Manab Mondal

Abstract Classics Inspirational

4.3  

Manab Mondal

Abstract Classics Inspirational

জয়নগর

জয়নগর

3 mins
238


জয়নগর কিন্তু সারা দেশের প্রাচীনতম পৌরসভাগুলির মধ্যে অন্যতম।১৮৬৯ সালে বেঙ্গল মিউনিসিপাল অ্যাক্ট অনুযায়ীসাথে জয়নগর মজিলপুর পৌরসভা তৈরিহয়। দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণের সভাপতিত্ব ১৮৬৪ সালে যে জয়নগর টাউন কমিটি গড়ে উঠেছিল। তবে বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রীর (১৮৪৭-১৯১৯) পিতার ভুমিকা ছিলো অন্যতম ,তার পিতা পণ্ডিত হরানন্দ ভট্টাচার্য (১৮২৭-১৯১২) ছিলেন জয়নগর মজিলপুর পৌরসভার প্রথম পৌরপ্রধান। দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ (১৮১৯-১৮৮৬) শিবনাথ শাস্ত্রী র মাতুল বা মামা ছিলেন। সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘সোমপ্রকাশ’এর সম্পাদক ছিলেন দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণের (১৮১৯-১৮৮৬) ।১৮৫৭ সালের সিপাই বিদ্রোহের পর ভারতবর্ষের জাতীয়তাবাদী মানসিকতা ও স্বদেশপ্রেমের জন্য স্বায়ত্বশাসনের নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছে বাংলার গুনীজনরা, সেই সেই সমৃদ্ধশালী নগরী জয়নগর-মজিলপুর ও সেখানকার কৃতি সন্তানদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সংস্কৃতিতে প্রদান কেন্দ্র স্বায়ত্বশাসনের অধিকার ছিনিয়ে আনার প্রস্তুতিপর্বে ১৮৬৫ সালে প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রীর পিতা পণ্ডিত হরানন্দ বিদ্যাসাগরের সভাপতিত্বে প্রথম তৈরি হল জয়নগর টাউন কমিটি। সেই কমিটি গঠনের মাত্র চার বছরের মধ্যে অর্থাৎ ১৮৬৯ সালে ১লা এপ্রিল তা জয়নগর পৌরসভা।

জয়নগর অতীতে অনেক সমৃদ্ধ শহর ছিলো।বিদেশী মগ, পর্তুগীজ, ফরাসী জলদস্যুরা জয়নগরে লুট সন্ত্রাস চালাত এবং এরা নিকটবর্তী জঙ্গলে ঢেকে থাকা মগরাহাট এলাকায় লুকিয়ে থাকত। এই মগ দস্যুদের নামানুসারে মগরাহাটের নামকরণ ।প্মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য আদিগঙ্গার তীর ধরে চক্রতীর্থ ভ্রমণ করে শ্রীক্ষেত্র পুরীধামে গমন করেন। পণ্ডিত মানুষদের বসবাস এর কারণে একে দ্বিতীয় নবদ্বীপ বলা হত।

১৭৭৫ সালে যখন মুর্শিদকুলি খাঁ অদূরদর্শিতা ফলে বেতরের কাছে খাল কাটা হয়। গঙ্গার মূল ধারা ঘুরিয়ে সরস্বতী নদীর মরা খাত দিয়ে বজবজ, রায়চক, ফলতা, ডায়মণ্ডহারবারের পাশ দিয়ে সাগরের মুড়িগঙ্গায় নিয়ে গিয়ে মেশায় তার আদিগঙ্গার মৃত্যু ঘণ্টা বাজতে শুরু করে।একসময় অথচ জয়নগর ও মজিলপুরের বুক চিরে প্রবল ধারায় প্রবাহিত হয়ে যেত আদিগঙ্গার ধারা। চাঁদ কিংবা ধনপতি মতো সওদাগর বানিজ্য তরী বাইতো এখন দিয়ে। আজ মৃতপ্রায় গঙ্গা মানুষের অধিগ্রহণ করে নিয়ে মিত্রগঙ্গা, ঘোষগঙ্গা, বোসগঙ্গা নামে পুকুরের মতো স্মৃতি চারণ করছে।

জয় নগরের অত্যন্ত জাগ্রত হলেন চণ্ডীতলার জয়চণ্ডী,দেবীর নাম অনুসারেই জায়গাটির নামকরণ জয়নগর। গাছগাছালিতে ঘেরা প্রাচীন শহর জয়নগর। দক্ষিণমুখী শ্রীশ্রী জয়চন্ডী মাতার মন্দির, প্রায় তিনশো বছর আগে জয়চণ্ডীদেবীর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন কলকাতার মতিলাল পরিবারের গুণানন্দ মতিলাল। জয়নগরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী চণ্ডীর আবির্ভাব নিয়ে বেশ কিছু কিংবদন্তী ছড়িয়ে আছে। গুণানন্দ ও জৈনক টুনুপণ্ডিত একদিন নৌকাযোগে আদিগঙ্গা দিয়ে যাওয়ার সময় নদীর তীরে এক সুন্দরী মহিলা কে একাএকা ঘুরতে দেখেন । তাঁরা নৌকা থেকে তীরে নামার পর ওই রমণীকে আর দেখতে না পেলেও, সেইরাতেই গুণানন্দ স্বপ্নাদেশে জানতে পারেন যে, ওই মহিলা হলেন দেবী শ্রীশ্রীজয়চণ্ডী। স্বপ্নাদেশে তাঁর মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করে সেবাপুজোর ব্যবস্থা করলেন। 

আবার শোনা যায় জয়নগরের শ্রীশ্রীজয়চণ্ডী পাঁচশ বছর আগে থেকেই জয়চণ্ডী এখানে আছেন।নিকটবর্তী পুকুরের জল থেকে মাকে এক গরীব ব্রাহ্মন উদ্ধার করেন স্বপ্ন পেয়ে ।ব্রাহ্মনকে তিনি তাঁর পূজার দায়িত্ব দেন।কিন্তু সে তো অত্যন্ত গরীব বলে মা কে তিনি একটি খড়ের চালা নির্মান করে রাখেন।পরে ভক্তরা মন্দির নির্মাণ করে দেন।মা তাঁকে এক নির্দিষ্ট বকুলবৃক্ষতলে স্থাপন করতে বলেন।পরে মা সেই বকুলবৃক্ষ দিয়েই তাঁর বিগ্রহ নির্মাণ করতে বলেন। এবং এইভাবে মা'র দারুবিগ্রহ নির্মিত হয়। শোনা যায় , মা'র মন্দিরের সামনে এক কদম্ববৃক্ষ আছে যেখানে একটি মাত্র ফুল ফোটে তাও আবার জৈষ্ঠ্যমাসে।ওই সময় বেশের মেলা হয়ে থাকে।যদিও ফুলটি গভীর রাতে দেখা যায় এবং তা দিয়ে মা'র পূজা হয়।এখানকার লোকজন বলেন মা এখনও রোজ রাতে ভ্রমনে যান।খুব কম সৌভাগ্যবান মানুষই তা দর্শনের সুযোগ পেয়েছেন। শ্রী জগন্নাথদেবের স্নান যাত্রা থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর থানার জয়নগর মজিলপুর গ্রামে অতিজাগ্রত জয়চণ্ডী দেবীর ১৫ দিন ব্যাপী বাৎসরিক পূজা ,উৎসব ও মেলা হয় |


দেবীর বর্তমান দক্ষিণমুখী মন্দিরটি ১৯৫০ সালে কলকাতার মহেন্দ্র শ্রীমানি নির্মাণ করেন।আর নাটমন্দিরটি নির্মাণ করেন নিত্যহরি মতিলাল। গর্ভমন্দিরে একটি সিমেন্টের বেদিতে কাঠের মঞ্চের উপর বকুল গাছের নির্মিত আড়াই ফুট উঁচু শাড়ি পরিহিত দেবীর দারুবিগ্রহ আজও আছেন জয়নগর বাসীদের মা ।গৌরবর্ণের ত্রিনয়নী দেবীর হাতদুটি অলঙ্কার শোভিত। অভয় ও বরাভয় মুদ্রায় রতা,মাথায় মুকুট কিশোরী মেয়েমতো দাড়িয়ে আছে। । দেবীর আর একটি স্বপ্নাদেশে প্রাপ্ত ওই দিব্য শিলাখণ্ডটিও ওই এই অপরুপ দারুবিগ্রহের নিত্যসেবিত হয়।।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract