মা লক্ষ্মীর বাহন কেন পেঁচা ?
মা লক্ষ্মীর বাহন কেন পেঁচা ?
উত্তর ভারতের বলা হয় । সব দেবদেবী মতো বাহন পচ্ছন্দ করা সময় লক্ষী ঠাকুর বিপদে পড়েন কারণ তিনি খাদ্য এবং সমৃদ্ধির দেবী হওয়ায় , সবাই লক্ষীঠাকুরে বাহন হতে চায় । কিন্তু সেটাতো সম্ভব নয়। তাই তিনি শর্ত রাখলেন, কার্তিক মাসের আমবস্যায় তিনি যখন পৃথিবীতে আসবেন তখন তার কাছে যে প্রথম আসবে তাকে তিনি প্রথম বাহন করবেন। রাতের বেলায় অপেক্ষা করতে করতে বেশিরভাগ পুশুপাখিরা ঘুমিয়ে পরে। পেঁচা শুধু নীলাচল নয়। সে রাতে দূরের জিনিসও ভালো দেখে। ফলে সে দেবীকে দূর থেকে দেখে প্রথম তার কাছে পৌঁছে যায়।
হিন্দি ভাষায় পেঁচাকে উল্লু বলে। যার অর্থ বোকা। কিন্তু হিন্দু শাস্ত্র সে কথা বলা হয়না। পেঁচা আধ্যাতিক জ্ঞানের প্রতিক। সে দিব্য চোখের অধিকারি বলেই অন্ধকারে দেখতে পায়। অজ্ঞানতার অন্ধকারে ও সে জ্ঞানে আলো খুঁজে নেয়।রাতে প্যেঁচা ডাক আসলে জ্ঞান আহরণের আহ্বান। অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে আধ্যাতিক জ্ঞান জাগরনের আর্দশ সময় হলো রাত্রির। কারণ অন্ধকার এখানে গোপন করে আপনার সাধনাকে ।
তবে সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের। লক্ষ্মী ফসল বা খাদ্য শস্যের দেবী । এই খাদ্য শস্যের সবচেয়ে বড় শত্রু ইঁদুর এবং অন্যান্য কীটপতঙ্গের শিকার করে এই প্যেঁচা তাই সে লক্ষীর বাহন।
পেঁচাকে শুভশক্তির প্রতীক বলেছে শাস্ত্রেই । বলা হয়েছে, পূর্ব দিক থেকে পেঁচার ডাক ভেসে এলে সংসারের আর্থিক উন্নতির লক্ষন। যাত্রার সময়পেঁচার ডাক শোনা বা মাথার ওপর পেঁচা উড়লে গেলে যাত্রা শুভ হয়ে থাকে। আধ্যাত্মিক জগতের কাছে পেঁচা হল জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বুদ্ধি, প্রতিভা, অন্তর্দৃষ্টি, স্বাধীনতা, শক্তি ও সুরক্ষার প্রতীক। শাস্ত্রে বলে রাতের বেলা যখন সাধারণ মানুষেরা ঘুমিয়ে পড়েন, তখন সাধকেরা জেগে ওঠেন । নিঃশব্দ ও অন্ধকার পৃথিবী থেকেই জ্ঞানের আলো আহরণ করেন তাঁরা। পৃথিবীর বুকে ভোরের আলো ফুটে ওঠার সাথে সাথেই তাঁরা যোগনিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ঠিক একই কারণে, সাধকদের কাছে পেঁচা শুভ।
আবার অন্যদিকে বলা হয়লক্ষ্মীর অর্ধেক অংশ অলক্ষ্মী। লক্ষ্মী, ব্রহ্মার মুখের উজ্জ্বল অংশ আর তাঁর পিঠের অন্ধকার দিক থেকে আবির্ভূতা অলক্ষ্মী। লক্ষ্মীর পায়ের কাছে বসা পেঁচা অলক্ষ্মী এবং তার অশুভ প্রকৃতির প্রতীক। তন্ত্র-মন্ত্র-মারণ উচাটন-বশীকরণ ইত্যাদি কালাজাদুর মতো ঘৃণ্য কুসংস্কারে আচ্ছন্ন যাঁরা, তাঁদের দীপাবলির রাতে পেঁচাকে মেরে প্রাণীটির নখ ও হাড় সংগ্রহ করে। তাঁরা বিশ্বাস করেন পেঁচার শরীরের বিভিন্ন অংশে সঞ্চিত আছে অপরিমিত অশুভ শক্তি। পেঁচা হত্যা করে দেহাংশগুলি সংগ্রহ করে তাঁরা ভূত, প্রেত, দৈত্য, দানব, পিশাচদের নিজেদের বশে আনতে পারবেন। শত্রদের বিনাশ করার কাজে ব্যবহার করতে পারবেন । এঁরাই পেঁচাকে অশুভ শক্তির বলেছেন।
জ্যোতিষশাস্ত্রের লেখক মন্ত্রেশ্বরের কথায় পেঁচা শনিগ্রহের প্রতীক। কিছু শাস্ত্রকার মতে দিনেরবেলা ঘুমায় তাই পেঁচা জ্ঞানহীন, দিনের আলোয় চোখে দেখতে পায় না, সে আত্মিক দিক থেকে অন্ধ । দুঃখ ও একাকীত্ব পেঁচার চিরসঙ্গী।। নিশাচর পেঁচা বাস করে নির্জন স্থানে। নিঃশব্দে ওড়ে রাতের আকাশে। তার ডাক অশুভ। কিন্তু লিঙ্গপুরাণ থেকে জানা যায়, নারদ মুনি বলেছিলেন মানস সরোবরের নিকটবর্তী স্থানে বাস করা পেঁচাদের কাছ থেকে সংগীত শেখা উচিত।
ঋগ্বেদে অনুযায়ী, পেঁচা আসলে যমের দূত। যম অর্থ সংযম, যম মানে ধর্ম। ধনোপার্জনের সাথে সাথে সংযমবুদ্ধি ও ধর্মীয় চেতনা জাগ্রত রাখার প্রতীক হল পেঁচা। যমদূত পেঁচা তাঁর মৃত্যুচিন্তা ও আত্মচিন্তা জাগ্রত করে সাধকের মনে।
অন্যদিকে পেঁচা দিনকানা অর্থাৎ সে অজ্ঞান কারণ সম্পদ শালী হলেই মানুষ আধ্যাতিক জ্ঞান অর্জন থেকে দূরে থাকে। পেঁচা তাঁর প্রতীক। আবার জ্ঞান অর্জন করতে হয় গোপনে তার প্রতীক এই পেঁচা।