NISHA KAMILA

Tragedy Inspirational

4.6  

NISHA KAMILA

Tragedy Inspirational

....জেদ....

....জেদ....

3 mins
745


ঢং ঢং করে স্কুলের ঘন্টা বেজে উঠতেই স্কুলের সমস্ত ছাত্র এবং ছাত্রীরা আনন্দ সহকারে একগাল হাসি নিয়ে স্কুলের মাঠে এসে হাজির হল। সকলেই খুব আনন্দিত। কেউ কেউ মাঠে খেলা করছে আবার কেউ কেউ নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি, গল্প করতে ব্যস্ত। 

আরে না না.. ওই যে দূরে কে একজন একাকী গাছের নিচে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছে.. হ্যাঁ ও হলো এই স্কুলেরই পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র.. নাম পাপাই।তবে সে কাঁদছে কেনো? তার নাকি একটা নতুন খেলনা চাই তাই সে কাঁদছে।পড়াশোনা করতে তার মোটেই ভালো লাগে না। তার মা সারাদিন ধরে হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে দুটো পয়সা রোজগার করে। তবুও কোনো কোনো দিন একমুঠো ভাতও কপালে জোটে না। উপোসেই দিন কাটে তাদের। 


পাপাই এর মায়ের একটা ছোট্ট দোকান আছে, নিজের হাতে তৈরী করা। শহরের একটা বিশাল বড় শপিংমল এর পাশেই তাদের সেই ছোট্ট দোকান টা। জীর্ণ ছেঁড়া একটা পর্দার আস্তরন দ্বারা সেটা ঢাকা আছে। পাপাই এর মা সারাদিন বাড়ি থাকে না, আর পাপাই তার তো সারাদিন দেখা মেলা ভার। কখনো বাগানে কখনো পুকুরের ধারে আবার কখনো কারোর বাগান থেকে ফল পাড়তে দেখা যায় তাকে, কিন্তু বই এর সাথে সে যেনো সারাদিন কোনো সম্পর্কই রাখে না। বই থেকে সে সারাদিন দশ হাত দূরে থাকে.. কে বোঝাবে তাকে সেটা? পাপাই সারাদিন নানা রকম জেদ ধরে তবে পাপাই এর মায়ের বড্ড কষ্ট হয় ছেলের ইচ্ছে পূরণ করতে না পারার জন্য। 


শরৎকাল। ইতিমধ্যে আকাশ ফর্সা হয়ে উঠেছে আকাশে ছোট্ট ছোট্ট সাদা মেঘেরা লুকোচুরি খেলছে। কাশফুলেরা বিজ্ঞের মতোন সাদা চশমা পরে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। দুর্গা পুজো চলে এসেছে। 

এইদিকে আবার পাপাই জেদ ধরেছে তার এই বছর নতুন জামা চাই। ওই দিকে আবার পাপাই দের দোকানে এত বিক্রি নেই। পূজোর আগের দিন গুলো পাপাই তার মায়ের সাথে দোকানে গেলো। পাশেই বিরাট বড় শপিংমল। পাপাই বেশ খানিকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকার পর তার মাকে বলেই ফেললো - " আচ্ছা মা, সবাই ওই পাশের বড় দোকানটাতে যাচ্ছে কতো কিছু কেনাকাটা করছে, কিন্তু ওরা আমাদের দোকানে কেনো আসছে না? ওরা না আসলে আমি নতুন জামা পরবো কী ভাবে? প্রশ্ন টা শুনে পাপাই এর মায়ের দুই চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বেরিয়ে এলো। সে নিরুপায় ভাবে উত্তর দিলো -" বাছা, ওরা যে বড়লোক, তাই ওদের এই দোকান টা ঠিক পোষায় না।" পাপাই তার মায়ের কথাটা তখন ঠিক বুঝতে পারলো না। কিন্তু সে রোজ তার মায়ের সাথে দোকানে আসতে লাগলো এবং রোজই সে একই জিনিস দেখতো তবে মাঝে মাঝে দু একজন উদার মনের মানুষ যে তাদের দোকানে আসতো না এমন নয়। পাপাই পুজোর আগের দিন আবার তার মাকে একই প্রশ্ন করলো তখন তার মা তাকে উত্তর দিলো - "পড়াশোনা করলে তুমিও একদিন অনেক বড়ো মানুষ হবে, ওদের মতোন তুমিও একদিন ওই দোকানে যেতে পারবে তখন হয়তো তোমার একটা ওই রকম দোকানও হবে। তবুও একটি বার আমাদের মতোন ছোট্ট দোকান গুলোর দিকেও চেয়ে দেখো। কারণ মনে রেখো প্রচুর অর্থ সম্পদের অধিকারী হলেই একজন বড়ো উদার হৃদয় সম্পন্ন মানুষ হওয়া যায় না তার জন্য চাই অনেক বড়ো একটা মন।" তখন হয়তো পাপাই কিছু একটা বুঝতে পেরেছিলো যদিও সেই বছর সে তার নতুন জামা পায়নি তবুও সে আবার জেদ ধরেছিলো তবে কিনা নতুন জামা, খেলনা বা অন্য কিছুর নয় সে জেদ ধরেছিলো সে একজন বড় মানুষ হবে সে বড় হয়ে তার মতোন বাচ্চাদের সাহায্য করবে। 

হ্যাঁ সে তার প্রতিশ্রুতি রেখেছিলো, সে সত্যি তারপর থেকে ঠিক মতোন পড়াশোনা করে একজন অনেক বড় মানুষ হয়েছিলো, সে তার মতো অসংখ্য গরিব মানুষ কে সাহায্য করতে এগিয়ে গিয়েছিলো। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy