STORYMIRROR

Sangita Duary

Tragedy Classics Others

4  

Sangita Duary

Tragedy Classics Others

মূর্খ মেয়েমানুষ

মূর্খ মেয়েমানুষ

6 mins
614

"দিন রজনী কত অমৃতরস..."

পরিচিত ধীর পায়ের চলনে নীলাদ্রির গুনগুনানিতে ছেদ পড়ে।শব্দটা যেন ইতস্তত করেও শেষমেষ ওর পিঠ ঘেঁষে দাঁড়ালো,"আস... আসবো?"

-"এসেই তো পড়েছ!"

ঘাড় না ফিরিয়েই নির্বিকার জবাব দেয় নীলাদ্রি।

-"দাদা!"

আগন্তুকের স্বরটা কেমন কাঁদো কাঁদো ঠেকলো।এবার খানিকটা বাধ্য হয়েই নীলাদ্রিকে মুখ ফেরাতে হলো।কনক দাঁড়িয়ে আছে।কি ব্যাপার?

"তোমার সাথে একটা কথা ছিল দাদা"-বলেই মাথাটা নিচু করে নিল কনক।

-"তার আগে বল দেখি,ওদিককার খবর কি?আহুজারা অর্ডার প্লেস করেছে?"নীলাদ্রি খাটের পাশে রাখা ফাইলগুলো খুলছে এক এক করে।

-"হমম,করেছে,তবে আমার অন্য একটা কথা ছিল"-

বলেই কনক দৌড়ে এসে জাপটে ধরলো নীলাদ্রির পিঠ।আচমকা আক্রমণে নীলাদ্রি কিংকর্তব্যবিমূঢ়!একি করছে কনক?নীলাদ্রি ঘুরে এসে সপাটে এক চড় কসালো কনকের গালে-"মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে তোর নাকি?"

ক্ষুধার্ত বাঘিনীর মতো কনক ফুঁসে উঠলো,"হ্যা, মাথা খারাপ হয়ে গেছে আমার,পাগল হয়ে গেছি আমি।"

নীলাদ্রির শার্টের কলার চেপে ধরয়েছে কনক,দুচোখ থেকে যেন আগুন ঠিকরে আসছে,"ধুলনীতে তো আরও মেয়ে ছিল,তবে আমায় কেন সেদিন শহরে নিয়ে গেলে,কেন 'গেঁয়ো' ময়লা পরিষ্কার করে 'শহুরে' বানালে?দিনে রাতে দুপুরে বিকেলে তোমাকে দেখতাম প্রাণ ভোরে,আমিও তো মানুষ,তুমি যখন রাখিদিদির সাথে সোহাগ করতে,আমি দরজার ফুটো দিয়ে দেখতাম,শরীরটা বেঁধে রাখতে পারতামনা,দ্যাখো না,একবার আমাকে ভালো করে,তোমার বউএর মতো রূপ হয়তো নেই আমার,কিন্তু,শরীর,দেখো না একবার,কিগো.."

নীলাদ্রি কনককে মাটিতে ঠেলে ফেলে দিলো,"এই জন্যই বলে,বনের জানোয়ার কখনো মানুষ হয়না।ভুলে গেছিস তুই কি ছিলি?এতটুকু কৃতজ্ঞতা নেই তোর?এত নোংরা তুই?"

-"কিসের কৃতজ্ঞতা?তোমার দানের মূল্য তো তুমি দু হাত ভরে পাও।কাস্টমারের থেকে কত পাও আমায় জানাও?আমারদের শরীর নিংড়ে খাটনীর পয়সা কি মাসে কি ওই পঞ্চাশ হাজার?মাস গেলে থোক পাঠিয়ে হাত উঠিয়ে নাও।"

নীলাদ্রির কান লাল হয়ে আসছে,এ কাকে দেখছে সে?এ কি সেই কনক,হবু বরকে বাঘে নিয়ে যাওয়ার পর যাকে দেবদাসী করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল ধুলনীর লোক?প্রাণে বাঁচতে,যে কনক ভোর রাতে ছুট্টে এসেছিল নীলাদ্রির কাছে,"তুমাদের ঘরে মুকে একটা কাজ দিবে বাবু?সব কাজ করতে পারি,পয়সা লাগবেনে, শুধু খেতে আর থাকতে দিলেই হবে?"

নীলাদ্রি চোয়াল শক্ত করলো,"কি চাস তুই?কত টাকা?"

-"কটা টাকা নিয়ে আর কতদিন চলবো আমি"?

-"বেশ 'আনন্দধারা'আমি তোদের নামে করে দেব,তোরাই চালা,এতদিনে কোথায় কিভাবে কি করতে হয় তুই তো ভালো মতোই জেনে গেছিস"। আজ দুপুরে দুটোয় ট্রেন।কলকাতা ফিরে যাচ্ছে নীলাদ্রি,অন্যবার ফিরলেও আবার আসার একটা কারণ থাকত,'আনন্দধারা'কেমন চলছে,মেয়েরা ঠিকঠাক পারিশ্রমিক পাচ্ছে কিনা,জিনিসপত্র ঠিকঠাক তৈরি হচ্ছে কিনা...নীলাদ্রির চোখ দুটো জ্বালা করে উঠলো।এই তো সেদিন,পত্রিকার অফিস থেকে "রুরাল লাইফস্টাইল"প্রজেক্টটার জন্য সুন্দরবন আসতে হয়েছিল নীলাদ্রিকে।কাজ করবে কি?মানুষগুলোর জীবনযাপন দেখে স্তম্ভিত হয়েছিল সেদিন।দিন-আনা,দিন-খাওয়া মানুষগুলোর পেট চলে জঙ্গলে কাঠ কেটে কিংবা মাতলার কুমির উপেক্ষা করে ছোট মাছ কাঁকড়া ধরে।

মিডিয়ার লোক হিসেবে ডরমেটরি পেয়েছিল নীলাদ্রি,কনক পাশের কয়েকটা ঘর পরেই থাকতো,সকাল সন্ধ্যে রান্না করে ঝাড়পোঁছ করে দিয়ে যেত।নীলাদ্রি সারাদিন ক্যামেরা হাতে স্টিল নিত আর বাড়ি ফিরে ডকুমেন্ট লিখতো।সেদিন রাতে ঝড় বৃষ্টি হলো খুব।নীলাদ্রি অনেক রাত অব্দি জেগে হাতের কাজ এগিয়ে রাখছিলো,ফেরার তো আর বিশেষ দেরি নেই,এমন সময় দরজায় ধাক্কা।'ভোররাতে কে এমন ভাবে ধাক্কা দেবে', ভাবছে,ঠিক তখন কনকের চিৎকার,"দরজা খোলো বাবু,বাঁচাও আমায়"?

জলকাদায় ভেজা কনক নীলাদ্রির পা জড়িয়ে ধরেছিল,"শিবুর সাথে ও-মাসে কণ্ঠিবদল হইছে,কাল রাত্তিরে ওকে বাঘে নে গেল।হারামিটাকে কত্তো করে বললুম,তাড়ি খেয়ে জঙ্গলে জেওনি,শুনলোনি আমার কথা,নিজে তো মলো, ওরা আমাকে দেবদাসী করে দিবে বাবু,রাতবিরেতে কুকুরগুলো ছিঁড়ে খাবে,আমাকে বাঁচাও তুমি...''

সেদিন ভোররাতেই কনককে নিয়ে চলে এসেছিল নীলাদ্রি।একটা অসহায় মেয়েকে স্বনির্ভর করতে বিভিন্ন হাতের কাজের ট্রেনিং নিতে সাহায্য করেছিল।এরমধ্যে কেটে গেল একটা বছর।কোর্ট-পেপার এবং কনককে সঙ্গে নিয়ে নীলাদ্রি ফিরলো ধুলনীর কনকের বাড়িতে।জমানো টাকায় পাঁচ ইঞ্চি দেওয়াল তুলে গড়ে তুললো 'আনন্দধারা',প্রতি সপ্তাহে যেখানে মানুষ অন্ন-সংস্থান করতে গিয়ে বাঘ কুমিরের পেটে যায়,সেখানে 'আনন্দধারা' হয়ে উঠলো অন্নপূর্ণার কলসি।মেয়েরা কাজ শিখতে আস্তে লাগলো,কনকই তাদের ট্রেনিং দিতো,কেও কেও শহরে গিয়েও ট্রেনিং নিয়ে আসতো।যা যা বানানো হতো,নীলাদ্রি নিজের দায়িত্বে কুটির শিল্প মেলায় বিক্রির ব্যবস্থা করে দিত।ধীরে ধীরে 'আনন্দধারা'র জিনিসের চাহিদা মেলা ছেড়ে দেশ বিদেশ ছড়িয়ে গেল।নীলাদ্রির সঙ্গে সঙ্গে কনকও গিয়েছে বহু জায়গায়,শিখেছে মার্কেটিংয়ের বেসিক ব্যাপারগুলো।সব কিছুই বেশ ভালোই চলছিলো, আজও তো কনক গিয়েছিল 'আহুজাস' দের কাছে,সঙ্গে অবশ্য রাখি ছিল,শরীরটা ঠিক ছিলনা,তাই নীলাদ্রি না গিয়ে 'আনন্দধারা'তেই রয়ে গেল।কিন্তু কনককে চিনতে এতটাই ভুল করলো নীলাদ্রি?ছোট্টবেলা থেকে মাকে দেখে এসেছে,কেউ কিছু চাইলে ফিরিয়ে দিতো না,বলতো,"অতিথি নারায়ণ।নারায়ণকে ফিরিয়ে দেব,এতো সাহস আমার নেই।"

কনককে গড়ে তুলতে নীলাদ্রির এত পরিশ্রম,মায়ের এতো ভালোবাসা!কোনোকিছুরই কি কোনো মূল্যে নেই?কোনো কিছুর প্রত্যাশার রেখে তো নীলাদ্রি 'আনন্দধারা' বানায়নি,ভারতবর্ষের সমস্ত কনক যাতে স্বনির্ভির হতে পারে,নীলাদ্রি চেয়েছিল,'আনন্দধারা' সেরকমই এক দৃষ্টান্ত তৈরি করুক,একজন সুস্থ সচেতন নাগরিক হিসেবে কি এই চাওয়াটা নীলাদ্রির অপরাধ?

জঙ্গল থেকে বাঘ-শাবক তুলে এনে গৃহপালন করলে,সে গৃহপালিত হয় বটে,তবে হিংস্রতা তার রক্তে থাকে,একবার রক্তের স্বাদ পেলে সে নরখাদক হয়ে ওঠে।কনকও বোধহয় তার ব্যতিক্রম নয়।

হাতের উল্টো পিঠে নীলাদ্রি চোখ মুছলো।রাখি বোধয় ঠিকই বলে,নীলাদ্রি খুব বোকা,এসব ক্লাসের মেয়েরা এইরকম নোংরাই হয়।শিক্ষার অভাব মানুষকে এতটা নিচে নামিয়ে দিতে পারে?


********** অন্যদিন নিজের গর্জনে পুরো 'আনন্দধারা'মাতিয়ে রাখে কনক।তার প্রতাপে কোনো মেয়ের সাহস হয়না কাজে ফাঁকি দেওয়ার।সকাল থেকে সন্ধ্যে হয়,কনকের উৎসাহের কমতি হয়না,একবার এমব্রয়ডারির দিকে,তো একবার কাঁথার দিকে,নিমেষে অক্সিডাইসের দিকে,সঙ্গে সঙ্গে মাটির কাজের দিকে,পলকে আবার গ্লাস পেন্টিংয়ের দিকে কিংবা বাঁশ, বেতের দিকে সর্বত্র কনকের সমান দাপট।একটা মানুষ তাকে একটা মাটির তাল থেকে একটা রক্তমাংসের অনুভূতি সম্পন্ন মানুষ তৈরি করলো, আর সে সেই মানুষটার সম্মান রাখবেনা!কনক দেখেছে দাদা কতদিন নিজের কাজ ছেড়ে ওকে নিয়ে দৌঁড়েছে বিভিন্ন ওয়ার্কশপে,ওকে ঠিকঠাক কথা বলতে শিখিয়েছে,ভদ্র সমাজে মিশতে শিখিয়েছে।

প্রথমটায়,মানুষটাকে বিশ্বাস করতে ভয় করতো,লোকটা এতো কেন করছে তার জন্য?শেষমেষ কি চাইবে?শরীর?ইজ্জত লুটবে?পুরুষমানুষ ঐটে ছাড়া আর জানেটা কি?

কনক নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতো, সতর্ক থাকত সবসময়।

কিন্তু সেদিন,কনকের খুব জ্বর।বাড়িতে গিন্নিমা নেই,রাখিদিদি তখনও বউ হয়ে আসেনি ওবাড়িতে।দাদা সারারাত ঠায় শিয়রের কাছে বসেছিল,জলপট্টি দিচ্ছিল।অন্য কেউ হলে হয়তো সেই রাতেই...

কনক ভগবান মেনে এসেছে নীলাদ্রিকে।অথচ সেই ভগবানের নামে...কনক খাটে এসে শুয়ে পড়লো চিত হয়ে।আজ সব্বাইকে ছুটি দিয়ে দিয়েছে তাড়াতাড়ি।সবাই থাকলে যে....!!!

গিন্নিমাকে দেখেছে কনক,মানুষের ওপর কত মায়া!তা সে যেই হোক ,যেমনই হোক,নাহলে সহায়-সম্বলহীন,জাত-পাতহীন কনককে নিয়ে যখন নীলাদ্রি বাড়ি ঢুকলো,কি অসীম মমতায় আগলে রেখেছিল কনককে!

কনকের পাশের বাড়ির শিউলি বাবুর বাড়ি কাজ করতো,তখন কনক শুনেছিল,বাবুদের বাড়ির বৌদিরা পুরোনো কাপড় ব্লাউজ ওকে দিয়ে দিত।কিন্তু দাদার মা!

পরেরদিন হাট থেকে সুতির ছাপা এনে দিয়েছিল চারখানা।

কনককে সঙ্গে নিয়ে খেতে বসতো,মাছের পেটিটা তুলে দিতে কনকের পাতে,জোর করে,মানা করলে শুনতোনা।কনক মাথা নামিয়ে কেঁদে ফেলতো,গিন্নিমা আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে কাঁটা ছাড়িয়ে দিত,ছেলেবেলায় মাকে হারিয়েছে কনক,মনে হতো,মায়েরা বোধয় এমনই!

কনক পাশ ফিরে শুলো।দাদা খুব কষ্ট পেয়েছে।খুব মন্দ ভাবছে তাকে।ভাবুক।কনক তো তাই চেয়েছিল,দাদা তাকে মন্দ ভেবে আর কোনদিন যেন এই আনন্দধারায় না আসে।

তার জন্য দাদা আর রাখিদিদির সুখের জীবনে ভাঁটা পড়েছে।যে ঈশ্বর তাকে পুনর্জীবন দিয়েছে,তাঁর জীবন তার জন্য নরক হবে,এ কনক মরে গেলেও চাইবেনা।

আজ আহুজাদের অফিসে অর্ডার নিতে যাওয়ার কথা ছিল,দাদা তৈরি হচ্ছে,রাখিদিদি যেতে চাইলো, কাল রাতে নাকি দাদা ঠান্ডা লেগে নাক টানছিল।

কনক হালকা ভাবেই বলেছিলো,"তুমি পারবে তো?"

রাখি দিদি চোখদুটো বড় করে তাকিয়েছিল,"তোমার দাদাকে ছাড়া তুমি পারবে তো?"

তারপরেই হেসে বললো,"নীলাদ্রিকে নানান কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়,তাছাড়া আমি তো বাড়িতেই থাকি।দেখিনা,তোমাদের কাজে যদি আস্তে পারি!"

আহুজাদের অফিসটা সল্টলেকে।রাখিদিদি অফিসের কাছে এসেও গাড়ি ঘুরিয়ে নিলো।কনক জিজ্ঞেস করায় বলেছিলো,"এখনও সময় আছে তো,চলো না কোথাও বসে গলাটা ভিজিয়ে আসি,বড্ড তেষ্টা পেয়েছে।"

কনক ব্যাগ থেকে জলের বোতল বের করেও ঢুকিয়ে রাখলো,সে জানে,রাখিদিদি খাবেনা।ওবাড়িতে একমাত্র রাখিদিদিই ওকে ঠিক পছন্দ করেনা।

একটা খোলা পার্কের মতো জায়গায় গাড়ি থামিয়ে রাখিদিদি বলেছিলো,"কত টাকা পেলে আমাদের লাইফ থেকে চলে যাবে?"

-"এসব তুমি কি বলছো?"

-"তুমি নয়,আপনি।একটা মূর্খ মেয়েমানুষ!এবাড়ির লোক লাই দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছে,কোনদিন দেখবো বেডরুমেও...

শোনো, তোমাদের মতো মেয়েরা টাকার জন্য সব পারো।কি সম্পর্ক তোমার সঙ্গে নীলাদ্রির?অফিস ফেলে কোন মধুর আশায় বারবার ওকে ছুটে যেতে হয় তোমার কাছে?"

কনক দুহাতে কান চেপে ধরলো,"ছি ছি এসব বলো না,দাদা আমার কাছে ভগবান"

-"ভগবান?দশচক্রে ভগবানও ভুত হয়।আমি এত মেন্টেইন্ড থাকি,অথচ আমাকে ফেলে মাসের দশটা দিন কি এত পায় তোমার ওখানে?আমি সাফ বলে দিচ্ছি,মিথ্যে কথা বলে হোক,চুরি করে হোক,যা ইচ্ছে নাটক করে তুমি চলে যাও,নাহলে কিন্তু আমি সংসারে আগুন লাগিয়ে দেব।ওকে ভালোমানুষ পেয়ে,সহজসরল পেয়ে ওর টাকা,স্টেটাস,পাওয়ার এন্ড অবভঅল ওকে গোগ্রাসে গিলবে এ আমি সহ্য করবোনা।"

রাখিদিদির কথা শুনে প্রথমে ভয় পেলেও করুণা হয়েছিলো কনকের।যে মানুষটার করুন অসীম,যার পরিধি মাপা যায়না তাঁকে কিনা রাখিদিদি বাঁধতে চাইছে তাও টাকার বিনিময়ে!রূপের ঝলকানি দিয়ে?

কনকের হাসি পেয়েগেল।খুব বলতে ইচ্ছে করছিল কনকের,তোমার যা করার করে নাও,কিন্তু আমার দেবতাকে আমি কখনোই মিথ্যে বলতে পারবোনা,ঠকাতে পারবোনা...

কিন্তু,দাদা,গিন্নিমাই শিখিয়েছেন,কেউ কিছু চাইলে তাকে খালি হাতে ফেরাতে নেই।তাই... দাদা ফিরে যাওয়ার পর থেকে খুব কষ্ট হচ্ছিল কনকের।মিথ্যে বলার কষ্ট,তার ঈশ্বরকে ঠকানোর কষ্ট।

এখন বেশ হালকা লাগছে কনকের শরীর।সহায়-সম্বলহীন,জাত-পাতহীন,শিক্ষা-রুচিহীন গেঁয়ো কুৎসিত কনকের দরজাতেও আজ রাখিদিদিদের হাত পাততে হয়!

শরীরটা অবশ হয়ে আসছে ধীরে ধীরে,মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে,ওকি!শিবু!শিবু কি করে এলো,ও না মরে গেছে?

অন্ধকার ঘরে দরজার সামনে হাত দুটো বাড়িয়ে দিয়ে শিবু ডাকছে শিউলিকে,"আয়..."

কনকের নিষ্প্রাণ চোখদুটো বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে,কনক দেখলো নীলাদ্রিকে,জ্বরে বেহুস কনকের কপালে জলপট্টি দিচ্ছে।

দেখলো গিন্নিমাকে,আদর করে মাছের কাঁটা ছাড়িয়ে দিচ্ছে।

দেখলো রাখিদিদিকে,বিউটিপার্লারে নির্লোম করছে হাত পা...

কনক চোখ বুজল।ঠোঁটদুটো থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে এলো,"মূর্খ মেয়েমানুষ!"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy