খবরের আতঙ্ক
খবরের আতঙ্ক
খবরের কাগজ মাঝে মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে ফেলে। স্বর্গ লোকে রাম মোহন থেকে রাম সবাই এতে আতঙ্কিত হয়ে যায়। যেমন রাম নাম পশ্চিম বাংলায় সত্যিই বদনাম হয়েছে , রাম খুব ভিত হয়ে পড়েছে। ঘুমের মধ্যে রাম দেখতে পাচ্ছেন সাদা নীল শাড়ি পার এক মুখ ফোলা মহিলা তাকে তেড়ে আসছে। যদিও খবর ছিলো রাম নাম শুনে উনি লোকজন চেয়ে আসে।
সরস্বতী বেশ বিপাকে পড়েছে। দাড়ি ছাড়া রবীন্দ্রনাথ নাথ আইডেন্টি ফাই করতে যেতে হয় তাঁকে বার বার। কারণ ১১/১১ পর খবর ছিলো দাড়ি ওয়ালা লোকজনকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে জেলে পোরা হচ্ছে। তাই শুনে কবি গুরু দাড়ি কামিয়ে ফেলছে। ওদিকে বিদ্যাসাগর, সুকান্ত ভট্টাচার্য বেশ ভয়ে ভয়ে আছে তারা রোজ স্বপ্ন দেখে তাদের মূর্তি করা যেনো ভাঙছে।
খবরে কাগজ শুধু মাত্র আতঙ্ক ছড়ায় এমন কথা নয়। কখনো কখনো সংসারে অশান্তি ও বাধায়। যেমন কার্তিক বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল অনেক কষ্টে। কিন্তু খবরের কাগজে বেরিয়েছে মেয়েদের বকাঝকা করলেও সেটা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স হিসেবে ধরা হবে ।একথা শুনে কার্তিক বিয়ে করবেন বলেই জানিয়ে দিয়েছেন। এদিকে অরুললালের খবর পড়ে আরেক কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছে শিব।শিব ঠাকুর আরো একটি বিয়ে করতে চাইলো কারণ হিসেবে বললেন"পদ্মাবতী ছিলেন রাওয়াল রতন সিং'এর দ্বিতীয় পত্নী। তার ট্রু লাভ, এবং লাইফ পার্টনার। কৈকেয়ী ছিলেন দশরথের দ্বিতীয় স্ত্রী এবং তিনি তাকেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসতেন। আবার মস্তানী ছিলেন বাজীরাও'এর দ্বিতীয় পত্নী। তিনিও তাকে খুব ভালবাসতেন। এদিকে মমতাজ হলেন শাহজাহানের অষ্টম স্ত্রী। আপনারা সবাই জানেন, তিনি তাকে এতই ভালবাসতেন যে তার স্মৃতিতে তিনি পৃথিবী বিখ্যাত তাজমহল বানিয়েছিলেন। ইতিহাস সাক্ষী, কোনো স্বামীই তার প্রথম স্ত্রীর মধ্যে সত্যিকারের ভালবাসা খুঁজে পাননি। বিদ্যা বালন তৃতীয় স্ত্রী। করিনা কাপুর দ্বিতীয় স্ত্রী। শিল্পা শেঠি দ্বিতীয় স্ত্রী। কিরন রাও দ্বিতীয় স্ত্রী।"
কিন্তু কথাটা যেই দূর্গা কানে গেল।শিব ঠাকুরের বুকের উপর পা তুলে বসলো সে। ফলে খবরের কাগজ সংসারের সুখশান্তি করে নেয় বার বার।
শুরুতে কোথায় যেনো ছিলাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কথাই বলছিলাম বোধহয়।করোনার জন্য মুখে মাস্ক পরেই ছবি পোস্ট করতেন রবিঠাকুর, এই সুযোগে কোনো নেতা নাকি দাড়ি লাগিয়ে রবিঠাকুর সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাজারে, অনেক নাকি তাকে বিশ্বন্যাতা বলেই ডাকতে শুরু করেছেন। এতেই বেজায় চটেছেন রবিঠাকুর, তবে একটু ভয়ও পেয়েছেন। নারদ আবার পিনিক দিয়েছেন, স্বর্গে নাকি আর Z ক্যাটাগরির VIP হিসেবে রাখা হবে না তাকে। কারণ ভারতের জাতীয় সঙ্গীত থেকে তাঁর জনগণমন বাদ গেলে, তার TRP কমে যাবে।রবীন্দ্রনাথ অবশ্য হুমকি দিয়েছে সে মুসলিম হয়ে যাবে, স্বর্গের থেকে জন্নত অনেক ভাল, ওখানে তো যে কেউ ৭২ হুরের সাথে ফুর্তি করতে পারে আর এখানে তো তেমন কিছুই নেই। ফলে বোধহয় দেবতারা একটু ভয় পেয়েছে। তবে মর্ত্যলোকের কান্ডকারখানা রবিকে বড়ো চিন্তায় ফেলেছে, নোবেল চুরি হল এখনও ফেরত এল না, শান্তিনিকেতন নিয়েও রাজনীতি। দেশের জন্য তিনিও তো রাজনীতি করছেন ঠিকই কিন্তু এরকম ভাবে তাকে নিয়ে রাজনীতি একেবারে তার পছন্দ নয়। বিদ্যাসাগর মহাশয় অবশ্য আরও বলছেন, "আমার মূর্তি ভাঙা হয়েছে। তোমার দাড়ির জন্য তোমাকে ওরা সন্ত্রাসীবাদী হিসাবে জেলে ভোরতে পারে।"সেই জন্য সে দাড়ি রাখছে না আগেই বলেছি। বঙ্কিম চন্দ্র বললেন " তাই জনগনমণর মত, আরও একটা গান লেখো যেখানে দেশের কথার থেকে দেশের নেতাদের একটু তেল মারা বেশি থাকবে, আজকাল নাকি টিভিচ্যানেলগুলোও খবরের কাগজ গুলো এভাবেই চলে।"
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আবার আরো একটা খবর পেয়ে দুঃখ পেয়েছেন। দাঁড়ি তো তাঁর আছে রাম ছাগলের দাড়ি আছে । তাই রাম ছাগলকে লোকে কি বুদ্ধিজীবী বলবেন। সাদা দাড়ি ওয়ালা এক চিত্র শিল্পী এখন তার নাম বদনাম করছে। তিন্নি নাকি নিজে হাতে নিরালস কবিতার পুরস্কার তুলে দিতেন পিসির হাতে। এতে বেজায় চটেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাকে নিয়ে এতো টানাটানি তার পছন্দ নয়।
খবরের কাগজ কিন্তু সব খবর কভার করে না। যেমন কিছুটা একটা পক্ষ নাকি বাঙালিদের ভুমিপুত্রদের স্বার্থ লড়াই করছে। কিন্তু বাংলার দেবদেবীদের পক্ষে কে লড়াই করবে?শনি ঠাকুরের আজ নিজেরই শনির দশা চলছে। কিভাবে জানতে চাইছেন - এতদিন আপানার পাড়ার মোড়ে একটা ছোট্ট জায়গা দখল করে, লোকজনকে বিপদে ফেলার ভয় দেখিয়ে বেশ পূজা আদায় করতেন তিনি। কোথা থেকে আমদানি হল এক নতুন দেবতা - আমার সিক্স প্যাক ওয়ালা। এতদিন পাড়া জিমরুমে কসরত করত ছেলেপুলের সাথে, এখন বাজারে এসে তিনি হয়ে গেছেন সংঙ্কটমোচনকারি। হ্যাঁ, বাপু হনুমান এর কথা বলছি।গ্রাম বাংলায় কোনো দিন এই রাম দেবতা ছিল না। ছেলেবেলায় ভুতের ভয়ে নামটা আসত, আর বড় বেলায় বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডাতে আসত রাম। তার ভক্তের এই প্রভাব সত্যি নিতে পারছি না। হুনুমানকে বহিরাগত বলে তাড়াবার উদ্দেশ্য আমার নেই। কিন্তু এটুকু দেখলাম - মন্দিরগুলোতে বাঙালি বামুন নেই মানে, এইটা ধর্মের বাজারটাও দখল করে নিচ্ছে ওরা। দ্বিতীয়ত, নবগ্রহের মন্দিরগুলোতে ভিড় কমছে, ব্রতকথা ভুলে হনুমান চালিশা পড়ছে বাঙালি। মানে নিজের ধর্মসংস্কৃতি ভুলতে বসেছে বাঙালি। আমাদের বাংলার দেবতাগুলোর বাজার বাঁচান, ভুঁড়িওয়ালা পঞ্চানন থেকে গাজী পীর কেউ তেমন হ্যান্ডসাম স্মার্ট নয়, ফলে ওদের বাঁচাতে হবে আমাদেরকেই। খবরের কাগজ গুলো এদের কথা লেখে না।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,