কফির আড্ডা
কফির আড্ডা
শহরটার নাম আবুধাবি। তবে মূল আবুধাবি থেকে কিছুটা দূরে মুসাফা বলে একটা লেবার ক্যাম্পের বাইরে একটা রেস্টুরেন্টে বাইরে রাখা চেয়ারে আমরা বসে আছি। মুম্বাইয়ে মতো কাটিং , বা কলকাতার মতো দুটো তিনটে , কথা না চালু থাকলেও । এখানে আমরা একটা কফি নিয়ে দুই জনে অনায়াসে ভাগ করে খাই।
কফিতে আয়েশ করে চুমক দেবো তাঁর উপায় নেই। এখানে সবসময় আরো উন্নত জীবনের খোঁজ করছে সবাই। হাফিজ বললো " পুতুল দা তোমার পরুতুগাল, মালটা যাবার ব্যাপারটা কতো দূর এগারো দাদা? বললো না। পাঁচ বছর গ্লাফে কাজ করেও তো কিছু করে উঠতে পারলাম। চাকুরী পেতে দালালকে যা পয়সা দিয়েছি সেটাই শোধ হতে হতে চার বছর কেটে গেলো।"
অর্ধেক কফি হয়ে যায় আমার কিন্তু আকবর ভাই এসেছিলো উওর না দিয়ে আর এক কফি নিয়ে এসে ভাগ করে নিলাম তিনজনে। হাফিজ আবার বললো " দাদা গ্লাফে চাকুরী করে কিছু হবে না ইউরোপ যেতেই হবে আমাদের বুঝতে পারলে..."
মনে মনে ভাবলাম , কলকাতার কফি হাউসে আড্ডা দেবার সময় একটা ব্ল্যাক কফিতে জল মিশিয়ে , দুই- তিন জন ভাগ করে নিয়ে আড্ডা চলতো কলেজ জীবনে। কোন পত্রিকা নতুন লেখা প্রকাশের আনন্দ ভাগাভাগি করতে করতে মাঝে মাঝে চাকুরী না পাবার আর হারাবার চিন্তা ভাবনা গুলো ও হাজির হতো। আজো সেই ছবিটা পাল্টাতে পারলাম না।
কফিতে চুমুক দিয়ে বললাম , " zoom interview সিলেট হয়েছি। কিন্তু সেই এজেন্ট মানে দালাল এর কাছে যেতে বললো। Service charge লাগবে। তাই ছেড়ে দিলাম।"
হাফিজ খুব উৎসাহ নিয়ে বললো" কত services charge লাগবে পুতুল দা, ১০০০ ইউরো সেলারি একবার যেতে পারলে সব সমস্যা মিটে যাবে পুতুল দা।"
আমি কফি টুকু শেষ করে , বললাম " বেশি না ১০০০০ ইউরো।"
আকবর ভাই রেগে গিয়ে বললো ওর ভাঙা ভাঙা বাঙলাতে বললো " মানব দা আপনি সব সময় মজাক করেন এটা ঠিক না, আপনি বলছেন মাত্তর।&n
bsp;দুই বছর এখানে কাজ করেও তো ওতো টাকা হামার জমবে না।"
হাফিজ একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো " লোন নিলেও এক বছর পুরো ফ্রিতে কাজ করতে হবে।"
টেবিলটাকে একটা নিস্তব্ধতা ঘিরে ধরলো। মোবাইল স্ক্রল করতে বুকের ভিতর একটা চিন চিনে ব্যাথা উঠলো। আমাকে ছেড়ে গেছিলো নীলাঞ্জনা প্রদীপের সাথে বন্ধুত্ব করে। কিন্তু প্রদীপ সাথে ও ওর ব্রেকআপ হয়েছে। একটা কফি সপের সামনের ছবি দিয়েছে, নীলাঞ্জনা অক্ষসয়কে নিয়ে। মধ্যপ্রদেশের ছেলে অক্ষসয়। ওরা দেখা করছে বোধহয় বেনারসে। আগে দুইজনে বনারসের গঙ্গার ঘাটের অনেক গুলো ছবি দিয়েছে।
আকবর ভাই কেন এখানে কেউ নীলাঞ্জনার কথা জানান না। ছবি গুলো খুব মন দিয়ে দেখছি দেখে।
আকবর ভাই বললো" দাদা , এসব ছবি দেখে মন খারাপ হয় না তুমার। অনেক হলো আমাদের অভাব কোন দিন মিটবে না। সে কানাড যাও কি অস্ট্রেলিয়া তাও। এবার একটা বিহা করে নাও দাদা। আমার রোজ কথা করতে পারি না বাড়িতে। ফের ভি একটা সুকুন আসে , যখন ওদের সাথে কথা বলি। দাদা যতো টাকা থাকুক তোমার। একাকিত্ব কষ্ট দূর হবে না টাকা দিয়ে।'
What app একটা মেসেজ ঢুকলো " কফি হাউস পত্রিকাতে তোমার একটা গল্প বেড়িয়েছে কিনে নিলাম তোমার জন্য।"
রিপ্লাই দিলাম " thanks. এর জন্য তোকে কফি হাউসে নিয়ে গিয়ে কফি খাইয়ে দেবো"
ছুটকি rply দিলো " থাকে , তোমাকে আর আমাকে কফি খাওয়াতে হবে না। ওখানেই পড়ে থাকো। এ রবিবার আমাকে বাবার এক বন্ধু দেখতে এসেছিল তার ছেলের জন্য । হয়তো আমার বিয়ে হয়ে যাবে তুমি ফিরতে ফিরতে। আমি বাড়িতে কিছু বলার সাহস পাইনি , কারণ জানি তোমার তো আসার কোনো ঠিক নাই।"
আকবর ভাই, হাফিজ এখনও ব্যাস্ত আমাকে বোঝাতে বিয়ে করাটা কতোটা দরকারি আমার জন্য। কিন্তু আমি কোন কিছু যেনো শুনতে পেলাম না ঐ মুহুর্তে। কফি ফাঁকা কাপ দেখে কষ্ট হলো আরেক একটু কফি হলে ভালো হতো কিন্তু বেহিসাবি হলে চলবে না, আমার।