Nityananda Banerjee

Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Thriller

ললন্তিকা ধারাবাহিক

ললন্তিকা ধারাবাহিক

5 mins
264


পর্ব পঞ্চান্ন 🦋🦋


_সাহিত্যিক বসুরায়ের মত শয়তানেরও ভুল হয় তা হলে !

ললন্তিকা ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলল ।

আরণ্যক বসুরায় মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছেন । সত্যি সত্যিই পাণ্ডুলিপিটা মেরে দিয়েছে ললন্তিকা। তন্ন তন্ন করে লকার ঘেঁটে কোথাও পেলেন না । 

বাড়িতে গিয়েও ওটা পাওয়া গেল না । ললন্তিকাকে কি বলবেন ভেবে উঠতে পারছেন না। 

ললন্তিকা ব্যঙ্গ করে বলল - খুব স্মার্ট ভাবো নিজেকে - তাই না ? এত ওভারস্মার্ট হলে কবে থেকে ?

আরণ্যক নিজের মাথার চুল ছিঁড়ছেন । এ তো সাংঘাতিক মেয়ে ! কি কুক্ষণেই না তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল ! একবার হাতের মুঠোয় পেলে হয় ; কুচি কুচি করে কেটে কিমা বানিয়ে কাক শকুনকে খাওয়াব ।

ললন্তিকা আবার বলল - কি সাহিত্যিক ! খুব তো বলছিলে অরিজিনাল নয়; নকল করাটা নিয়ে গেছ ! এখন বুঝলে ? তুমি যদি ডালে ডালে ঘোরো ; তো আমিও চলি পাতায় পাতায় । ফেরৎ চাও নাকি ওটা ?

দিতে পারি। যদি যোগ্য মূল্য চোকাতে পার তো !

আরণ্যক বললেন - ললু প্লীজ ওটা ফেরত দাও । তুমি যা চাইবে আমি দেব। বল কত টাকা পেলে তুমি ওটা ফেরত দেবে ?

ললন্তিকা হাসল । মুক্তোঝরা দাঁতে সে এক অনাবিল হাসি । যেন সমুদ্রের শান্ত কালো জলে চাঁদের ছোঁয়া।

বলল - বেশী নয়, পঞ্চাশ লাখ নিয়ে চলে এস বীরভূমের ভীমগড়ে । খবরদার ! একদম চালাকি করবে না ! পুলিশকে যদি জানিয়েছ তবে তুমি আর আস্ত থাকবে না । জানো অন্তত তিনটে সিরিয়াস কেসের প্রমাণ আছে আমার হাতে । আবার কয়েকটা খুনের প্রমাণও আছে। অতএব সাধু সাবধান !

- না না না । ললু জানি তুমি আর আমাকে বিশ্বাস করবে না । কিন্তু লক্ষ্মীটি আমি কথা দিচ্ছি আমি নিজে গিয়ে তোমার হাতে মূল্য চুকিয়ে আসব ।

ললন্তিকা হাসবে নাকি কাঁদবে ভেবে পেল না।

বলল - এই নাম্বারের সিমকার্ড নষ্ট করে দেব। তার আগে জানিয়ে রাখি সঠিক কোথায় আসবে । সিউড়ি- রাণীগঞ্জ রোড বরাবর ভীমগড় টেশনের সামনে রাণীগঞ্জ যাবার পথে যে রেল- ক্রসিং আছে, সেখান থেকে একটু গেলেঈ অজয় নদীর ঘাট পাবে । তুমি রোড থেকে নেমে আগে যেখানে কাঁচা ব্রীজটা ছিল ; টোল আদায় করত, সেই কুঁড়ে ঘরে আসবে ।

দেখবে সাগরসৈকত দত্ত আর অরবিন্দ সরখেল দাঁড়িয়ে আছে । সাগরের হাতে পাণ্ডুলিপি থাকবে, আর টাকা বিনিময় করবে ওকেই । ওকে ?

আরণ্যক বসুরায় স্তম্ভিত হয়ে গেলেন । এ তো কোন মেয়ের বুদ্ধি নয়, নিশ্চয় ওই শয়তান অরবিন্দের মাথা থেকেই বেরিয়েছে বুদ্ধিটা । যাক আর একটু খেলিয়ে নিলে রেকর্ড কমপ্লিট হবে । আর সেই রেকর্ড পুলিশকে.... 

না না ! দেওয়া যাবে না । প্রাণ যেতে পারে । তিনি নিজের চাল দিয়ে বললেন - ললু ! আমি তো ভেবেছিলাম সাগরকে দিয়ে টাকাটা পাঠিয়ে দেব । আর ওই সাগরের হাতেই তুমি পাণ্ডুলিপিটা পেয়ে যাবে । খামোখা আমাকে নিয়ে টানাটানি করছ কেন ?

ললন্তিকা বোঝে ওর চালাকি । বলে - তা হলে সাগরকে তুমি পাঠাও; আমি না হয় প্রশান্তমোহনকে পাঠিয়ে দেব ?

- কে এই প্রশান্ত মোহন ? ওকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না । অরবিন্দও ওই নামটা বলেছিল । তবে কি অরবিন্দ নিজে আসবে টাকা নিতে ?

গর্বভরা হাসি দিয়ে ললন্তিকা বলল - অরবিন্দের আসল নাম কিন্তু প্রশান্ত মোহন । প্রশান্ত মোহন সরখেল সন অফ লেঠ অনন্ত মোহন সরখেল ; যাকে তুমি জলপাইগুড়ির জঙ্গলে কামাল ভাইকে দিয়ে খুন করিয়েছিলে -- মনে পড়ছে ?

বিষম খেলেন সাহিত্যিক আরণ্যক বসুরায় । ওরে বাপ রে ! অরবিন্দ লেখক অনন্ত মোহন সরখেলের ছেলে ! যার লেখা ' কেউটের ছোবল ' পাণ্ডুলিপিটা তিনি কামালকে দিয়ে হস্তগত করেছিলেন! মনে মনে ভাবলেন ' তোমার খেলা শেষ আরণ্যক । এবার বুঝি বাণপ্রস্থে যাবার দিন সমাগত ।

আরণ্যক আর বেশী কথা বলতে চাইলেন না । শুধু পাণ্ডুলিপি উদ্ধারের জন্য টাকা পাঠাবেন বললেন। কিন্তু তাঁর পক্ষে সাগর নয় অন্য কেউ যাবে ।

ললন্তিকা বলল - বেশ । তোমার যা ইচ্ছা । তবে হ্যাঁ , এই নাম্বারটা কিন্তু নষ্ট করে দিচ্ছি ।ফোন করলেও আর পাবে না । বলে ফোন ছেড়ে দিল ।

অরবিন্দ এবার খেল দেখাবে । এতক্ষণ একটি কথাও বলেনি। শুধু রেকর্ড করা ক্যাসেটটা হাতে নিয়ে এবার বলল - কখন আসবে ওরা কিছু বলল কি ?

- এই যা: । আনন্দের আতিশয্যে ও কথাটা তো বলা হয়নি !

আবার ফোন করল ললন্তিকা । আরণ্যক জিজ্ঞেস করলেন - তোমার প্ল্যাণ কি চেঞ্জ হয়ে গেল নাকি ?

- না, চেঞ্জ হয়নি । একটা এডেণ্ডাম আছে। আগামী শুক্রবার রাত দশটা নাগাদ যে জায়গাটার কথা বলেছি, তোমার লোককে সেখানে পাঠিও । বাই।

আরণ্যক আর কিছু শুধোবার আগেই ফোন সুইচ অফ করে রেখে দিল ললন্তিকা।

আর কোন যোগাযোগ করতে পারলেন না ।

অরবিন্দ সময় এবং স্থান বুঝে নিয়ে ললন্তিকাকে বলল - চল , আমাদের রাণীগঞ্জে যেতে হবে । ছুটি শেষ । 

- তার মানে ? এতক্ষণ ধরে যে বকবক করে গেলাম তার কি হবে ?

- বোকা মেয়ে ! আর কত বোকামি করবে ? তুমি কি ভাবছ আরণ্যক তোমার কথা মত কোন কাজ করবে ?

- হ্যাঁ, বললো তো ! যে ভাবে ইগারলি কথাগুলো শুনল তাতে তো মনে হল ওর পাণ্ডুলিপিটা চাইই। কারণ ওটা যে তার মারণাস্ত্র !

হা হা হা !

অরবিন্দ হাসতে হাসতে বলল - তোমার মত এত বোকা নয় আরণ্যক বসুরায়। ও খুব ভালো করে জানে পাণ্ডুলিপি আর কোনদিনই ও পাবে না । মাঝখানে ওর টাকা আর এক আধটা প্রাণ বলি হবে । দেখ গিয়ে জি পি এস থেকে লোকেশন ট্র্যাক করে এতক্ষণ সোজা পুলিশে গিয়েছে । আমাদের আর একটু খেলা দেখাতে হবে। আর সেই খেলা খেলব রাণীগঞ্জে গিয়ে । ওই শালা রেঞ্জারকে কিছু খেলা দেখানোর আছে।

- রেঞ্জার ?

- হাঁ । আশ্রমের কথা মনে কর । সন্ধ্যে বেলা। তুমি আমি গান গাইছি। ' মিলন হবে কতদিনে!'

হাঁ করে গিলছে অভয়ঙ্করবাবু। আরে আরণ্যকের সঙ্গীটি!

ললন্তিকার মনে পড়ল । দোহারা চেহারার সুঠামদেহী প্রৌঢ়কে । গুলির শব্দ শুনে যে দৌড়ে এসেছিল পিটের কাছাকাছি।

অরবিন্দ বলল - এই শালা লোকটাই যত নষ্টের গোড়া । বাবাকে যদি চাকরি থেকে বরখাস্ত না করত; হয়ত বাবা বেঁচে যেতেন ।

- তুমি বলছ অভয়ঙ্করবাবু মামাকে মেরেছে ?

- সে তো পরের কথা । আগে শোনো। বাবা যখন তার আণ্ডারে কেরাণীগিরি করত একদিন আমাকে নিয়ে যায় জঙ্গল দেখাতে । গিয়ে দেখি একটা গণ্ডারকে কয়েকজন মিলে জাল ফেলে আটকে রেখেছে । আর করাত দিয়ে গণ্ডারের খড়্গটা কেটে যাচ্ছে । আমরা দেখে ফেলি । তোমার কামাল ভাইও ছিল, সাগরও ছিল । আমি চেঁচিয়ে উঠতেই বাবা আমার মুখ চেপে ধরে । তারপর বলে ও গিয়ে ম্যানেজ করছে ।তারপর আমাকে একটা গাছের আড়ালে দাঁড়াতে বলে বাবা তো গেল । এদিকে এই পাণ্ডুলিপিটা আমার হাতে ছিল ।

- পাণ্ডুলিপি নিয়ে কেন গিয়েছিল মামা ? 

- বাবার ভীষণ বড় রকমের একটা স্বপ্ন ছিল লেখক হবার। বই বেরোবে। কাঁড়ি কাঁড়ি বই। বিক্রি হবে । নাম ছড়াবে। আর দুটো পয়সা কামাবে। তাহলে আর এই উঞ্ছবৃত্তি করতে হবে না ।

পাণ্ডুলিপিটা যে দেখেছিল আমার হাতে সে আর অন্য কেউ নয় ; এই আরণ্যক বসুরায় । কথায় আছে না জহুরী জহর চেনে ! লোকটা লুকিয়ে আমার কাছে এল । মাথায় রিভলভার রেখে বলল ' ওটা দে , নইলে বাপ ব্যাটা দুটোই মরবি ।' ভয়ে দিয়ে দিলাম। বাবা হাসতে হাসতে এল । হাতে অনেক টাকা। বলল ' চল বাড়ি যাই ' । ফেরার সময় আমার হাতে বই নেই দেখে বসে পড়ল। ( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller