Nityananda Banerjee

Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Thriller

ললন্তিকা ধারাবাহিক

ললন্তিকা ধারাবাহিক

5 mins
473


পর্ব পঁচানব্বই


মি: গুপ্ত ওসি রাণীগঞ্জ থানা সেকেণ্ড অফিসার অধীর বাবুকে ফোনে বললেন - অধীর বাবু আপনি এখন কোথায় আছেন ?

মি: গুপ্তর ফোন পেয়ে অধীর বাবু একটু চিন্তিত হলেন । এর আগে কোনদিন তিনি এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হননি,বললেন - বেড়াতে এসেছি , দাসনগরে ।

- বিশেষ কারণবশত আপনার ছুটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। আপনি আগামীকাল থানায় রিপোর্ট করুন । বাংলাদেশ থেকে সেখানকার প্রাক্তন আই জি মি: দেবেন্দ্র ভৌমিক সাহেব এখানে এসেছেন । তিনি থানার স্টাফেদের সঙ্গে পরিচিত হতে চেয়েছেন । সেইজন্য আপনাকে ডিসটার্ব করলাম ।

অধীর বাবু বললেন - তিনি এসেছেন তো ঠিক আছে, আমার সাথে পরিচিত হয়ে কি হবে !

- দেখুন সেসব বলতে পারব না । তবে উপরমহল থেকে নির্দেশ আছে তিনি যা বলবেন লোকাল পুলিশকে তাই করতে হবে । আমিও তো ছাই বিরক্ত হয়ে আছি।

অধীর বাবু বললেন - আপনি বলছেন তাই যাব। নইলে পাত্তাই দিতাম না ।

- ভেরি সরি অধীর বাবু। আপনাকে এত রাতে ডিসটার্ব করলাম বলে ।

- দ্যাটস ওকে । গুড নাইট।

মিঃ গুপ্ত গুড নাইট বলে সংযোগ কাটলেন এবং ট্রু-কলারে দেখে নিলেন তিনি কোথাও যাননি , রাণীগঞ্জেই আছেন ।

এবার তিনি ভৌমিক সাহেবকে ফোনে বললেন - স্যার, ইউ আর রাইট । অধীর বাবু ছুটি নিয়ে কোথাও যাননি ; যদিও বললেন দাসনগরে গেছেন, কিন্তু আমি ট্রু-কলারে দেখলাম তিনি রাণীগঞ্জেই আছেন । 

- হুমম্ ! আচ্ছা মিঃ গুপ্ত, বেয়াই মশাই বলছিলেন মাস তিনেক আগে চারটি ষণ্ডামার্কা গুণ্ডাদের আপনি অ্যারেস্ট করেছিলেন কয়লা বোঝাই লরি চুরির কেসে ?

- হ্যাঁ স্যার । সামওয়ান বাবুলাল ঘনশ্যামদাস ঝুনঝুনওয়ালা নামের এক ব্যক্তি থানায় সে ব্যাপারে ডায়েরী করতে এসেছিলেন । আমি অধীরবাবুকে ডায়েরী নিতে বলেছিলাম। 

- ডায়েরীটা আপনি দেখেছিলেন ?

- না তো স্যার । অধীর বাবু নিয়েছিলেন। তারপর ছেলেগুলো বলেছিল আরণ্যক বসুরায় ওই নামে ডায়েরী করতে এসেছিলেন -

তাঁর কথার সুত্র ধরে মিঃ ভৌমিক বললেন - বুঝেছি। নামটা কি বাবুলাল ঘনশ্যামদাস ঝুনঝুনওয়ালাই লিখেছিলেন না কি অন্য নাম লিখেছিলেন , দেখুন তো!

মিঃ গুপ্ত ডায়েরী দেখে বললেন - না স্যার এখানে দেখছি লেখা আছে ' ডাবুলাল বনোয়ারীদাস খাণ্ডেলওয়াল ' ।

মিঃ ভৌমিক লাফ দিয়ে উঠলেন - ইমিডিয়েটলি কিপ মিঃ অধীর আণ্ডার অ্যারেসস্ট । হি ইজ সিওরলি ইনভলভড ইন দ্য কেস অফ ফ্লাইং মিঃ বাবুলাল ঘনশ্যামদাস ঝুনঝুনওয়ালা ফ্রম হিয়ার । বি কুইক এণ্ড পুট হিম আণ্ডার লক আপ ।

মিঃ গুপ্ত বললেন - ওকে স্যার। গুড নাইট।

মিঃ গুপ্ত এক ভ্যান পুলিশ নিয়ে অধীর বাবুকে ধরতে রওনা দিলেন । অধীর বাবুর রেসিডেন্সে এসে দেখলেন পাখি উড়ে গেছে । 

ইস্ কি বাজে ব্যাপার হয়ে গেল ! মিঃ গুপ্ত ভাবলেন এবার তিনি মুখ দেখাবেন কি ভাবে ?

সর্ষের মধ্যেই যদি ভুত থাকে তবে সেই সর্ষে দিয়ে কি ভুত তাড়ানো যায় !

তিনি আবার মিঃ ভৌমিককে ফোন করলেন - স্যার অধীর বাবু পালিয়েছে !

- জানতাম। ও পালাবেই । ঘুষ খেয়েছে যে ! ঠিক আছে ওর জন্য চিন্তা নেই। আপনি এবার রেস্ট নিন ।

অভয়ঙ্করবাবুকে বললেন - দেখলেন বেয়াই মশাই, দুর্নীতি মানুষের কেমন রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। সামান্য কয়েকটা টাকার জন্য একটা আতঙ্ককে ছেড়ে দিয়েছে!

অভয়ঙ্করবাবু বললেন - সে তো সব জায়গাতেই আছে। আমাদের পরিকল্পনার কথা বলুন।

মি: ভৌমিক বললেন - ললন্তিকা সেন সপরিবারে কিছুদিন আপনাদের বাড়িতে ছিল । কিছু কথা নিশ্চয়ই বলেছে আপনাদের ; তার অন্তত দু'চারটে কথা যা জানেন আমাকে বলুন ।

মিঃ অভয়ঙ্কর সরকার বললেন - বেয়াই মশাই, দু'চারটে কথা নয়; পুরো ইতিহাসটা বলে দিয়েছে , তবে আমাকে নয় বাড়ির মেয়েদের । তার নারীসত্ত্বার কথা তো আমাকে বলতে পারে না । আমি আমার স্ত্রীর মুখে সব শুনেছি ।

- তার মধ্যে কোন কথাগুলো আপনার মনে দাগ কেটেছে ?

মিঃ সরকার বললেন - তার জীবনের যৌবনকালের প্রথম দিকটা অরবিন্দ এবং তারপর আরণ্যক বিরাজ করছিল । আরণ্যকের কর্মকাণ্ডে বিব্রতও হয়েছিল , আবার পরবর্তীকালে ওই আরণ্যকের পাল্লায় পড়ে সজ্জন সিং এর কাছে বিক্রিত হয়েছিল । সেখানেও আরণ্যকের শোষণ থেকে মুক্তি পায়নি ওরা । তবে সবচেয়ে বেশী আশ্চর্য্য হয়েছি ললন্তিকার দেখা একটি ঘটনায় ।

- কি রকম ?

- গতবার সজ্জনের সঙ্গে ললন্তিকা কুম্ভমেলায় গিয়েছিল কুম্ভস্নানের জন্য । ললন্তিকা নাকি সেখানে আরণ্যককে দেখেছিল এক নাগা সন্ন্যাসীর বেশে । 

- নাগা সন্ন্যাসী ? মানে যে সন্ন্যাসীরা উলঙ্গ থাকেন ?

- হ্যাঁ বেয়াই মশাই। আমি শৈলকে ( ওনার স্ত্রী ) বলেছিলাম ললন্তিকাকে সজ্জনের কাছে রেখে আরণ্যক তো প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে নিয়েছিল মুখের আদল বদল করে নিতে ; ললন্তিকা তো তা' দেখেনি, তবে কি ভাবে ও বুঝল ওই নাগা সন্ন্যাসীই আরণ্যক বসুরায়?

শৈল প্রথম দিকে বলতে ইতস্তত করছিল । পীড়াপীড়ি করতেই যা বলল তাতে আমার চক্ষু যেন চড়কগাছ হয়ে গেল ।

মিঃ ভৌমিক বললেন - ভেরি ইন্টারেস্টিং তো ! কি বললেন বেয়ান ঠাকরুন?

- শৈল বলল আরণ্যক এবং ললন্তিকার মধ্যে দৈহিক ঘনিষ্ঠতা এত বেশীবার হয়েছিল যে উভয়ে উভয়ের দেহের প্রতিটি খাঁজ নিখুঁত ভাবে মনে রেখেছিল ললন্তিকা বলেছিল আরণ্যকের পুরুষাঙ্গে একটা ডড় লাল জড়ুল ছিল ; আর তার গঠন দেখেই নাকি অনুমান করে নিয়েছিল হি ওয়াজ মিঃ আরণ্যক বসুরায়, দ্য রাইটার এণ্ড পাবলিশার।

মিঃ ভৌমিক লাফিয়ে উঠলেন - ইউরেকা ইউরেকা! আমার অস্ত্র আমি পেয়ে গেছি । ওই ললন্তিকাই পারবে ওকে ধরিয়ে দিতে । সেইজন্য ওকে প্রস্তাব দিয়েছি গঙ্গাসাগর মেলায় যেতে ।

- কিন্তু বেয়াই মশাই ! আপনি কি ভাবে সিওর হলেন আরণ্যক গঙ্গাসাগর মেলায় যাবে ?

মিঃ ভৌমিক চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন - একদিন আরণ্যক আমাদের ফোন করেছিল - এই এখানে আসার আগের সপ্তাহে । পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আমন্ত্রণে আমি যে কলকাতায় আসছি ; কোন ভাবে সে তা জানতে পারে । আমাকে বাধা দেয়; হুমকিও দেয় । রজনী যখন বলে আমরা কপিল মুনির আশ্রমে পূজো দিতে যাব ; আরণ্যক বলেছিল তবে এস সেখানেই তোমাদের ভবলীলা সাঙ্গ করে দেব ।

মিঃ সরকার বললেন - অরবিন্দের মুখে শুনেছি ওর বাবা অনন্ত মোহন ওকে বলেছিলেন আরণ্যক বসুরায় তাকে বাধ্য করছে নাগা সন্ন্যাসী হয়ে থাকতে । সে যেহেতু ওই বেশে আছে তাই সহযোগীকেও নাগা সাজতে বলেছে।

মিঃ ভৌমিক বললেন - তা'হলে একে একে দুই হয়েই গেল ।ললন্তিকাও আসছে। এবার আরণ্যকের আর কোন পথ খোলা রইল না । একবার যদি তাকে জানিয়ে দেওয়া যেত যে ললন্তিকাও আসছে তবে আরও ভালো হোত ।

মিঃ অভয়ঙ্কর সরকার বললেন - বলবেন না । কেন জানেন ! আরণ্যক অত্যন্ত ধুরন্ধর প্রকৃতির । ললন্তিকাকে দেখলে কেটে পড়তে পারে । বরং তার অজ্ঞাতেই অপারেশন করুন ।

মিঃ ভৌমিক বললেন - বেশ , তাই হবে । বেয়াই মশাই একবার থানায় যেতে হবে ।

-- থানায় ? কেন ? মিঃ গুপ্তকে ডেকে পাঠালেই তো হয়। 

- থানার সেকেণ্ড আফিসার অধীর বাবু পলাতক গতকাল রাত থেকে । তাকে পেলে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা যেত - কেন তিনি ঘুষ খেয়ে আরণ্যককে রাণীগঞ্জ থেকে পালাতে সাহায্য করেছিলেন !

- অধীর বাবু ? এমেজিং! তাঁকে দেখে তো তেমন মনে হয়না !

মিঃ ভৌমিক বললেন - পুলিশের গোয়েন্দা হতে হলে সর্বপ্রথম এ টু জেড সবাইকেই সন্দেহের তালিকায় রাখতে হয় । গতকাল মিঃ গুপ্তকে বলেছিলাম যে যে পুলিশ অফিসারের সঙ্গে আরণ্যকের যোগাযোগ ছিল তার তালিকা দিতে । ওসি এসি বেশ কয়েকজনের পর যখন বললেন আমাদের সেকেণ্ড অফিসার অধীর বাবুর সঙ্গে আরণ্যকের কথা হয়েছিল ; তখনই সন্দেহ করলাম। তাঁকে ডাকতে বলায় বললেন তিনি ছুটিতে আছেন। বললাম ছুটি নেবার কারণ কি, এই সময় তিনি হঠাৎ ছুটি নিলেন । দরখাস্তে কারণ ছিল - ডিউ টু অবভিয়াস রিজন ' । আর তিনি রাণীগঞ্জেই ছিলেন । পুলিশ ওকে ধরতে গেলে তিনি পালিয়ে যান ।

মিঃ সরকার বললেন - সত্যিই ! কি বিচিত্র এই দেশ !

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller