Manab Mondal

Abstract Classics

4.6  

Manab Mondal

Abstract Classics

লাল নাইটি

লাল নাইটি

7 mins
1.3K


লাল একটা নাইটি পড়েছে ও। শরীর কোন অংশ কে গোপন রাখার আষ্ঠাতা নেই ওর পোশাকের, ওকে ভয়াবহ লোভনীয় করে তুলেছে ওর পোশাক ওকে।আমাকে অনেক বেশি অস্বস্তিতে ফেলেছে। তুব কে কি পোশাক পরবে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিছু দিন আগে সোস্যাল মিডিয়া দেখলাম, বাংলার তিন মহিলা প্রার্থী পোশাক নিয়ে অনেক হাসাহাসির পোস্ট। এটাই বোধহয় মেলিজ্যাম, মানে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের আসল চেহারা। নেত্রী মানে শাড়ি পড়তে হবে এ কেমন কথা, নেত্রী হবার উপযুক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা বা অন্যান্য গুনাগুন বিচার না করে, পোশাক নিয়ে অত মাথা ব্যাথা কিসের? একটি ছেলে যখন তার জাঙ্গিয়ার ব্রান্ডের বিজ্ঞাপন করে, তখন চোখে পরে না, কিন্তু অসাবধানতাবশত ব্রা এর ফিতা দেখা গেলে দোষ। 

যাই হোক ওর নাম টা "ওই ", আসলে শেষের দিকে ওকে "ওই " বলেই ডাকতাম। Sc কোটাতে polytechnic সুযোগ পেয়েছি। অঙ্কে কাঁচা। কলেজে বন্ধু বান্ধব কম কারন, আমি অতটা মেধাবী না। সেটা বুঝেই হয়তো বানিজ্য বিভাগে ভর্তি করেছিল বাড়ি থেকে। পরে low নিয়ে পড়ানোর জন্য পরিকল্পনা ছিলো। আমি জোর করেই ভর্তি হয়েছি এখানে, ফলে একটা চ্যালেঞ্জ। এদিকে N.c.p তে একটা ডিসিপ্লিন ছিলো। ডিসিপ্লিন না বলে সংস্কৃতি বলতে পারেন। সব মেয়েরাই চুড়িদার পড়ে আসতো, ও ছাড়া। তাই একে western পোশাক তার ওপর মুখে ইংরেজি কথা , মোটামুটিভাবে ওকে সবাই এরিয়ে যেতো। তাই আমার সাথে বন্ধুত্ব পাতালো, একদিন দক্ষিণেশ্বর নিয়ে গেছিলাম ওকে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে, কাশিপুর ঘাট, কাঁচমন্দির, পাঠবাড়ির মন্দির,কিছু বাদ দিয়ে নি। ওখুব খুশি হয়ে ইংরেজিতে বকবক করছিলো। 

ওর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে বলেছিলাম। "আমি খুব সাধারণ ছেলে, তোর ওপর এমনিতেই ফিদা, তাই কথা গুলো বাংলায় বলল, দেখবি ভালো লাগবে, মনের কথা টা খুলে বলতে পারবি "। ও আমার হাতে কামড় দিয়ে ছিলো। সেখান থেকেই সম্পর্কে একটা বাঁক নিলো।

আমরা দ্বিতীয় বর্ষে, নবীন বরণ উৎসবে, ও জীবনানন্দ এর " বনলতা সেন " আবৃত্তি করলো সবাই কে অবাক করে। যদিও তখন থেকেই একটা ego কাজ করতে শুরু করলো ওর মধ্যে। কারন সবার gossip আমাদের love ক্যামিস্ট্রির চর্চা, আমি নাকি ওকে বদলে দিয়েছি। কলেজে আসার আগে আমি ওকে ফোনে জানিয়ে দিয়েছিলাম ও কোন subjectএ কতো পেয়েছে। তবুও ভিড় ঠেলে নাম্বার দেখতে গেলো, আমি ওর হাতটা ধরে টানে আনলাম, ও সবার সামনে চিৎকার করে বলে উঠলো " তুই একটু বেশি অধিকার ফলাচ্ছিস আমার উপরে। হাত ছেড়ে দিলাম, ও ভাবলো আমি ওর জন্য কলেজটাই ছেড়ে দিলাম। আসলে ওকে আমি এটাই জানাতে গেছিলাম, আমি আমার বাড়ীর কাছে, যাদবপুর এ A.p.c তে ভর্তি হবার সুযোগ পেয়েছি। সেই থেকে সম্পর্কে একটা দাঁড়ি পরলো।

ও বলল " থ্রি ইডিয়ট দেখেছিস " 

আমি বললাম " হ্যাঁ, আমার প্রিয় সিনেমার মধ্যে ওটাও একটা "

ও বলল " হ্যাঁ পড়াশোনা ব্যাপারে তোর মতামতটা প্রতিষ্ঠা করে। জানিস, আমি ও বাংলায় এ.ম. করে, পিএইচডি করছি। লোকে বলল বুড়ি হয়ে যাচ্ছি, বিয়ে জন্য অনেক দেখাশোনা হয়েছে, কিন্তু কেন একটা মেয়ে প্রশ্ন করা হবে, মেয়েদের তো অধিকার থাকা উচিত প্রশ্ন করার। তাই পত্র পক্ষ বাতিল করছিলো। বেশি শিক্ষিত হওয়া নাকি মেয়েদের দোষের। শেষ গুজরাটি একটা n.r.i ব্যাবসায়ী বুড়ো কে বিয়ে করতে হলো, তার সখ বাঙালি মেয়েকে বিয়ে করার। মা বলতো পুরুষেরা নাকি বাইরে একটু অদধু প্রেম ট্রেম করেই থাকে, তাকে ধরে রাখার দায়িত্ব নাকি মেয়েদের। কিন্তু আমি ধরে রাখতে পারলাম কৈ? ওর আগের বৌএর মতো, ও আমাকে অনেক ক্ষতিপূরণ দিয়ে divorce দিতে চেষ্টা করছিল। আমি দিয় নি। কারন একটা বিধবাকে সহজে একটা ছেলেকে বিয়ে করে কিন্তু divorce মেয়েকে করে না। তাই সেই দিন মুম্বাই থেকে একটা ছেলে ফোন করেছিলো, কাকুতি মিনতি শুনে মনে হলো, ওর p.a মানে রক্ষিতা র boyfriend, বলছিল আর কয়েকদিন মধ্যে উনি চোখ বুজবে, সব সম্পত্তি র আইনতো মালিক আমি, মেয়েটার ভবিষ্যৎ তো অন্ধকার। আমি ভাবলাম, তাহলে আমার ভবিষ্যৎ এর কথা টা ভাবতে হয়। তাই তোকে ফোন করলাম। আমি চাই আজ থেকেই তুই আমার কাছে থাকবি, তোকে আর বিদেশ টিদেশ যেতে হবে না। একটা ngo খুলে সেবা মুলক কাজ করবি। আর তোর newspaper শুরু করবি আর লেখালেখি করবি, যেটা তোর ভাল লাগে, তুই তো বলতি জীবন মানে শুধু পয়সা রোজগার নয়।"

আমি বললাম " জানিস তুই সেই দিন তোর বাড়িতে নিয়ে গেলি, তোর বাবা মা কোথায় ও ঘুরতে গেছিলো, তুই বাড়ি চাকর বাকরদের ছুটি দিয়েছিলি। আমি প্রথমেই, বুঝতে পেরেছিলাম বিয়ার খেয়ে তোর নেশা হয়নি। তুই 30 মিনিটে ধরে lip kiss পর আমি কিছু করছি না, kiss করতে করতে তোর bed রুমে নিয়ে গেলি। নিজেকে সামলে রেখেছিলাম তখন ও, কিন্তু তুই প্যান্টের বোতাম খুলে,zip খুলে যখন আমার ওখানে হাত দিলি, তখনই আপত্তি করে বলেছিলাম, আমাদের কিন্তু কোন protection নেই, তুই বলেছিলি তোকে অত কিছু ভাবতে হবেনা। কিন্তু এখন সবকিছু একটু ভাবি। তাই একটু সময় চাই।" 

 ও বলল" তুই আজকাল তোর সব কথায় Facebook লিখিস, তোর ভাষায় খেলায়, তুই নিজেকে মহৎ আর নীলুকে ছোট দেখাস। এ সমাজে একটা মেয়েকে নষ্ট মেয়ে হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায় খুব সহজেই।

 তাই আসল ঘটনা জানতে ওকে ফোন করছিলাম উকিল সেজে। ও ভালো উকিল খুঁজছিলো তখন।জানিস তো উকিল আর ডাক্তার এর কাছে কোন কিছুই গোপন করে না কেউ। Divorce এর জন্য ও তেমন কোনো জোরালো কারন দেখাতে পারলো না। তুই চরিত্র হীন নয়, মাতালও নস, বরংচ ওর ইচ্ছে পূরণ করতে তুই নাকি ওকে নিয়ে প্রথম মদ খেয়েছিলি। হ্যাঁ, তোদের সম্পর্ক ভাঙার কয়েক সপ্তাহ আগে প্রথম একটা চড় মেরেছিলি, তবে তার বদলে অনেক কয়েকটা খেয়েছিলি। কিন্তু যাই হোক ও তোর কাছে আর কখনো ই ফিরবে না, after all ও এইসব ঘটনার জন্য নিজের বাবাকে হারিয়েছে।"

আমি ওকে ওটা প্রথম চড় নয় দ্বিতীয় বার মেরেছিলাম। Garden Riche এ সেইদিন অনেক গন্ডগোল একটা হিন্দু ছেলে একটা মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করেছিলো। ভেবেছিলো ছেলে মেয়ে হয়ে গেলে বাড়ি থেকে মেনে নেবে। নাতির মুখ দেখাতে জামাইকে নিয়ে বাড়িতে এলো মেয়ে, দাদা ভয়ঙ্কর রাগি। ছেলেটি র মুন্ডিটা কেটে থানা জমা দিতে এলো সাত সকালে। খবরটা পেয়ে চিন্তা য় ফোন করলাম অনেক বার, switch off, office all India radio channel মহিলা স্টাফ ফোন ধরলো, আমার কথা পুরো না শুনে ই কাদের বলতে শুরু করল "রাধারানী ধরা পরছে বরের ফোন" 

আমি ও কোথায় জানতে চাইলে বলল" ও আজ আসেনি, অভিও আসে নি।" পাগলের মতো ফোন করেছি এখানে ওখানে যখন দেখা হলো বললো" মৌ এর সাথে University গেছিলাম\" প্রথম চড় মেরেছিলাম, বলেছিলাম।" কোথায় গেছিলে জানতে চাইনি, মৌমিতা ও চার পাঁচ বার ফোন করেছে, তোমার ওর সাথে যাবার কথা ছিল যাওনি বলে।" দ্বিতীয় বারের চড়টার নেপথ্যেও অভি। ওর হাত খরচ থেকে মাইনে,সব টাকা পয়সা গুলো ভোগ করতো অভি। কিন্তু অভি বৌদি বাজ হয়ে গেছে। ওকে শিক্ষা দিতে অফিসে প্রদীপের সাথে প্রেম। পয়লা বৈশাখে দোকান পূজায় না থেকে ঘুরতে বেরিয়ে গেল, রাতের সোহাগ করে বললো ব্রা ফিতেটা একটু খুলে দেবে। খুলতে গিয়ে দেখলাম একটা আঁচড়ের দাগ, মলম লাগিয়ে দিলাম। ও জিগ্গেস করলো " কি হয়েছে, "

আমি বললাম "আঁচড়ের দাগ। "

 ও বলল " নখ কাটবে না তো কি হবে"

 আমি বললাম "এটা আমার না, বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে মুম্বাইয থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি তরিঘরি ফিরলাম, তুমি বললে তোমার infactiion হয়ছে, তারপর থেকে আর এ দুতিনমাস বোধহয় আমার মধ্যে আঁচড় লাগার মতো সম্পর্ক নেই।" কথা ঘোরাতে ও বলল " হ্যাঁ এ সপ্তাহে ডাক্তার এর কাছে যেতে হবে, তোমার সময় হবে?" 

আমি বললাম " চ্যেক বুকে সাইন করে রেখেছি, তোমার যা প্রয়োজন তুলে নিলো।আমার সময় হবে, ডাক্তার বাবু বলছিলেন তোমার গত সাত মাস একদিন সময় হয়নি।" 

লোকে বলে চোরের মায়ের বড় গলা। অসভ্য এর মতো চ্যেচিয়ে বলল " এক চুটকি সিঁদুর দিয়ে তাহলে কি তুমি শুধু আমাকে তোমার রক্ষিতা করে রাখতে চাও।" 

চরটা মেরেছিলাম ওকে চুপ করাতে। 

ওর চোখের দিকে তাকাবার সাহস ছিলোনা, চোখ টা ওর বুকের উপর আটকে ছিলো। ও সবকিছুই লক্ষ্য করছিল।ও একটু কাছে এসে ওর নাইটির ফিতা নামিয়ে, বলল " বাংলার প্রফেসর, সেকেলে পোশাক পরেই অভ্যস্ত, এটা তোর জন্য পরেছি, তোর মনে নেই, একটা ইংলিশ সিনেমা তে নায়িকা এটা পরেছিলো, তুই বলেছিলি যে তোর বউ হবে তাকে এমন নাইটি পরতে হবে। ভালো করে দেখ, এর চেয়ে better option পাবিনা।" 

হাসি টার what app profile picture দেখতে গিয়ে ছবিটা save হয়েগেছে, ওটাই এখন আমার ফোনের wall paper । ছবি টা দেখিয়ে বললাম, "আমি কিন্তু এর better option হতে চাই।".... ছবিটিতে শাড়ি পরে আছে বলে ওকে খুব মিষ্টি লাগছে। তবে জেনো আমি অঘোরি দের সাথে মেলামেশা করেছি কিছুদিন ওর এসব পোশাক টোশাকের ধার ধারে না।যেমন বেশিরভাগ মানুষ মৃত্যুকে ভয় পায়। শ্মশান হচ্ছে মৃত্যুর প্রতীক। কিন্তু অঘোরিদের জন্য সেটাই হচ্ছে শুরু। তারা সাধারণ মানুষের নীতি এবং মূল্যবোধকে চ্যালেঞ্জ করতে চায়, যা কিছুই গর্হিত বা নিষিদ্ধ বলে বিবেচিত, তার সব অঘোরিরা ভঙ্গ করতে চায়। সনাতনী ভালো-মন্দের যে ধারণা, সেটা তারা প্রত্যাখ্যান করে। আমিও এখন তোমাদের সমাজচ্যুত,,, যদিও মহাভারতের যুগ থেকে এই পোশাক নিয়ে বিতর্ক, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বস্ত্র হরণ করে আবার দান করেন, কখনো উপভোক্তা, কখনো রক্ষা কর্তা যদিও সবই লীলা খেলা, পূরুষের ইচ্ছে,,,,

বন্ধ দরজা আড়ালে একটা অস্পষ্ট কান্নার শব্দ। আমি হারিয়ে গেলাম গলি পথে অন্ধকার নীরবতায়।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract