Nityananda Banerjee

Thriller

4.2  

Nityananda Banerjee

Thriller

ললন্তিকা ধারাবাহিক

ললন্তিকা ধারাবাহিক

5 mins
416


পর্ব একষট্টি

সাগর বলে চলেছে আরণ্যকের গুণগান। সঙ্গে অরবিন্দের উত্থান। 

- স্যার ! অরবিন্দের আর একটা পোষাকি নাম আছে :; যা সে সচরাচর ব্যবহার করে না । প্রশান্ত মোহন সরখেল । আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম। বলেছিল ডাক নামেই সে নাকি বেশী পরিচিত। যাই হোক , অরবিন্দকে দলে পেয়ে সকলেই খুশি । বিশেষত জামির । কেন না সেই সেদিন ওকে গুলি করেছিল । আরণ্যক স্যারের মন জয় করতে । আমি বাঁচিয়ে দিতে খুব খুশি হয়েছিলেন তিনি । 

আরণ্যক পাণ্ডুলিপি পেয়ে কিছু সংশোধন এবং পরিমার্জন করে কেউটের ছোবল প্রকাশ করেছিলেন । শুনেছি স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী নাকি ওর উদ্বোধন করেছিলেন।

সেই থেকে স্যারকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি । এত রোজগার করেছেন যে দল ছেড়ে দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু দলের কোন কর্মীকে ছাড়েননি । সবসণয় যোগাযোগ রেখে চলেছেন এবং একটার পর একটা অসামাজিক কাজ করিয়েছেন । তাঁর পক্ষে যাওয়া কাজের লোককে যেমন বকশিশ দিয়েছেন বিরুদ্ধে গেলে মরণও দিয়েছেন ।

পরমেশ্বর ধৈর্য্য ধরে সব শুনছিলেন। প্রশ্ন করলেন - মরণ ? যেমন ?

- জামির, জাহিরুল, সদ্য মারা যাওয়া কামাল । আর এবার টার্গেট অরবিন্দ আর তার স্ত্রী ললন্তিকা।

- ললন্তিকা ! মানে ললন্তিকা সেন? 

- হাঁ স্যার । ললন্তিকা অরবিন্দের পিসতুতো বোন আর অরবিন্দ ওরফে প্রশান্ত মোহন ললন্তিকার মামাতো ভাই। অথচ দেখুন স্যার ওরা ভাই-বোনে কেমন স্বামী-স্ত্রী হয়ে থেকে গেল । ললন্তিকাকে স্যার আমিই এনেছিলাম আরণ্যক স্যারের কাছে। ও লেখালেখি করত আর স্বপ্ন দেখত একদিন বড় লেখিকা হবে, জমিয়ে কামাবে। ললন্তিকাকে দেখেই স্যার তো লুফে নিলেন । আমাকে ইনাম দিয়ে বিদায় করলেন । তারপর আমাদের আর কোন যোগাযোগ ছিল না । আমার বা তাঁর কারুরই প্রয়োজন হয়নি হয়তো । আমি একটা ওষুধের দোকান দিয়েছি জলপাইগুড়ি শহরে । ভালোই রোজগার হয় । অপকর্ম আর করি না ।

সেদিন আরণ্যকের খবর নিতে অরবিন্দ আমাকে ফোন করে । আবার কাকতালীয় ভাবে আরণ্যকের ফোনও পাই। অরবিন্দ সিদ্ধান্ত বদল করলেও আরণ্যক আমাকে এই ব্যাগ দেন।

পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য বললেনৎ- আজকের মত বেঁচে গেলি । পরের প্রশ্নগুলোর যা জবাব চাইব তার উপর ডিপেণ্ড করছে এই সাঁড়াশি ব্যবহার করব কি করব না ।

সাগর অনেকটা হাল্কা হল । আরণ্যকের জন্য কোন অনুতাপ তো নয়ই ; বরং এমন একটা কীট যত তাড়াতাড়ি নষ্ট হয় ততই যেন মঙ্গল । তার ভবিতব্য তো লেখাই হয়ে গেল ।

মিঃ ভট্টাচার্য্য বললেন - পাণ্ডুলিপি চুরির কোন কেস পাইনি যদিও; মনে হয় অরবিন্দ বা ললন্তিকা একটা মামলা করতে পারে । লেটস এওয়েট ।

সাগরকে বললেন - কি যেন বললি ! অরবিন্দের আসল নাম?

- প্রশান্ত মোহন সরখেল স্যার ।

- তোরও কি এমন কোন নাম আছে নাকি ?

- আছে স্যার । আমারও আসল নাম সমুদ্রসৈকত দত্ত। সেটাই এখন সাগর দত্ত হয়ে গেছে।

- ও তাহলে সাগর দত্ত হাসপাতাল কি তোর নামেই ?

পরমেশ্বর ইয়ার্কি করে বললেন।

সাগর বলল - কি যে বলেন স্যারৎ! কোথায় হরিদ্বার আর কোথায় গুহ্যদ্বার । আমি তো একটা নরকের কীট।

- বাহ্ বাহ্ । খুব সুন্দর গুছিয়ে খথা বলিস তো তুই !

নে এবার তোর ফোন থেকে অরবিন্দ বা ললন্তিকা কিম্বা আরণ্যক - তিনজনের কাউকে একটা ফোন কর তো ; দেখি উত্তর দেয় কি না বা দিলেও কে দেয় ?

সাগর প্রথমে আরণ্যককে ফোন করল । ভাবল ফোন তুললে বলে দেবে সে তাঁর জন্য পুলিশের জালে আটক হয়ে গেছে । দুবার তিনবার ফোন করে 'সুইচ অফ' জেনে নিল ।

এরপর ললন্তিকাকে করলেও তারও ফোন সুইচ অফ পাওয়া গেল ।

শেষে অরবিন্দকে ফোন করতেই ফোন তুলে অরবিন্দ গালাগাল শুরু করল ।

- শালা কোথায় আছিস তুই ? আমি ফোন করে করে হয়রান হয়ে গেছি । খবর জানিস ? আরণ্যক ললন্তিকাকে নিয়ে আবার পালিয়ে গেছে !

- সে কি রে ? ললন্তিকাকে ও পেল কোথায় ?

- এখানেই আমার কাছে ছিল । শালা পটিয়েপাটিয়ে রাতারাতি পালিয়ে গেছে । সকালে ঘুম ভেঙে উঠে দেখি ওরা নেই ।

পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য ঈশারা করে সাগরকে জেনে নিতে বললেন অরবিন্দ এখন কোথায় আছে ?

সাগর ফোনে বলল - তুই কোথায় আছিস রে বাঞ্চোত ?

- দেখ সাগর ! এমনিতেই আমার মাথা গরম হয়ে আছে ; গালাগাল দিলে ক্ষেপে যাভ বলছি।

- আচ্ছা , ঠিক আছে ঠিক আছে, তুই আছিস কোথায় ?

- আর বলিস না । দেশের বাড়ি থেকে পুলিশের চোখে ধূলো দিয়ে কি ভাবে যে এখানে এসে পড়েছি ভাবতে পারছি না । বেশ রয়েছি এই গীতা আশ্রমে । খাইদাই গান গাই আর ঘুমাই ।

- গীতা আশ্রম ! সেটা আবার কোথায় ? মানে কোন জায়গায় ?

- পুলিশের মত এত জেরা করছিস কেন রে ? বলব না। কি জানি বেটা ধরা পড়ে গেছিস না ?

সাগর কোন উত্তর দেয় না । পরমেশ্বর সাগরের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে নিজের পকেটে রেখে দেন ।

সাগর তাকিয়ে থাকে । বলে - স্যার বাড়িতে একটা খবর দিয়ে নি স্যার । নইলে ওরা খোঁজাখুঁজি করবে।

পরমেশ্বর আপন নামের অমর্য্যাদা করলেন না । এ যাবৎ সাগর যা যা বলেছে বিশ্বাসযোগ্যতার মাপকাঠিতে তা' পাশ করেছে । তিনি ফোন ফেরৎ দিয়ে বললেন - ঠিক আছে। এই নে, বাড়িতে কথা বলে ফোন জমা করিস।

সাগর বাড়িতে ফোন করল । ফোন করে যা জানল তাতে তার বুক ফেটে চৌচির হয়ে গেল । 

- ওরে বাবারে ! এ আমার কি হল রে ! 

বলে হাপুসনয়নে কাঁদতে লাগল ।

মিঃ পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য শুনতে পেয়ে এলেন। সাগর বলল - সর্বনাশ হয়ে গেল স্যার । ইকবাল নামে আরণ্যকের আরেক সাগরেদ বাড়িতে এসে বৌ-বাচ্চাটাকে শেষ করে দিয়ে গেছে।

পরমেশ্বর হতবাক । বললেন - কেন ?

- ইকবাল বলেছে সাগর থানায় গেছে বলে এই হত্যাকাণ্ড।

- আরণ্যকই তো তোকে থানায় আসতে বলেছিল ?

- হাঁ । আর নিজে না এসে ইকবালকে দিয়ে --

আর কথা বেরোল না । সাগর কেঁদে কেঁদে অজ্ঞান হয়ে গেল ।

পরমেশ্বর বললেন - স্বর্গই বল আর নরক - সবই এখানেই।

এম্বুলেন্স ডেকে সাগরকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিলেন।

সাগরের কথা ভাবতে গিয়ে তাঁর মনে পড়ে গেল ললন্তিকাকে নিয়ে আরণ্যক পালিয়ে গেছে। অরবিন্দ তাই তো বলল সাগরকে । তিনি বিধাননগর থানায় মিঃ সন্তু মুখার্জীকে ফোন করলেন ।

- আরণ্যক বসুরায়ের নামে একটা কমপ্ল্যান পড়েছে আপনার থানায় । আপনি ফ্যাক্স করে জানিয়েছিলেন

- হ্যাঁ হ্যাঁ। কিছু খবর আছে নাকি ?

- খবরের কি শেষ আছে মশাই ? এই দেখুন না আরণ্যক বসুরায় সাগর বলে একটি ছেলেকে থানায় পাঠিয়েছে আমার কাছে, সেই সুযোগে ওর বৌ-বাচ্চাকে ইকবাল নামে এক দুষ্কৃতিকে দিয়ে খুন করিয়েছে। আমি সাগরকে বলেছিলাম আরণ্যককে ফোন করতে; সুইচ অফ করে রেখেছে ক্রিমিনালটা। ললন্তিকা নামের মেয়েটার ফোনও সুইচ অফ আছে । শেষে অরবিন্দকে ফোন করতে গেলে আমার কথামত সাগর যখন ওকে জিজ্ঞেস করল কোথায় আছে ; তখন বলল গীতা আশ্রমে। জায়গাটার নাম বলল না । ইপনার এ বিষয়ে কোন ধারণা আছে ?

সন্তু মুখার্জী বললেন - গীতা আশ্রম ! লেট মি থিঙ্ক।

তার কিছু পরে বললেন - ইয়েস। পেয়েছি । এই গীতা আশ্রমে আমি একবার রেইড করেছিলাম। তখন আমি রাণীগঞ্জে ছিলাম । প্লীজ হোল্ড অন । আমি রাণীগঞ্জে যোগাযোগ করছি । পারলে এক্ষুণই রেইড করতে বলছি।

সন্তু মুখার্জী রাণীগঞ্জ থানায় ফোনে সব জানিয়ে দিয়ে পরমেশ্বরকে বললেন - বলে দিয়েছি। ওরা বেরিয়ে গেছে গীতা আশ্রমের দিকে।

হঠাৎ সাগর বলল - স্যার আপনার এক কনস্টেবল আমাকে ছেড়ে দেবে বলে দু'হাজার টাকা নিয়ে গেছে।

পরমেশ্বর বললেন - হোয়াট ?

- হাঁ স্যার, তাকে আর দেখছি না যে !

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller