ভেসে যায়
ভেসে যায়
ভেসে যায় আদরের নৌকা
ভেসে যায় সোহাগের সাম্পান...
"স্যাম্পো, অ্যায় স্যাম্পো, আবে এ স্যাম্পোর বাচ্চা!"
"ভাগ সালা! নামটা যদি ঠিক করে ডাকতে না পারবি ডাকবি না। তোর চে আমি বড়, দাদা বলবি।"
"কী হয়েচে বে? রং নিচ্চিস কেন? ভোরবেলাতেই বাপ সালা মুকে মুতে দিয়ে ফুটেচে নাকি?"
"বাপ কাকে বলে জানিস? দেখেছিস কখনও? চল ফোট, দিমাগ খাস না সকাল সকাল।"
"সরি দাদা, আর মুখ খারাব করবো না। ধান্দা নিয়ে এসচিলাম গুরু, তুমি ফুটিয়ে দিলে যাব কোতায়? দুটো ভাতেভাত ফুটিয়ে খাবো বলেই তো নরক ঘাঁটি বলো? তোমার মতো কাগজে নাম বেরোনো ডাইমণ্ড তো নই, ঘিলু নেই, কাদা ঘেঁটেই যেটুক মাল ওঠে!"
"লেহ্, চালু হয়ে গেল ইমোশনাল অত্যাচার। আমার নাম কাগজে বেরিয়েছিল, সেটা সালা আমিই ভুলে যেতে চাই, আর এই ইডিয়টটা রোজ দু'বেলা মনে না করিয়ে মুখ ধোবে না। ধান্দাটা কী, বল।"
"অ্যাডমিসন।"
"কার? কীসের? কোথায়?"
"নতুনপাড়ার একটা মেয়ের। ফিপ্টি ফাইব আচে, সিক্সটি পার্সেন লাগবে বলচে। তবে সালা তেঁটিয়া গার্জেন। রেট কমাতে বলে কাঁইমাই করচে।
"ওসব রংবাজি চলবে না। পুরো মাল হাতে পেলে তবে কাগজ ছাপবো, মার্কশিটের জেরক্স লাগবে সঙ্গে। তোর টু পার্সেন্ট কমিশন।"
"মোটে টু? ব্যাঙের পেচ্ছাব বেচলেও এর চে বেসি মার্জিন থাকে।"
"তাই বেচগে যা। আমার পেছন ছাড় তাহলে। আমার কাছে ধান্দা নিয়ে এলে আমার কণ্ডিশন অ্যাপ্লাই হবে।"
"কবে আসতে বলব?"
"আমার কাছে কবে কে আসে বে? যা ডীল করার তুই করবি, নো বার্গেনিং। এক পয়সা কমলে সালা তোমার ইয়ে বেচে মাল ওঠাবো। পেছন দরজা দিয়ে পাঁঠা ঢোকাবে, তাতেও সালা বার্গেনিং!"
ভেসে যায় আদরের নৌকা
ভেসে যায় সোহাগের সাম্পান...
"কী কেস গুরু? সক্কাল সক্কাল আদর-আদর গান সুনচো?"
"নৌকো ভাসাতিস ছোটবেলায়? বিষ্টির দিনে?"
"নাহ্। তুমি ভাসাতে?"
"হুঁ। মায়ের সঙ্গে। মা কাগজের নৌকো তৈরি করে দিতো, বারান্দায় জল জমলে সেগুলো ভাসাতাম, শেষে ভিজে ন্যাতা হয়ে নষ্ট হয়ে গেলে মন খারাপ করে বসে থাকতাম।"
"ওহ্, তাই বলো! মায়ের সঙ্গে! আমার মায়ের তো দিনে কাস্টমার, রাতে কাস্টমার। ওসব নৌকোটৌকো বানানোর সময় কোতায়?"
"ওহ্!"
"গুরু, একটা পোস্ন করবো?"
"বল।"
"তুমি তো আমাদের মতো নও, তাইলে তুমি এসবে কেন?"
"হা হা হা, কে বলল আমি তোদের মতো নই? দুটো চোখ দুটো কান দুটো করে হাত পা সবই তো আছে। তাহলে?"
"ঘিলু, ঘিলুতেই তো তুমি আমাদের মেরেচো বস! কাগজে নাম বেরোনো সোজা কতা? দিনটা আমার মনে আচে একনও, জানো? দোকানে গেলাস ধুচ্চিলাম, নারানকাকা হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল, 'ওরে, হরিমতির লালকালির রেকড ঘুচলো এবার। ওদের ফাসবয় এইচেসে ফাস্ট হয়েছে! তুমি গুরু সবেতে একসো পেয়েচিলে?"
"না রে গাধা, সবেতে একশো কি আর পাওয়া যেতো তখন? যাকগে, থাক ওসব কথা। মেয়েটার বাড়ি কবে যাবি?"
"সাম্পানদাদা, বুকে লাগে না তোমার?"
"অ্যাঁ? ওহ্, নাহ্। আমার একটা বন্ধু, হিস্ট্রিতে এম এ, সেদিন নবর বাবাকে পোড়াতে গিয়ে দেখা হলো, কালীতলা শ্মশানের হেড ডোম। বেঁচে আছি, এই ঢের।"
"কাগজটা আছে তোমার কাছে এখনও?"
"নাহ্, নৌকো করে ভাসিয়ে দিয়েছি। ওসব জঞ্জাল আর জায়গা জুড়ে রেখে কী হবে! ভেসে যায় আদরের নৌকা.... হা হা হা!"
(সমাপ্ত)