Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.
Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.

মানসিকতার বদল

মানসিকতার বদল

4 mins
469


আজ মল্লিক বাড়িতে বিরাট আয়োজন। শিলিগুড়ি থেকে কলির শাশুড়িমা এখানে এসেছে। ওখানে ছোট ছেলের বাড়িতে থাকেন উনি। ছোট ছেলের ঘরে দুই মেয়ে। ছোট বৌমা ঘরের কাজকর্ম নিয়েই থাকে। বিয়ের পরে সে একটা ভালো চাকরি পেয়েছিল, কিন্তু তার স্বামী আর শাশুড়িমার আপত্তিতে তা আর হয়ে ওঠেনি। তবে উনার বড় বৌমা মানে কলি বিয়ের আগে থেকেই চাকরি করে। আর সেই চাকরির সূত্রেই কলির কলকাতায় থাকা। আর বড় ছেলে দীপঙ্করের চাকরিও তো এখানে। কলির চাকরি করা নিয়ে বাড়িতে অনেক মনমালিন্য হয়েছিল। কিন্তু কলির স্বামী দীপঙ্কর, কলিকে চাকরি করার ব্যাপারে কোনো বাধা দেয়নি। কলি আর দীপঙ্করের এক ছেলে আর এক মেয়ে। আর যাই হোক, শাশুড়িমার কথায় কলির কোলেই এ বাড়ির বংশধর মানে পুত্রসন্তান হয়েছে বলে কলি দাম পায়। নাহলে কলিকে গুরুত্ব দেওয়ার মানুষ ওর শাশুড়িমা নয়। কলি অবশ্য শাশুড়িমার কোনো খারাপ মন্তব্যকে অত গুরুত্ব দেয় না। আর ওর এই স্বভাবটার জন্যই ও অন্য অনেকের থেকে আলাদা। 

কলি আজ সকাল থেকে রান্নাঘরের কাজেই ব্যস্ত। আজ আর অফিসে যাবেনা কলি। আর কলিকে রান্নাঘরের কাজে সাহায্য করছে ওর দুই ছেলে মেয়ে, তিন্নি আর তাতান। তাতান পড়ছে একাদশ শ্রেনীতে, আর তিন্নি পড়ে নবম শ্রেনীতে। কলির দুই ছেলে মেয়েই খুব কাজের। কলির শাশুড়িমা দুই নাতি নাতনীর মায়ের হাতে হাতে কাজ করা দেখে খুব খুশী। তবে সেই খুশিটা তার বেশীক্ষণ টেকেনি, যখনই উনি দেখেছেন প্রায় সব কাজেই উনার একমাত্র নাতি এগিয়ে যাচ্ছে। উনার আপত্তি, তাতান কেন ছেলে হয়ে সংসারের এত কাজ করবে। তিন্নি করছে, তাতে উনার কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু তাতান এটা ঠিক করছে না। আজ বাড়িতে দীপঙ্কর নেই। অফিসের একটা জরুরী মিটিং থাকায় ইচ্ছে সত্ত্বেও বাড়িতে থাকা হয়নি। তবে বিকেলের মধ্যেই চলে আসবে। 

-----"বাবু, রান্নাঘর থেকে একটু ভাতের হাড়িটা নিয়ে এসে সবাইকে ভাতটা দাও। আমি স্যালাডটা তৈরি করি।"

-----"হ্যাঁ মা, এক্ষুনি আ,,,,," তাতানের কথাটা শেষ না করতে দিয়েই কলির শাশুড়িমা গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন- 

-----"একি বৌমা, আসার পর থেকে দেখছি, তুমি তাতানকে দিয়ে সংসারের এত কাজ করাচ্ছ। তিন্নিকে বলো।" 

-----"না মা,,,আসলে তিন্নি তো এতক্ষণ এখানেই ছিল। এই এক্ষুনি ওর ঘরে গেল।" 

-----"তাহলে আমায় বলতে পারতে তোমার কি কাজ করে দিতে হবে। তুমি তাতানকে কেন বলছ? এগুলো মেয়েদের কাজ। ও তো একটা ছেলেমানুষ। ওকে দিয়ে এইসব সংসারের কাজ করাবে কেন? 

-----"রাগ করবেন না মা, তাতান তো আর সংসারের বাইরের লোক নয়। তাহলে ও যদি সংসারে একটু বেশী কাজ করেই, তাতে আপত্তির তো কিছু নেই। কাজের আবার ছেলে মেয়ে ভাগ হয় নাকি?" 

-----"থাক্ বৌমা, তোমায় আর কিছু বলতে হবে না। এত বাজে কথা বলো তুমি, ঐ জন্যই তোমার কথার সাথে আমার একদম মিল খায় না। আমার বংশের প্রদীপ তোমার কাছেই তাই আর কি!" 

ঠাম্মির কথা শুনে এবার তাতান বলল- -----"ঠাম্মি আমি শুধু তোমার বংশের প্রদীপ নয়, তোমার আরো তিনটে বংশের প্রদীপ আছে। মেয়েরা ফেলনা নয় ঠাম্মি।" 

-----"হ্যাঁ, বুঝতে পারছি। তোর বৌ এসে এ বাড়িতে রাজরাণী হয়েই থাকবে। কারণ তুই তো বাইরের কাজ ছেড়ে ঘরের কাজ মানে সংসারের যাবতীয় কাজ করবি। তোর মা'ই তোকে এইসব শিক্ষা দিচ্ছে নাকি রে? " 

-----"ঘরের কাজ কি খারাপ নাকি ঠাম্মি? আর আজকাল ছেলে মেয়ে সকলেই বাইরে চাকরি করছে। তাহলে মেয়েরা যদি ঘরের কাজ করেও বাইরে চাকরি করতে পারে, যুদ্ধক্ষেত্রে বন্দুক চালাতে পারে, প্লেন উড়িয়ে নিয়ে চলে যেতে পারে, তাহলে ছেলেরা বাইরের কাজ করে ঘরের কাজ করতে পারবে না কেন? আর আমার সোনা ঠাম্মি, আমার বৌ যদি রাজরাণী হয়ে পায়ের ওপর পা তুলে থাকতে পারে, তাহলে তো আমারই গর্ব হবার কথা বলো! কারণ আমিই তো চাই আমার বৌ রাজরাণী হয়ে থাক। আচ্ছা বলতো, তুমি যদি এখন আমাদের বাড়ি এসে রাজরাণী হয়ে থাকো, তাহলে আমাদেরই ভালো লাগবে এই ভেবে যে, আমরা তোমাকে রাজরাণীর মত রাখতে পেরেছি। আমাদের মানসিকতা বদলের সময় এসেছে এবার। কি গো ঠাম্মি রাগ করলে আমার কথায়? এবারও বলবে, আমার মা আমাকে সঠিক শিক্ষা দেয়নি?" 

-----"আমি যদি এখানে কদিন আরাম করে থাকি, তাহলে সত্যি তোদের গর্ব হবে? নাকি মিথ্যে বলছিস?" 

-----"না গো না। তুমি এখানে ভালো থাকলে, সত্যিই আমাদের খুব ভালো লাগবে।" 

-----"জানিস তাতান, আমার জন্য এরকমভাবে কোনোদিন কেউ ভাবেনি। এমনকি তোর দাদু, বাবা-কাকারাও নয়। বসে খেলে কেই বা মুখে ভাত দেয়! কিন্তু আজ আমার তোর কথা শুনে চোখে জল চলে এলো রে সোনা। তোর মায়ের শিক্ষা বিফলে যাবেনা। সত্যি আমাদের মানসিকতার বদলটা খুব জরুরী। আর এইটা আমাদের গৃহকোণ থেকেই শুরু করতে হবে। তাহলে সমাজটাও ধীরে ধীরে বদলে উন্নতির চূড়া খুঁজে পাবে। খুব ভালো থাক সোনা। আর আশীর্বাদ করি, তোর বৌ যেন এবাড়িতে এসে রাজরাণী হয়েই থাকে।" 

নিজের ছেলে আর শাশুড়িমার কথা শুনে আজ কলির চোখেও জল এসে গেছে।


(আমাদের মানসিকতার বদল হলেই সমাজ ঠিক বদলাবে। তবে প্রথমে শুরুটা হোক আমাদেরই গৃহকোণ থেকে। নারী পুরুষের মধ্যে বিভেদের পাঁচিলটা আমরাই তৈরি করি। পুরুষ বা নারী হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসাবে আমাদেরই এই পাঁচিল ভাঙ্গতে হবে।) 


Rate this content
Log in