The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Tandra Majumder Nath

Classics

5.0  

Tandra Majumder Nath

Classics

ক্ষিদের জ্বালা

ক্ষিদের জ্বালা

3 mins
967


-একি, ঋজু তুমি দুধটা এখনও শেষ করোনি? কোথায় গেলে...ঋজু..ঋজু..এখনি স্কুল বাস চলে আসবে তৈরি হতে হবে তো।ঋজু....

রান্না ঘর থেকে বেড়িয়েই ঋদ্ধিমা ঋজুকে দেখতে না পেয়ে এঘর ওঘর খুঁজতে থাকে।

অবশেষে ঋজুর দেখা মেলে দোতলার ব্যালকনিতে। 

ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে বাড়ির সামনের ফুলের বাগানের দিকে ঋজু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

-কি ব্যপার..? তুমি এখানে কি করছো শুনি?

-মা দ্যাখো ফুলের বাগান টা দেখতে কি সুন্দর লাগছে।

বাগানের দিকে তর্জনী নিক্ষেপ করে ঋজু বলে।

-হ্যাঁ, তা তো বুঝলাম। এখন চলো তৈরী হতে হবে নাহলে স্কুলের জন্য দেরী হয়ে যাবে।

-আচ্ছা মা, গোলাপ ফুলের কত্ত রঙ...লাল গোলাপি, হলুদ, রজনীগন্ধার রঙ সাদা, অপরাজিতা নীল রঙের..

-হ্যাঁ, তো কি হয়েছে?

-তাহলে গাছের পাতার রঙ সবুজ কেনো? দ্যাখো বাগানের সব ফুল গাছের পাতার রঙ সবুজ।

এবারে ঋদ্ধিমা মৃদু হাসে।

-এই যে আবার তোমার মনে নতুন প্রশ্নের উদয় হয়েছে?

-বলো না মা, বাগানের সব গাছের পাতার রঙই সবুজ কেনো? লাল,নীল,হলুদ কেনো নেই।

ঋদ্ধিমা ঋজুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, 

-আসলে, গাছের পাতায় ক্লোরোফিল থাকে। আর ক্লোরোফিলের রঙ সবুজ হওয়ায় গাছের পাতার রঙ সবুজ।

-ক্লোরোফিল কি মা?

-তার আগে বলো আমাদের শরীরের শক্তির জন্য কি দরকার?

-খাবার দরকার। না খেলে তো আমরা শক্তিই পাবো না।

- হুম, ঠিক তেমনই গাছেরও তো খাবার দরকার তাদের বেঁচে থাকার জন্য।

গাছ তাদের খাদ্য ক্লোরোফিলেই তৈরী করে। আমি যেমন তোমার জন্য বাবার জন্য খাবার তৈরি করি, ঠিক তেমনই গাছ নিজের রান্না নিজেই করে, এই জন্য গাছের পাতাকে গাছের রান্নাঘরও বলা হয়।

-তাই বুঝি? মৃদু হাসে ঋজু।

- হুম, আর আমি যদি রান্না না করি তাহলে তো তুমি আর বাবা না খেয়েই থাকবে।

-একদম না মা, আমরা রেস্টুরেন্টে চলে যাবে।

-ওরে দুষ্টু, 

ঋজু খিল খিল করে হেসে ওঠে।

-এবার চলো তৈরী হয়ে নাও।


-ঋজু, আজ কিন্তু টিফিনটা সম্পূর্ণ খাবে। তুমি তো ঠিকমত টিফিনই খাও না। আজ কিন্তু একদম ফেরত আনবে না।

ঋজু স্কুল চলে যায়।


স্কুল থেকে ফিরেই ঋজু আবারও ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।

ঋদ্ধিমা ব্যাগ থেকে টিফিন বক্সটা বেড় করে  খুলে দেখেই অবাক হয়ে যায়। টিফিন বক্স ফাঁকা মনে মনে খুশি হলেও সন্দেহ থেকেই যায়, কারণ ঋজু প্রতিদিন টিফিন ফেরত আনে নয়তো অর্ধেক খাবে। আজ হঠাৎ....  

-তুমি আবারও ব্যালকনিতে কি করছো..?

আজ টিফিন বক্স খালি কি ব্যপার ঋজু মশাই?

ঋজু কোন উত্তর করে না।

ঋজু, কি হয়েছে তোমার?

-মা, মানুষের শরীরে ক্লোরোফিল থাকে না?

বলেই অঝোরে কাঁদতে থাকে বছর দশের ছেলেটি।

-একি, তুমি কাঁদছো কেনো ঋজু? কেউ কি কিছু বলেছে?

-বলো না মা, মানুষের শরীরে ক্লোরোফিল নেই?  

 দুচোখ দিয়ে অশ্রুধারা বয়ে যেতে থাকে ঋজুর।

 -কি বোকার মত প্রশ্ন করছো?

-জানো মা, আজ লতিকা আন্টি মানে আমার বন্ধু দেবলের মা দেবলের দাদু কে বাড়ি থেকে বেড় করে দিয়েছে। 

-কিন্তু কেন?

-দেবলের দাদুর নাকি বড্ড ক্ষিদে পায়। আর দেবলের মা দেবলের দাদুর জন্য রাঁধতে চায় না।

-তুমি কি করে জানলে?

-আমি স্কুল থেকে ফেরার সময় দেবলের দাদু কে রাস্তায় দেখেছি। খুব কাঁদছিল, আমি বাস থেকে নেমে পড়ি। 

-কাঁদছিল...?

-হ্যাঁ মা, দেবলের দাদু দুদিন থেকে কিচ্ছু খায়নি, খুব ক্ষিদে পেয়েছিল তার, তাই তো আমি আমার টিফিনটা দিয়ে দিয়েছি।

ঋদ্ধিমা ঋজুর কথা শুনে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে,

ঋজু অঝোড়ে কাঁদতে থাকে আর কান্না জড়ানো গলায় বলতে থাকে,

যদি মানুষের শরীরেও ক্লোরোফিল থাকতো তাহলে তো দেবলের দাদু এভাবে কাঁদতো না তাই না মা। নিজের খাবারটা নিজের শরীরেই তৈরী হয়ে যেত।

ঋদ্ধিমা কি বলবে ভেবে পায় না কারণ, ঋজুর দাদুকেও তো ঠিক একই কারণে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়েছিল সে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics