Sanghamitra Roychowdhury

Comedy Inspirational Others

3.3  

Sanghamitra Roychowdhury

Comedy Inspirational Others

লকডাউনের রোজনামচা ৪

লকডাউনের রোজনামচা ৪

3 mins
852


ডিয়ার ডায়েরি, ২৮শে মার্চ, ২০২০... লকডাউনের চতুর্থ দিনে "আমার পোষ্যরা"


আমার বেশ কটি পোষ্য আছে। যদিও আমার ফ্ল্যাটটি অত্যন্ত ছোট বলে তাদের ঘরে রাখা যায়নি, তবুও তারা আমার অতিপ্রিয় পোষ্য। গোটা কয়েক রোডেশিয়ান কুকুর, দুটি বেড়াল, দু-চারটি হনুমান, কয়েকটি কাক... সংখ্যাটা কমা বাড়া করে। কুকুরদের বরাদ্দ ভাত - রুটি - মাছ বা মাংস - বিস্কুট, বেড়ালদের বরাদ্দ ভাত - মাছ, হনুমানদের বরাদ্দ আলু - কলা - বিস্কুট, কাকেদের বরাদ্দ রুটি - বিস্কুট। এই সব বরাদ্দের হেরফের হয়, রোজই একই রকম হবে তেমন নয়। যখন যেমন বা যেদিন যেমন থাকে তাই খেতে দিই, তবে দুবেলাই। শুধু কাকেরা দেখি বিকেলের দিকে কেউ আসে না। বাকিরা নিয়মিত, ঠিক সময়ে একেবারে ফ্ল্যাটের নীচে দাঁড়িয়ে থাকে ব্যালকনির দিকে মুখ করে। আমাদের পরিবারের যে কেউ একজন নীচে নেমে গিয়ে খাবার দিয়ে আসি। ছুটির দিনে অসুবিধা হয় না, তবে কাজের দিনে আমাদের বাড়ির ডোমেস্টিক হেল্পারই এই কাজটি করে। বর্তমানে এই লকডাউনের পরিস্থিতিতে ডোমেস্টিক হেল্পাররা তো আসছে না। তাই আমরাই খাবার দিতে নামছি। অদ্ভুত ব্যাপার, প্রাণীগুলো যে খাবার দিতে যাচ্ছে তার পিছনে দেখছে... ওরা আমাদের ডোমেস্টিক হেল্পারকে খুঁজছে বুঝতে পারছি। তবে কিছু একটা বুঝেছে এই কদিনে নিশ্চয়ই... এখন আস্তে আস্তে খাবার দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেয়েই নিচ্ছে। এই পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু এর পরের ঘটনাটি সত্যিই দুর্দান্ত, শিক্ষণীয় ও বিস্ময়কর!


আমাদের পাড়ার গলির মুখে কয়েকটি ফাস্টফুড ও টিফিনের খাবারের দোকান আছে। দুবেলাই বসে ঐ দোকানগুলো। আর ঐ দোকানগুলোর সামনে কটা কুকুর সর্বক্ষণই থাকে। এবং ওখান থেকেই ঐ কুকুরগুলো সারাদিনের খাবার নিয়মিত পায়। আর ওখানে ওরা পাড়ার ভেতর দিকের অন্যান্য সব কুকুরদের মোটেই ঘেঁষতে দেয় না। ছিটকে কেউ ওদের এলাকায় ঢুকে পড়লে চিৎকার করে ওরা তাড়া করে তাড়িয়ে দেয়। একেবারে গুণ্ডাটাইপ। আর পাড়ার কুকুরগুলোও একরকম ভয়েই ওদিকে ঘেঁষে না। সেই ভয় পাওয়া কুকুরদের দলে আমার পোষ্যগুলোও আছে। ওরা কোনো হুজ্জুতি পছন্দ করে না, তাই এড়িয়েই চলে ঐ গুণ্ডামার্কা কুকুরগুলোকে। কিন্তু সমস্যা হলো এই লকডাউনের কারণে আপাতত ঐ সবকটা খাবারের দোকান বন্ধ। সুতরাং ঐ গুণ্ডামার্কা কুকুরগুলো খাবারও পাচ্ছে না। এবার তারা পাড়ার ভেতরে ঘুরঘুর করছে, যদি কোথাও কিছু খাবার দাবার মেলে, সেই সন্ধানে। তবে ঠিক সাহস পাচ্ছে না পাড়ার অন্য কুকুরের খাবারে গিয়ে সরাসরি মুখ দিতে, পাছে পাড়ার কুকুরেরা এখন ওদের ওপর শোধ তোলে। একটু দূরে দাঁড়িয়ে ক্ষিদেয় কাতর কুকুরগুলো। দেখে আমার খুব মায়া হলো। আজ কয়েকটা বাড়তি রুটি নিয়ে নেমেছিলাম সকালে আর ছিঁড়ে ভাগ করে যখন সবাইকে ডেকে খেতে দিলাম, ওদেরকেও ডাকলাম... এবং আশ্চর্য, আমার পোষ্যরা একটু সাইড ছেড়ে দাঁড়ালো। কোনো চিৎকার চেঁচামেচি নেই, রাগে গরগর নেই, কিচ্ছু নেই। অবাক কাণ্ড! আরো অবাক হওয়ার বাকি ছিলো। সন্ধ্যেবেলায় দেখি সবাই একসঙ্গে দল বেঁধে ফ্ল্যাটের নীচে জড়ো হয়ে গেছে। আমার পোষ্যদের সাথে মিলেমিশে ঐ গুণ্ডাকুকুরবাহিনী দিব্যি একসাথে প্রবলবেগে লেজ নাড়ছে। খাবার নিয়ে গিয়ে একজায়গাতেই দিলাম ঢেলে। আমার মেয়ে হাতে করে একটা ছোট লাঠি নিয়ে গিয়েছিলো, পাছে ওরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া মারামারি জুড়ে দেয় খাবারের ভাগ নিয়ে। আমিও যে একেবারে এই আশঙ্কাটা করছিলাম না তা নয়। কিন্তু আমাদের সব আশঙ্কা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে সবাই মিলেমিশে এক জায়গা থেকেই খেয়ে নিয়ে লেজ নাড়তে আবার বিদায় নিলো। কোনো ঝঞ্ঝাট ঝামেলা চিৎকার চেঁচামেচি না করেই... সবাই বন্ধু হয়ে গেছে। সবাই লাইন করে শুয়ে গড়াগড়ি করছে আমাদের ফ্ল্যাটের গ্যারাজের সামনের বাঁধানো চাতালটায়। আজ দেখলাম, দেখে শিখলাম... বিপদের দিনে কি করে এক হয়ে যেতে হয়, দুঃস্থকে অসহায়কে সাহায্য করতে হয়! হ্যাটস্ অফ... লালু, কালু, ভুলো, পঞ্চা, টুকি। আর ওয়েলকাম গুণ্ডাবাহিনী... এদের এখনো নামকরণ করে উঠতে পারিনি।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy