STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

ললন্তিকা ১০৯ পর্ব

ললন্তিকা ১০৯ পর্ব

5 mins
392

একশত নয় পর্ব


পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্যের কথাই ঠিক । নয়ডা পুলিশ ট্রানজিট রিমাণ্ডে ললন্তিকাকে হেফাজতে নিল । ফলে পুনরায় ললন্তিকা চলল নয়ডায় । 

অভয়ঙ্কর বাবুরা সদলে কৃষ্ণপুরের বাড়িতে এসে খবরের কাগজ পড়ে জেনে গেলেন ।

- কি সাংঘাতিক মেয়ে রে বাবা ! নিজের মেয়েকেও ছাড়ল না !

বনলতা দেবী ভীষণ আক্ষেপ করে বললেন ।

গোপালবাবু বললেন - তাই তো শুনছি । এই ধরণের মেয়েরা কখনোই সংসারী হয় না , হতে পারে না । সজ্জন সিং এর বোঝা উচিত ছিল । এত মহানুভবতা না দেখালেই পারত ।

অভয়ঙ্কর বাবু এতক্ষণ শুনে যাচ্ছিলেন বিভিন্ন কথা । কোন মন্তব্য করেননি । এবার তিনি বললেন - অনেক সময় দেখা গেছে অপরাধ না করেও পরিস্থিতির চাপে তথাকথিত কিছু অভিযুক্ত মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে না পেরে সব দোষ নিজের উপর চাপিয়ে নেয় ।

গোপালবাবু বললেন - দেখুন বেয়াইমশাই, আমি নিজে ওকালতি করে চুল পাকালাম । আপনার কথা অনেকাংশে সত্য হলেও হতে পারে । অনেক সময় পুলিশি অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে কেউ কেউ মুচলেকা দিয়ে দেয় ।

অভয়ঙ্কর বাবু বললেন - মেয়েটাকে যতটুকু স্টাডি করতে পেরেছি আমার ধারণা - নিজেকে সংসারী করতে পেরেছিল ললন্তিকা । এক্ষণে পুলিশের উচিত আসল সত্য উদঘাটন করা । আমি পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্যের মুখে যা শুনেছি স্বীকারোক্তি দিতে ওর উপর কোন চাপ সৃষ্টি করা হয়নি । উনি আমাকে গ্রেপ্তারীর পরের ঘটনাগুলো বলেছেন। তাতে আমার মনে হয়েছে ললন্তিকা নিজের মেয়েকে মারেনি । তবে হ্যাঁ, টাকার লোভ ওর বরাবরই ছিল ; অঢেল সম্পত্তি থাকা সত্বেও টাকা নিয়ে ওর একটা লালসা বজায় ছিল ।

ইতিমধ্যে দেবেন্দ্র ভৌমিকের ফোন এসে যাওয়ায় কিছুক্ষণের জন্য আলোচনা স্থগিত হয়ে যায় ।

মিঃ ভৌমিক ফোনে গোপাল বাবুকে বলছিলেন - দাদা, আপনাদের ওখানে কি হচ্ছে এ সব ? ভেবেছিলাম আরণ্যক চলে যাবার পর সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে । এ যে দেখছি নতুন উপসর্গ দেখা দিয়েছে ।

গোপাল বাবু বললেন - ঠিক বলেছ ভায়া । আসলে আমরা চিন্তাই করিনি ললন্তিকা আবার এমন কাণ্ড বাধিয়ে বসবে ।

মিঃ ভৌমিক বললেন - অনেক জনের গলার স্বর শুনতে পাচ্ছি । মনে হচ্ছে যেন কোলাহল হচ্ছে । দাদা! আর কিছু হয়নি তো ?

- ওহোহো, তোমাকে তো বলাই হয়নি । রাণীগঞ্জ থেকে বেয়াই বেয়ানরা এসেছেন । ভরাভর্তি ঘর- কোলাহল তো হবেই ।

অভয়ঙ্কর বাবু আর থাকতে না পেরে গোপাল বাবুর হাত থেকে ফোন নিয়ে বললেন - আপনারা ভালো আছেন তো বেয়াই মশাই ?

মিঃ ভৌমিকের খুশির গলা শোনা গেল । 

- আরে রাণীগঞ্জের ছোট বেয়াই মশাই ! অনেকদিন পর এমন গুরুগম্ভীর ইলার স্বর পেলাম । তারপর ? আপনাদের খবরাখবর বলুন ।

- আগে আপনাদের কুশল জেনে নিই। কেমন আছেন সবাই? দিদি কেমন? আর আপনার ছেলে মেয়ে ?

সব উত্তর দিলেন মিঃ ভৌমিক । বললেন - ছেলের বিয়ে দেব । সম্বন্ধ পাকা হলেই যাচ্ছি আপনাদের ওখানে । বিয়ের নেমন্তন্ন জানাতে ।

- কি আনন্দের খবর দিলেন বেয়াই মশাই । যাব তো নিশ্চয় । আমরা দল বেঁধে যাব । পারলে পাড়া-পড়শীর দু'চারজনকেও নিয়ে যাব ।

তারপর উঢয় প্রান্তে কিছু হাসাহাসির শব্দ পাওয়া গেল ।

অভয়ঙ্কর বাবু বললেন - এখানের ঘটনা শুনেছেন নিশ্চয় ?

- শুনেছি । স্বনামধন্য মেয়ে তো ! তাই অবিশ্বাস করতে পারছি না ।

অভয়ঙ্কর বাবু বললেন - তা তা বলেছেন । তবে এবার আমার মনে হচ্ছে ললন্তিকা তার মেয়েকে খুন করে নি ।

- তা হলে কে করেছে বলে আপনার মনে হয় ? সজ্জন সিং কেন পালিয়ে গেল ?

- বেয়াই মশাই সবই তো তদন্ত সাপেক্ষ । আর আমার চেয়ে আপনিই আরও ভালো ভাবে নির্ধারণ করতে পারবেন । তবে আমার মনে হচ্ছে ললন্তিকা তার আদরের একমাত্র মেয়েকে মারবে কেন ? এমন তো নয় ওর মেয়ে সাবালিকা, হয়তো তার মত কোন উল্টোপাল্টা কাজ করে বসেছে । চার পাঁচ বছরের মেয়েকে কেন খুন করবে ?

মিঃ ভৌমিক বললেন - সে তো আপনি বুঝছেন; হয়তো আমিও বুঝছি । কিন্তু তার স্বীকারোক্তি যে আদালতকে প্রভাবিত করবেই - এটা আমি হলফ করে বলতে পারি।

- আচ্ছা বেয়াই মশাই! কোন ভাবে আমরা কি ওকে হেল্প করতে পারি ? না না, আমি ওর কুকাজের সমর্থন করছি না । স্রেফ এই একটি ঘটনার সত্যাসত্য নির্ধারণ করাতে পারি না ?

- অবশ্যই পারেন । তবে আপনাকে তো সাক্ষ্য প্রমাণ দিতে হবে। আর ভারতের পুলিশ কি সেই দায় নেবে ? আগে এটা ভাবুন।

- বেয়াই মশাই ! আপনার উপদেশ পেলে কিছু চেষ্টা করে দেখতে পারি । বাই দ্য ওয়ে, আপনার কি মনে আছে অরবিন্দ সরখেল নামের যাদুকরকে ?

- অরবিন্দ সরখেল ? মানে ওই স্কাউণ্ড্রেল প্রশান্ত মোহন ?

- ঠিক ধরেছেন । পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্যের মুখে শুনলাম ওর বাবা অনন্ত মোহন সরখেল নাকি তাঁর কাছে এসে অভিযোগ দায়ের করে গেছেন যে ললন্তিকারা ওর টাকাকড়ি সব আত্মসাৎ করে নিয়েছে ।

- তাই নাকি ? যদি তাই হয় তবে ললন্তিকা নিজের মেয়েকে মারবে কেন ? ও তো অনন্তকেই মেরে দিতে পারত !

- সেটাই তো আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। আর এখানেই আমি সর্ষের মধ্যে ভুত দেখছি । বেয়াই মশাই! পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্যের সঙ্গে তো আপনার দারুন আলাপ আছে ; একটিবার তাঁর মাথায় এই ভুতটা চাপিয়ে দিতে পারবেন ?

- আচ্ছা, আমি কথা বলব । 

- আমাদের জানাবেন কিন্তু ! এই নিন, এবার বড় বেয়ানের সঙ্গে কথা বলুন ।

অভয়ঙ্কর বাবু ফোন বনলতা দেবীর হাতে দিয়ে খুশী মনে ভাবতে বসলেন । পরমেশ্বরকে যদি মানিয়ে নেওয়া যায় তবে কিছুটা আশার আলো দেখতে পাব।

পটকা তার কাকাবাবুর পাশে বসেছিল । বলল - কাকাবাবু! ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর স্বভাবটা আপনার গেল না । কি দরকার বলুন তো, মিছিমিছি ঝামেলায় জড়িয়ে ? ওদের ব্যাপার ওদেরকে বুঝতে দিন।

অভয়ঙ্কর বাবু তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে পটকার দিকে চাইলেন ।

- ও সব বোঝার মত মানসিকতা তোর নেই । স্কুলের সিলেবাসের বাইরেও অনেক কিছু জানার আছে ।

খোঁচা দিয়ে বললেন । পটকা বেমক্কা প্রেস্টিজ খুইয়ে গোমড়া মুখে উঠে গেল ।

পটকার হাতে ঝটকা দিয়ে অভয়ঙ্কর বাবু বললেন - অমনি মুখ ভার হয়ে গেল ! আরে তোর মত বয়সে ইমি বাবার কাছে তোর মায়ের সামনে চড় থাপ্পড় খেয়েছি । এতে প্রেস্টিজ খোয়ানোর কিছু পাইনি। চুপচাপ বস ।

পটকা বলল - সে আপনি যা ভালো ভেবেছেন করেছেন। আমি তার জন্য উঠে যাইনি ।

- তবে ?

- টয়লেটে যাব বলে উঠেছি । 

- ওও । যা যা। নইলে আবার এখানেই ছেড়ে দিবি ।

পটকা চলে গেল । অভয়ঙ্কর বাবু পরমেশ্বরকে ফোনে ধরবার চেষ্টা করলেন । 

পরমেশ্বর যখন রাণীগঞ্জের ওসি ছিলেন তগন থেকেই তার সঙ্গে পরিচয় । এখন তো কলেজ স্ট্রীট থানার দারোগা। ফোন করছেন। বিজি পাচ্ছেন । বিরক্ত না করে কল্যাণীকে বললেন - মা গো ! এক কাপ হবে নাকি?

কল্যাণী বলল - চা না কফি ?

অভয়ঙ্কর বাবু বললেন - সবাই যা খাবে । নইলে আমার তো ইচ্ছে চাফি ।

- চাফি ? সেটা আবার কি ?

- আরে বুঝলি না ? এক কাপ চায়ে এক চামচ কফি মিশিয়ে নিয়ে আয় ।

কল্যাণী হাসতে হাসতে বলল - ও এই ব্যাপার ! দিচ্ছি ।

( ক্রমশঃ)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime