Manab Mondal

Abstract Romance Inspirational

4.0  

Manab Mondal

Abstract Romance Inspirational

হঠাৎ দেখা

হঠাৎ দেখা

4 mins
741


রোদটা চকচক করছে সকাল থেকে আজ যেন বেশি বেশি৷ জানালার পর্দা সরিয়েও আবার টেনে দেয় দিয়া । আজ সোমবার তিন্নির স্কুল আছে। বাবা মেয়ে ঘুমাচ্ছে অসাড়ে৷ মেয়ের মাথার চুল গুলো আলতো করে সরিয়ে মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকে দিয়া। আজো সেই মুখের সাথে মিল খুঁজে পেলো।একটা বাতাস বুকটা হালকা করে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস। সেই দিন ছিলো ওর প্রথমদিন কলেজের পুরানো আম গাছটার তলায় দেখে ছিলো প্রদীপকে কে৷ নবীনবরণ উৎসব, মাথার চুল গুলো কিছুটা ঘামে ভেজা, বাবলু কে কি যেন বোঝাচ্ছিলো সাধারণ কবি কবি চেহারা কিন্তু অসাধারণ চোখের মালিকের দিকে । টিপটিপ বৃষ্টিটা শুরু হতেই কোথায় চলে গেলো৷ প্রথম দেখা, প্রথম প্রেম। মানব পাশ ফিরতেই দিয়া অতীত থেকে সোজা বর্তমানে এসে পরলো। তিন্নি মানবকে দুজন কে তুলে রেডি করিয়ে তিন্নি স্কুলে পাঠিয়ে দিলো মানবের সাথে। ওর এ বাড়িতে বেশি কাজ নেই। টিভি দেখে নিজে সময় কাটিয়ে যখন তিন্নিকে আনতে গেলো। তখন কিছু টুকরো টুকরো মেঘ জমা হচ্ছিলো আকাশে৷ টুকরো টুকরো স্মৃতির মতন। মন খারাপ করিয়ে দিলো দিয়ার।

মানব দিয়াকে নিয়ে এখানে নতুন এসেছে । আগে ওরা যাদবপুরে থাকতো না। শশুর বাড়িতে টালিগঞ্জ এর দিকে থাকতো। মেয়ে গাড়িতে আসতো স্কুল । পড়াশোনা সুবিধার জন্য এখন এখানে চলে এসেছে ফ্ল্যাট নিয়ে৷ আসলে শশুর শাশুড়ি আর একটা বাচ্চা চাইছে ওদের কাছে থেকে । মানব রাজি নয় তিন্নির কথা ভেবে।বেশ ভালো জায়গাটা৷ তিন্নির একহাতে নিয়ে চলতে থাকে দিয়া। ইউনিভার্সিটির ভিতরের রাস্তাটা ওর খুব প্রিয়। দুধারে বেশ গাছ লাগানো রাস্তাটা। বেড়িয়ে দুধারে তবুও বেশ গাছপালা আছে। মানব ওকে স্কুটি কিনে দিয়েছে মেয়েকে আনার জন্য তবু ও এই রাস্তা টুক হেঁটে যেতে ভালোবাসে। রেল গেটের কাছে আসতে না আসতে টিপটিপ বষ্টি শুরু। তিন্নিকে চট করে ছাতার ভিতরে নিয়ে পিছন ফিরতেই হট করে চোখ পড়ে যায় রাস্তায়। প্রদীপ তো! সত্যিই প্রদীপ তো ? একটা দেকানের ভিতরে ঢুকে দাঁড়ায় ও । ভিড়ের সময়, যাদুবপুর স্টেশন চত্বরে । কতো মানুষকে চেনা চেনা লাগে।  বৃষ্টি পড়ছিলো । তাইও রাস্তা ধারে দাঁড়িয়ে থাকে প্রদীপ। ও দেখলো প্রদীপকে । প্রদীপ হয়তো ওকে দেখেনি। বা হয়তো দেখতে চায়নি। দিয়া ভাবলো কিছু তো বলতে পারতো ও নিজেই প্রদীপকে? ধুর অত ভিড়ে আর আওয়াজে । দিয়া কিছু বললে শুনতে পেতো প্রদীপ কি কিছু শুনতে ।

মোটা হয়ে গেছে মনে হলো? সিগারেট খাচ্ছিলো ? না ফর্সা লাগলো? দেখেছে কিন্তু মনে সেই পুরানো ছবিটা বসে আছে তার সাথে দিয়া মেলাতে পারছেনা ওকে । প্রিয়া বছর দুয়েক আগে বলেছিলো প্রদীপ খুব ভালো আছে। অশিক্ষিত হলেও চাকরী করা বৌ, খুব মিষ্টি ছেলে আছে । বৌ নাকি দারুন সুন্দরী। খুব ফর্সা। আবার শশুরের অনেক পয়সা। ও সেই পয়সায় প্রোমোটার হয়েছে নাকি এখন। তবে নিজেও ও সফল ইঞ্জিনিয়ার।

দিয়া মনে মনে কত প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল, আচ্ছা তুমি তো ফর্সা মেয়ে পছন্দ করতে না , গুন দেখে মেয়েকে বিয়ে করবে শশুরের পয়সা দেখে নয়। আজ কি পাল্টে গেছো? না তখন বলেছিলে ভুল। না নিজেকে নিজেই বুঝিয়েছে৷ সায়ন্তনের কথা ভুল নয়। ভুল ছিলো পরিস্থিতি। তবে দিয়াকে ধোঁকা দেয়নি প্রদীপ। তারা দুজনে ভালোবাসা কে ধোকা দিয়ে বাস্তবের মাটিতে নেমে এসেছিলো। আর আজ মন চাইছে যদি সত্যিই ফিরে পেতাম? মানুষের মন সবসময় দটো ধারায় চলে, মনের একটা জানালায় প্রদীপকেকে দেখার আনন্দ, সেখান থেকে লোভের হাওয়া আসছে। ঠাকুর প্রদীপ যেন একবার একবার তাকে দ্যাখে, হয়তো একবার ডেকে উঠবে৷

তারপর ধক করে ওঠে বুকটা। নিজের অজান্তে রিক্সা ডেকে উঠে পরে সে । তারাতারি সে ঐ জায়গাটা ছেড়ে দিতে চায় । আবার মনের বাস্তবের বন্ধ জানালায় বসে বিচার বুদ্ধি জানালার ছিদ্র গুলো এঁটে বসে সে বলে, ঠাকুর যেন না আসে না দেখে ফ্যালে তাকে৷ আজ এতগুলো বছর কেটে গেছে৷ মানব খুব ভালো। বাবার হঠাৎ মৃত্যুতে মা ভেঙে পড়েছিলো। বাবার মৃত্যুর জন্য ওই দায়ী ছিলো ‌‌। হয়ত মা জানতো মা ও বেশীদিন বাঁচবেন না। বাস্তবের কাছে নত , ভালোবাসার কাছে হার মেনে , সেদিন বিয়ে করেছিলো । তবে ভালোবাসার একটা নতুন রূপ সে দেখেছে। হ্যাঁ ভালোবাসার নতুন রূপ । যে একসাথে সংসার করলেও একটা অভ্যাসে ভালোবাসা বেঁচে থাকে৷ নিজেদের ভালোলাগার মানুষ টাকে না পেলেও কখনো কখনো ভালো থাকা যায়‌। আজ দুজনে সংসারী কিন্তু নিজেদের ভালোবাসাটা আজও কত স্মৃতিমধুর এবং পবিত্ৰ৷ সেসময়ে প্রদীপকে বিয়ে করা মানে ওর পুরো কেরিয়ার নষ্ট করা। সংসারের চাপে পড়ে ও কোনদিন সেই জায়গায় পৌছাতে পারতো না আজ যেখানে আছে।দুদিন পর বোঝা মনে হতো দিয়াকে। সুন্দর প্রেমটা হয়ে যেতো চরম ভুলের মতন। আর যদি প্রদীপ জানতো দিয়ার কোলে আছে তার সন্তান?? প্রদীপ কোনদিন দিয়াকে অন্য কারোর সাথে বিয়ে করতে দিতো না। প্রদীপ প্রতারক নয়৷ দিয়া তখন সরে এসেছিলো আর নিজের তাগিদে আঁকড়ে ধরেছিলো মানবকে৷ মানবকে সব দিয়েছে তাকে . সংসার. সম্মান। এমনি দিয়াকে নষ্ট করতে দেয় নি তার ভালোবাসার চিহ্ন কে। দিয়া পেয়েছে অবলম্বন আর মানব বাবা হিসেবে খুব ভালোবাসে তিন্নিকে। দিয়াকে সম্মান করে ৷ দিয়া সন্মান করে ওকে। দুজনের সুখের সংসার প্রদীপকে সে জীবনে পায়নি কিন্তু স্মৃতিতে বড় উজ্জল হয়ে আছে ওর মনের গোপন কোনে । ওরা প্রেমের সময়  ঠিক করেছিলো মেয়ে হলে নাম দেবো তিন্নি । মানব সেই নাম রাখতে দিয়েছে ওকে। ভালোবাসার সন্তান বুক জুড়ে আছে দিয়া। তাদের সেই প্রথম ভালোবাসাটা আজ সুন্দর, অমলিন আছে৷ শেষ হয়েও হয়না শেষ৷ কলিং বেল আছে।হঠাৎ দরজায় ঠকঠক। দিয়া দরজা খুলে দেখলো মানব।মানব বলো "দেখো তো কে এসেছেন?"

হঠাৎ দেখা হতেই দিয়ার হৃদপিন্ড যেনো থেমকে দাঁড়ালো। একি প্রদীপ এসেছে কেন মানবের সাথে??

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract