Manab Mondal

Abstract Tragedy Inspirational

5.0  

Manab Mondal

Abstract Tragedy Inspirational

কালো মেয়ের উপাখ্যান

কালো মেয়ের উপাখ্যান

3 mins
1.2K


টেপি লেখা পড়া শিখেছিলো ভাগিস তাই চিঠি দিতে পারলো। বাঁকা বাঁকা অক্ষরে লিখে পাঠালো চিঠি , "তোমাদের শহর আসছি গো আমরা

ছেড়ে চলে যাব এই শাল বন, পিয়ালের জঙ্গল।"

 কবিতার মতো দুটো লাইন একটা মহাকাব্য বলে গেলো। জঙ্গল মহল নামটা শুনলেই আমার অনেক বন্ধু বান্ধবরা দুমকরে বলে দেয়, "যেখানে ভাম পন্থীরা যাদের ব্রেন ওয়াশ করে, মাঝে সাজে ট্রেন লাইন উপড়ে টুপড়ে দেয়।"

কেউ দেখে না, ফোনর বোতাম টিপলে শহরে তো দশ পোনরো মিনিটে পিজ্জা , বিরিয়ানি ঘরে চলে আসে, স্বাধীনতা পরে এত বছর হয়ে গেছে তবু এম্বুলেন্স দূরে থাক সাপ কাটলে কিংবা বাচ্চা হবার জন্যে গাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো রাস্তা এখন নেই। পানীয় জল নেই তো ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল , কিংবা কলেজ কিভাবে থাকবে। ওরা জানে ভোটে লাড়াই করা জন্য ওদের পয়সা নেই, তাই রক্ত বিনিময়ে , দীন পরিবর্তনের তাত্তিক স্বপ্ন ওরা দেখতেই পারে।

যাইহোক গনেশ সুত্রধরের গল্পটা বলি তাহলে। ওরা বাসরাস্তায় এসে, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে

শেষবার দেখছে সবুজ রৌদ্র ‌কে। ওরা আমার জ‍্যোৎস্নার গল্প শুনে নি।আমরা কোন দিন নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখি নি আমাদের মতো। তবু গ্রাম ছেড়ে যাচ্ছে ওরা।

অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে জীবনের ব্যস্তহীন একটা সুন্দর-শান্ত গ্রাম। নাম ধরে নেন চড়িদা, ব্লক বাঘমুন্ডী। গ্রামে ঢোকার পথেই রাস্তার দু'ধারে ছৌ মুখোশের সারি সারি দোকান৷ শুধু দোকান বললে ভুল হবে, এগুলি শিল্পীদের৷  সময় করে গ্রামটাকে ভাল করে দেখতে,এদের শিল্পকর্মের সঙ্গে পরিচিত হতে শহর থেকে মাঝে মাঝে ভিড় করে এই গ্রামে । এখানে বসেই দিন-রাত মুখোশ তৈরির কাজ করে যাচ্ছেন ভূমিপুত্র গনেশের মতো শিল্পীরা। পুরান বা মহাকাব্যের বিভিন্ন চরিত্র থেকে প্রানীদের মুখোশ অদ্ভুত রকম সৃজনশীল কাজ দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন, সামনে বসে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে ওঠে। নানা রঙে রঙকরে এরা মুখোশ গুলো। জীবনের রঙটা ওদের ফিকে হয়ে গেছিলো করোনা পর‌। 

একটা ngo কিছু দিন হলো , ওখানে সেবা মুলক কাজ করছিলো। ওখানে শহরের বাবুদের আসা যাওয়া ছিলো। গনেশ এর বড়ো মেয়েকে ওরা চাকুরী দেবে বলে ডাকতো মাঝে মাঝে। একদিন ওরা ওকে ধর্ষণটা করে ফেলো। প্রভাবশালী নেতাদের ছেলেপিলে, হলে কি হবে। বিরোধীরা একটু চ্যাচমেচি করতে। বিচার হলো। কিন্তু আদালত বললো মেয়েটা একে কালো তারপরে আমশীর মতো চেহারা কখনো বাবুরা ধর্ষণ করতে পারে, ও নিজে গিয়ে ছিলো দেহ বিক্রি করতে, কিন্তু দরাদরি তে পোষায়নি তাই বদনাম করছে সবাইকে। জোসনা হারিয়ে গেলো। কিন্তু গনেশ ঐ হারিয়ে যাওয়া না মানতে পেরেই গ্রামটা ছাড়ছে।

ও মুখোশ বানায় কিন্তু ভালো মানুষির মুখোশ ছিঁড়ে ফেলতে শেখ নি।

"জীবন আমাদের কাটলো

তবু আমাদের পাঁজর খুলে খুলে

অতীত রোমন্থন করে ভেসে

এখন শতাব্দী পুরোনো

কোনো ইতিহাসের দীর্ঘশ্বাস‌ ফেলে"

নানা এটা আমার লেখা লাইন, ও লিখলো, আমি ও তো দিদির মতো কালো মেয়ে জানি, হয়তো তুমি আমাকে নিয়ে কবিতা গল্প লিখতে পারো। কিন্তু তার চেয়ে বেশি কিছু ভাবনা হয়তো ‌। কিন্তু আমি হয়তো ভাবি, তাই তুমি হঠাৎ যদি খুঁজেতে আসো আমায় ভুলে, তখন তোমার তো সময় নষ্ট হবে। আমি তো হারিয়ে যেতেই যাচ্ছি তোমার শহরে।

যদিও তোমার সভ্য দুনিয়াকে ধিক্কার দিলাম চোখের জলে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract