লোডশেডিং
লোডশেডিং
ধুপ করে লোডশেডিং। সবে বইটা খুলে আকবরের জীবনবৃত্তান্ত পড়তে বসেছিল রাজু।
মুখটা কালো করে বেড়িয়ে আসে দোচালা ঘর থেকে। মা মাটির উনুনে কি যেন রাঁধছে, কি আর ফেনগলা ভাতই হবে। রোজ রোজ ওসব মুখে রোচে না।
রাগ করে উঠোনে পাতা চাটাইতে বসে পড়ে। বাইরে ঠান্ডা। কোত্থেকে বাবা এসে বসে রাজুর পাশে।
- "কিরে,মুখ কালো কেন?"
- "ধুর,পড়তে বসলাম আর কারেন্ট ফুরুত।"
- "হুম,হারিকেন জ্বালাবো?"
- "না বাবা। আচ্ছা বাবা, আমরা একটা ইনভার্টার কিনতে পারিনা? আমার অন্ধকার ভালোলাগেনা।"
রাজুর বাবা চুপ থাকে। ছেলেকে অতো বোঝানো তো সম্ভব নয়, ওসব যে বড়োলোকের জিনিস।
- "কে বলেছে অন্ধকার? দেখ, খোলা আকাশটা দেখ কত্ত তারা,টিমটিম করে। আবার ওই দেখ জোনাকপোকা, আলোগুলো কেমন উড়ে উড়ে যাচ্ছে!"
- "ধুর, ওসব দেখে কি হবে!"
অনেক বছর পর।
- "কি গো,অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছো কেন?"
- "তারা দেখছি!"
- "মানে?"
- "এখানে বড্ড আলো দিশা। কখনো লোডশেডিং হয়না। মাঝে মাঝে অন্ধকারেও তো থাকতে ইচ্ছে হয়!"
- "কি যে বলোনা পাগলের মতোন। মুম্বাইতে লোডশেডিং হবে কি করে, সব বাড়িতে ইনভার্টার। পনেরোতলার এই ফ্ল্যাটে দাঁড়িয়ে তুমি এখন তারা দেখছো? সত্যি তুমি না।"
চোখ বন্ধ করে রাজীব অন্ধকার খোঁজে, জোনাক খোঁজে, আর কার একটা আওয়াজ খোঁজে।
খুঁজে পায়না, এই শহরে বড্ড আলো!