Dhoopchhaya Majumder

Abstract

2  

Dhoopchhaya Majumder

Abstract

কম্বল আর লিট্টির গল্প (শারদ সংখ্যার জন্য)

কম্বল আর লিট্টির গল্প (শারদ সংখ্যার জন্য)

1 min
305


"বাবা, এইট রাউন্ড কমপ্লিট। এবার ট্রিট চাই। কোথায় যাবো?"

"রাম সিংয়ের লিট্টির দোকান।"

"ইস, লিট্টি! আমি ভাবলাম ডমিনোজ বলবে। জানো ডমিনোজে বিশাল অফার চলছে, টিল থার্টি ফার্স্ট!"

"আচ্ছা? চল, গাড়িতে ওঠ।"

"সেই লিট্টির দোকানেই যাচ্ছ!"

"হ্যাঁ রে, তোদের ক্লাব থেকে নিউ ইয়ারে কোনও সোশ্যাল ওয়র্ক করবি না? গতবারের কম্বল বিলোনোর মতো?"

"আহ বাবা, বিলোনো মানে কী? বলো ডিস্ট্রিবিউট করা।"

"বিলোনো ওয়ার্ডটায় কীরকম যেন দয়া টাইপের ফ্লেভার আছে, না? ভুলে গেছিলাম, তোমরা তো দয়া করছ না। সেবা করছ, সমাজের সেবা। কিন্তু গতবারের কম্বলগুলোর মধ্যে ক'টা কম্বল সেবায় লেগেছিল, আর ক'টা কম্বল বেচে তোমাদের সেবা অভিযানের টার্গেটরা চুল্লু গিলেছিল সে হিসেব আছে?"

"আমাদের দেওয়া কর্তব্য, দিয়েছি। তারপর কে কী করল সেসব নিয়ে কেন মাথা ঘামাবো?"

"শুধু দেওয়া কর্তব্য নয়, কাদের দিচ্ছ, সেটা ভালোভাবে জেনেবুঝে নেওয়াটাও কর্তব্য। নাও, নামো এবার। দোকান এসে গেছে।" 

"ওফ! কী নোংরা! এখানে গোবর, ওদিকে পাব্লিক টয়লেট, তার মাঝে দোকান, তাতে লোকের ভিড় উপচে পড়ছে। ডিসগাসটিং!"

"এই গোবর আর সুলভের মাঝখানেই রয়েছে তোমাদের সমাজ, যাদের সেবার জন্য বিভিন্ন ইভেণ্টের প্ল্যান করো তোমরা।"

"হেই, হোয়াট আর ইউ ডুয়িং? ডোন্ট টাচ মি। বাবাআ! প্লিজ, দ্যাখো না, গায়ে এসে পড়ছে একেবারে!"

"আহা, ওকে ওরকম কোরো না। ও বোধহয় তোমায় চিনতে পেরেছে, একখানা কম্বল কি ওর হাতেও তুলে দিয়েছিলে?"

"প্লিজ বাবা, যা জানো না তা নিয়ে কথা বোলো না বারবার। আমাদের একটা সিস্টেম আছে, এভাবে রাস্তায় বেরিয়ে যার তার হাতে জিনিসপত্র আমরা তুলে দিই না।"

"যার তার হাতে? ভালো। হ্যাঁ রে, এই বাচ্চা, পয়সা নেহি দেঙ্গে হাম। লিট্টি খায়েগা?"

"লে জায়েগা।"

"ভাইয়া ইঁয়হা দিজিয়েগা এক প্লেট।"

"বাবা, দুটো টাকা দিয়ে ভাগালেই তো হতো!"


"চলো, ছেলেটা কোথায় যাচ্ছে দেখে আসি। আহা, এসোই না! আফটার অল দিস ইজ ইওর সমাজ।"

"আরে, এ তো নোংরা গলিতে ঢুকলো! জুতোটা আজই মুছেছি বাবা, বেকার হলো খাটুনিটা।"

"ওই দ্যাখো, পাইপের মধ্যে, বছরপাঁচেকের ছেলেটার সংসার, তোমাদের সমাজও। কম্বল দেখতে পাচ্ছো? কী মনে হচ্ছে? আর দে এলিজিবল ফর ইওর ব্ল্যাঙ্কেটস?"

"আরও তিনটে ভাই আছে দেখছি! প্লাস বাবা মা! চারটে লিট্টিতে কী করে হবে? কারোরই পেট ভরবে না তো!"

"না ভরুক, পেটে কিছু তো পড়বে। পাইপের মধ্যে যারা থাকে, তাদের পেট ভরার জন্য তৈরি হয় না, সবাই জানে।"

"বাবা, একটা স্ন্যাপ নিয়ে রাখি, নাকি? এবারের প্রোগ্রামে এদের ইনক্লুড করলে হয়। দে আর রিয়্যালি নিডি।"

"সে তোমাদের ইচ্ছে। তবে রিয়্যালি নিডি কি এরা? পেট ভরে যাওয়ার উপকরণ একটু একটু করে সবার মাঝে বিলিয়ে দেয় যারা, নিজের পেটের কোণাটুকুও ভরবে না জেনেও বিলিয়ে দেয়, তাদের কি রিয়্যালি নিডি বলা চলে?"

"চারটে লিট্টি ছ'জনে ভাগ করলে পার হেড ক'টা করে হয় বাবা?"

"হিসেব করো। সেই সঙ্গে যে ওমটা ছড়িয়ে পড়ল লিট্টির ঠোঙা থেকে ওদের সবার শরীরে, সেটাও হিসেবে রেখো। ওই ওম যার শরীরে ছড়ায়, তার কি আর দানের কম্বল লাগে? জানি না, তোমরা তো সমাজসেবা করো, তোমাদেরও কি জানা আছে উত্তরটা?"


(সমাপ্ত)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract