STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)

গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)

4 mins
379

পর্ব সাতাশ

হাসপাতালের ২০৭ নং কেবিনে চিকিৎসা চলছে আসুরিক প্রবৃত্তির শিকারী মানুষটির । পায়ের ক্ষতস্থান থেকে কিছুটা রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে। তবে ব্যথা প্রায় নেই বললেই চলে । 

ডক্টর মুখোপাধ্যায় এবং ডক্টর বসু এরই মধ্যে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গিয়েছেন । মি. সেনশর্মা ঢুকতেই ডক্টর মুখোপাধ্যায় বললেন - এখানের সব কিছু ঠিক আছে। তবে আপনি যদি মনে করেন জবানবন্দী রেকর্ড করতে পারেন । 

ডক্টর সৃঞ্জয় বসু বললেন - ইয়েস অফিসার, আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে করুন ।

মি. সেনশর্মা বললেন - তাহলে বিরিঞ্চিবাবা ! তোমার যাদু শেষ ? এবার দেখ আমার যাদু -

বলে একটা ধারালো নেলকাটার দিয়ে ডানহাতের বুড়ো আঙুলে বসিয়ে দিলেন । বিরিঞ্চিবাবা কঁকিয়ে উঠল । বলল - স্যার , আপনি যা যা বলবেন আমি তার সব উত্তর দেব ।

- উত্তর কি , দক্ষিণ পশ্চিম পূর্ব সব জানাতে বাধ্য হবে সোনামণি !

প্রথম প্রশ্ন করলেন - তোমার আসল নাম কি ?

বিরিঞ্চিবাবা বললেন - বিরিঞ্চি স্যার ।

- স্যার বলে কোন টাইটেল আছে বলে তো জানি না।

নেলকাটারে একটু চাপ দিয়ে বললেন - পুরো নাম বল।

গলগল করে আঙুল দিয়ে রক্ত ঝরছে। যন্ত্রণায় ছটফট করছে বিরিঞ্চি । কোনমতে বলল 

- আমার আসল নাম পঞ্চানন পুততুণ্ড ।

- বাবার নাম ?

- পবন কুমার পুততুণ্ড । খুব যন্ত্রণা হচ্ছে স্যার , ওটা খুলে নিন , আমি সব বলে যাচ্ছি গড়গড় করে ।

ভক্টর মুখোপাধ্যায়ের অনুরোধে নেলকাটার খুলে নিলেন মি. সেনশর্মা । পুরো নখটাই উঠে এসেছে। সিস্টারকে বললেন জায়গাটা ওষুধ দিয়ে ব্যাণ্ডেজ করে দিতে । 

তারপর বিরিঞ্চি ওরফে পঞ্চাননকে বললেন - বলে যা । নইলে এবার নুন-লঙ্কার গুঁড়ো দিয়ে ব্যাণ্ডেজ করে দেব ।

পঞ্চানন বলল - আমার নিবাস সিঙ্গুরে । বাবা পবন কুমার কলকাতায় কোন একটা জায়গায় কাজ করেন। 

- বাবার নাম কি বললি ?

- আজ্ঞে পবন কুমার ।

- ও তার মানে হনুমানের বংশধর । তাহলে তো এমন বাঁদরামি করতেই পারিস । আচ্ছা, তোর আসল উদ্দেশ্য কি ছিল ? কেন সূর্য্যকে শিকার বানিয়েছিলি ?

- আজ্ঞে ও খুব বড়লোকের ছেলে । আর আমার হাতে তেমন টাকাকড়ি নেই । তাই ভেবে ওর কাছে কিছু অর্থ বাগিয়ে নিতে চেয়েছিলাম ।

- শুধু অর্থ না তার সঙ্গে পুরো সম্পত্তিটাও ?

পঞ্চানন চুপ করে গেল । মি. সেনশর্মা তখন নেলকাটার দেখিয়ে বললেন - এবার বাঁ হাতটা দে । এটা ওখানে এপ্লাই করি ।

ডক্টর সৃঞ্জয় বসু বললেন - কি করছেন অফিসার ? এখানে এত দেরী করলে কলকাতায় কখন পৌঁছবেন ? যা করার থানায় নিয়ে গিয়ে করুন ।

সেনশর্মা বললেন - স্যার, জানেন না ! এর আসল উদ্দেশ্য ছিল সূর্য্যকে দিয়ে সম্পত্তি হাতিয়ে ওকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়া ।

ডক্টর মুখোপাধ্যায় বললেন - কি সাংঘাতিক ! এমন দস্যুর কথা আজকাল শোনাই যায় না ।

- এমন ঘটনা ঘটেই থাকে স্যার । আমরা পুলিশে কাজ করি তো ! মাঝেমাঝেই এমন কেস দু'চারটে পেয়ে যাই ।

ডক্ট সৃঞ্জয় বসুর দিকে চেয়ে বললেন আর একটামাত্র প্রশ্ন অরি স্যার !

ডক্টর সৃঞ্জয় বসু বললেন - আপনার সব প্রশ্নের উত্তর আমার এই ভিডিওতে রাখা আছে । শুধু তাই নয় ; এমন এক ব্যাপার আছছ যা জানলে আপনার মাথা ঘুরে যাবে । তবে এখানে তা প্রকাশ করব না । এর গোপনীয়তা রক্ষা করা কেসের স্বার্থেই ভীষণ প্রয়োজন । 

মি. সেনশর্মা বললেন - সূর্য্যকিরণকে জেরা করে যেটুকু বুঝলাম আমারও তেমনই কোন রহস্যের গন্ধ পেয়েছি । ওকে, এদের কলকাতায় চালান করি আগে । তারপর সব ঘটনা খুলে বলব ।

ডক্টর সৃঞ্জয় বসু বললেন - যথেষ্ট পুলিশের ব্যবস্থা করুন । এদের যেমন তেমন ভাবে নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না ।

- কি আর করবে স্যার ? বেটা তো এখন হাঁটতেও পারবে না । আর ওর যাদু তো সন্ন্যাসীবাবা নষ্ট করে দিয়েথেন ।

- আমি যাদুর কথা বলছি না । কারণ আছে বলেই বলছি। আপনি আগে পিছে পুলিশ এসকর্টের বন্দোবস্ত করুন । প্রয়োজন হলে ডি আই জি সাহেবের সঙ্গে না হয় কথা বলে নিচ্ছি । 

একটু আড়ালে নিয়ে গিয়ে বললেন - এর পিছনে একটা বড়সড় রকম চক্র আছে। অনেকটা পথ। আসামীরা ছিনতাই হয়ে গেলে তখন আরও বড় বিপদে পড়বেন। তখন মুখ লুকোবার জায়গা পাবেন না ।

সেনশর্মা বিস্মিত হয়ে বললেন - বলেন কি স্যার ? না না, আমি দেখছি । এসকর্টের ব্যবস্থা করছি । 

বলে একে একে বীরভুম, বর্ধমান , হুগলী, হাওড়া এবং কলকাতার পুলিশ সদরে ফোন করে এসকর্টের ব্যবস্থা করলেন । প্রতিটি জেলার সীমান্ত পর্য্যন্ত সেই জেলার পুলিশ তাদের পাহারা দিয়ে নিয়ে যাবে এবং পরবর্তী জেলার পুলিশকে হ্যাণ্ডওভার করে তবে ফিরবে ।

বিশ্বময়ী দেবীরাও কলকাতা ফিরে চললেন । তাঁর মনে খুব আনন্দ । আনন্দিত শুভশ্রীও। শেষমেষ ঠাম্মা সফল হয়েছেন নাতিকে খুঁজে পেয়ে ।

বিশ্বময়ী দেবী তপনকিরণকে এই সুসংবাদ দিলেন । সঙ্গে সঙ্গে এও বললেন কোন বিখ্যাত উকিলের সাথে কথা বলে ওকে নিযুক্ত করতে । কারণ সূর্য্য বড় রকমের আইনি ঝামেলায় পড়েছে ।

তপনকিরণ সব শুনে অবাক হলেন । মাকে বললেন - কোন চিন্তা করবেন না মা ; আমি এদিকে পাকা বন্দোবস্ত করে রাখছি । আপনারা সাবধানে আসুন ।

বিশ্বময়ী দেবী শুভশ্রীকে বললেন - দেখলি মায়ের কি করুণা ! বলে মাথায় হাত ঠেকিয়ে প্রণাম করলেন । সূর্য্যকে পাওয়া গেছে এবং ও ভালো আছে সেটুকুই জানেন ; কি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছে সূর্য্য তা কি জানেন ?

( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime