কবে ছেল
কবে ছেল
ঘটনাটা শুনেছিলাম আমার ছোড়দিদার কাছে।
কোনো এক গরমকালের বিকেল, দিদা গাছে জল দেওয়া সেরে বারান্দায় দাঁড়িয়েছেন দু'দণ্ড জিরোবেন বলে। আমার মামারবাড়ি ছিল একেবারে বড় রাস্তার ধারেই। অলস দুপুর সবে আড়মোড়া ভেঙ্গে গুটিগুটি পায়ে বিকেলের দিকে এগোচ্ছে, বড়রাস্তায় গাড়ির চলাচল বাড়ছে একটু একটু, বারান্দা থেকে দেখা যাচ্ছে নিচের ফুটপাতের ফলওয়ালা তার পসরায় আঁজলা করে খানিকটা জল ছিটিয়ে দিল, যে জুতো-ছাতা-সারাইওয়ালা ঠা-ঠা রোদ্দুরে বসে না থেকে 103 নম্বরের রোয়াকে গিয়ে একটু গড়িয়ে নিচ্ছিল এতক্ষণ, সে আবার নিজের জায়গায় এসে জুতো সারানোর সরঞ্জাম সাজিয়ে রাখছে। ইতিউতি ছড়িয়ে থাকা এরকমই নানা ছবি ছোড়দিদা দেখছিলেন কিছুটা মন দিয়ে, বাকিটা আনমনে।
হঠাৎ চোখ পড়ল নিচে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে আসা এক মাঝবয়সী মহিলার দিকে। পাড়াতেই কিছু বাড়িতে রোজের বাসনমাজা-ঘরমোছার কাজ করে সে। তার মা করত এক সময়, মেয়েও করেছে বিয়ের আগে কদিন, ছেলেপুলেসমেত বর যবে এবাড়িতে বসিয়ে দিয়ে গেল, তবে থেকে সেসব বাড়ির ঠিকে কাজের ভার পাকাপাকিভাব
ে মেয়ের হাতে। রোজ বিকেলে এই সময়টায় সে হাতের শাঁখাপলা আর লোহায় ঝোলানো সেফটিপিন ঝমঝমিয়ে কাজের বাড়ির দিকে হেঁটে যায়। কালোকোলো চেহারায় সিঁথির সিঁদুর বেশ খোলতাই হয়। কিন্তু আজ চেহারাটা এমন ম্যাড়ম্যাড়ে কেন? ভাল করে নজর করতেই দিদা চমকে উঠলেন। আহা রে! সিঁথিটা আজ একদম খালি যে! হাতগুলোও ন্যাড়া, শাঁখাপলা নোয়া উধাও! পরনের কাপড়টাও সাদাটে। ওইজন্যই বউটাকে ক'দিন দেখা যায়নি। দিদা শুনেছিলেন, মনে ছিল না। মনটা একটু ভারি হয়ে গেল। শাঁখায় সিঁদুরে চেহারাটা বেশ লাগত।
বউটা অবশ্য রোজের মতই কাপড়ের কুঁচিটাকে পায়ের গোছের একটু ওপরে তুলে হেঁটে আসছিল, পথ আগলালো ওর মতোই আরেকজন। সেও বাড়ি বাড়ি ঠিকে কাজ করে। আগের জনের নতুন বেশ সে বোধহয় আজকেই দেখল, খবরটা পায়নি আগে। গালে হাত দিয়ে একটুক্ষণ বান্ধবীকে দেখে সে শুধোলো,
"কবে গেল?"
সদ্যবিধবা বান্ধবীটি হাত উল্টে নিস্পৃহ নিরাসক্ত ভঙ্গিতে উত্তর দিল,
"কবে ছেলো?"
বলে কাপড়ের কুঁচিটাকে আবার পায়ের গোছের ওপর তুলে হেঁটে চলল কাজের বাড়ির দিকে।