কৃষ্ণা
কৃষ্ণা
এই তোকে যে রোজ বলি সকাল বেলায় ঘর থেকে বের হবি না,কথা কানে যায় না?ঐ তো চেহারার ছিড়ি, ঐ মুখ দেখে কাজে গেলেই অনিষ্ট হবে। কোন পাপে যে তোকে জন্ম দিয়েছে তোর মা!
বাবা,আমার শরীরটা ভালো লাগছিল না, তাই মা কে বলতে এসেছিলাম।
ঠাকুমা স্নানঘর থেকে এসে জিজ্ঞেস করলেন – কি হয়েছে খোকা?
দেখোনা,আজ একটা নামী কোম্পানির সাথে মিটিং আছে,রাতে ডিল ফাইনাল হবে,এটা পেয়ে গেলে মোটা টাকা পাবে আমাদের প্রতিষ্ঠান। আর এই সাত সকালেই সাখ্যাত তিনি একেবারে সামনে।
ঠাকুমা গলা সপ্তমে চড়িয়ে মা কে বলতে শুরু করে – তা বলি,বৌমা, তোমার ঐ কালী রণচণ্ডী মেয়েকে ঘরে রাখতে পারো না? যেমনি তার রূপ, তেমনি মুখে মুখে কথা বাপু,সকাল সকাল যত্তসব অনাছিষ্টি কাণ্ড।
অপায়া,অলক্ষী বলতে বলতে মা এসেই চুলের মুঠি ধরে মারতে শুরু করেন। আমার হয়েছে যত জ্বালা। কেন যে তোকে জন্ম দিয়েছিলাম ভগবানই জানেন!মরতেও পারিস না,তবে হাড় জুড়ায়!
কৃষ্ণা কাঁদতে কাঁদতে ঘরে চলে যায়। এই ঘটনা তার প্রতিদিনের।
সন্ধ্যায় বাবা বাড়ি আসেন।বেশ হাসি হাসি মুখ। অর্ডারটা পেয়ে গেছে তারা।
আজ দীপাবলি। সারা বাড়ি আলোয় ঝলমল করছে। চারিদিকে বাজি ফুটছে।
খোকা তুই তো আবার বের হবি?
হ্যা,মা।ডিলটা ফাইনাল করতে হবে।
তবে, বেরোনোর আগে কালী মায়ের চরণে একবার প্রণাম করে যাস, এমন শুভ কাজ কি না?
ভালো কথা মনে করেছ তো।
এবার বেরিয়ে আসে কৃষ্ণা –
বাহ,আমি কালো বলে আমার মুখ দেখতে ইচ্ছে হয় না,তবে মাও যে কালো, তার চরণে লুটাচ্ছ কেন?অত বড় কাজ,অমঙ্গল হবে না বুঝি?
কৃষ্ণা! বাবা ওকে মারতে আসে। তার আগেই ত্রিশূলটা হাতে নিয়ে দাঁড়ায় সে,আজ আমার গাঁয়ে হাত দিয়ে দেখ!কৃষ্ণার এই রূপ আগে কেউ দেখেনি। বাড়ির সকলে অবাক নয়নে তাকিয়ে দেখে–কৃষ্ণার চোখদুটো এমনভাবে জ্বলছে যেন সব ভস্ম করে দেবে – এ যেন কালী মায়ের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি!