হানিমুন ফেজ (ধারাবাহিক) ৪
হানিমুন ফেজ (ধারাবাহিক) ৪


হানিমুন ফেজ (ধারাবাহিক)
৪
এর পরের ঘটনা খুব সংক্ষিপ্ত। মিছরির ত্রাহি মধুসূদন রবে বিকট চিৎকার। হোটেলের কাঠের মেঝেতে বিরাট জোরে ধড়াম শব্দ। তারপরই মিছরি কণিষ্কর হানিমুন স্যুইটের সামনে হোটেলের ছোট বড়ো মেজো সব কর্মীদের ছোটখাটো জনতা। সেই জমায়েতের সঙ্গে হোটেলের অন্যান্য কিছু বোর্ডারও এসে জুটেছে। নানারকম জল্পনা কল্পনা চলছে। সেই গল্পের গরু গাছে চড়ার কাহিনী, লম্বা চওড়া আকার নিচ্ছে। সন্দেহজনক ঘটনার অনুমান মুখেমুখে। তার সঙ্গে, হুস হাস ইত্যাদি। শুরু হয়েছে পুলিশে খবর দেওয়ার তোড়জোড়। সবাই মোটামুটি নিশ্চিত, একটা কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। অবশ্যই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এবার আমরা মিছরি কণিষ্কর ঘরে ঢুকি একবার, দেখি ওখানে সত্যি সত্যি কী চলছে? মিছরি খাটের ওপর বসে, জড়সড় হয়ে। আর কণিষ্ক বেচারা চার হাত-পা ছড়িয়ে মেঝেতে পড়ে। কণিষ্কর ডানহাতের আঙুলগুলো ভর্তি চন্দনরঙা ট্যাটচেটে ক্রিমে। আর বাঁ হাতে ধরা ক্র্যাক ক্রিমের টিউবটা। হরি হে মধুসূদন! বিষয়টা কী?
মিছরির গোড়ালির ফাটায় বোরোলিন ছাড়া ও কিচ্ছু লাগাতে দেবে না। তাই কণিষ্ক এক ভয়ঙ্কর ঝুঁকি নিয়ে ফেললো। দু'দিন আগেই কেনা ক্র্যাক ক্রিমের টিউব থেকে খানিকটা ক্রিম নিয়ে ঘুমন্ত মিছরির পায়ের গোড়ালিতে লাগাতে গিয়েছিলো। মিছরি তো কিছুতেই ক্র্যাক ক্রিম অ্যালাও করবে না, জেগে থাকা অবস্থায়। সুতরাং বৌয়ের পায়ের ব্যথায় একটু স্বস্তি দিতে বেচারা কণিষ্ক ঘুমন্ত মিছরির গোড়ালিতে খুব সন্তর্পণে ক্র্যাক ক্রিম লাগাচ্ছিলো। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। ভীতুর ডিম মিছরি বেজায় ভয় পেয়ে বাঘ ভাল্লুক বা ভূত কে জানে কী কী ভেবে বসে, চোখ বন্ধ অবস্থাতেই সজোরে লাথি চালিয়ে দিলো প্রাণপণ চিৎকার সহযোগে। নিজের কর্তব্য কর্মে নিবিষ্ট কণিষ্ক আচমকায় মিছরির ঐ বিরাশি সিক্কা নাকি আধ-মণি লাথি খেয়ে চার হাত-পা ছড়িয়ে সটান মেঝেতে ধড়াম শব্দে চিৎপাত।
এখন কণিষ্ক বিছানায়। মিছরি বরের কোমরে, হাতে পায়ে মাথায় হেথায় হোথায় কোথায় কোথায় সব ব্যথা লেগেছে সর্বত্র মুভ জেল লাগাচ্ছে, আর বরকে চুমু খাচ্ছে সর্বাঙ্গে। কণিষ্কর একটু ব্যথা লেগেছে বটে এই ঠাণ্ডায়, তবে ম্যানেজেবল্। আর এতোক্ষণে পাঠকরা নিশ্চয়ই ভাবছেন, এমা শেষপর্যন্ত মিছরি কণিষ্কর হানিমুন একেবারে কেঁচে ক ঘেঁটে ঘ, আহা রে, বেচারিরা! তাহলে কিন্তু পাঠকরা বেজায় ভুল ভাবছেন। এতোক্ষণে কণিষ্ক মিছরির সত্যিকারের হানিমুনটা হলো। দু'দিন ধরে "ডু নট ডিস্টার্ব" বোর্ডটা লটপট করে সগর্বে ঝুলে আছে দরজার নবে। রাতদিনে কেবলমাত্র চারবার গলা বাড়িয়ে মিছরি রুমসার্ভিস থেকে খাবারের ট্রেটা নিতে ঐ যা মিনিট খানেক করে সময় নিয়েছে। কণিষ্ক তো বোরোলিন আর ক্র্যাক ক্রিমকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে মিছরির প্রত্যেক চুমোয় চুমোয়। হোটেলের এ টু জেড অধিবাসীরাও মুচকি হাসিতে মিছরি কণিষ্ককে হ্যাপি হানিমুনের একরাশ শুভেচ্ছা জানিয়েছে। আমরাও জানাই, জিও বোরোলিন বনাম ক্র্যাক ক্রিম এবং হ্যাপি হানিমুন... টু মিছরি কণিষ্ক।