Ananya Podder

Tragedy Classics Others

4.3  

Ananya Podder

Tragedy Classics Others

গিরগিটি

গিরগিটি

10 mins
834



অলোকা রাতে খাবার টেবিলে বসে ছেলে অতনুর কাছে গল্প করতে বসলো , " কি বলবো রে তনু !!! কপাল করে বউ পেয়েছে শম্পা !!! এমন ছেলে- বউ ভাগ্য করলেই পাওয়া যায় !! কি কপাল শম্পার !! দেখলেই হিংসে করতে ইচ্ছে করে !! "

অতনু পরোটা আর কষা মাংস মুখে পুরতে পুরতে জিজ্ঞেস করলো, " কেন মা , কি হোলো?? শম্পা কাকিমার এমন কি ভাগ্য খুলে গেল ?? "

"আর ভাগ্য !! বৌমা ভাগ্য কি আর সবাই পায় রে ?? ও তো কপাল করেই পেতে হয় !! "

অতনু মায়ের এই ধরনের কথার সুরকে চেনে | সে জানে, এবারই মা পিউকে নিয়ে টিপ্পনি কাটবে | অতনু মায়ের কথা এড়ানোর জন্য বলল, " তা বেশ, শম্পা কাকিমার ভালো ভাগ্য শুনে ভালো লাগলো | এবার বলো, শিবু কাকা কেমন আছেন ?? "

"শিবু ঠাকুরপো ভালোই আছে | মৌএর মতো ছেলে-বউ থাকলে সব শ্বশুর শাশুড়িই ভালো থাকে রে বাবা !! "

অতনু বুঝলো, মায়ের টিপ্পনি থেকে রেহাই নেই| এবার পিউয়ের প্রতিটা ভুল ত্রুটির পোস্টমর্টেম করা চলবে | সে একটা লম্বা ও দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো | পাশ থেকে পিয়ালী স্বামীর দীর্ঘ নিঃশ্বাসে স্বস্তি আনতে বলল, " হ্যাঁ মা, আমিও শুনেছি, মৌ বৌদি ভীষণ ভালো | খুব সুন্দর করে নাকি সংসার সামলাতে পারে !! "

" তা আর বলতে!! ভোর চারটেয় উঠে রান্না করে শ্বশুরকে টিফিন ক্যরিয়ারে খাবার বেড়ে দেয় | সে খাবারে ভাতের সাথে যেমন ডাল তরকারি থাকে, তেমন আবার কখনো মাছ, কখনো মাংসও থাকে | শুধু কি তাই!! ওই সকাল ছটা - সাড়ে ছটার মধ্যে শিবু ঠাকুরপোর জন্য দুধ রুটিও তৈরী করে দেয় | শম্পাকে তো সংসার নিয়ে ভাবতেই হয় না!! .... তোমার মতো মোটেই না মৌ!! খুব ভালো বউ পেয়েছে শম্পা !! "

সাত আটমাস আগে বিয়ে হয়ে আসা পিয়ালী জানে যে এই পার্থক্যের কাহিনী তার শাশুড়িমা ঠিক তুলবে | জগৎ সংসারে সবার বাড়ির মেয়ে - বৌমা ভালো | শুধু তার কপালটাই দুর্ভাগ্যে ভরা | এবারেও তার অন্যথা হয়নি | নৈহাটী থেকে ফিরে পিয়ালীর শাশুড়ি একই সুরে কথা বলে চলেছেন | সে, পিয়ালী যতই স্কুলের সার্কেল ইন্সপেক্টর হয়ে একশো বত্রিশ টা স্কুল সামলাক না কেন, সংসার সামলানোতে যে সে একেবারেই শূন্য লাভ করেছে, সেটা ক্ষনে ক্ষনে অলোকা বুঝিয়ে দেন|


