STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)

গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)

4 mins
412

পর্ব ষোলো


সূর্য্যকিরণের জন্য তাঁর কুটির এবং পতির ভিটায় পুলিশের আগমনে বিশ্বময়ী দেবী অত্যন্ত বিচলিত এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে উঠলেন । তাঁর সকল স্বপ্ন যে ভেঙে খানখান হয়ে গেছে তা' বুঝতে কোন অসুবিধা হল না । শুভশ্রীকে বললেন - আমি ভেবেছিলাম এক আর হয়ে গেল আর এক।

- কি ভেবেছিলে ঠাম্মা ?

- ওরে ওটা কোন স্বপ্ন ছিল না ; ছিল হকিকত। ভেবেছিলাম তপণকে সম্পত্তি ফেরত পাইয়ে দিয়ে ওর মন জয় করব , বউমা তথা সূর্য্যকেও প্রভাবিত করে তোর একটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দেব - তা' আর হল না রে !

শুভশ্রী কি বুঝল কি জানি ! বলল - ঠাম্মা ! চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথম প্রচলন করেছিলেন লর্ড কর্ণওয়ালিশ । এর প্রস্তাবক ছিলেন স্কটিশ চিন্তাবিদ আলেকজান্ডার ডাফ। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ---

- তুই থামবি ? আমি কি বলছি আর উনি আমাকে ইতিহাসের পাঠ পড়াচ্ছেন ! ওরে আমি তোকে নিয়ে বলছি ।

শুভশ্রী অবাক হয়ে বলল - আমাকে নিয়ে ? আমি আবার কি করলাম ?

বিশ্বময়ী দেবী স্নেহভরে বললেন - তুই কিছু করিসনি। যা করার আমি করেছি। আমি ভেবে রেখেছিলাম সম্পত্তি পেয়ে ওরা তোকে ঘরের বউ করে বরণ করবে। আমার কথা ছিল এটাই। তোর মত মেয়ে পেলে সংসারটা বর্তে যেতে।

- এই তো বেশ আছি ঠাম্মা । তোমার পায়ের তলায় ঠাঁই পেয়েছি; তিনবেলা পেট ভরে খাচ্ছি; এটা সেটা করছি আর পড়াশুনাও চালিয়ে যাচ্ছি । এমন কৃপা তুমি ছাড়া আর কে করতে পারে বল !

- শোনো মেয়ের কথা । আমার যে তিনকাল গিয়ে শেষকালে ঠেকেছে রে । আর কদ্দিন রইব এই সংসারে ?

তোকে নিয়ে বড় চিন্তা হয়, জানিস ! আমি চলে গেলে কে তোর ভার নেবে ?

- অত ভেবো না ঠাম্মা । আমি যা পেয়েছি সংসারে ক'টা মেয়ে এমন ঠাম্মা পেয়েছে বল দেখি ?

বিশ্বময়ী দেবী শুভশ্রীর কথায় বিস্মিত হয়ে বললেন - তুই জানিস না; কি জিনিস তুই পেতে চলেছিস ?

- আর জানতে চাই না ঠাম্মা । তুমি সুস্থ সবল থাকো এইটেই আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া।

অবুঝ মেয়েটির দিকে একদৃষ্টে চেয়ে রইলেন বৃদ্ধা। এখনও অশীতিপর হয়ে যাননি, তথাপি তাঁর মনে হল তিনি কারও জন্যই কিছু করতে পারলেন না । আর এসবের জন্য যত নষ্টের গোড়া ওই নাতিটা। দরন্ত যৌবনের দৌরাত্ম্যে এমন সব কাণ্ড করে বসল যে পুলিশ পর্য্যন্ত হন্যে হয়ে তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। দেখলি না গত কাল রাতে পুলিশের তাণ্ডব ? তোকে পর্য্যন্ত রেয়াত করল না । জেরায় জেরায় জেরবার করে ছাড়ল !

- তাতে কি হয়েছে ঠাম্মা ? সূর্য্যদা যদি কিছু করেও থাকে তার মোকাবিলা করতে তুমি একলাই যথেষ্ট । যা বুদ্ধি আর অভিজ্ঞতা তোমার ! দেখলাম তো নিজের চোখেই।

বিশ্বময়ী দেবী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। সূর্য্য যা করেছে তাতে তার যাবজ্জীবন কারাবাসই হওয়া উচিত ।

- অলক্ষুণে কথা বল না তো এই ভর সন্ধ্যায় ! কি করেছে সূর্য্যদা ? চুরি না ডাকাতি নাকি খুন ?

- এর চেয়ে খুন করলেই আমি খুশি হতাম। 

- ঠাম্মা ! কি বলছ তুমি ? সূর্য্যদা কি ডাকাতিতে জড়িয়ে গেছে?

- সে তোকে এখনই বলতে পারব না । পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় দেখি তখন বলব ।

রাতে খুব একটা খেলেন না বিশ্বময়ী দেবী। হাল্কা খাবার খেয়ে শুভশ্রীকে বলল - তুই খেয়েদেয়ে শুয়ে পড় । আর দেখিস প্রতিটি দরজায় তালা লাগিয়ে তবে শুবি। যা দিনকাল পড়েছে । কোন অশুভ শক্তি না বাড়িতে প্রবেশ করে ।

পরদিন খুব সকালে ডি আই জি ( সি আই ডির) নেতৃত্বে বিরাট পুলিশবাহিনী বৈদিক ভিলেজের বিশ্বময়ী দেবীর কুটিরটি ঘিরে ফেলল । বিকট কড়া নাড়ার শব্দে বৃদ্ধার ঘুম ভেঙে গেল । শুভশ্রী ধড়মড় করে বিছানা থেকে উঠে ঠাম্মার দরজায় এসে দাঁড়াল । সকালের প্রথম আলোয় জানালার ফাঁক গলে বৃদ্ধার মুখে পড়েছে। শুভশ্রী দেখল ঠাম্মা উঠে দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন । শুভশ্রীকে সঙ্গে নিয়ে বারান্দায় এসে জোর গলায় হাঁক পাড়লেন - এই সকাল বেলায় কোন নচ্ছারের দল এসেছে রে ? যা তো দরজা খুলে দেখ - কে ?

শুভশ্রী দরজা খুলতেই একদল পুলিশ এসে বৃদ্ধাকে ঘিরে ধরল । ডি আই জি সাহেব বললেন - মাসীমা ! আমরা এসেছি আপনার নাতিকে ধরতে।

- কোন অপরাধে ?

- উইল জাল করার অপরাধে ।

- কে বলেছে উইল জাল ? দেখি ফরেনসিক রিপোর্ট- দেখাও তো !

ডি আই জি বৃদ্ধার সাহস দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন । 

- সে রিপোর্ট নিয়ে তো ঘুরব না । তা' আদালতে জমা পড়ে গেছে। 

- ফটোকপিটাও তো রাখবে কাছে ! নইলে বুঝব কি করে উইল জাল কেমন করে হল ।

- বাহ্ বাহ্ । দুর্দান্ত জ্ঞান তো আপনার ! বলুন দেখি নিজের পতিগৃহ ছেড়ে এখানে আপনি নির্বাসন নিলেন কেন ?

- সে আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছা। তোমাকে বলতে যাব কেন ?

- অমন বিলাসবহুল অট্টালিকা ছেড়ে আপনি এখানে কেন এলেন এর পেছনে নিশ্চয় কোন কারণ আছে! সে কি সাংসারিক কলহ না নিজস্ব আদর্শ ?

- কোনটাই নয়। শহরের কোলাহল থেকে দূরে থাকতে চেয়েছি ; সেই কারণে এখানে এসেছি ।

- বেশ বেশ । তা' এখানে এসে কেমন মনে হচ্ছে আপনার ?

- এতদিন তো ভালোই ছিলাম। তোমরা যবে থেকে জ্বালাতন শুরু করেছ তখন থেকে একটা অস্বস্তিতে রয়েছি । তবে তোমরা যাই কর উইল যে জাল নয় তা আমি জানি।কারও ভুলে সেটা জাল হয়ে যাবে তা' মানব কেন ?

- ভুল ? কার ভুল ?

- সে তোমাদেরই কারও । ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে তো পরীক্ষা হয়েছে । শুনেছি ওরা নেগেটিভ রিপোর্ট দিয়েছে যা তোমাদের ফেভারে নেই ।

ডি আই জি এবার বললেন - সূর্য্যকিরণ এখন কোথায় আছে ?

- আমি কি করে জানব বাবা! ও তো আমার কাছে থাকে না।

- সে তো ওর বাবা মায়ের কাছেও থাকে না । আমাদের কাছে খবর আছে সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। যাক গে, তদন্তের স্বার্থে আবার পুলিশ আসতে পারে আপনার কাছে।

- মামা বাড়ির আব্দার পেয়েছ , না ? কালই আমি আদালতে যাব। আমাকে ছাড় দেবার জন্য।

ডি আই জি সাহেব আর কিছু না বলে সদলে চলে গেলেন । শুভশ্রী একদৃষ্টে ঠাম্মার দিকে চেয়ে রইল। বেশ ঘোল খাইয়ে ছাড়লে দেখছি ! বলে মিটিমিটি হাসতে লাগল।

( চলবে )




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime