Dhoopchhaya Majumder

Inspirational

3.7  

Dhoopchhaya Majumder

Inspirational

প্রতিদান

প্রতিদান

3 mins
3.9K



আজ প্রথম মনে হলো অন্যায়ের যোগ্য উত্তর দিতে পেরেছি!!


প্রতিনিয়ত অপমান পেতে পেতে, আর চোখের সামনে মাকে অপমানে কুঁকড়ে আরও ছোট হয়ে যেতে দেখে নিজের প্রতি ঘেন্না জন্মাচ্ছিল। ঘুরে দাঁড়ানোর একটা কোনও উপায় খুঁজে পাওয়া অব্দি রাতের ঘুম চলে গিয়েছিল। একটা মানুষের প্রাপ্য মানুষের মতো ব্যবহার, সেটুকুও দিতে মানুষ এমন কার্পণ্য করে!


জ্ঞান হয়ে থেকে দেখে আসছি আমরা কাকুর বাড়িতে আশ্রিত। বাবার ঠিক কী হয়েছিল কোনওদিন জানতে পারিনি, শুনেছি আমার জন্মের কয়েকমাস পরেই তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। মা এখনও সিঁদুর পরেন, এবং ওই সিঁদুরের দাম যে অযথা খরচ, কাকুর সংসার থেকেই টাকাটা জলে যায়, কাকিমা সেটা ঠারে ঠারে বুঝিয়ে দিতে ছাড়েন না।


আমার পড়া শেষ হতো না, মাধ্যমিকের পরেই বিয়ে দিয়ে ঘাড় থেকে নামানোর জোগাড় কাকুরা করেই ফেলেছিলেন। দোজবরে না তেজবরে জানি না, শুনেছিলাম ক্লাস সেভেনে পড়া একটা মেয়ে আছে লোকটার। তাকে সামলানোর জন্য ভাতকাপড়ের চুক্তিতে লোক খুঁজছে। আর পারিনি, স্কুলের বড়দিকে গিয়ে সব বলেছিলাম। বড়দি পুলিশ নিয়ে এসে বিয়ে আটকেছিলেন, আমার জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থা করেছিলেন, ফ্রি তে হোস্টেলে থেকে পড়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। পুলিশ দেখে কাকুরা কিছুদিন থমকালেও জানতাম এরপরে অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়বে। আমি সারা সপ্তাহ বাড়িতে থাকব না, আমার জনমদুখিনী মাকে মুখ বুজে সবটা সহ্য করতে হবে। একেক সময় মনে হতো ওই তেজবরে লোকটার গলায় মালা দিয়ে দিলেই হতো, মা তো মুক্তি পেতো! তারপর ভাবতাম মাকে তো এখানেই থাকতে হতো। আমার বিয়ে হয়ে গেলেই তো আর কাকুরা মাকে রানির হালে রাখত না!


তবে বাড়ির বাইরে আসার পর নিজের মধ্যে একটা বদল আনতে পেরেছিলাম। বাড়িতে যেক'দিন থাকতাম, কোনও অন্যায় ব্যবহার দেখলেই কাকু কাকিমার দিকে শান্ত অথচ জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম। সেই দৃষ্টি সহ্য করার ক্ষমতা ওদের হতো না। মুখে তড়পাতো বটে,

 "খুন করবি নাকি রে মুখপুড়ি! চোখ দিয়ে তো আগুন ঠিকরোচ্ছে!" 


কিন্তু আমার সামনে খুব বেশি কিছু বলতে সাহস পেতো না।


এভাবেই আরও কয়েকটা বছর কেটে গেল। 

কলেজের খরচের দায়িত্ব বড়দি নিলেন, স্কলারশিপ একটা ছিল, টিউশনি করতাম, হোস্টেল খরচ উঠে এল সব মিলিয়ে। 


কলেজে আমার ডাকনাম হয়েছিল যোগিনী, সাজগোজ করতাম না বলে শুধু নয়, প্রকৃতির নিয়মে আসা বসন্তের ডাককেও অনায়াসে উপেক্ষা করতাম বলে। বয়স আমারও কমই ছিল, বাইরে থেকে দেখে যাকে অনায়াস উপেক্ষা বলে মনে হয় তা আসলে অনায়াস ছিল না। বিশেষ একজনের কাছ থেকে আসা প্রস্তাব উপেক্ষা করার মতো জোর নিজের ভেতরে আনার জন্য বেশ কয়েক রাত জাগতে হয়েছিল আমায়। তারপরও যে নিজের ভেতরের ডাককে উপেক্ষা করতে পারতাম তা নয়, কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। লক্ষ্য তখন একটাই, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মাকে ওই নরককুণ্ড থেকে বার করে আনা। লক্ষ্যে পৌঁছোতে হলে কৃচ্ছ্বসাধন অবশ্যম্ভাবী। 


আজ আমি লক্ষ্যে পৌঁছোতে পেরেছি। একটা সরকারি চাকরি আজ আমার হাতের মুঠোয়। জয়েন করেছি একমাস হল, গতকাল প্রথম মাসের মাইনে পেলাম। বাড়িঘর গুছিয়ে নিতে এই একটা মাস সময় লাগল। আজ মাকে আমার কাছে আনতে যাচ্ছি। কাকুর জন্য পাঞ্জাবি পাজামা, কাকিমার জন্য শাড়ি বোনের জন্য কুর্তি লেগিংস, সব নিয়েছি মনে করে। কাকিমার জন্য আরেকটা ছোট্ট জিনিসও নিয়েছি, এক কৌটো সিঁদুর। 


এতদিন খাইয়ে পরিয়ে পালন করেছেন ওঁরা আমাদের, আজ এই আনন্দের দিনে তাঁদের এইটুকু না দিলে চলে! 


(সমাপ্ত)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational