STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক )

গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক )

3 mins
310

পর্ব আঠারো


বৈদিক ভিলেজে খবরটা সর্বপ্রথম পেল শুভশ্রী দণ্ডপাট। খুশিতে বিভোর হয়ে প্রথমে এক চোট কেঁদে নিল । প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপে এ যাবৎ সে নিজের ভাগ্যকে আর তার নিয়ন্তাকে দোষারোপ করে এসেছে । 

পিতৃমাতৃহীন স্বহায়সম্বলহীন এই বালিকা দু'চোখে অন্ধকার নিয়ে ক্ষিধের জ্বালায় ছটফট করতে করতে যখন অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল ষোলো ফুট চওড়া মেন রোডের মাঝখানে; কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি ও বেঁচে আছে। লোকজন ভীড় জমিয়েছিল ঠিকই; কিন্তু সবাই ভেবে নিয়েছিল ও হয় গাড়িচাপা পড়েছে কিম্বা আত্মহত্যা করেছে । পুলিশি ঝামেলা এড়াতে কেউ আর সাহস করে এগিয়ে যায়নি । তবে পুলিশকে খবর দিতে ভুলেনি । কাকতালীয় ভাবে সেই সময় বিশ্বময়ী দেবী সেই পথ ধরে আসছিলেন তাঁর বৈদিক ভিলেজের কুটিরে। ভীড় দেখে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়েছিল । বিশ্বময়ী দেবী বরাবরের কৌতূহলী ছিলেন । সেই উদগ্র কৌতূহল নিয়ে ধীর পায়ে মেয়েটির পাশে বসলেন । বুকে হাত রেখে অনুভব করলেন হৃৎপিণ্ড সচল । কালবিলম্ব না করে ড্রাইভারের সাহায্যে ওকে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন । চিকিৎসকদের তৎপরতায় সে শীঘ্র সুস্থ হয়ে উঠলে বিশ্বময়ী দেবীকে ফোন করে বাড়ি নিয়ে যেতে বললেন । বিশ্বময়ী দেবী ছুটলেন হাসপাতালে। ফুলের মত সুন্দর মেয়েটির উচ্ছলতা দেখে মনে খুব আনন্দ পেলেন । বাড়ি নিয়ে এলেন তাকে ।

অতি সন্তর্পনে তার সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য নিয়ে তিনি স্থির করে ফেললেন ওকে তাঁর কাছেই রেখে দেবেন । মেয়েটির মধ্যে কমনীয় সৌন্দর্য্য এবং বিনম্র হৃদয় রয়েছে। ভাগ্যদোষে এমন একটি ফুলকে বৃন্তচ্যুত হতে দেওয়া যায় না ।

- নাম কি রে তোর ? 

আদরমাখা সুরে বিশ্বময়ী দেবী প্রশ্ন করলেন ।

- আজ্ঞে ম্যাডাম , আমার নাম শুভশ্রী । শুভশ্রী দণ্ডপাট ।

- দেখ শুভো, ও সব ম্যাডাম ম্যাডাম বলে ডাকবি না। আমি তোর বাবা মায়ের চেয়ে বয়সে অনেক বড়। সুতরাং ঠাম্মি বা ঠাম্মা বলে ডাকিস ।

শুভশ্রী নীরবে ঘাড় নাড়ে । বিশ্বময়ী দেবী বলেন - এখন থেকে তুই আমার কাছে থাকবি। খাবি দাবি খেলবি। আর হ্যাঁরে, পড়াশুনা করতিস ?

 - হ্যাঁ গো ঠাম্মা । ক্লাস নাইনে পড়তাম । একদিন বাবা মা খুন হয়ে গেল , কেন হল জানি না , আমি একমাত্র মেয়ে ছিলাম । খুড়তুতো দাদারা এসে আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিল । গাঁয়ের লোকেরাও কেউ কিছু বলল না । বাধ্য হয়ে হাঁটতে হাঁটতে এখানে কেমন করে এলাম জানি না । খুব ক্ষিধে পেয়েছিল; তেষ্টাও । রাস্তার কলে পেটপুরে জল খেতেই শরীরটা আনচান করতে লাইল । তবু হেঁটে চলেছি। কিছু দূর গিয়েই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলাম । সত্যি ঠাম্মা, তুমি আমার ভগবান রূপে এলে আমাকে বাঁচিয়ে তুললে । ঠাম্মা, আমি তোমার দেখভাল করব - দেখে নিও তোমার কোন অসুবিধা হতে দেব না ।

- সে ঠিক আছে । কিন্তু তোকে পড়াশোনা করতে হবে । এমনি এমনি আমি তোকে পুষতে পারব না ।

শুভশ্রী যেন হাতে চাঁদ পেল । 

- তুমি সত্যি বলছ ঠাম্মা? আমাকে স্কুলে ভর্তি করে দেবে ?

- শুধু স্কুলে নয়, এগিয়ে গিয়ে ধীরে ধীরে কলেজে, ইউনিভার্সিটিতেও ভর্তি করে দেব । তুই লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়াবি - এটাই চাই ।

সেই থেকে শুভশ্রীর স্থান হল একেবারে আস্তাকুঁড় থেকে প্রাসাদে । সেই কৃতজ্ঞতায় শুভশ্রী বিশ্বময়ী অন্ত প্রাণ । 

যে খবরটি নিয়ে এতবড় ভূমিকা সে সম্বন্ধে শুভশ্রীর আচরণেই বোঝা যায় ।

কান্না ভরা চোখ মুছে দু'হাত কপালে ঠেকিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে দিতে শুশ্রী দৌড়াল ঠাম্মার ঠাকুরঘরে ।

- ও ঠাম্মা ! ওঠ গো । তোমাকে আর ঠাকুরের ধ্যান করতে হবে না । স্বয়ং ঠাকুর এসে সন্দেশ দিয়ে গেল গো ! এই নাও ধর ।

ঈশ্বর আরাধনায় বাধা পেয়ে বিশ্বময়ী খুবই বিরক্ত হলেন হয়তো । কিন্তু শুভোর কাছে তা প্রকাশ না করে বললেন - বলি হয়েছে কি ? সাত সকালে ধেই ধেই অরে নাচিস কেন ?

- নাও ধর । তোমার চিঠি। কিন্তু ক্ষমা করে দিও আমি ওটা পড়ে ফেলেছি বলে ।

- তুইই পড়ে শোনা। কে লিখেছে?

- আদালতের রায় গো । তোমাদের ট্রাস্টিবোর্ড কোর্টে হেরে গেছে । সব সম্পত্তি তোমার ছেলেই পেয়েছে গো !

বিশ্বময়ী দেবী বললেন - বলেছিলাম না ! হকের ধন যাবে কোথায়! এটা ওই ট্রাস্টিবোর্ডের অধিক লোভের ফসল । যাক বাবা ! ঠাকুর কথা রেখেছেন। এখন আমার স্বপ্নটা পূরণ হলেই নিশ্চিন্ত হই ।

- কি তোমার স্বপ্ন, ঠাম্মা ? বল না শুনি। যদি কোন হেল্প করতে পারি ।

বিশ্বময়ী দেবী হো হো করে হেসে উঠলেন। সব জানতে পারবি, সবুর কর ।


( চলবে )




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime