গন্ধকাকু
গন্ধকাকু


পূব আকাশটা লাল হয়ে উঠল।পশ্চিম দিকটাও একবার লাল হয়।কিন্তু সেই রঙের সাথে এই রঙ মেলে না।সকালের লালে মায়ের পরশ থাকে।আদর করে ঘুম ভাঙায়।আর পশ্চিমের লালে বিষন্নতা।বড় দুঃখ দেয় চরণকে।তাই সে মাঝে,মাঝে ভাবে,রাতটা না এলেই পারত।তাদের ঝুপড়িটা শহরের মস্ত রাজপথের ধারেই।গঙ্গার কোল ঘেঁষে।বিশ,বাইশটা লাগালাগি ঝুপড়ি আছে এখানটাই।জোয়ারের জল অনেক সময় তাদের ঝুপড়িকে ছুঁয়ে ফেলে।চরণের মা রাগ করে বলে উঠেন,এ মাঈ..তু ভী বড় বেশরম আছিস।ওধর বাবুলোগ হামরে উপর চোখ রাঙাছে।ইধর তু ভী।
চরণ ভাবে সত্যি সত্যিই নদীটা বোধ হয় তার মায়ের কথায় লজ্জা পায়।এখন আর তাই অনেক দিন জোয়ারের জল তাদের সীমানার কাছে আসেনি।
চরণের বাবা নেই।সে আর তার মা থাকে।একজন প্যান্ট,শার্ট পরা গন্ধওয়ালা কাকু রোজ সন্ধ্যে হলেই তাদের ঝুপড়ির বারো,তেরোজনকে নিয়ে বট গাছটার নিচে পড়তে বসান।তাদের ঝুপড়িতে একটা কুপি রাখা আছে।রাতের বেলায় দরকার হলে জ্বালানো হয়।রাস্তার ধারে বড়,বড় আলোগুলো এক,একটা সূর্যের মত।তার আভায় ঝুপড়ির বাইরেটা রাতের বেলাতেও পরিস্কার বোঝা যায়।কাকুটা তবু ব্যাগে করে একটা আলো আনেন।সুইচ টিপলেই জ্বলে ওঠে।চারিদিকটা ধবধবে সাদা হয়ে ওঠে।ডিগবাজি খেতে পোকাগুলো দৌড়ে আসে।প্রথম কিছুদিন চরণ তো পোকাগুলোর রঙ,তামাশায় দেখেছিল।অক্ষর সে একদম চেনে না।বাংলা,ইংরেজি বা হিন্দি কোনটাই না।তবে মায়ের মুখে দেহাতি হিন্দি শুনে,শুনে অনেকটা সেই ভাষার টানেই বাংলাটা উচ্চারণ করে।কাকুটা যে বাংলা তাদের বলেন,সেটা শহরের বাবুরা বলেন।শুনতে বড় ভাল লাগে।বলতে গেলে কিছুতেই তাদের মত পারে না। কেন পারে না সে উত্তর তার কাছে নেই।
ইদানিং সেটা অল্প করে পারছে।গন্ধওয়ালা কাকুটির দয়াই।বাংলা,ইংরেজি অক্ষরগুলো এতদিনে চিনে গেছে।A ফর Apple এবং অ-এ অজগর আসছে তেড়ে শেষ করে ফেলেছে।ভারী সুন্দর লাগে পড়তে।
চরণের মা ফাঁকা সময়ে একটা ইটকে পাথরের উপর ঘষে,ঘষে গুড়োগুলো ভাঙা নারকেল খোলায় ভরে রাখেন।চরণ সেখান থেকে অল্প মাঁজন নিয়ে দাঁত ঘষতে শুরু করল।ঝুপড়ির পিছন দিকে একটা সরু রাস্তা নদীর ধার পর্যন্ত চলে গেছে।এখানে কোন ঘাট নেই।জোয়ার,ভাটার আনাগোনায় পাতলা পলি পড়ে যায়।সেই কাদা,মাটি ভেঙে চরণ নদীর ঘোলা জলে মুখ ধুয়ে আসে।তার মা প্রথম,প্রথম লক্ষ্য রাখতেন।এখন রাখেন না।সেবার ঝুপড়ির একটা মেয়ে নদীতে মাথা ডোবাতে গিয়ে আর ফিরে এল না।কত ভালাভালি করার পরেও তার লাশটাকে কেও ভেসে উঠতে দেখেনি।মা গঙ্গা তার রাক্ষসী টানে কোথায় নিয়ে গিয়ে ফেলেছে কি জানি।সেই থেকে অনেকদিন সকলেই খুব সাবধানে নদীর বুকে পা ফেলত।অবশ্য সে মেয়ে ছোট ছিল।মাত্র বছর পাঁচেকের।সাঁতারও জানত না।আর চরণ এখন সাতে পড়ল।যদিও তার মা দিন,ক্ষণ ঠিক মনে করতে পারেন না। আর হাসপাতালের কাগজটাও তার স্বামী ফেরার পথে ছেলের পটি মোছার কাজে খরচ করে ফেলেছিলেন।ব্যাস চরনের জন্ম তারিখ সব দু দিনের মাথাতেই হাপিস।আর থাকলেই বা এমন কি হত! তবে চরণের মা গল্প করেন। সেই সময় শহরের মানুষগুলোকে বড় হাসিখুশি দেখতে লাগছিল।রাতের আকাশটা আলোয়,আলোয় সেজে ওঠেছিল।কত শব্দ!বাদ্যি!নাচ..গান উল্লাস।তার স্বামীও সেদিন বস্তির বাকি পুরুষগুলোর সাথে গলা ভিজিয়ে আন্ডারপ্যান্ট পরে বোতল হাতে নেচে ছিলেন।সেকি হাসি!চরণের মা যোনির যন্ত্রণা ভুলেও কয়েক বার হা..হা করে হেসে উঠেছিলেন।উদোম কান্ড দেখে।
কে যেন বলেছিলেন,ছোড়ি..দে..তোহরি মরদবা কো।ইন্ডিয়া বিশব কাপ জো জিত লি।ফূর্তি তো করবান চাহি।
সেই কথা শুনে গন্ধওয়ালা কাকুটি আঙুলের রেখা গুনে একদিন বলেছিলেন,সাত বছর।
চরণের সাথে রফি আর গুড্ডিও হাঁটু জলে নেমে মুখ ধুচ্ছে।ওরা দুজনই ভাল বাংলা বলতে পারে।হিন্দিও জানে।রফি এক আঁজলা জল মুখের মধ্যে ঘড় ঘড় শব্দ করে ফেলে বলে উঠল,ওই দ্যাখ মা কালির ডেরাটা।এখন ভীড় জম্পেশ চলছে মাইরী।কাল বিট্টুর সাথে গেছিলাম।তিরিট টাকা গুছিয়েছি।
গুড্ডি মুখের উপর ঝুলে পড়া চুলগুলো দুকানের খাঁজে আটকে বলে উঠল,কী করে পেলি?ওখানে তো প্লাস্টিকের বোতল কেউ ফেলে না।
---আরে পাগলী।বোতল,টোতল কুড়োতে গেছিলাম নাকি?
---তাহলে?
---সেদিন চাচার পুরনো রেডিওটা এমনি বাগালাম ভেবেছিস?আরে গুড্ডি ওর ভেতর থেকে একটা কাছিমের মত চুম্বক ছিল।ওটা নিয়েই গেছিলাম।
----তাহলে ওই চুম্বকটাই বেচে এসেছিস নাকি?
----তুই না একদম বুদ্ধু।আরে ওর মাথায় শক্ত রশি বেঁধে মা কালির ঘাঁটে ছুঁড়লেই যত কয়েন ওর গায়ে আঠার মত চিট খেয়ে আসে।ঘাটে যে সবাই কয়েন ছোড়ে।
গুড্ডি চোখ,মুখ গোল করে বলে উঠল,ও তাই নাকি!আমাকে নিয়ে যাবি তোর সাথে।কয়েন তুলতে?
রফি গুড্ডির দিকে একবার ভাল করে তাকিয়ে বলে উঠল,স্টিমারে চেপে ওই পারে যেতে হবে।পারবি তো?
---খুব পারব।
----আগে একটা চুম্বক জোগাড় কর।
---কোথায় পাব?
---চাচার কাছে।বোতল জমা করার সময় বলবি।খুঁজে দিয়ে দেবে।
---ঠিক বলেছিস।
চরণ এতক্ষণ ধরে লোহার মস্ত খাঁচাটার দিকে তাকিয়ে ছিল।সকালের সূর্যটা কতরকম যে রঙ পাল্টাল ওই খাঁচাটা পেরোতে দেখে অবাক হয়ে গেল।
রফি তাই চরণের মুখে অল্প জল ছিটিয়ে বলে উঠল, আরে ওটা হাওড়া ব্রীজ।নতুন দেখছিস নাকি?এমন হা করে তাকিয়ে আছিস যে?
চরণ অল্প হেসে বলে উঠল,অামি পঙছি হলে,একবার ওর উপর ওড়কে বসতাম।তোরা তাজ্জব হয়ে যেতিস।
রফি তার কথায় হো হো করে হেসে বলে উঠল,ওই ব্রীজে ওঠতে গেলে পাখি হওয়ার দরকার নেই রে গরু।পাগল হলেও ওঠা যায়।তুই এখনো তোর মায়ের কোলেয় বসে আছিস।শহরের খবর পাবি কী করে?পুলিশ একবার গাড়ি থামিয়ে একটা পাগলকে ব্রীজ থেকে রশি বেঁধে নিচে নামিয়ে ছিল।তার ছবি চাচা পেপারে দেখিয়ে ছিল আমাকে।অবশ্য তুইও সেই আধ পাগলার দলে।পুরো হলে একদিন ওঠে পড়িস।
দূর থেকে চরণের মার গলা ভেসে এল,পানি মা কা মচ্ছি ঢুনথনি।আয় হো..।
রফি কথাটা শুনে এক গাল হেসে বলে উঠল,তোর মাঈ তোকে বড় হতে দেবে নারে চরু।তুই গরু হয়েই বাঁধা থাকবি চিরদিন তোর মায়ের আঁচলে।
গুড্ডি প্রতিবাদ করে উঠল,ওর মাঈ বড় ভালবাসে চরুকে।আমার মা ভাল মা নয়।সবসময় মারে।
রফি হাতের বালাটা টাইট করে কব্জিতে বসিয়ে বলে উঠল,আমি না আব্বুকে ডরায় না আম্মিকে।ওরা সারাক্ষণ মারামারি করছে করুক।এই রফির গায়ে হাত তুলেছে কী আপন ছোড়েগা নহি।
---কী করবি শুনি?
---তোর শুনে লাভ?
গুড্ডি হঠাৎ মুখ লটকে বলে উঠল,মাঝে,মাঝে আমার না পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।কত্ত বড় শহর!..কত্ত গাড়ি!সেখানে কী আমি থাকার জন্য অল্পমতো জায়গা পাব না?
রফি কলার ঝেড়ে জবাব দিল,তুই যদি মেয়ে না হয়ে ছেলে হতিস।একসাথে পালিয়ে যেতাম।হাওড়া স্টেশনে ঢুকলে অনেক কাজ।আপন এক ছোটমোটা গ্যাং চালাতাম।
গুড্ডি নাক টেনে বলে উঠল,আমি মেয়ে হয়েছি বলে কেন যেতে পারব না?চল পালিয়ে যাব।রোজ,রোজ ঘা খেতে ভাল লাগে না। পিঠটা সবসময় টনটন করে।
রফি ফাঁকা গলায় বলে উঠল, দুনিয়াটা বড় জহরিলা গুড্ডি।তোকে ডংক মারবে সবাই।
---কেন?আমি কী তাদের কোন ক্ষতি করব?
----সেটা এখন বুঝবি না।পরে বুঝতে পারবি।
চরণ বলে উঠল,না গুড্ডি তু কোথায় যাস না। আমার খেলার রাণী সাজবি।আমি তোকে শাদি করব।
গুড্ডি কথাটা শুনে অনেকখন হাসল।তারপর বলে উঠল,শাদি আর তোকে?গাধা কোথাকার!...তোকে শাদি করলে তো আমাকেই ধান্দায় গিয়ে তোকে খাওয়াতে হবে।আমরা রোজ প্লাস্টিক কুড়িয়ে কুড়ি টাকা কামাই।আর তুই তো এখনো রাস্তা পার হতে পারিস না।
চরণ একটু ভেবে বলে উঠল,হাম ডক্টর হবে।গন্ধকাকু বলেছেন।পড়ালিখা করলে আমি অনেক বড় চাকরি করব।তুকে রাণী করে রাখব।
রফি বলে উঠল,কই দেখি তোর মুখটা একবার?
চরণ ওর দিকে তাকাল।
---আজ দাঁতগুলো সাফ করেছিস দেখছি।তোর গন্ধকাকুকে বলিস,ও তাহলে ডাক্তার কেন হল না?অনেক পড়েছে তো।
---উনি ডাক্তার হলে আমাদের রোজ লিখাপড়া কে করাতেন?
---কেন আমি।শহরের গলিতে পড়ে থাকা কোন বোতলটা কোন মদের আমি ইংরেজি পড়তে না জানলেও বলতে পারি।চাচা দাড়িপাল্লায় আমাকে আজ পর্যন্ত ঠকাতে পারেনি।আর নগদে পঞ্চাশ পয়সাও ছাড়ি না। আমি তোদের গন্ধকাকুর কাছে না পড়লেও ক্রিকেট খেলায় কোনটা ফোর কোনটা সিক্স বলে দেব।সিঙ্গেল রান...ডবল রান সব জানি।পড়বি আমার কাছে?
গল্প করতে,করতে ওরা তিনজনেই ঝুপড়ির কাছে চলে এসেছে।এখান থেকে রাস্তা ভাগ হবে।
রফি এক লাফেই রাস্তা ডিঙিয়ে নিজের ঝুপড়িতে ঢুকে গেল।চরণ জানে গুড্ডিকে এখন বাইরে ঘুরে বেড়াতে হবে।ঘরে ঢুকলেই তার মা চড়,চাপড় দিয়ে খেদে দেবে।তার বাবা জুতো পালিশ করার সরঞ্জামগুলো বাড়ি থেকে নিয়ে বেরিয়ে যেতেই,পাশের বাড়ির একটা লম্বা গোছের কাকু তাদের ঘরে ঢুকে পড়ে।তারপর গুড্ডির মা আর সেই কাকুটি খুব হাসাহাসি করে।আর কী সব করে চরণ জানে না। তার মা ওদিকে তাকাতে মানা করেন।চরণ. তাকায় কী আর সাধে?
পর্দার পাশে গুড্ডি যে মুখ লটকে বসে থাকে ।অল্প ঢুকতেও পায় না বেচারি।চরণ কতবার চা খেতে ডেকেছে।গুড্ডি আসে না। চরণের বুকে ব্যথা জাগে।গুড্ডির মরা চোখ,মুখ তার একদম সহ্য হয় না।
চরণের মায়ের একটা ভাল গোছের নাম ছিল।গাঁয়ের পন্ডিতজী রেখেছিলেন।আজ আর সেটা মনে করতে পারেন না। ছোটথেকে সবাই ছুটকী বলে ডাকতেন।সেই নামটাই রয়ে গেছে। তার যখন বিয়ে হয়।তখন স্বামী হাওড়ায় চটকলে কাজ করেন।এক বছরের মাথায় কারখানাটা বন্ধ হয়ে গেল। থাকার খোলি হারাল।ছুটকীর তখন আট মাস।আজ বিয়োই,কী কাল বিয়োই এমন অবস্থা!
তার স্বামী তাকে নিয়ে এলেন কোলকাতায়। বড়বাজারে।মুটে,মজুরীর কাজ করতে লাগলেন।আর ছুটকী থাকতেন অন্ধকার ঘেরা একটা ঘুপচি মত স্যাতস্যাতে ঘরে।তার মধ্যেই ঠেলে,গুঁজে কোনরকমে এক টাইম স্টোভ জ্বেলে রান্নাটা করতেন।সেই খাবার তিনবার খেতে হত।কিছুদিন পরে ছুটকী জেনে ছিলেন।জায়গাটা কোন কালে পায়খানার ঘর ছিল।তার স্বামী বাইরের চাতালটায় চিৎ হয়ে পড়ে রইতেন।তখন কোলকাতায় মশাদের হুলে আজকের মত বিষ ছিল না। তাই রক্ষে।
চরণ জন্মাবার পর তারা আর ওইটুকু জায়গায় কোনমতেও থাকতে পারলেন না। ফুটপাতে খোলা আকাশের নিচে চলে এলেন।পাতলা কাপড় টাঙিয়ে চৌকো একটা ঘর পাতলেন।সেখানে তাদের সন্তানকে আড়াল করে রাখলেন।কিছুদিন পর জনসভার পরিত্যক্ত ব্যানর টাঙিয়ে একটা ঝুপড়ি বানালেন।একদিন পৌরসভার লোকজন এসে তা ভেঙে দিয়ে গেল।ছয় মাসের চরণকে নিয়ে সেখান হতে চিৎপুর,খিদিরপুর করতে,করতে শেষে বাবুঘাটের সামনে গঙ্গার ধারে এই আশ্রয়টুকু পান।বছর তিনেক হল।তখন মোটেই পাঁচটা ঝুপড়ি ছিল।এখন কুড়িটার কাছাকাছি।নগরোন্নয়ণ থেকে দু,তিন বার শাষিয়ে গেছে।গঙ্গার পাড় সাজানো হবে।তাই তাদের উঠে যেতে হবে।ছুটকীকে স্বামী বড্ড পেয়ার করতেন।পাড় জোয়ানের মত ইয়া বড় ছাতি ছিল।নদীর ধারে দূর্গা ঠাকুরের বড়,বড় মেড় থেকে বাঁশ,কাঠ আর সুতলি এনে ঝুপড়িটা শক্ত করে বেঁধে দিয়েছিলেন।তার পেশীবহুল কব্জির টানে রশিগুলো যখন কটকট করে শব্দ তুলত।ছুটকী অটুট নিরাপত্তা বোধ করতেন। ভাবতেন,এই ঘর বোধহয় আঁধী এলেও উপড়াতে পারবে না। খুটিগুলো এক হাত গর্ত করে পুতে ছিলেন।সেই মানুষটা কেমন করে যেন এক রাতেই হুট করে মারা গেলেন!
অল্পখানি ফ্যান উঠেছিল মুখে।কী যে হয়েছিল উপরবালা জানেন।তার কান্না শুনে রাস্তা থেকে জনাকয়েক এসে ভিড় জমিয়ে ছিলেন উঠোনে।তাদের মধ্যেই একজন চোখ,মুখ নেড়ে বলে উঠেছিলেন,সাপে কেটেছে।ছুটকীর ভিতরটা তখন গরগর করে জ্বলছিল।স্বামীর মৃতদের ফেলে, ঘর তন্নতন্ন করে তার সোহাগশত্রুকে খুঁজে বেড়ালেন।কোথায় পাওয়া গেল না সরিসৃপটাকে।শেষমেশ একটা অঘোষিত ঘাটেই তাকে
দাহ করা হল।চরণ তখন সবে চার বছরের।সেইসব স্মৃতি আজ তার চোখে কিছুই বেঁচে নেই।বাবার মুখটা সে একেবারে ভুলে গেছে।শুধু ওই চিতার আগুনটুকুই মনে পড়ে।মাঝে,মাঝে তাই মাকে প্রশ্ন করে,এ মাঈ আগ নাচলবা কাহে?
আগুন কেন নাচ করে?এই সহজ প্রশ্নের উত্তরটাও ছুটকীর বড় কঠিন মনে হয়।একবারও উত্তর দিতে পারেন না। শুধু ছোট করে বলে ওঠেন,পাতা নাহি।
যাকে এই বস্তির ছোট,ছোট ছেলে,মেয়েরা আদর করে "গন্ধকাকু" বলে ডাকে।আসলে তার নাম মৃত্যুঞ্জয় ঘোষাল।একজন ছোটগোছের সাংবাদিক।বিয়ে,থা কিছু করেননি।তার বাবা চাকরি করতেন।বছর কয়েক আগে মারা গেছেন।মায়ের পেনশনের টাকায় সংসার খরচ চলে।মৃত্যুঞ্জয়ের দাদা চাকরি বাগিয়ে অনেকদিন আগেই নিজের বউ,ছেলে নিয়ে কেটে পড়েছেন।বাড়ির সাথে যোগাযোগ না রাখার মতোই।এই বয়েসে তাই তার মাকেই হাত পোড়াতে হয়।মৃত্যুঞ্জয় রাতের খাবারটা নিজেই করেন।তার মাকে করতে দেন না।তার মায়ের একটাই আক্ষেপ।ছোটছেলের বিয়েটা চুকে গেলে তিনিও যমের হাত ধরে বিদায় নিতেন।মৃত্যুঞ্জয়ের অবশ্য বিয়ের প্রতি কোন ঝোক নেই।দিব্যি আছে।এই ভাল।বয়সটাও আটত্রিশ ছুঁয়ে ফেলল।কোনরকমে আর দুটো বছর কাটাতে পারলে,মায়ের আক্ষেপটুকুও মিটে যাবে।বল,বুদ্ধি,ভরসা,চল্লিশ পেরোলেই ফর্সা।তারপর আর কেউ মেয়েও দিতে চাইবেন না।
কলেজে পড়ার সময় থেকেই মৃত্যুঞ্জয় নানা সমাজসেবামূলক কাজে ভাগ নিতে শুরু করেন।রক্তদান শিবির,কম্বল বিতরণ এমনকি দূর,দূরান্তের গ্রামে,মফস্বলে গিয়ে নানা ধরনের ডাক্তারী শিবিরে যোগ দেওয়া।এসব তার নেশার মত ছিল।জনসেবায় বড় আনন্দ পেতেন।আজো পান।তাই সন্ধের অলস সময়টা হাতে নিয়ে নেমে পড়েন এই বট গাছটার তলায়।এক,দেড় ঘন্টা সময় অথচ নিমিষে কেটে যায়।ছোট,ছোট ছেলে,মেয়েগুলোর উজ্বল তারার দিকে তাকিয়ে মৃত্যুঞ্জয় জীবনের মানে খুঁজে পান।দশ জনের এই দলের মধ্যে চরণকে তার বড় ভাল লাগে।ছোট মনে জানার কৌতুহল উপচে পড়ে।।সবসময় কতরকম প্রশ্ন করে।মৃত্যুঞ্জয়ের ভাল লাগে।যথাযথ উত্তর দেন।পড়াশুনোটাও ভাল করছে।মৃত্যুঞ্জয় ওকে নিজের পাশে বসান।দেহাতি হিন্দির টানটা এখন অনেকটা মুছে গেছে।পরিস্কার করে বাংলা বলতে পারে।বাকিরা এখনো অ,আ শেষ করতে পারল না। চরণ সেখানে ইংরেজি পর্যন্ত লিখতে শিখে গেছে।সংখ্যাগুলোই চিনতে শিখে গেছে।ছবি আঁকার হাতটাও ভাল।কল্পনা করতে পারে।
মাস দুয়েকে যাওয়ার পর মৃত্যুঞ্জয় একদিন বটতলায় তার ছাত্র,ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বললেন,কালকে তোমাদের পরীক্ষা।যারা,যারা পাশ করতে পারবে তাদের আমি একটা করে খাতা আর পেন দেব।আর যারা,যারা পরীক্ষা দিতে আসবে তাদের সবাইকে একটা করে কেক আর ক্যাডবেরি।আর যে প্রথম হবে।তাকে আমি আমার প্রিয় আতর মাখাব।তার গা থেকেও উঠবে আমার মত গন্ধ!
কথাটা শেষ করেই মৃত্যুঞ্জয় চরণের দিকে তাকালেন।
---কী ভাবছ,চরণ? পারবে আমার পুরস্কার জিততে?
চরনের চোখদুটো চকচক করে উঠল।চরণ দেখেনি আতর কেমন হয়।সে ভাবল,নিশ্চয়ই সেটা গন্ধকাকুর আশ্চর্য কোন যাদু হবে।সেই গন্ধ একবার মাখলে সেও তখন গন্ধকাকুর মত মিষ্টি হয়ে যাবে।ভাল,ভাল কথা বলবে।তার মত চোখে একটা চশমা পরবে।কাঁধে একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে হেঁটে যাবে বড়,বড় রাস্তায়।কত মানুষ তার দিকে চেয়ে থাকবে!
শহরের উঁচু,উঁচু ইমারতে উঠবে।অনেক,অনেক মানুষ তার কথা শুনবে।তার ব্যাগেও মোটা, মোটা পুঁথি থাকবে।
চরণ হাসতে,হাসতে উত্তর দিল,পারব কাকু।নিশ্চয়ই পারব।
তারপর আর একমাস মৃত্যুঞ্জয়ের সেই বটতলায় যাওয়া হল না।তার জীবনের সবথেকে বড় বিপর্যয় ঘটে গেছে।হঠাৎ করে তার মায়ের অ্যাটাক আসে।ভাগ্যিস জলের গ্লাসটা তার মায়ের একটা পা লেগে পড়ে গেছিল তাই মৃত্যুঞ্জয় টের পেয়েছিলেন।চমকে ওঠে ঘুমের মধ্যেয়।সাথে,সাথেই মায়ের কাছে দৌঁড়ে যান।গিয়ে দেখেন,তার মায়ের চোখে,মুখ বেঁকে গেছে।বীভৎস চেহারা ধারণ করেছে।মুখ দিয়ে স্পষ্টভাবে কোন কথা বের হচ্ছে না। মৃত্যঞ্জয় আর একটুও দেরী করেননি।দৌঁড়ে গিয়ে একটা গাড়ি ডেকে হাসপাতালে পৌঁছান।ডাক্তার সব কিছু পরীক্ষা করে নিরাশ গলায় বলে উঠছিলেন,বড় দুর্ভাগ্যজনক।প্যারালাইশিস থেকে উনি আর রিকভার করতে পারবেন না। সেবা,যত্নের দ্বারা যতদিন পারেন বাঁচিয়ে রাখুন।আর মালিশটা চালু রাখবেন।
একটা রাতের মধ্যেয় তার মা কথা,চলা সব হারিয়ে কেমন নির্জীব বস্তুতে পরিণত হয়ে গেলেন।মৃত্যুঞ্জয়ের বুকটা টনটন করে উঠত তার মায়ের স্থির তারায় অব্যক্ত যন্ত্রণাগুলো ফুঁটে উঠতে দেখে।তিনি আগে সারাক্ষণ চাইতেন,তার মায়ের মুখ থেকে যেন কোন অনুযোগ না শুনতে হয়।এখন সেই মায়ের সেই মৃত কন্ঠের হাসফাস শুনে নিজেই কেঁদে ভাসাচ্ছেন।এই বয়সেও যে মা তার মেরুদন্ডের কতখানি জুড়ে বাস করেছিলেন।আজ মায়ের অথর্বতায় সেটা আঁচ করতে পারলেন মৃত্যুঞ্জয়।জীবনের সব লক্ষ্যই যেন শেষ হয়ে গেছে।একেবারে শুণ্য দেখছিলেন চারিদিক। অফিস যাওয়া বন্ধ করে দিন,রাত মায়ের সেবায় লেগে ছিলেন।সাথে একজন আয়া ছিল।দুজনের সেবাতেও তার মায়ের প্রাণপাখি বেশিদিন বুকের খাঁচায় বন্দি থাকল না। একদিন বিকেলের হলুদ রোদের সাথে তার মায়ের নিষ্প্রভ নজরটাও চিরদিনের মত মিলিয়ে গেল। ব্যাস,সব শেষ।মৃত্যুঞ্জয় মায়ের মৃতদেহটাকে শিশুর মত আঁকড়ে ধরে চৌচির গলায় কেঁদে উঠেছিলেন।বুকের ভেতরটা খাঁ খাঁ করছিল।
শ্মশানঘাটে তার দাদা নাম রক্ষা শুধু এসেছিলেন।দাহকাজটা চুকে যেতেই ফিরে গেছিলেন নিজের ফ্ল্যাটে।তারপর ভোজ কাজের হিসেব নিয়ে বাড়িটার অর্ধেক একজন প্রোমোটারকে বিক্রি করে,পাওনা বুঝে কেটে পড়েছেন।বাকিটুকুও নেওয়ার জন্য প্রোমোটারমশাই মৃত্যুঞ্জয়ের পিছু,পিছু দিন কয়েক ঘুরেছিলেন। নানারকম প্রলোভন দেখাচ্ছিলেন।শেষমেশ মৃত্যুঞ্জয়ও একরকম প্রতিশোধের বশে রাজি হয়ে যান।যে বাড়িতে তার মা নেই।সেখানে খালি বাতাস নেওয়ার কোন মানেই হয় না।অনেকগুলো টাকাই পেয়েছিলেন।তা দিয়ে চেতলায় একটা মাঝারী মাপের ঘর ভাড়া নিলেন।বাকি টাকা ব্যাঙ্কে জমা থাকল।
বাড়ির ট্যারিসে ওঠে একদিন সামনের পার্কে কয়েকটা ছেলেকে হৈ চৈ পেয়ে,হঠাৎ খেয়াল পড়ে গেল।গঙ্গা পাড়ে সন্ধ্যের বটতলাটার কথা।তখনি একজোড়া চোখ তার সামনে ভেসে উঠল।চরণকে মনে পড়তেই ট্যাক্সি ধরে ছুটলেন বাবুঘাটের দিকে।
এসেই অজান্তে মাথায় হাত দিয়ে বসলেন।বস্তির চিন্হমাত্র সেখানটাই বেঁচে নেয়।এই তো একমাস আগে যে জায়গায় কয়েকটা পরিবার সুখ,দুঃখের ঘর বেঁধে দিনরাত বাঁচার জন্য লড়াই করছিল।সেখানে আজ কয়েকটা রাক্ষসী যন্ত্র নিজের থাবা গুটিয়ে নিশ্চুপ অন্ধকারের মধ্যে যেন লুকিয়ে বসে আছে।একজন চালক স্টোভ জ্বালিয়ে রান্না করছে।মৃত্যুঞ্জয়ের মনে হল এই চেরা মাটির ভেতরে অনেক মানুষের স্বপ্ন ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তাদের সেই গোঁঙানির শব্দ তিনি শুনতে পাচ্ছেন।
চরণের নানারকম প্রশ্নগুলো খোলা আকাশের নিচে প্রতিধ্বনিত হয়ে তার বুকটাকে কাঁপিয়ে তুলল।
এগিয়ে গিয়ে ড্রজার মেশিনের চালককে জিজ্ঞাসা করলেন,আচ্ছা ভাই বস্তির লোকজন কোথায় গেছে বলতে পারো?
চালক তার মুখের দিকে তাকিয়ে অল্প কিছু ভাবল।তারপর বলে উঠল,জানি না দাদা।বলতে পারছি না। পুলিশ এসে তাদেরকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। দুদিন তো জায়গাটা রেড করা ছিল।কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।শেষে কিছু একটা ফয়সালা হওয়াতে বস্তিবাসি উঠে যায়।
মৃত্যুঞ্জয় অবাক হয়ে গেল। শহরে এতবড় একটা কান্ড ঘটে গেল।অথচ সে বিন্দুমাত্র টের পেল না!তখনি মনে পড়ল সে একজন সাংবাদিক।এতদিন পেশাটাকে ভুলে নিজের দুঃখ নিয়েই পড়ে ছিল।নিশ্চয়ই সম্পাদকমশাই তাকে ছাটায়ের দলে ফেলে রেখেছেন।তাই আর কষ্ট করে ফোন করেননি।নিজেকে বড় স্বার্থপর মনে হল মৃত্যুঞ্জয়ের। সমস্ত দুঃখ ছেড়ে পুরনো পেশাদারিত্ব মনোভাব ফিরিয়ে আনলেন।লম্বা,লম্বা পা ফেলে চলতে শুরু করলেন অফিসের ঠিকানায় ।আগে তার অনেক কাজ।এই শহরের বুকে অত্যাচারীদের পাশে ঢালের মত দাঁড়াবেন তিনি।শোষিতদের নায্য পাওনার আদায়ে সোচ্চার হতে হবে।খুঁজে বের করে আনতে হবে চরণদের।যারা অন্ধকারে জন্মগ্রহণ করেও সারাক্ষণ আলোর চোখে তাকিয়ে থাকে।
আপাতত বাবুঘাটের উচ্ছেদ পরিবারগুলোকে দিন কয়েকের জন্য ধাপার এই খোলা মাঠে ত্রিপল টাঙিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।নগরোন্নয়ের পক্ষ থেকে তাদের জন্য একটু দূরেই টিনের শেড দিয়ে কয়েকটা ঘর বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এবার থেকে এখানেই তাদেরকে থাকতে হবে।শহর থেকে অনেক দূরে।নির্জন জায়গা ।রুজির অসুবিধা ।আগে বাড়ি থেকে বেরোলেই মানুষের ভীড় চোখে পড়ত।অনেক রকম রোজগারের সুবিধে ছিল।এখন সেই ভীড়ে আসার জন্য ভাড়া লাগে।অনেকটা পথ পার হয়ে আসতে হয়।তবে এখানে ঘর হারানোর ভয় নেয়।
রফি আর গুড্ডি তাই এখন পেশা পাল্টে ফেলেছে।তারা দুজন মিলে সকাল হলেই হাওড়া স্টেশনে চলে আসে।রফি হাতের দুই আঙুলে দুটো স্লেট পাথর ধরে অভিনব কৌশলে বিভিন্ন গানের সুরে বাজায়।আর সেই গানের তালে গুড্ডি নাচ করে।সারা দিনে একজনের ভাগে পঞ্চাশ, কভু একশোও জুটে যায়।সন্ধ্যের সময় ফিরে যায় ধাপার অন্ধকারে।
দিন কয়েক হল,চরণের মা ছুটকী অসুস্থ অবস্থায় পড়ে আছেন।তিনি আয়ার কাজ করতেন।চরণকে কাজে যেতে মানা করতেন।ছেলেকে পড়াশুনো করে বড় করার সাধ ছিল।চরণেরও পড়াশুনোই খুব ঝোক।তাছাড়া স্বভাবে ও বড় ভোলা।অন্যদের মত চালাক নয়।তাই নিজের ছেলেকে বাইরে যেতে দিতেন না। যদি হারিয়ে যায়!ও কী রাস্তা চিনে ফিরে আসতে পারবে?
মায়ের কষ্ট দেখে চরণই আজ রফিকে বলল,আমিও তোদের সাথে ইস্টিশনে যাব।মা বাড়িতে বীমার পড়ে আছে।দাবা আনতে হবে।
রফি হেসে বলল,তুই গিয়ে কী করবি চরু।ওখানে পাগলকে কেউ ভিক্ষা দেয় না। তুই হারিয়ে যাবি।তোর মা চিন্তা করবে।
চরণ জোর করে বলে ওঠে,যাব যখন বলছিস চল।গাড়ি,মানুষ দেখে ফিরে আসবি।
গুড্ডি বলে উঠল,তুই হারিয়ে গেলে তোর মা অনেক দুখ পাবে।তুই যাস না চরু।আমি রোজ দশ টাকা করে তোকে লুকিয়ে দিয়ে যাব।তোর মাকে কিছু কিনে খাওয়াবি।
চরণ রাগ করল।মুখ নিচু করে জোর গলায় বলে উঠল,আমি যাব...যাব।
তারপর দিন চরণ ওদের সাথে হাওড়া স্টেশনে নেমে পড়ল।
রফি ওকে দেখাতে এনেছে বহুরূপী কেমনভাবে সাজতে হয়।আজ সে একজন খুদে বহুরূপীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে।কভু হনুমান কভু শিবের সাজ পরে স্টেশনে থালা হাতে ঘুরে বেড়াতে হবে।তাতেও কিছু রোজগার হয়।
চরণ ওদের পিছু, পিছু কিছুদূর গিয়েই খেই হারিয়ে ফেলল।উপচে পড়া সাবওয়ের ভীড়ে সেও মিশে গিয়ে ভেসে যেতে লাগল।চরণ কী একটা নেশার ঘোরে যেন দৌঁড়তে লাগল সবার সাথে ।একটু বাদেই ওঠে এল রাস্তায় ।সেখানে অনবরত গাড়ি যাওয়া, আসা করছে।চরণ আবার নাক টানতে শুরু করল।একটা গন্ধ পাচ্ছে।মিষ্টি অথচ বেশ চেনা।এ যেন সেই গন্ধকাকুর গন্ধ।মনে পড়ে গেল চরণের।তাকে পরীক্ষায় প্রথম হতে হবে।তবে সেও এরকম গন্ধ তুলে হেঁটে বেড়াবে।
পকেট হাতড়ে সকালের চকখড়িটা পেল।রাস্তার পাশে খানিকটা জায়গা পরিস্কার করে গন্ধকাকুর মুখটা আঁকতে শুরু করল।
রাস্তায় লোকজন থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল।একটা খুদে ছেলের হাতে যে এত কলা থাকতে পারে ভাবতেই পারছেন না। চরণ একমনে এঁকেই চলেছে।সেই বটগাছ।তার নিচে গন্ধকাকু বসে।হাতে বই।
প্রথমে কয়েন তারপর নিশব্দে কয়েকটা নোট তার দিকে ছুটে এল।
রফি আর গুড্ডি অনেক খোঁজার পর চরণকে ব্রীজের মুখে একটা ভীড়ের মধ্যে উদ্ধার করল। চরণের চারপাশে কয়েন আর নোটগুলো ছড়িয়ে,ছিটিয়ে পড়ে আছে। চরণের হুশ সেদিকে একদম নেই।
বাংলা অক্ষরে সুন্দর করে ছবির নিচে লিখছে "গন্ধকাকু" ।
চরণের সেই হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে গুড্ডি আর রফির শুকনো চোখজোড়া ভিজে গেল।