Maheshwar Maji

Classics

3  

Maheshwar Maji

Classics

ক্ষণিকের পৃথিবী

ক্ষণিকের পৃথিবী

2 mins
625


সীতাকে আজ পনেরো বছর পর দেখলাম। একদম চিনতে পারিনি।

ও যে আমায় কি করে চিনল,জানি না।

  তাও আবার সরকারি হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের এত ঠাসা ভীড়ের মাঝে!

আমি গেছিলাম,আমার সদ্যজাত মেয়েকে দেখতে।গত রাতেই জন্ম নিয়েছে।


 আমি কর্মক্ষেত্রে ছিলাম।এটা আমার দ্বিতীয় সন্তান।বাড়িতে মা,বাবা সকলেই আছে।তাছাড়া শ্বশুর,শাশুড়ির অভয় বাণি আমাকে অনেকটা সাহস জুগিয়েছিল।

তাই মৌলীকে নিয়ে আমার চিন্তা তেমন হয়নি। খবরটা পাওয়া মাত্রই রাতের ট্রেনটা ধরে চলে এলাম।


মেয়ের এমন টুকটুকে মুখখানা দেখে আমি তো লজ্জায় আধমরা! নিজে তো "পেঁচামুখো" । ঈশ্বর অভাগার জন্য এত সুন্দর একটি উপহার পাঠিয়েছেন!!আমার তো কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেয়।

.আবার গর্বেও হচ্ছে । মেয়ের সুন্দর মুখখানার দিকে তাকিয়ে।মনে হল,আমিই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভাগ্যবান পিতা।


..হঠাৎ পাশের বেড থেকে একটা মেয়েলী ডাক আমার কানে এল।


--"রমেশদা"


স্ত্রী,আমার শ্বাশুড়ী এমন কি মাও একসাথে তাকাল সেই মহিলাটির দিকে।কেউ তাকে চেনে না।আমিও না।

 তাই বিশ্ময়ভাবে আমিই জিজ্ঞেস করলাম,


---"তোমাকে ঠিক চিনতে পারলাম না তো।"

মহিলাটি উত্তরে একটা মরা হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বলে উঠল,


-"-আমি সীতা।তোমার মামা বাড়ির সেই সীতা!..মনে পড়েছে?"


আমার স্মৃতির পর্দা ধীরে,ধীরে সরে যাচ্ছে।


 আমার বয়স তখন চৌদ্দ কি পনেরো।সীতা আমার থেকে দু,বছরের হয়তো ছোটই ছিল।তখন আমি মামা বাড়ি খুব যেতাম।স্কুলে যখনি গরমের ছুটি পড়ে যেত।সবকটা দিন ওখানেই কাটাতাম।..কী মজা..আর নিখাদ আনন্দ ছিল সেই দিনগুলোতে!..ছেলে,মেয়ে জুটে গাছের ডালে রশি টাঙিয়ে দুলুনি খাওয়া,চোর-পুলিশ খেলা,পাঁক ডোবাই মাছ ধরা,কিত,কিত খেলা!..স্বপ্নের মত কেটে যেত দিনগুলো!..সেই ছোট্ট সীতা আজ পরিপূর্ণা নারী হয়ে উঠেছে! কোলে তার সন্তান!..কেমন যেন বিশ্বাস হচ্ছে না।


...সবাইকে দেখে ও যেমন অতীতের সময় নিয়ে কথা বলতে দ্বীধা করছে।তেমনি আমিও।

সাথে ওর শ্বাশুড়ীমা আছেন।স্বামী একটু আগে বাড়ি গেছে।

ওর পুত্র সন্তান হয়েছে।এটাই প্রথম সন্তান।অনেক চেষ্টার পর।ওর সন্তানের মুখ দেখলাম একশো টাকা দিয়ে।একটু পরেই পাশাপাসি দুটো বেডের মধ্যে আত্বীয়তা বেড়ে উঠল।

মৌলীর চোরা নজর আমাকে বেশ কয়েকবার তিরের মতো বিঁধলো।বেহায়া চোখজোড়া দিয়ে সীতাকে খুঁটিয়ে দেখার অপরাধে।স্বাভাবিক।কিন্তু এই মুহূর্তে কিছু করারো নেয়।সব কথা না বললে ওর মনে তো সংশয় দানা বাঁধবেই।

তাই আর বেশি সময় বসলাম না।

ওদিকে ভিজিটিং আওয়ার শেষ হয়ে এসেছে।পুরুষদের বাইরে বের করা হল।আমিও বেরিয়ে পড়লাম।

হাঁটছি।কোনদিকে,জানি না।


..মন ভাসছে সেই কিশোরবেলার ছন্দহারা গানে!..সীতার হাত ধরে দৌঁড়ান সেই আঁলপথ!..কাঁটা ফুলের বাগান।ভাগাভাগি করে একটা আলু পোড়া দুজনে খাওয়া!..মন ছুটছে দুরন্ত গতিতে পিছনের সেই ফেলে আসা পেয়ারা গাছের তলায়।


আজ বড় হয়ে গেছি।সময় পরিণত করেছে।দেহ এবং মনকে।..কিন্তু সেই অনুভূতিগুলো আজো ছুটছে।অতীতের গন্ধ সারা গায়ে মাখবে বলে!

------*****-----


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics