Maheshwar Maji

Classics

3  

Maheshwar Maji

Classics

ইউ টার্ন

ইউ টার্ন

4 mins
976



---ফ্রেন্ড..ফ্রেন্ড হেল্প মী।প্লিজ...প্লিজ..


পিছন থেকে মেয়েটির ডাক শুনতে পেয়ে নিরব যেন ধড়াম করে বাস্তবের মাটিতে ধাক্কা খেল।

সে এতক্ষণ অন্য এক জগতে হারিয়ে গেছিল।সেখানে কোন আশা নেই।স্বপ্ন নেই।

চারিদিক রুক্ষ্যসুক্ষ্য।

হাতের মুঠোয় বিষের শিশিটা নিরব সন্তর্পণে পকেটে রেখে দিল।


মেয়েটি দৌঁড়ে এসে তার সামনে কোমর ঝুঁকিয়ে হাঁপাতে লাগল।


----ও গড!..কখন থেকে তোমাকে ডাকছি?.কানে যায়নি নাকি?.যাই হোক।ফ্রেন্ড বলে ডেকেছি।হেল্প পাবো বলে।খালি ফেরাবে না কিন্তু ।ওকে।


নিরব এ বছর আঠাস পূর্ণ করেছে।ইতিহাসে স্নাতক।বর্ধমান ইউনিভার্সিটি থেকে দূরশিক্ষার মাধ্যমে মাস্টার্সটা কমপ্লিট করেছে।

তারপর টানা কয়েক বছর চাকরীর চেষ্টা করছিল কিন্তু পায়নি।।


বাড়িতে বিধবা মা আর একমাত্র বোন আছে।বোনটা এখন কলেজে পড়ছে।তার বিয়ের জন্য পাত্র দেখাও চলছে।

নিরবের বাবা পোষ্ট মাষ্টার ছিলেন।বছর দশেক আগে হঠাৎ একটা গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান।

নীরব তখন সবে কলেজে ভর্তি হয়েছে। এমন সময় তার চেনা,জানা পৃথিবীটা নিমেষে পাল্টে গেল। শোকে,দুঃখে,হতাশায় বেচারা বোবা হয়ে গেছিল।তারপর থেকে সে অনেক যুদ্ধ করেছে।

অনেকবার ভেবেছিল, পড়াশুনো ছেড়ে দেবে। কিছু একটা ব্যবসা করবে। কিন্তু পারেনি।তার মা করতে দেননি। বুঝিয়ে বলতেন,


---আগে পড়াটা সম্পূর্ণ কর। তারপর যা ইচ্ছে হয় করিস।


তার বাবার চাকরীটা জুটে গেলে ভালই হত।সে আর হয়নি। আইনি জটিলতাই ঝুলে গেছে। মায়ের পেনসেনটুকুতেই সবকিছু ম্যানেজ করতে হত।


পড়াশুনো শেষ করার বছর তিনের পরও যখন কোন কিছু হল না। তখন সে মনস্থির করেই ফেলেছিল।রেডিমেডের ধান্দা শুরু করবে।

তখন তার এক কাকু বাড়ি এসে অন্য প্ল্যান বাতলে গেলেন।

তার বাবার পাওয়া পাঁচ লাখ টাকাটা ব্যবসায় না খাঁটিয়ে,কাকুটি

চিটফান্ডে ইনভেস্ট করতে বললেন।ব্যাবসাতে বড্ড ঝুঁকি।হ্যাপাও অনেক।

অথচ চিটফান্ড কম্পানিতে ফিক্স করে দিলে,তিন বছরেই ডবল।তারপর পাঁচ লাখে বোনের বিয়ে দিয়ে,বাকি পাঁচ লাখটা আবার ফিক্স করে দিলেই হল।


তার মাকে বুঝিয়ে,সুঝিয়ে তাই করা হয়েছিল ।

তারপর মায়ের পেনশন আর নিজের সামান্য টিউশানির টাকা।সেই দিয়ে সংসারটা কোনরকমে চলছিল।

...হঠাৎ, কিছুদিন আগে রব উঠল।সমস্ত চিটফান্ড কম্পানিগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সারা বাংলাজুড়ে গরীব আর মধ্যবিত্তদের বুক তখন ধুকপুক করে উঠল।পাগলের মত সবাই ছুটছেন।চিটফান্ডের অফিসে।সেখানে গিয়ে দেখে, তালা ঝোলানো।হাজার,হাজার মানুষের স্বপ্ন ভেঙে খানখান হয়ে গেল। বুকের ভেতর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। দুচোখে অন্ধকার।কান্না আর থামে না।


সেই হতভাগ্যের দলে নীরবও সামিল ছিল।

তার বাবার শেষ সম্বলটুকু জমা রেখেছিল।সেটাই ছিল তাদের একমাত্র আশা,ভরসা। সেটা চলে যেতেই,নিরব পাথর হয়ে গেল।তার মা এবং বোনের চোখে নিকশ অন্ধকার।

এজেন্টরাই বা কোত্থেকে টাকা দেবে?তাই কেউ গা ঢাকা দিল তো কেউ আত্মহত্যা করল।


বোনটার জন্য ভাল একটা পাত্রের সন্ধান এনেছিলেন ঠাকুরমশাই।

তার মা এই অবস্থায় ফিরিয়ে দিয়েছেন।

আর্থিক সম্বলটাই তো চলে গেছে।এরপর আর স্বপ্ন দেখবেন কী করে?


নীরব আর পারল না,নিজেকে বোঝাতে।তাই সে আত্মহত্যার সহজ রাস্তাটাই বেছে নিল।

সেই মত বাড়ি থেকে বিষের শিশিটা পকেটে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

ফসলে স্প্রে করার নাম করে কিনেছিল।শক্তিশালি বিষ।এক ঢোক কষ্ট করে গিলে দিতে পারলেই সব শেষ।মৃত্যু অবধারিত।


নিরব মেয়েটির দিকে তাকাল।

জিন্স আর টপ পরে আছে মেয়েটি। প্রজাপতির মতো লাগছে!

চোখে,মুখে প্রশান্তির ভাব!...তার ভ্রুযুগলের নাচ দেখে নীরব লজ্জা পেল। বুকের ভেতরটা দুলে উঠল।একটা ভাললাগার প্লাবন এসে তার সমস্ত নিরাশার গ্লানিকে ধুয়ে দিল যেন।দুচোখের তারায় একটা রঙিন বসন্ত হাতছানি দিয়ে উঠল।

মুহূর্তে সে মৃত্যুকে পরাজয় করে ফেলল।

মায়া জমে উঠল জীবনের প্রতি।মনে হল সে নতুন করে জন্মগ্রহণ করল।


মেয়েটির হাততালি শুনে নীরবের আবার ঘোর কাটল।


---এই হ্যালো মিঃ পোয়েট ম্যান।তোমাকেই ডাকছি।মনে,মনে শব্দের জাল বুনছো নাকি?...না,জেগে,জেগে ঘুমোনোর অভ্যেস আছে?কাম অন।উঠো।

এসো..আমার সাথে।তোমাকে আমার‌ একটা কাজ করে দিতে হবে।সেইজন্যই ডাকলাম।ওই দখো। এইমাত্র খরগোশদুটোকে ফার্মারার কাছে কিনে গাড়িতে চাপিয়েছি।

যেই গাড়ির ড্রাইভার দরজা খুলে একটু হাল্কা হতে বেরিয়েছে।এমনি বেটাদুটো একসাথে গে ঝাঁপ।ওই দ্যাখো বুড়ো ড্রাইভারকাকুটি হাঁপিয়ে দম নিচ্ছে।আর আমারো দম কুলোল না।এবার তোমার পালা বন্ধু।আমার মন বলছে তুমি পারবে। পাজিদুটোর গলা ধরে টেনে গাড়ির সিটে বসাতে।প্লিজ গো অ্যান্ড ফাস্ট।

মেয়েটি এত মিষ্টি সুরে বলে উঠল যে কথাটা শুনে নিরবের ভেতর একটা অদম্য ইচ্ছাশক্তি চাগাড় দিয়ে উঠল।

সে আর এক মুহূর্ত দেরী না করল না। প্যান্টটা গুটিয়ে তৈরি হয়ে নিল।তারপর খরগোশ দুটোকে লক্ষ্য করে দে ছুট।

...ওরা তিড়িং,বিড়িং করে ঝোপ,ঝাড় আল সব ডিঙিয়ে সাঁই,সাঁই ছুটছে।

নীরবও তত পিছনে,পিছনে ছুটছে।

ওদিকে মেয়েটির হাততালির সাথে কথাগুলোও তার কানে মন্ত্রের মতো বেজে উঠছে,


....রান...রান...ক্যাচ হিম।ইউ ক্যান ডু দিস।

তত নীরবের উৎসাহ বেড়ে যেতে লাগল। প্রায় আধ ঘন্টা যুদ্ধ শেষে নীরব এক এক করে দু ব্যাটাকেই ঘাড় ধরে মেয়েটির কোলে ফেরত দিল।



মেয়েটি তাকে এক বোতল জল আর দুটো ক্যাডবেরি ধরিয়ে বলে উঠল,এটা তোমার পুরস্কার না ।তুমি যা করলে ,তার কোন পুরস্কার হয় না। আমি ঋণী হয়ে থাকলাম। তোমার উপকারের কাছে।...আচ্ছা বন্ধু.. তুমি কী কোন ফৌজির ট্রেনিং নিয়েছো?...তোমার মুভমেন্ট দেখে‌ তাই মনে হল।

নীরব লজ্জা পেল। বলে উঠল,না...না।সেরকম কিছু না।আমি আপাতত বেকার।

মেয়েটি চোখে,মুখে বিশ্ময় ফুটিয়ে বলে উঠল,...ও শিট।তোমার পায়ে এত রান!...বুকের ভেতর এত উদ্যম!...শরীরের গঠন এত মজবুত!...আর তুমি বোকার মত পড়ে,পড়ে মার খাচ্ছো?...একদম ঠিক না বন্ধু।ওঠো...লড়াই করো।তোমার মত বন্ধুদের ভারত মাতা সব সময় ডাকছে।ঘুম থেকে ওঠো।জাগো।ধরো মায়ের হাত।


আজ সেনানিবৃতির অনুষ্ঠান মঞ্চে নীরব তার সেই

পুরনো স্মৃতির মধ্যে কিছুক্ষণ হারিয়ে গেল।

নিরবের আফসোস শুধু একটাই,যে মেয়েটি তাকে মৃত্যুর কাছ থেকে টেনে নতুন করে জন্ম দিয়েছিল।তারসাথে আর দ্বিতীয় বার দেখা হলো না।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics