Manab Mondal

Abstract Classics Inspirational

4  

Manab Mondal

Abstract Classics Inspirational

লাগলো হাওয়া কাশফুলে

লাগলো হাওয়া কাশফুলে

4 mins
542


সম্পাদক মহাশয় বেজায় চটে যাবেন। এবারও শারদীয়া লেখাটা দিতে পারবো না বোধহয় ঠিক সময় মতন। রোজ কার মতো বিপিন বাবু সকাল থেকে চিৎকার করছেন। সুপ্রিয়া দেবী বাড়ি থাকলে হয়তো সামলে নেন। কিন্তু উনি তো বোধহয় কলেজের জন্য বেড়িয়ে গেছেন অনেকক্ষণ। উপরে তালায় এসে দেখলাম উত্তর দিকের জানালাটা খোলা।সাদা কাশফুল গুলো দুলছে হাওয়ায়।

 বিপিন বাবু মানসিক ভারসাম্যহীন। কিন্তু বাড়ির বোনদী আনার কথা ভোলে নি তিনি। জানালা দিয়ে  কাশফুল দেখতে পেয়ে ।তাই চিৎকার করা শুরু করেছেন। দূর্গা দালানে এখনো কেনো মায়ের কাঠামোতে মাটি পরে নি?

মালতি মাসি আবার বলেছে " নামেে তো তাল পুকুর , ঘটিতো ডোবে না।নুনু আনতে পান্তা ফুরায়, সে বাড়িতে সে বাড়িতে আবার দূর্গা পূজা "

পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমি ওনাকে বললাম " জ্যাঠা মশাই আপনি মালতির কথায় কান দিচ্ছেন কেন? দূর্গা পূজা হবে কিন্তু সময় হোক। ওটা কাশ ফুল না কুশ ফুল। আর আপনি জানেন না কাশফুল তো নদীর ধারে হয় , শহরে পিচ রাস্তার ধারে কখনো হয়।"

কাশ ফুল মানেই আসলে দূর্গা পূজা আসছে ধরে নেওয়া হয়। কাশফুল আদি ঘর রোমানিয়ায়। তবে নাকি প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে বাংলাদেশ  ছিল এরা। কাশফুলের অন্য একটি প্রজাতির নাম কুশ। এরা দেখতে প্রায় কাশফুলের মতোই। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ‘পুরাণ’-এ কুশের স্থান খুব উঁচুতে।

কাশফুলের সাথে নদীর একটা বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে।  পবিত্র বন্ধুত্ব সম্পর্ক। ঠিক বলতে পারেন সুপ্রিয়া দেবীর সাথে আমার সম্পর্কটা যেমন থাক সে কথা।

আকাশে শরতের মেঘগুলোকে দেখো তাহলে বুঝবে সেখানে কাশফুলের ছোঁয়া আছে। কাশফুল ফুটলে কোথা থেকে বাতাসে শরৎএর ঘ্রাণ চলে আসে , পূজা র আবেগ ভাসে। কাশফুলের একই অঙ্গে কতরূপ দেখতে পাবে। আকাশে সাদা মেঘের রঙ আবার মনে হবে ভালবাসার পবিত্রতার মুকুট ধারণ করে আছে পৃথিবী। সবুজ পাতা দেখো, সেখানে প্রকৃতির রঙের ছোঁয়া দেখো। পূজা আসার খবর পেয়ে ওরা যেন খুশিতে দুলছে।শরৎকালের মানেই বোধহয় চারিদিকে ঘন সাদা দীঘল কাশফুল বাতাসে ঢেউ খেলে যাওয়া।

সুপ্রিয়া দেবী আমার থেকে বয়সে বছর পাঁচেকের ছোট। একা সংসারটা সামলাচ্ছে দূর্গা মতো। বিপিন বাবুর জুতো জুট মিল বন্ধ হবার আগেই সবাই ওনার ভাই এরা বিদেশে চাকরি করতে পারি দিয়েছিলো। ওনার মেজো দাদা যখন বুঝতে পারলেন শরিক ঝামেলার জন্য কোনদিন এ বাড়ির প্রোমটারের হাতে দিতে পারবে না। তখন তার অংশ টুকু আমাকে বিক্রি করে।

প্রথমে শত্রু রূপেই দেখতেন আমাকে সুপ্রিয়া দেবী। তবে এখন প্রতিবেশী হিসেবে মনে নিয়েছেন। কারণ ওনার বিপদের দিনে ওনার ভাই বোনরা যখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তখন মানবিকতার খাতিরে আমি উনার পাশে ছিলাম। এবং গত বছর উনার মা মারা যাওয়ার পর, আমার উপর অনেক টাই নির্ভরশীল। বর্তমান আমার পরিচালিকা মালতি মাসি ওনার বাবার দেখাশোনা করে। তাই উনি নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারেন। কিছু এখন উনি আমার দ্বারা প্রভাবিত। তাই উনার অনুমতি ছাড়া বাবার সাথে কথা বলে। শেষ পর্যন্ত এবাড়িতে দূর্গা পূজা আয়োজন করে ফেললাম। 

দিন পোনের কিভাবে কেটে গেলো জানি না। ভাই ও আমার বাবার উদ্যোগে এ পাড়ার সান্টু মন্টুদের সহযোগীতায় বিপিন বাবুর মুখে কাশ ফুলের মতো সুন্দর একটা পবিত্র হাসি ফুটে উঠলো। এ বাড়িতে এবছর থেকে আমরা দূর্গা পূজা শুরু করে ফেললাম।

ষষ্ঠীর পূজা ভালোই কাটলো। বেশ রাত অবধি আডা চললো। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম ছাদে দাঁড়িয়ে আছেন সুপ্রিয়া দেবী। উৎসবের আমেজেও আকাশের ভাঙা চাঁদটা কেমন যেনো মনমরা। ঠিক নীর্মলা দেবীর মতোই অসম্পূর্ণ ,একা। কোনো আরাষ্ঠা না দেখিয়ে বললাম " আজ আপনি কিন্তু পূজাটা ঠিক উপভোগ করলেন না। আপনার অনুমতি ছাড়া পূজা করছি বলে। কিন্তু আপনার বাবার ইচ্ছাটা পূরণ করেছি মাত্র।" 

উনি বেশ আক্রমণাত্মক হয়ে বললেন " পরাজিতরা কখনো উৎসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে নাকি?"

আমি বললাম " আপনি পরাজিত কোথায় , বেশ ভালোইতো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। নিশ্চিত ভালো সময় আসবে, উৎসবের দিনে মন খারাপ করবেন না প্লিজ! আপনি আপনার সব সময় পাশে আছি।"

উনি একটু উপহাস হাসি হেসে বলল" পাশে আছেন না ঘিরে ধরেছেন, আমার অংশটুকু ছাড়া পুরো বাড়িটাই তো কিনে নিয়েছেন আপনি দাদাদের কাছে থেকে। তবে আমার অংশটুকু কোন দিন আমি বিক্রি করবো না। জেনে রাখুন "

আমি বললাম"আচ্ছা আপনার বাড়ি আমার বাড়ি এই লড়াইটা আপনি কবে ছাড়বেন। এ বাড়িটা আমি না কিনলে অন্য কেউ কিনে নিতো। এ দেশ প্রমোটারের অভাব নেই। বরং একটা কথা বলবো যদি অভয় দেন। এ বাড়িটা কি আমাদের বাড়ি হতে পারে না। আমি কি আপনার যোগ্য না।"

উনি একবার আমার দিকে তাকালো , ওনার চোখ গুলো অন্ধকারে জ্বল জ্বল করছিলো। উনি মাথা নিচু করে চলে যেতে যাচ্ছিলেন। আমি সাহস করে উনার হাতে ধরে আটকে দিলাম। উনি আমার দিকে  তাকাতে বললাম " একটু খানি দাঁড়িয়ে যান না, এই ঘন অন্ধকারেও দূরে কাশফুল গুলো কি সুন্দর দেখাচ্ছে।"

উনি ছাঁদে কোন গিয়ে দাঁড়িয়ে কাশফুল গুলো এক মনে দেখতে থাকলেন। আমার মন খুশি ভাবার খবর পেয়ে কাশফুল গুলো ও খুশিতে দুলতে লাগলো।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract