STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)

গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)

4 mins
334

পর্ব একুশ


শুভশ্রী এখন কলেজে পড়ছে। বিশ্বময়ী দেবীর আশ্রয়ে দারুন ভাবে কাটছে তার দিনগুলো বাড়ি থেকে যাতায়াত করে। বিশ্বময়ী দেবী একটু বেশী সাবধানী। কো-এডুকেশনে ভর্তি না করে গার্লস কলেজে ওকে ভর্তি করে দিয়েছিন । পাছে কোন ছেলের পাল্লায় পড়ে যায় - তা' ভেবে । বাড়ির গাড়িতেই যাতায়াত করে। কোন কোনদিন তিনি নিজেই সঙ্গে যান ।

শুভশ্রীর সুন্দর চেহারা এবং নম্র স্বভাবের জন্য বিশ্বময়ী দেবী ওকে ভীষণ ভালবাসেন । যেন জন্ম-জন্মান্তরের আত্মীয়তা আছে ওর সাথে । 

দিন যায় জলের মত । মাস পেরিয়ে বছর ঘোরে । শুভশ্রীর ঔজ্জ্বল্য দিনকে দিন বৃদ্ধি পায় । বাড়িতে ঢুকলে বাইরে বেরোনোর প্রয়োজন পড়ে না । রাঁধুনি, চাকরাণী সবাই ওকে খুব পছন্দ করে শুধু ওর মধুর ব্যবহারের জন্য । কাজের মাসীকে মাসী, রাঁধুনিকে কাকীমা বলে সম্বোধন করে । 

বিশ্বময়ী দেবী অনেকবারই ভেবেছেন তপনকিরণ এবং অনুপ্রভা দেবীর সামনে কথাটা পাড়েন । শুভশ্রীর বিয়ের কথা । কিন্তু নাতি নিরুদ্দেশ; তাই আর বলে ওঠা হয়নি । তথাপি যেদিন আদালতের রায় হাতে পেলেন সেদিন ওদের শুনিয়েছেন কথাটা। প্রথম দিকে তপনকিরণই আপত্তি জানিয়েছিলেন । নাম-গোত্রহীনা একটি কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ের সঙ্গে ছেলের বিয়ে দেওয়াটা ভালো চোখে দেখেননি । অনুপ্রভাদেবীর ইঙ্গিতে চুপ থেকেছিলেন । অনুপ্রভা দেবী আড়ালে নিয়ে গিয়ে দু'টো কথা শুনিয়েছিলেন ।

- আর ঝামেলা পাকিও না তো ! বড় পিতৃপূণ্যে সম্পত্তি ফেরৎ পেয়েছ ; এখন আবার শাশুড়ি মায়ের সাথে মন কষাকষি করে বিপদ ডেকে এনো না । কতদিন আর বাঁচবেন ? বয়স তো কম হল না । একটু চুপ থেকে সবুর কর দেখি !

তপনকিরণ সেই থেকে তাঁর মায়ের সঙ্গে কোন বিতর্কে জড়াতেন না । তা-ছাড়া সূর্য্যও এখন নেই। যদি কোনদিন বিশ্বময়ী দেবী আবার এই বিয়ের ব্যাপারে কিছু বলতে আসেন তখন তো বলা যেতেই পারে; আগে ছেলে আসুক, তারপর কথা হবে ।

বিশ্বময়ী দেবী শুভশ্রীকে ডেকে বললেন - তৈরি হয়ে নে। আজ বিকেলে গোয়াবাগানে যাব । 

শুভশ্রীও কোন মন্তব্য করল না । সে জানে ঠাম্মা কেন গোয়াবাগানের বাড়িতে যেতে চাইছেন । একটা দিনই সূর্য্যদাকে দেখেছিল শুভশ্রী । মনে পড়ে । তবে তার মুখটা ভুলে গেছে। আসলে কথা তো তেমন হয়নি ! যাই হোক শুভশ্রী তৈরি হয়ে গাড়িতে গিয়ে বসল । বিশ্বময়ী দেবী বললেন - আজ একটা ফয়সালা করেই আসব ।

যথাসময়ে ওঁরা গোয়াবাগানের বাড়িতে এলেন । মস্ত ফটক পেরিয়ে গাড়ি ঢুকল একেবারে বাড়ির দরজায় । হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন তপনকিরণ ও অনুপ্রভা দেবী ।

- ও মা ! মা এসেছে ? এস এস। সাবধানে নামো।

বিশ্বময়ী দেবী বললেন - ও শুভো ! হাতটা ধর দেখি দিদি !

শুভশ্রী শুনতে পায় না । পাবেই বা কেন ? ও তো তখন রাজমহলা বাড়ি দেখে স্তব্ধ হতবাক হয়ে গিয়েছে ! এত বড় বাড়ি ? এ তো সিনেমায় দেখা যায় !

বিশ্বময়ী দেবী আবার ডাকলেন - শুভো !

শুভশ্রী চেতন ফিরে পেল । শীঘ্র ঠাম্মার হাতে ধরে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিল । 

অনুপ্রভা দেবী দেখলেন - রূপে লক্ষ্মী মেয়েটি কি সুন্দর ভাবে বিশ্বময়ী দেবীকে গাড়ি থেকে নামাল । ওঁর মনে হল - আহা ! এমন একটি মেয়ে পেলে সূর্য্যের সঙ্গে কি সুন্দর মানাত । একবার ভাবলেন শাশুড়িমাকে নিজেই আগে থেকে বলে দেন। কিন্তু স্বামীর মুখের দিকে চেয়ে আর এগোলেন না ।

বিশ্বযয়ী দেবী শুভশ্রীর হাত ধরে ভেতরের ঘরে গিয়ে বসলেন । দেয়ালে একটি সুন্দর চিত্রপটে তাঁর প্রয়াত স্বামীর ছবিতে কপালে হাত ঠেকিয়ে প্রণাম করলেন । তাঁর মনে হল স্বামী অরুণকিরণ তাঁকে কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করলেন । শুধু তাই নয়; তাঁর এমনও মনে হল স্বামী যেন তাঁকে বলছেন যে উদ্দেশ্যে এসেছ তা' সফল করে ফিরে যেও বিশ্ব । 

বৃদ্ধা স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বললেন - আশীর্বাদ কর যেন সব কাজে সফল হই ।

তপনকিরণ বললেন - মা! খবর না দিয়ে হঠাৎ এলে যে !

- কেন ? আমার ঘরে আসব তাতে কি কারও অনুমতি নিতে হবে ? 

অনুপ্রভা দেবী বললেন - না না মা, একি বলছেন ? আপনার ঘর আপনার দোর, অনুমতি তো আমরা নেব ।

- কিসের অনুমতি বউমা ! এ যেমন আমার ঘর তেমনই তোমারও । তপন বলছিল হঠাৎ এলাম কেন, তাই বলেছি। যাক গে সে সব । দাদুভাই ফিরেছে ? 

তপনকিরণ বললেন - ফেরার পথ রেখেছে মা ? এখন দেখ কখন কোথায় পুলিশের গুলি খেয়ে পড়ে থাকে !

- ওকি কথা বলিস হতচ্ছাড়া ? কোথায় আছে সে ?

- মা, প্রত্যেক দিন এক একটা নতুন নতুন ফোন থেকে কথা বলে - ভালো আছি। তোমরা কোন চিন্তা কোরো না । কিছুদিনের মধ্যেই বাড়ি ফিরব । বলি , কোথায় আছিস? উত্তরে বলে মায়ের মন্দিরে । 

- মায়ের মন্দিরে ? এ আবার কেমন কথা ? শুধোওনি কোন জায়গায় ?

- শুধিয়েছি মা । বলেছে ও এখন তারাপীঠে বেড়াতে এসেছে।

বিশ্বময়ী দেবী বললেন - ও তাই বলেছে মায়ের মন্দিরে আছে । শোন বউ মা, শোন্ তপন আজ আমি শুভোকে এনেছি ঘরদোর চিনিয়ে দিতে । বউমা যাও, ওকে সবকিছু দেখিয়ে শুনিয়ে দাও । 

তপনকিরণ বললেন - তার মানে ?

বিশ্বময়ী দেবী বললেন - আরও সহজ করে বলতে হবে ? শুভশ্রী এই বাড়ির হবু বউ। আমি ঠিক করে রেখেছি দাদুভাইয়ের সাথেই ওর বিয়ে দেব । তোরা রাজী হোস বা না হোস - আমার তাতে কিছু যায় আসে না । স্থির যখন করে ফেলেছি কোন অজুহাত শুনব না । উল্টে আবার উইল করে সব দাদুভাইকে দিয়ে দেব । 

তপনকিরণের তো বোবার গুড় খাওয়ার দশা । সামলে দিলেন অনুপ্রভা দেবী ।

- মা ! আমারও তাই মনে হয়েছে। সূর্য্য ফিরে এলে আমিই প্রস্তাব নিয়ে আপনার কাছে যেতাম ।

বিশ্বময়ী দেবী খুশি হলেন । শুভশ্রীকে বললেন - যা যা, সব দেখে শুনে নে । এরপর থেকে তো এখানেই তোকে থাকতে হবে ।

- না ঠাম্মা ! আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতেই পারব না ।

বিশ্বময়ী দেবী বললেন - খুব পারবি । এটাই সংসারের নিয়ম ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime