মিনির কথা
মিনির কথা
কতই বা বয়স হবে তখন মিনির এই আট কি নয় বছর।বন্ধুদের দেখে তারও সাধ জেগেছিল একটা নতুন পেন্সিল বক্স কিনবে। বেশ নতুন ধরনের । দুদিকে খোলা যায়। সে দেখেছে তো। রিমা আজ স্কুলে এনেছিল ।মিনি তো দেখে অবাক হয়ে গেছিল। একদিকে পেন্সিল রবার রাখা আবার অন্য দিকে কত রকমের রঙ পেন্সিল রাখা। আবার স্কেল রাখার জন্য আলাদা জায়গা! মিনির বেশ মনে ধরল । তারও চায় এমন একটা পেন্সিল বক্স।
বাড়িতে এসে মিনি বায়না ধরল তারও চায় অমন পেন্সিল বক্স। সে দেখেছে পাড়ার দোকানটায় অমন একটা বক্স ঝুলতে। মেয়ের অমন কাকুতি মিনতি দেখে বিকাশ বাবুও আর না করে থাকতে পারলেন না। গেলেন মিনির সাথে সেই দোকানে।ওমা! দাম শুনে তো বিকাশ বাবু মনে মনে আকাশ থেকে পড়লেন! একটা পেন্সিল বক্সের দাম কিনা ত্রিশ টাকা! তাদের সময় এত বাহারি পেন্সিল বক্স ছিল না। মধ্যবিত্ত স্বভাববশতই দরদাম করতে লাগলেন। কিন্তু দোকানদারেরও ঐ এক কথা। এর কমে হবে না! মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে বিকাশ বাবুও অবশেষে মেনে নিলেন। মিনি নতুন পেন্সিল বক্স পেয়ে খুশি হলেও তার নিষ্পাপ সরল মনে একটা দ্বন্দ্ব তৈরী হল। সে ছোটো হলেও সে বোঝে তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা। সে ভাবলে সে তার বাবার বেশি খরচ করিয়ে দিয়েছে আজ। এই চিন্তাটাই ঐটুকু মেয়ের মনে এক অস্বস্তি বোধ তৈরী করে, একটা পীড়া দিয়ে ওঠে।
মিনি বাড়ি এসে তার ছোট্ট সাধের মায়ের তৈরী বটুয়াটা খোলে। গুনে গুনে দেখে মেরে কেটে বিশ টাকা আছে। এতে সে টাকা জমিয়ে রাখে। টিফিনের টাকা থেকে কিছু, আবার যখন দিদা আসে মিনির হাতে ভালোবেসে দশ টাকা ধরিয়ে দেয় বলে লজেন্স কিনে খাবি। কিন্তু মিনি সেই টাকা খরচ করে না। জমিয়ে রাখে। অনেক বড় কিছু কেনার আশায়।
' বাবা এই নাও এটা ধরো ' বলে মিনি নিজের থেকে কুড়ি টাকা তার বাবাকে দিতে যায়। বিকাশ বাবু হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে ' ওটা নিজের কাছেই রাখো' বলে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে যায়। কিন্তু যাবার সময় তার চোখের কোনটা একটু চিকচিক করে ওঠে যা ছোট্টো মিনির চোখ এড়ায় না । মিনি এর কারন বুঝতে পারে না। শুধু এইটুকু উপলব্ধি করতে পারে সে তার বাবাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে কোনো ভাবে। কিন্তু কী ভাবে তা ঐ টুকু মাথায় বুঝে উঠতে পারে না।
মাঝে অনেক বছর পেরিয়ে গেছে । আজ মিনি এক সন্তানের মা। আজ সে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করে সেই ছোট্টো বয়সে না বুঝে তার বাবার হৃদয়ের কোন জায়গায় সে আঘাত করে ফেলেছিল। নিজের সন্তানকে তার সাধের জিনিস দিতে না পারার কষ্ট হৃদয়কে কি নিদারুণ বিদীর্ণ করে !