নববর্ষের কুঁড়ি (পর্ব - ৩)
নববর্ষের কুঁড়ি (পর্ব - ৩)
তবে দেবরূপের সঙ্গে এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে বিশেষ লাভ হয়নি অর্পিতার। ও বড় উদাসীন। প্রথমে অর্পিতা ভেবেছিল, যতই হোক ডাক্তার! হয়তো পেশাদারি জীবনের কর্মব্যস্ততায় দেবরূপ এসব নিয়ে আলোচনা করার সময় পাচ্ছে না। তাই আর এই নিয়ে ওকে বেশি বিরক্ত করেনি। দেবরূপ কিন্তু সময় পেলেই পথশিশুদের সঙ্গে গল্প করে, ওদেরকে আদর করে খাওয়ায়। ওর এন.জি.ও টার উদ্দেশ্যই পথশিশুদেরকে সাহায্য করা। এসব দেখেই মানুষটার প্রতি ক্রমাগত ভালোবাসা বেড়েছিল অর্পিতার। আশেপাশের ভিক্ষুক বাচ্চারা একটু খাবারের আশায় আসত দেবরূপের কাছে। ওরা অনাথ। মা-বাবার স্নেহ ওরা কোনওদিনই পায়নি। সময় পেলেই অর্পিতা ওই বাচ্চাগুলোকে লেখাপড়া শেখাত, আদর করে কাছে বসিয়ে গল্প শোনাত, নতুন জামা কিনে দিত। কিন্তু মাস ছয়েকের মধ্যেই ও খেয়াল করে যে বাচ্চাগুলো ভীষণ অনিয়মিত। তার ওপর মাঝে মাঝেই অনেকেই বলে কোমরের কাছে ব্যথা।
একদিন ও দেবরূপকে বলল, "হ্যাঁ গো, ওরা এত অনিয়মিত কেন? অনেকেই দেখি মাঝপথে আসা বন্ধ করে দিচ্ছে। জানো, স
েদিন রাজু বলছিল ওর কোমরে ব্যথা। এর আগেও আমি ওদের অনেককে বলতে শুনেছি এরকম। তুমি একটু দেখতে পারো না ডাক্তারবাবু?" দেবরূপ উত্তর দেয়, "আচ্ছা, তুমিই বলো তো ওরা কী ঠিক করে খেতে পায়? ওই ব্যথা অপুষ্টিজনিত। আমি তো ওষুধ দিয়ে দিই।"
অর্পিতা আর মাথা ঘামায় না এসব নিয়ে। দেবরূপ এই এন.জি.ও তে মানুষের কাজে ওর অবদানের জন্য মাঝে মাঝেই বিভিন্ন সংস্থা থেকে পুরস্কৃত হয়। অর্পিতা পুরস্কার লোভী নয়, কিন্তু স্বামীর এই প্রাপ্তিতে ও মনে মনে খুব খুশি হয়। ও কতবার বলেছে এসব সম্মান প্রদানের অনুষ্ঠানে ওকেও নিয়ে যেতে। দেবরূপের সেই একই কথা, "এত তাড়া কিসের? যাব, যাব, তোমাকেও নিয়ে যাব, একটু ধৈর্য ধরো।"
দেবরূপকে ক্ষণিকের জন্যেও কোনওদিন সন্দেহ করেনি অর্পিতা। বরং ঘরের কোণায় কোণায় সজ্জিত ওর সার্টিফিকেট আর স্মারকগুলো অর্পিতাকেই নীরবেই গর্বিত করেছে প্রতিটা মুহূর্তে। ও ভাবত, দেবরূপের মতো স্বামী পাওয়া ওর পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু অর্পিতার এই ভুল ধারণা ভেঙে গেল একটা ঘটনায়।