Nityananda Banerjee

Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Thriller

ললন্তিকা ধারাবাহিক

ললন্তিকা ধারাবাহিক

5 mins
315


পর্ব একাশি।


কলেজ স্ট্রীট থানা ঘেরাও করে রেখেছে একটি রাজনৈতিক দলের সদস্যরা । তাঁরা জানতে চান তথাকথিত সাহিত্যিক আরণ্যক বসুরায়কে ধরা গেল না কেন ! 

মিঃ পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য ওসি মাইক নিয়ে বলে চলেছেন - পুলিশকে পুলিশের কাজ করতে দিন । অযথা গোলমাল বাধানোর চেষ্টা করবেন না । আমরা খবর পেয়েছি মিঃ আরণ্যক বসুরায় নয়ডার কোন জায়গায় লুকিয়ে আছেন। দিল্লী পুলিশ তাঁকে খুঁজে বেড়াচ্ছে । আপনারা থানা চত্বর ছেড়ে চলে যান; নইলে পুলিশ লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হবে ।

জনতা আরও ক্ষেপে গিয়ে জলের বোতল, ছেঁড়া জুতো , খবরের কাগজের টুকরো গুলি পাকিয়ে ছুঁড়তে লাগল । একটা পাথরের টুকরো এসে কাঁচের জানালা ঝনঝন করে ভেঙে দিল । পুলিশ যেন তৈরি হয়েই ছিল ; নিমেষে নির্বিচারে লাঠিচার্জ শুরু করল । 

অন্য থানা থেকেও প্রচুর পুলিশ, রেপিড অ্যাকশন ফোর্স এসে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করল ।

মিঃ পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য স্বস্তি পেলেন । পুলিশের উপরমহলে আবেদন করলেন রাণীগঞ্জ থানায় থাকা অরবিন্দ সরখেল নামের ছেলেটিকে কলেজ স্ট্রীট থানায় ফেরত দিতে । কারণ ওর নামে এখানে কেস ফাইল করা আছে। 

উপর মহল থেকে সে আবেদন নাকচ করে দিয়ে বলা হল একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে ওকে রাণীগঞ্জে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা-ছাড়াও যেহেতু সে আপনারই হেফাজত থেকে পালিয়েছে তার দায় তো আপনিও এড়িয়ে যেতে পারেন না ।

উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কথাগুলো মিঃ ভট্টাচার্য্য কনজিউম করে গেলেন এবং অরবিন্দ সমেত আরণ্যকের উপর রাগে ফুঁসতে লাগলেন ।

তিনি বিধাননগর থানায় ফোন করে জানালেন অরবিন্দ সরখেল নাকি রাণীগঞ্জে আছে।

মিঃ সন্তু মুখার্জী বললেন - হ্যাঁ, আমিও শুনেছি।

- কিন্তু এটা কেমন করে হয় ! এক জায়গার কেস অন্য জায়গায় হেফাজত - কেমন বিসদৃশ ঠেকছে না।

- কি করবেন বলুন , কর্তার ইচ্ছায় কর্ম । আবার শুনলাম আরণ্যক বসুরায় এখন নাকি দিল্লী সাইডে রয়েছে। আমি অনেকবার ফোনে ধরার চেষ্টা করেছি ; পাইনি। নেটওয়ার্ক কভারেজের বাইরে বলছে। আপনিও দেখতে পারেন ।

- এখনও কি ওই নাম্বার রেখেছে শয়তান ! দেখুন অন্য নাম্বার নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে । 

মিঃ মুখার্জী হাসলেন । পরমেশ্বর বললেন - আর কোন খবর আছে ?

- আছে তো ! বাংলাদেশের প্রাক্তন আই জি ভারতে আসবেন সরকারের আমন্ত্রণে । তিনি নাকি অরবিন্দের স্ত্রী ললন্তিকা সেনকে তাঁর বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন।

- ললন্তিকা সেন ! মনে পড়েছে। আমিই তো তাকে থানায় ডেকেছিলাম । তারপরই সে পালিয়ে গেছল ।

কথাবার্তা বেশ কিছুক্ষণ চলল । এমন সময় পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্যের ফোনে একটা ইনকামিং কল আসার শব্দ পেলেন । তিনি ফোন রেখে কল ধরার চেষ্টা করতেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল ।

মিঃ ভট্টাচার্য্য নিজে থেকে কল ব্যাক করলেন । বেশ কয়েকবার রিং হল। কেউ তুলল না বলে ছেড়ে দিলেন।

টেবিলে ফাইলের পাহাড় জমে আছে। মন তাঁর ভাল নেই। ফাইলের দিকে চেয়েও দেখলেন না । কিছুক্ষণ পায়চারি করে আবার এসে বসলেন চেয়ারে । হঠাৎ কিছু দূরে তাঁর কোয়ার্টারের দিক থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শুনলেন । নিমেষে লোকজন ছুটোছুটি শুরু করল । তিনি কিছুটা এগিয়ে আসতেই দেখলেন তাঁর কোয়ার্টারেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। তল্লাশি চালিয়ে দেখা গেল দুটো ডিটোনেটরের একটা ফেটেছে আর একটা তখনও ফাটেনি । পুলিশ ঘিরে ফেলল জায়গাটা। বোম্ব স্কোয়াডে লোকজন এসে তা কোনমতে নিষ্ক্রিয় করল । 

রাতে থানাতেই থাকতে হল তাঁকে। ঘর বলতে আর কিছু অবশিষ্ট নেই । ভাগ্যিস ফ্যামিলি ছিল না কোয়ার্টারে। মনে করতেই তার শরীর হিম হয়ে গেল ।

ঠিক তখনই একটা ফোন এল ।

- হ্যালো জী ! ম্যায় ঘনশ্যামদাস বলুছুঁ । ঘরমা ধামাকা হুয়া কি নেহি ?

পরমেশ্বর কিছু বলার আগেই ফোন কেটে দেওয়া হল । ফোনকলের উৎস খুঁজতে তিনি দেখলেন সম্পূর্ণ অপরিচিত একটি নাম্বার থেকে ঝরিয়া কোলফিল্ডসের একটি পি সি ও থেকে ফোনটি এসেছে।

লালবাজারে খবর পৌঁছে গেছে। ওঁরা এন আই এ কে খবর দিয়েছেন । কোন জেহাদী গোষ্ঠীর কাজও হতে পারে ।

পরমেশ্বর ভাবছেন কোলফিল্ড এরিয়া থেকে কল ! তায় আবার হুমকি কল ! ওসব জেহাদী লেহাদী গোষ্ঠী নয় । ডিটোনেটর কোলিয়ারীতে কয়লা ভাঙার কাজে ব্যবহৃত হয় । তিনি শুনেছিলেন আরণ্যক রাণীগঞ্জ থেকে উধাও হয়েছে। হতে পারে এটা তারই কোন দলের কাজ। 

নিজের সন্দেহটুকু জানিয়ে দিলেন উপর মহলে । তাঁকে রাণীগঞ্জ থানায় যোগাযোগ করতে বলা হল । তিনি মিঃ রঞ্জিত গুপ্তকে রাণীগঞ্জে ফোন করলেন ।

- ওয়েলকাম মিঃ ভট্টাচার্য্য! বলুন কি হেল্প চান ।

মিঃ ভট্টাচার্য্য আনুপূর্বিক সব ঘটনা অবগত করলেন ।

মিঃ গুপ্ত বললেন - দাঁড়ান দাঁড়ান। কে আপনাকে বিস্ফোরণের পর ফোন করেছিল বললেন ?

- সামওয়ান ঘনশ্যামদাস !

- ঘনশ্যামদাস ? আর কিছু বলেনি ? এই মানে ধরুন বাবুলাল ঘনশ্যামদাস ঝুনঝুনওয়ালা ?

- না তো । শুধু বলল ঘনশ্যামদাস বলুছুঁ ।

- হুমম্ বুঝতে পারছি । একটু চালাকি করেছে । ওই ব্যক্তি অন্য কেউ নয় । মিঃ আরণ্যক বসুরায় । এখানে কয়লার ট্রাক চুরি গেছে বলে ডায়েরী করতে এসেছিল বাবুলাল ঘনশ্যামদাস ঝুনঝুনওয়ালা নামে। আমরা ওর সিগনেচার ভেরিফাই করার জন্য হ্যাণ্ডরাইটিং এক্সপার্টের কাছে পাঠিয়েছি । আপনাকে বলেছে ঘনশ্যামদাস। গুজরাটি ভাষায় কথা বলেছে ।

- পুরোপুরি গুজরাটি না হলেও হিন্দি গুজরাটি মিলিয়ে বলেছে। মিঃ গুপ্ত আমারও সন্দেহ হয়েছে লোকটা আরণ্যকই হবে । বহুরূপী তো ! যেমন এখন শুনছি সে নাকি মুখে প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে আদল চেঞ্জ করেছে। তেমনই গলার স্বরে পরিবর্তন আনতেও এক্সপার্ট। ধুরন্ধর লোক ।

- ইয়েস মিঃ ভট্টাচার্য্য ! নো ডাউট এ পারফেক্ট ক্রিমিনাল। তবে আমরা রাণীগঞ্জ আসানশোল দুর্গাপুরসহ পাশাপাশি এলাকাগুলোতে চিরুণী তল্লাশি করেও তার টিকিটিও পাইনি । আমার ধারণা এখন সে এ সব এলাকায় নেই । দিল্লী পুলিশও অতিশয় সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তথাপি এখনও সন্ধান পায়নি ।

মিঃ পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য একটু হতাশ হলেন যেন । 

- শুনেছি ললন্তিকা সেন এবং সে এখন নয়ডা না গুরগাঁও কোথাও রয়েছে।

মিঃ গুপ্ত বললেন - নয়ডায় ছিল । কাণ্ড বাধিয়ে আপাতত ফেরার । তবে শুনলাম ললন্তিকা নাকি ওখানে এক পাঞ্জাবী ভদ্রলোকখে বিয়ে করে সুখে আছে।

- ওর নয়ডার বাড়ির ঠিকানা এবং ফোন নং দিতে পারবেন ? 

- দেখি যদি পাই তো দিয়ে দেব । আপনি ললন্তিকার নাম্বার চাইছেন তো ? আমি পাঁচ মিনিট পর আপনাকে দিচ্ছি । গুড বাই।

পরে মিঃ গুপ্তর মনে পড়ল অরবিন্দের নং তো তাঁর কাছে আছে। সেটাই দিয়ে দি । আর অরবিন্দ তো ললন্তিকার সব ঘটনা জানে ; বলতে পারবে সেইই।

তিনি মিঃ ভট্টাচার্য্যকে ফোনে অরবিন্দের নং দিয়ে বললেন - এ ব্যাটা সব জানে। ওকে একবার ঘেঁটে নিন।

মিঃ পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য খুশি হলেন । ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন রাখলেন।

এরপর মিঃ পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য অরবিন্দের নাম্বারে ফোন করলেন ।

অরবিন্দ এই নাম্বারটা চেনে । মিঃ পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্যের ফোন । তুলবে কি তুলবে না ভাবছিল । ফোন বাজছে দেখে অভয়ঙ্করবাবু অরবিন্দকে বললেন - কি হল প্রশান্ত, ফোন তোল !

অরবিন্দ বলল - মিঃ পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য ওসি কলেজ স্ট্রীট।

তখন অভয়ঙ্করবাবু ওর হাত থেকে ফোন নিয়ে বললেন -  বলুন মিঃ ভট্টাচার্য্য ! যাকে ফোন করেছেন সে এখন টয়লেটে ব্যস্ত । আপনার নাম্বার দেখে তুলেই নিলাম।

- আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না!

অভয়ঙ্করবাবু হেসে বললেন - যাকে ফোন করেছেন তাকে গত ডিসেম্বরে কোন এক সন্ধ্যায় অরবিন্দকে আপনার হাতে তুলে দিয়েছিলাম; মনে পড়ে ?

- ওও আপনি রেঞ্জার সাহেব ! অরবিন্দ কি আপনার কাছে থাকে না কি ?

- এই নিন। ও এসে গেছে কথা বলুন।

ফোন হাতে অরবিন্দ হ্যালো বলতেই পরমেশ্বর বললেন - কি রে ! বেশ মজাতেই আছিস , তাই তো ? তোর বৌটা তোকে ছেড়ে দিয়েছে? ওর নাম্বারটা দে তো ! কথা বলতে হবে ।

বেশী কথা না বলে অরবিন্দ সোজাসুজি ললন্তিকার নাম্বার দিয়ে বলল - যত খুশি কথা বলুন। তবে জেনে রাখুন আরণ্যক বসুরায় ওকেও ছেড়ে চলে গেছে। বাকিটা ললন্তিকাই আপনাকে জানাবে ।

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller