেয়ে কাটিয়ে দিল ।
ঋতাভরী দেবী আনন্দে আত্মহারা হয়ে বাক্স থেকে একটা সোনার হার এনে বৌমার গলায় পরিয়ে দিলেন ।
( ক্রমশ )