কিন্তু তাতে পিয়ালীর কিছু যায় আসে না | অতনুকে ভালোবেসে যখন বিয়ে করেছিল সে, তখনই সে জানতো, তার শাশুড়িমা কেমন হবে | বিয়ের আগে অতনু বলেও ছিল, আলাদা থাকার ব্যবস্থা করবে | কিন্তু পিয়ালীই রাজী হয়নি তাতে | পড়াশুনা করার মতো কঠিন কাজটা যখন সে করতে পেরেছে, তখন রান্না করা বা সংসার সামলানোর মতো সহজ কাজটাও সে নিশ্চয়ই শিখে যাবে, শুধু সময়ের অপেক্ষা |

বিয়ের আট বছর অতিক্রান্ত | পিয়ালী এখন নৈহাটি তে পোস্টিং পেয়েছে | কলকাতা থেকে রোজ যাতায়াত করে | বর্তমানে সে শুধু অতনুর ঘরণীই নয়, ঋদ্ধিমা আর ঋষভের জননীও | তবুও সংসারে সে এখনও বেশ অপটু , অন্তত শাশুড়িমা তাই বলেন | চাকরি সামলিয়ে দুটি যমজ সন্তানকে মানুষ করতে বেশ হিমশিম খেতে হয়েছে পিয়ালীকে | কিন্তু জীবনের প্রতিটা সমস্যার বাঁকে সে তার স্বামীকে তার পাশে পেয়েছে | তাই জীবনের এই কটা বছর পিয়ালী অতনুর পিউ হয়ে বেশ আনন্দেই কাটিয়ে দিয়েছে | মাঝের এই বছর গুলিতে অতনুর মায়ের অন্যান্য ভাসুর - দেওরদের ছেলেরা তাদের বৌদের নিয়ে আলাদা সংসার পেতেছে | শুধু বাকি আছে এখন অতনু আর পিয়ালী | যেই মৌয়ের নামে অলোকা এত সুখ্যাতি করতেন এক সময় , সেই মৌ বৌদিও আলাদা বাড়ি করে শ্বশুর শাশুড়ির থেকে সরে পড়েছে | আলাদা হওয়ার কারণটা যে কে, সেটা এখনও অজানা | তবে ঘর ভাঙার দোষটা সাধারণত যে মানুষটার উপরে সমাজ চাপিয়ে দেয়, এখানেও সেটার ব্যতিক্রম কিছু হয়নি | তবে, পিউ বিশ্বাস করে, মৌ বৌদি এসব কিছুর জন্য কোনোভাবেই দায়ী নয়|


সে যাই হোক, বর্তমানে নৈহাটীতে শিবু কাকা আর শম্পা কাকিমার বাড়িতে সবার নিমন্ত্রণ | শিবু কাকার মেয়ের দ্বিতীয় সন্তান হিসেবে ছেলে হয়েছে, তাই বেশ বড়ো করে মামা ভাতের আয়োজন করা হয়েছে | অতনু অফিসের কাজে কলকাতার বাইরে গিয়েছে সপ্তাহ খানেকের জন্য, তাই ঠিক হয়েছে দুই নাতি নাতনি কে নিয়ে অতনুর বাবা মা আসবেন নিজেদের গাড়িতে করে, অবশ্য তাদের সাথে বাচ্চা দুটোকে সবসময় দেখাশোনা করার জন্য যে মেয়েটি থাকে, সেই রমাও আসছে | পিয়ালী অফিস করে অনুষ্ঠান বাড়িতে যোগ দেবে | সেদিনটা থেকে পরেরদিন অফিস করে কলকাতায় ফিরবে সে, আর বাকিরা দুপুরের খাওয়া সেরে গাড়িতে ফিরবেন |


এই অনুষ্ঠান বাড়িতে পৌঁছানোর পরে পিয়ালী লক্ষ্য করে, তার শাশুড়ি বেশ রস স্বাদন করে কোনো একজনের চরিত্র নিয়ে বেশ আলোচনায় ব্যস্ত| কান পাতলে পিয়ালী শোনে যে তার শাশুড়িমা পিয়ালীর এক কাকী শাশুড়িকে বলছে, "বুঝলে দীপা, আমার মনে হয়, এই ছেলেটির সাথেই মৌয়ের ভাব সাব হয়েছে | কি রকম মাখো মাখো ভাব দেখো দুজনের !! ... শ্বশুর বাড়ি বলে কথা, একটু তো লজ্জা রাখতে হয় ?? ... বড়ো ছোটো কাউকেই আর মানে না এখনকার দিনের বউরা !!... ছিঃ, ছিঃ .... শম্পার কপাল দেখলে সত্যিই কষ্ট লাগে | অত আদর করে বউটাকে পুষেছিল আজকের দিন দেখবে বলে !! "


পাশ থেকে জায়ের কথায় খানিক সন্দেহ টেনে দীপা কাকিমা অলোকার কথার জবাব দিতে বলে ওঠে, " ব্যাপার টা বোধহয় ঠিক নয় দিদি | সুজয় এর যখন হার্ট এট্যাক হয়, তখন সুজয়ের এই বন্ধুটিই প্রচুর সাহায্য করেছে ওদের | নাহলে, সুজয়ের ট্যুর আর ট্রাভেলের ব্যবসা মুহূর্তেই নষ্ট হয়ে যেত | সেই সময়, এই ছেলেটি পাশে না থাকলে মৌ বড়ো বিপদে পড়ে যেত | "


" কি যে বলো দীপা !! বিপদে কেন পড়তো ?? শম্পা - শিবু কি মরে গেছিলো নাকি?? বলি, বাপ্ মায়ের চেয়ে বেশি কেউ আপন হয় নাকি !! ... আমি তো শুনেছি, সুজয়ের ওই হার্টের ব্যামোও হয়েছে বউয়ের এই নষ্ট চরিত্রের জন্য !! ... পুরুষ মানুষ কি এসব সহ্য করতে পারে , বলো?? "

শাশুড়ির পিছনে দাঁড়িয়ে শাশুড়ির রঙ বদল দেখছিল পিয়ালী আর মনে মনে হাসছিলো | এমন সময় দীপা কাকিমার মেয়ে রুমকি বলল, " জানো বৌদি, জেঠিমা যে মৌ বৌদির এত নিন্দে করছে, তার ষোলো আনাই মিথ্যে | বরং, সুজয়দাই এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স এ জড়িয়ে ছিল | আমি নিজে দেখেছি সব কান্ড কারখানা | "


পিয়ালী বেশ অবাক হয়ে তাকায় রুমকির দিকে| রুমকি ফিসফিসিয়ে বলে চলে, " আমি একবার মেডিক্যাল ক্যাম্পের জন্য দীঘা গিয়েছিলাম | নিউ দীঘার বীচে আমি নিজে দেখেছি, সুজয়দা আর সুজয়দার রিসেপশনিস্ট আপত্তিকর অবস্থায় বসে ছিল| আমি বাড়ি এসে মাকে সব বলেছিলাম| মা আমাকে কাউকে কিছু বলতে বারণ করেছিল, তাই কাউকেই আর কিছু বলিনি | মায়ের কাছে শুনেছিলাম, মৌ বৌদি সুজয়দার এই অ্যাফেয়ার টা কে মেনে না নিয়ে খুব অশান্তি করেছিল | নিজের ছেলের কলঙ্ক ঢাকতে শম্পা কাকিমা মৌ বৌদির চরিত্র নিয়ে কথা বলছে | আর শম্পা কাকিমার সাথে তালে তাল মিলিয়েছে জ্যেঠিমা | এত দিনের ভালো মৌ বৌদি কেমন এক নিমেষেই খারাপ হয়ে গেল, দেখো !! "


"সেই তো দেখছি রুমকি | একটা সময় ছিল, যখন এই মৌ বৌদির গুণগান করে তোমার জ্যেঠিমা আমায় রাত দিন অপমান করতেন | মানুষের চরিত্র কি রকম আজব হয়, তাই না??... যতদিন মৌবৌদি সবার জন্য করে গেল, ততদিন শম্পা কাকিমার মতো অমন সৌভাগ্য কারোর ছিল না | আর যখন মৌ বৌদি নিজের টুকু বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করলো, তখন মৌ বৌদির চরিত্রকে কলঙ্কিত করতেও ছাড়লো না এরা !! ... কি অদ্ভূত সব মানুষের দল !! আর মৌ বৌদিকে পুষেছে মানে??... মৌ বৌদি বাড়ির খোঁটে বাঁধা গরু, বা কুকুর বিড়াল নাকি যে পুষেছে বলছে?? এদের দেখছি আর অবাক হচ্ছি!! "


পিয়ালীর কথায় রুমকি হেসে মজা করে বলল, " তুমিও সাবধানে থেকো বৌদি | প্রথম থেকেই তো তুমি জ্যেঠিমার পছন্দের ছিলে না, তার উপরে চাকরি করো | কোনদিন আবার তোমার কোন প্রতিবাদের শাস্তি স্বরূপ তোমার চরিত্র নিয়ে কথা বলে বসবে !! ... এদের দিয়ে কিন্তু কোনো বিশ্বাস নেই | "


ননদ বৌদির হাসির কলতানে সেদিনের কথা ওখানেই চাপা পড়ে যায় | কিন্তু পিউ বোঝে, অলোকা, শম্পা কাকিমার সাথে বেশ জোটবদ্ধ হয়েই মৌ বৌদির বিরুদ্ধে আসরে নেমেছে | নিজেরা নারী হয়ে আরেক নারীর চরিত্রে দাগ লাগিয়ে যাচ্ছে কি করে, সেটাই ভাবতে বড়ো অদ্ভুত লাগে পিয়ালীর !!


মাঝখানে আরও কিছু বছর কেটে গেছে | মাঝে মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মৌ বৌদির সাথে সৌজন্যমূলক দেখা সাক্ষাৎও হয়েছে পিয়ালীর| দুই জায়ের মধ্যবর্তী কথোপকথনও ছিল খুব স্বাভাবিক, সেখানে কোথাও শ্বশুর বাড়ি বা স্বামীর নিন্দা ছিল না | বরং, শম্পা কাকিমার সাথে অলোকার প্রতিটা দেখা সাক্ষাতেই বেশ জমাটি নিন্দে চলতো ছেলে বউয়ের নামে , সেই প্রমাণ বহুবার পেয়েছে পিয়ালী |

এর মধ্যেই হঠাৎ করে খবর আসে, সুজয়দার আবার হার্ট এট্যাক হয়েছে | কলকাতার নার্সিংহোমে নিয়ে আসলে জানা যায়, দুটো ব্লকেজ আছে, প্রায় ৯০% ,, তাই তৎপর স্টেন বসাতে হবে |


অসুস্থ হয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি হলে মধ্যবিত্তের যেটার উপর ভরসা থাকে, সেই স্বাস্থ্যবীমার জন্য প্রথমে খুব একটা সমস্যা হয়নি | কিন্তু ইন্সেন্টিভ কেয়ার ইউনিটে থাকার সময়ই সুজয়দার ব্রেন স্ট্রোক হয়, ফলে চিকিৎসার খরচ মুহুর্মুহ বাড়তে থাকে | শিবু কাকা আর শম্পা কাকিমা দেড় লাখ টাকা দিয়ে আর দুদিন নার্সিংহোমে এসেই ছেলের প্রতি সব দায়িত্ব সেরে ফেলেছিলো | নার্সিংহোমের বারো লাখ টাকা মেটাতে মৌ বৌদি এক এক করে নিজের সব গয়নার বিসর্জন দেয়, কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না - সুজয়দা মারা যায়

|

সুজয়দা চলে যাওয়ার যত না শোক থাকে, তার থেকেও বেশি আঘাত আসে, যখন মৌ বৌদি নিজের মেরুদন্ডটা কে সোজা করে দাঁড়ায় | সুজয়দার ট্রাভেল কোম্পানি টা বন্ধ করে নিজের নামে একটা পার্লার খোলে মৌ বৌদি | শম্পা কাকিমারা মৌ বৌদিকে চাপ দেয়, ওদের নতুন বাড়িটা কাকা কাকিমার নামে লিখে দিতে | কিন্তু মৌ বৌদি রাজী হয় না | তার বক্তব্য, " বাড়ি যখন সুজয়ের নামে ছিল, তখন তার অবর্তমানে এ বাড়ি আমার | "


শুরু হোলো এ যুগের সীতার চরিত্রে লাঞ্ছন আনা | সর্বকালের বংশের সেরা বৌমা হয়ে গেল চরিত্রহীন | গোটা নৈহাটী জেনে গেল শিবনাথ বাবুর একমাত্র পুত্রবধূর চরিত্র ঠিক নেই |


মাঝে মধ্যে কলকাতা থেকেও ফোন যায় শম্পা কাকিমার কাছে, মৌ বৌদির নষ্টামি আর শম্পা কাকিমার পোড়া কপালের গল্প শোনার জন্য | পিয়ালী সব চুপচাপ দেখতে থাকে , সময়ের সঙ্গে চারপাশের মানুষগুলি কেমন করে একের পর এক রঙ বদলে চলেছে |


এত কিছুর মধ্যেই একদিন পিয়ালীরা জানতে পারে, যে, মৌ বৌদি আবার বিয়ে করছে | খবরের বাস্তবতা জানতে এই প্রথম পিয়ালী কাউকে কিছু না জানিয়ে মৌ বৌদির বাড়ি গিয়ে ওঠে |


দরজা খুলে পিয়ালীকে দেখে মৌয়ের প্রথম কথা থাকে , " একী পিউ?? তুমি এখানে?? সবাইকে জানিয়ে এসেছো নাকি লুকিয়ে এসেছো??... আমার সাথে মিশলে আবার তোমার চরিত্রও না খারাপ হয়ে যায়!! "


"চল্লিশ বছর বয়সে আর কি চরিত্র খারাপ হবে বৌদি ?? আর অতনু আমাকে জানে, চেনে | অতনুকে ছাড়া আর কাউকে জবাবদিহি করতে আমি বাধ্য নই | আমাকে তোমার ঘরে ঢুকতে দেবে না?? "


" আমার দুয়ার খোলা আছে পিউ | তোমার আসায় মানা না থাকলে আমার কাছে তোমার আদরের অভাব হবে না | "


চা পর্ব মেটার পরে পিয়ালী কোনো ভনিতা না করে নিজেই কথাটা পারে , " যা শুনছি, সেটা কি ঠিক বৌদি?? তুমি আবার বিয়ে করছো ?? "

"ঠিকই শুনেছ | আমি আবার বিয়ে করছি , তবে যার নামের সাথে আমার নাম জড়িয়ে কুৎসা রটানো হয়েছে, তাকে নয় | বিয়ে করছি অন্য একজনকে | তিনি নিজেও বিপত্নীক , তারও একটি ছেলে আছে , তবে তুতুনের থেকে সেই বাচ্চাটি ছোটো | "

"বিয়ে করা টা কি খুবই জরুরী?? "


"তাহলে আর কি করবো বলো?? আমার শ্বশুর শাশুড়ি আমার এখানে থাকার মতো পরিবেশ রাখেননি | নৈহাটীর অলি গলিতে আমার নামে কুৎসা ছড়িয়ে আছে | তুতুন বড়ো হচ্ছে, এরপরে ও কি পরিবেশে বড়ো হবে বলো ?? আমার হাতে পয়সা কড়ি কিছুই নেই | ব্যবসাটাও উঠে গেল আমার নামে কালিমা লেগে থাকায়| থাকার মধ্যে আছে এই বাড়িটা, কিন্তু নিচের তলাটা ভাড়া দিয়ে খাবো, সেই সুযোগও নেই | চরিত্রহীনার বাড়িতে কেউ বউ বাচ্চা নিয়ে ভাড়া থাকতে আসে না| বাপের বাড়ির দরজাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে| তাহলে বলো, ছেলেটাকে মানুষ করা তো অনেক দূর, খাওয়াবো কি সেটাই জানিনা| তাই এই বাড়ি তালা বন্ধ করে চলে যাব একেবারে| নৈহাটী তে আমার নিজের বলে আর কিচ্ছু নেই | "

" যাকে বিয়ে করছো উনি তুতুনকে দেখবেন তো?? "

" হ্যাঁ, আমার সাথে আইনি লেখাপড়া হয়েছে | কারোর মুখের কথায় আর বিশ্বাস করি না মৌ | যাকে ভালো বেসে বিয়ে করেছিলাম, সেই ধোঁকা দিয়েছিলো | অফিসের রিসেপশনিস্টের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে ছিল| বাধা দিয়েছিলাম বলে আমিই চরিত্রহীনা হয়ে গেলাম | যার নাম নিয়ে আমার নামে এত কুৎসা, তার কাছে আমি বন্ধু পত্নী ছাড়া আর কিছুই নই | আমার সেই বিপদে আমার পাশে দাঁড়িয়ে সেই ভগবানতুল্য মানুষটার দাম্পত্য জীবন নষ্ট হতে বসেছে | স্ত্রী যতই ভালো হোক, কেন মানবে সে নিজের স্বামীর নাম, অন্য কোনো মহিলার সাথে শুনতে ?? সমাজে তাঁকেও তো চলতে হয় ?? তাই চলেই যাচ্ছি মৌ | আমি এমনিই নষ্ট হয়ে গেছি | বিধবা হয়ে আরেকবার বিয়ে করে না হয় আর একটু বেশি নষ্ট হবো | কি আসে যায় তাতে ?? "

সব কথা শুনে পিয়ালী বলে ওঠে, " বিয়ের তারিখ কতো দিদি ?? আমি আর অতনু থাকবো তোমার বিয়েতে | "

"তুমি থাকবে আমার বিয়েতে?? "

"একদম| তোমাকে আমি দিদি বললাম, শুনলে না বুঝি!! আমিই তোমার বাপের বাড়ি | আমার কাছে থেকেই তোমার বিয়ে হবে | "

"কিন্তু অতনু, কাকা কাকিমা?? "

" অতনুকে আমি জানি দিদি | ও আমার সাথেই থাকবে তোমার ছোটো ভাই হয়ে | বাকিদের কথা ভুলে যাও | তারা নিজেদের রঙ বদলানোতেই না হয় ব্যস্ত থাক | "

মৌদির বাড়ি থেকে ফেরার সময় একটা লম্বা শ্বাস নেয় পিয়ালী | না, সে, নিজে এখনও গিরগিটি হয়ে যায়নি , তবেই তো মৌদির এত বড়ো সিদ্ধান্তে মৌদির পাশে থাকার সাহস রেখেছে মনে | পিয়ালী জানে, অলোকা এসব মানবেন না, বিদ্রোহ করবেন | তাই তার মীমাংসাও তৈরী করা আছে -- বছর পাঁচেক আগে অতনুর কেনা ফ্ল্যাটটায় এবার এই বংশের শেষ ছেলে আর ছেলে-বউ আলাদা হচ্ছে শাশুড়ির সংসার থেকে|


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy