STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

ললন্তিকা ১০৭ পর্ব

ললন্তিকা ১০৭ পর্ব

5 mins
246

পর্ব একশত সাত


অপারেশন পরবর্তী সময়ে অভয়ঙ্কর বাবু, গোপালকৃষ্ণ বাবু এবং সজ্জন সিং - এরা সকলেই যে যার গৃহে ফিরে গেলেন ।

সকলেই যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। আরণ্যক বসুরায় মৃত । রেডিও টেলিভিশনে সেই ছবি এবং বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে। টিভিতে তো প্রতি মিনিটের ব্রেকিং নিউজ এটাই ।

পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন স্বস্তিতে । পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য স্বস্তি পেলেও শান্তিতে নেই । তিনি শুনেছেন অরবিন্দ সরখেল মৃত । তবে ছেলেটাকে বিশ্বাস নেই । সাংঘাতিক স্বভাবের ডাকাবুকো শয়তান একটা । হয়তো শুনব মরার ভান করে পড়েছিল; পুলিশ খেয়াল করেনি আর সুযোগ পেয়ে সে আবার গা ঢাকা দিয়েছে।

সময় হলে বেরিয়ে আসতে পারে। তার যত রাগ তো পরমেশ্বরের উপর ।

কথাটা মিথ্যে নয় । মাস ছয়েক পর জানা গেল নয়ডার সজ্জন সিংএর বাড়িতে আবার হামলা হয়েছে । এবার আর টাকাকড়ি গয়না নয় খোদ সজ্জন সিং এর স্ত্রীকে নিয়ে কেউ পালিয়ে গেছে ।

সজ্জনের মেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে পড়ে আছে । তাকে নিয়ে নাকি যমে মানুষে টানাটানি চলছে ।

কোন সুত্র পেয়ে নয়ডা পুলিশ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে সতর্ক করে দিয়েছে । রেল স্টেশন, এয়ার পোর্ট এবং দেশের সব বাসস্ট্যাণ্ডে চলছে চিরুণী তল্লাশি । হোটেল রেস্টুরেন্টগুলোও ছাড় পাচ্ছে না ।

পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য অতিরিক্ত সতর্কতা জারি করতে গিয়ে নিজেই বিপদ ডেকে আনলেন । কৃষ্ণপুরের বাড়িতে হানা দিতেই ললন্তিকাকে পাওয়া গেল । 

রুদ্র তখন রাণীগঞ্জে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গেছে। কৃষ্ণপুরের বাড়িতে বৃদ্ধ গোপালকৃষ্ণ চাকলাদার এবং তাঁর 

পত্নী বনলতা দেবী দু'জনই রয়েছেন । হঠাৎ ললন্তিকার আগমনে তাঁরা যারপরনাই বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করতে যাবেন ললন্তিকা বলল - ভীষণ বিপদে পড়ে আছি মেসোমশাই। 

বনলতা দেবী বললেন - তোমার স্বামী এবং মেয়েও এসেছে বুঝি ?

- না মাসীমা ! ওদের নিয়েই তো বিপদে পড়েছি । মেয়ে এখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে । আর সজ্জনকে কে বা কারা অপহরণ করে নিয়ে গেছে ।একলা ঘরে থাকতে পারছিলাম না । তাই চলে এলাম। মেয়ে তো পুলিশি পাহারায় রয়েছে। তাই আমাকে থাকতে দেয়নি ।

গোপালকৃষ্ণ বাবু একরকম অবাকই হলেন । মেয়ের কাছে মাকে থাকতে দেবে না - সে কেমন হাসপাতাল আর সেখানকার প্রশাসনইবা কেমন !

সজ্জন সিং অপহৃত । মেয়ে অসুস্থ সবই মেনে নেওয়া গেল । কিন্তু ললন্তিকার এমন অকস্মাৎ সব ছেড়ে চলে আসা - তাও আবার অল্প পরিচিতের ঘরে ----

নাহ্ ব্যাপারটা ভালো মনে হচ্ছে না । গোপালবাবু আইনজীবী। অনেক কিছু প্রশ্ন করতেই পারতেন । কিন্তু তা না করে বনলতা দেবীকে বললেন - তুমি ওর থাকার জায়গাটা করে দাও । আমি একটু বাজার করে আনি । অত দূর থেকে মেয়েটা এসেছে । না জানি পেটে কিছু পড়েছে কি না ।

গোপাল বাবু একটা থলে হাতে বাজারে বেরিয়ে গেলেন । 

কিছু পথ পেরিয়ে এসে থানায় ফোন করলেন । পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য ফোন ধরে বললেন - কে বলছেন ?

গোপাল বাবু পরিচয় দিয়ে বললেন - আরণ্যক বসুরায়ের আত্মীয় ।

পরমেশ্বর বললেন - জানি জানি। আপনি আইনজীবী গোপালকৃষ্ণ চাকলাদার তো !

গোপাল বাবু এরপর ললন্তিকার ঘটনা সব বলে দিলেন। 

পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। সঙ্গে চারজন মহিলা কনস্টেবল। 

দরজায় ধাক্কা দিতেই বনলতা দেবী দরজা খুলে দিলেন ।

পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য কোন রাখঢাক না করে ডাকলেন - মিসেস ললন্তিকা সিং গুজ্জর ! বেরিয়ে আসুন । আমরা থানা থেকে আসছি ।

ললন্তিকা সব শুনেছে। ফ্রেশ হতে জাস্ট টয়লেটে ঢুকেছিল । আগের অবস্থাতেই বাইরে বেরিয়ে এল । পুলিশ দেখে অবাক হয়ে গেল । বলল - কি ব্যাপার ! আসতে না আসতেই আপনারা যে ! ব্যাপার জানতে পারি কি ?

পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য বললেন - মোটেও না । অত্যন্ত গোপনীয় ব্যাপার । আপনাকে আমাদের সঙ্গে এখনই থানায় যেতে হবে ।

- কিন্তু এটা তো বলবেন কোন অপরাধে আমায় থানায় যেতে হবে ?

- সে থানায় গেলেই বুঝতে পারবেন । নাউ হারি আপ । 

- কিন্তু ...

- কোন কিন্তু টিন্তু নয় । যা বলছি করুন । এই যে মিস রশ্মি ! ওনাকে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে তুলুন । 

তারপর বনলতা দেবীকে বললেন - আপনাদের মস্ত বড় ফাঁড়া কেটে গেল । এবার দরজা বন্ধ করে দিন । চলি ।

বনলতা দেবী হাঁ হয়ে দেখলেন শুধু। কিছু বলার মত ভাষা খুঁজে পেলেন না । শুধু এক অজানা আশঙ্কায় স্বামীর ফিরে আসার অপেক্ষা করতে লাগলেন।

পুলিশ ললন্তিকাকে নিয়ে চলে যাবার পর গোপালকৃষ্ণ বাবু ঘরে ঢুকলেন । 

স্ত্রীকে বললেন - জানতাম এমনটাই হবে । আজ সকাল থেকে আমার বাঁ চোখ নাচছিল । যাক বাবা বেঁচে গেছি ।

বনলতা দেবী অবাক হয়ে বললেন - শুধু শুধু মেয়েটাকে ধরে নিয়ে গেল ।

- শুধু শুধু পুলিশ কাউকে ধরে নিয়ে যায় ? নিশ্চয় কোন কারণ আছে । কিন্তু ভাবছি --

- কি ?

- পুলিশকে খবর দিল কে ! তুমি তো দাওনি নিশ্চয় ।

- আমি? না তো! পুলিশকে খামোকা কেন খবর দিতে যাব ?

- তা'হলে ? কে দিল ? ললন্তিকা তো পাড়ায় ঢাকঢোল পিটিয়ে আসেনি । লুকিয়ে চুরিয়ে এসেছিল ।

- তাই তো ! ও তো চোরের মতই এসেছিল । তবে কে পুলিশকে জানাল ?

- বাড়িতে আমরা এখন দু'টি প্রাণী। তুমি আর আমি । আর তুমি বলছ খবর তুমি দাওনি । তবে তো বাকি রইলাম আমি।

- মানে ? তুমি পুলিশ ডেকেছ ?

- ডাকব না ? স্বামী সন্তান ফেলে রেখে কোন মেয়ে দূর দেশে যাত্রা করে ? আমার মনে হল কোন একটা গণ্ডগোল তো করেই এসেছে । আর আসবি আয়, আমারই ঘরে ?

তাই আমি পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছি । আর পুলিশের তৎপরতা দেখে তো আমি নিজেই অবাক হয়ে গেছি । মাত্র কয়েক মিনিটেই একশন ! মনে হয় ওখানকার পুলিশ আগে ভাগে এখানকার থানাকে সতর্ক করে দিয়েছে ।

বনলতা দেবী নতুন চিন্তায় পড়লেন । আর যাই হোক ললন্তিকার সঙ্গে আরণ্যকের যে ঘনিষ্ঠতা ছিল তা'তে তার মনেও যে দুর্বৃত্তায়ন হয়নি এ কথা স্পষ্ট করে বলা যায় না ।

হয়তো পুলিশ ও আইনের হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য ললন্তিকা বাধ্য হয়ে বা নিরুপায় হয়ে এখানে এসেছে।

যাক বাবা ! যা হয়েছে ভালই হয়েছে। নইলে আজ এখানে কাল রাণীগঞ্জে পরশু দেবেন্দ্রের ওখানে ----

দেবেন্দ্র ভৌমিকের কথা মনে হতেই বনলতা দেবী গোপাল বাবুকে বললেন - হ্যাঁ গো ! ঘটনাটা একবার দেবেনকে জানালে হত না ? তেল, ঝাল, মশলা সবেতেই তো ওকে জড়ানো হয় । তাছাড়া ক্রাইম সম্বন্ধে ওর আনুপূর্বিক ধারণা আছে। আর ধারণাই বা বলি কেন ও তো এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ!

গোপাল বাবু ক্ষণিক চিন্তা করলেন । বললেন - ঠিক কথাই বলেছ ! দেখি রাতের দিকে কথা বলব । তার আগে রুদ্র ও তার শ্বশুর বাড়িতে খবরটা দেওয়া দরকার।

খবর কিন্তু রুদ্রর কাকাশ্বশুর অভয়ঙ্কর বাবু অলরেডি পেয়ে গেছেন। 

শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তি বলে অভয়ঙ্কর বাবুর মাঝে মাঝেই থানায় ডাক পড়ে । খনি অঞ্চলের থানা । ক্রাইমের স্বর্গোদ্যান । সেখানে রামা, শ্যামা, যদু ,মধুদের বিনা দোষে পুলিশ ধরে নিয়ে আসে । তাদের হয়ে কথা বলতে যান তিনি। আর নিরপরাধীরা তখন থানা থেকে ছাড়া পায় । 

সুতরাং গোপাল বাবু খবর দেবার আগেই অভয়ঙ্কর বাবু বলেন - বেয়াই মশাই আপনারা নিরাপদেই আছেন তো ?

ভাববেন না আমরা কালই আপনাদের ওখানে যাচ্ছি । 

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime