কাপালিকের কবলে - ৬
কাপালিকের কবলে - ৬
কাপালিকের কবলে - ৬
শুভময় মণ্ডল
নিজের কাহিনী শেষ করে আমার থেকে বিদায় নিয়ে, বিশ্বজিত বাড়ি চলে গেলো। আমিও ঐ চিপসটা হাতে নিয়ে ওখানে দাঁড়িয়ে রইলাম বেশ কিছুক্ষণ। একবার ভাবলাম অপিসেই ফিরে যাই। পরে মনে হলো - না, অপিসটা এখন আমার জন্যও আর ততটা সেফ নয়, যতটা এই ঘটনার আগে ছিলো।
আমরা যে অ্যাসাইন্মেন্টে কাজ করছিলাম, তার দুজনের একজন মারা গেলো! যদি ইস্যুটা আমাদের ঐ অ্যাসাইন্মেন্টের জন্যই হয়, তাহলে পরবর্তী আঘাতটা আমার ওপরেই আসার কথা!
আমি ফরেন ট্যুর করে ফিরেছি, আজ ঘটলো এই দুর্ঘটনা, কাল তো আমায় অপিস জয়েন করতেই হবে! তারপর? ভাবলাম - নাহ্, কোন মতেই এখন ওখানে ফেরা যাবে না। তার চেয়ে বরং অন্য কোথাও যেতে হবে, যেখানে আমার যাওয়া বা থাকার কথা কেউ ভাবতেও পারবে না!
কোথায় তাহলে যাওয়া যায়? ভাবতে ভাবতেই মনে হলো - বিশ্বজিতের বাড়ি গেলে কেমন হয়? যা ভাবা, তাই কাজ। দৌড় দিলাম সেদিকেই, তার গতিপথ অনুসরণ করে। বিশ্বজিতকে ধরেও ফেললাম মাঝ রাস্তায়। ওদের বাড়ি পৌঁছাবার আগেই রাস্তাতেই ওকে যথাসম্ভব বুঝিয়ে বললাম, আমার ঠিক কি উপকার ও করেছে, আর কি উপকার করতে হবে।
তার বাড়িতে গিয়ে দেখি, ওর মা সত্যিই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তিনি দিব্যি গৃহকর্ম করছেন, আর ওর মামাও তাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছেন। তিনি বিশ্বজিতের শিক্ষার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা করেই রেখেছিলেন বাড়িতে। কারণ, এত বছর পর সে বাড়িতে ফিরে আসছে তাও মানুষ হয়ে! তাই, তার জন্য সব থেকে ভালো যা কিছু করা দরকার, তা করার ব্যাপারে কোনও রকম খামতি রাখেন নি তিনি।
আমি নিজের মোবাইলটা সুইচ্ড অফ করে, সিমটা বের করে নিয়েছিলাম আগেই। এখন যেটা দরকার ছিলো - ঐ মাইক্রো এসডি কার্ডে আমার বন্ধু কি তথ্য রেখে গেছে, তা উদ্ধার করার। বিশ্বজিতের জন্য ওর মামা একটা নতুন ল্যাপটপ কিনে এনেছিলেন। সেটার তখনও কনফিগারেশন করা বাকি ছিলো।
আমি সেটাই করার অজুহাতে, কার্ড রীডারের দ্বারা ঐ চিপসের ফাইলটা ওপেন করলাম - তথ্য যা ওখানে ছিলো, তা' যে আমার জন্য কতটা ভয়ঙ্কর ছিলো সে আমিই জানি। কিন্তু তার সঙ্গে ছিলো দেশের জন্যও একটা ভয়ঙ্কর বার্তা। যে কারণে আমি বিদেশে গিয়েছিলাম সেটাই কারণ!
টার্গেট আমার বন্ধু নয়, আমিই ছিলাম! কিন্তু সে বিষয়টা জেনে ফেলায়, তাকেই দুনিয়া থেকে চলে যেতে হলো! একটু খুলে বলি - ঐ দেশে সফরে গেলে এই দেশের উপরাষ্ট্রপতির জীবনের আশংকা ছিলো। ঐ সময় রাষ্ট্রপতির আকস্মিক হৃদস্পন্দন থেমে যাওয়ার পর উদ্ভূত আপৎকালীন পরিস্থিতিতে, দুই পদেরই দায়িত্ব তিনিই সামলাচ্ছিলেন। সুতরাং দেশের জন্য তাঁর গুরুত্ব ছিলো ঐ সময় মারাত্মক।
এদিকে, আমার ইনটেলিজেন্স বলছিলো, ঐ দেশের এয়ারলাইন্সের লোকও এমনভাবে জড়িয়ে আছে বিষয়টাতে, যে তারা হয়তো তাঁর বিমানটাকেই ল্যাণ্ডিং এর সময়ই ক্র্যাশ করিয়ে দেবে। মোট কথা, তাঁকে হত্যা করে, আমাদের দেশে একটা ভয়ানক আপৎকালীন পরিস্থিতি তৈরী করে দিয়ে, সীমান্তে দ্বিমুখী আক্রমণ শানাবার ফুলপ্রুফ প্ল্যান রেডী।
এদিকে, তাদের এই ষড়যন্ত্র প্রোজেক্টের সাথে যাদের নাম জড়িয়ে ছিলো, তা'তে আমাদের পি.এম. অফিসের লোকও ছিলো! কা'কে বলবো, আমার ইমিডিয়েট বস, মানে আমার রীপোর্টিং অফিসার নিজেই তাদের ঐ নেটে ফেঁসে গেছেন! আমাদের ঐ অ্যাসাইনমেন্টের সব খবর, তাঁর থ্রু দিয়েই তো তাদের কাছে যথাসময়ে পৌঁছে যাচ্ছিলো। আর পি.এম.ও. থেকে সেই অফিসারটিও তার সত্যতা তাদের কনফার্ম করছিল!
সৌভাগ্যক্রমে, বিদেশ থেকে আমি আমার সংগৃহীত কোন তথ্যই পাঠাইনি, আমার নিজেরও কেমন একটা সন্দেহ হচ্ছিলো বলেই। আমার বন্ধুও সেই সুযোগে, তার মনগড়া তথ্য পরিবেশন করে তাদের ততক্ষণে যথেষ্ট নাকানি চোবানি খাইয়েই রেখেছিলো! এখন সব কাহিনী জেনে যাবার পর, আমার একটাই কাজ বাকি রইলো - আমাদের উপরাষ্ট্রপতি তথা দেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতির জীবন রক্ষা। কিন্তু কি ভাবে?
চলবে