Manab Mondal

Abstract

3.4  

Manab Mondal

Abstract

ঘরে ফেরার গল্প

ঘরে ফেরার গল্প

3 mins
41


ঘরে ফেরার গল্প


কলেজের দাপুটে নেতা সন্দীপন আজ ভুলে গেছে অধিকার নিয়ে লড়াই করা। পরিস্থিতি চাপে আজ সে মুম্বাই শহরের একটা পানশালার ওয়েটার। তবে সে বোধহয় বদলে যাওয়া জীবনটা নিয়ে সুখেই আছে। ওর প্রেমিকা অনিতা বার ডেন্সার, শুধু চেন সোম্কার নয়। মুখ অনবরত খিস্তি লেগে আছে। সন্দীপনের তাই আর রবীন্দ্র সঙ্গীত কেন , মান্না দে, হেমন্ত শোনা হয় না। তবুও আগের চেয়ে ভালোই 'ও' আছে। ঠিক যেমনটা দাবি করেন দেশের শাসকরা " আচ্ছে দিন আগেয়া" আর কি? 

কাজের শেষে ফ্লাটে ফেরা, মদ মাংস গান্ডে পিন্ঠে গিলে, বান্ধবীর সঙ্গে একটু যৌনতা করে, ঘুমিয়ে পারা। আবার ঘড়ির এ্যালামের চ্যাচানি শুনে ঘুম থেকে ওঠে কাজে যাওয়া। ভালোই আছে সন্দীপন। শুধু হারিয়ে গেছে বন্ধুবান্ধব পাড়ার আড্ডা, লাইব্রেরী, নাটকের রিয়েরসাল। হারিয়ে গেছে পরিবার আত্মীয় স্বজনের সাথে উৎসব অনুষ্ঠানে দেখা করা। হারিয়ে গেছে মা বাবা অহেতুক চিন্তা ভাবনা, কথায় কথায় বকা ঝকা।

সন্দীপন এর জীবনটা হঠাৎই বদলে গেলো কিন্তু সত্যি এটা জন্য ও দায়ী?? না দায়ি, আমাদের দেশের এই শাসন ব্যবস্থা। এখানে দেশ নেতা নির্বাচিত হন টাকার জোরে। তাই জিতে প্রথম লক্ষ্য বিনিয়োগ করা টাকা ফিরত পাওয়া। তাই সন্দীপন নিজের যোগ্যতায় পাওয়া চাকুরীটা পেয়েও পাওয়া হলো না। ও ১০১৫ দিন ধর্না বসে ছিল। কোটে আইনি লাড়াই করেছিলো। কিন্তু পড়ে হতাশ হয়ে মুম্বাই চলে এলো। কারণ ওর জন্য আর অপেক্ষা করতে পারলো না গীতাঞ্জলি। বিয়ে করে নিলো বাড়ির পছন্দ করা পাত্রকে।

তখন ও বুঝতে পেরেছিল পকেট শূন্য পুরুষে দের স্বপ্ন দেখায় অধিকার নেই । ওরা কোথাও শান্তি পায় না , সন্মান, না পায় প্রেমিকা থেকে আরো কয়েকটি দিন সময় ।শান্তি পায় না পরিবারের কাছে, মা বাবার কাছে ও না! না সুখ পেয়ে , সন্মান না পেয়ে, সব না পাওয়া নিয়ে জগতে এদের নিঃশব্দহীন হয়ে বাঁচতে হয়। তখন সন্দীপনদের মুখের কথাও সবার কাছে তিক্ত মনে হবে। তাই এ জগতে পকেট ভর্তি টাকাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হয়। তাই মুম্বাই চলে এলো কাজের সন্ধানে।


মুম্বাই ওকে হতাশ করে নি। তবু মুম্বাই ওর সব কিছু ওর কাছে নকল মনে হয়। ও অভিনয় চলেছে ভালো থাকার। ও ওর প্রেমিকা সত্যি ভালো বাসে কিনা জানে না! অনিতা মুম্বাই এসেছিল মাডেল হতে, অভিনেত্রী হতে। কিন্তু বার এর ওর শয্যা সঙ্গিনী হয়েও কিছু সুবিধা করতে পারেনি। তারপর এখন বার ডেন্সার হয়েছে।হিসাবে মতো এমন বাজারি মেয়েদের ঘৃণা করে সন্দীপন। কিন্তু সন্দীপন ওকে ভালোবাসার অভিনয় করতেই হয়। কারণ মুম্বাই মতো শহরে ঘর ভাড়া দিয়ে থাকলে। ও কখনোই ওর ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা পয়সা জমাতে পারবে না। তাই একটু অভিনয় করতে হয়, মেয়েটা সব লম্পটগিরি সহ্য করতে হয় নিরবে। কারণ যে গরু দুধ দেয় তার লাথি তো খেতেই হবে।

ড্যান্স বার থেকে বেরতে আজ দেরি হয়ে গেল। সারা রাস্তায় তেরঙ্গা পতাকা ছড়াছড়ি। গাড়িতে, হাতে, মুখে , দোকানে , ছাদে , ব্যালকনিতে , কোথাও উড়েছে, কোথাও ঝুলছে পতাকা। আজ ২৬ জানুয়ারি, বছরের দুই দিন জন্য আমাদের দেশ প্রেম হুট করে বেড়ে যায়। 

দরজা খুলেতেই সারপ্রাইজ।শাড়ি পড়ছে ও। মাগুর মাছের মত ওর মসৃন পেট, গভীর নাভী, কিংবা কাপড় আবরণ থেকে বেরিয়ে আসতে চাওয়া ও সুঠাম বুক, কমলালেবুর মতো রসালো ঠোঁট, কোন কিছুই আজ ওকে আকর্ষণ করলো না। একটা নাটকীয় মোড় মতো , ও সন্দীপনকে প্রণাম করলো। তারপর সান্তন ভাবে খাঁটী বাংলায় বললো, " শুভ জন্মদিন। স্নান করে আসুন , আমি খাবার করিয়া আনিছা। তারাতারি করো আয়।"

কিছু টা ভুল ভাঙ্গা বাংলা। কিন্তু সন্দীপন বুঝতে পারলো। খাবার টেবিলে গিয়ে আরো আবাক। পূর্নিমা চাঁদ মতো সাদা ভাত। ডাল মাখানি, সন্দীপনের প্রিয় আলু ডিম সেদ্ধ মাখা,চিংড়ি মালাইকারি, আবার রুই মাছের কালিয়া। আর সবচেয়ে বড় পাওয়া গুড়ের পায়েস।

ও অদ্ভুত সুন্দর ভাবে আবার ওর ভুল ভাল বাংলায় বললো" রেষ্টুরেন্ট থেকে আনিয়াছি ভাববি না। আমি নিজেই রান্না করিয়াছি। ইউটিউব আর আপনার মা সাথে কথা বলিয়া। "

সন্দীপন চোখে জল এসে গেল , চোখের সামনে এতো বছর পরে সন্দীপনের প্রিয় বাঙালি খাবার দেখে আর " মা "শব্দটা কানে আসতে। ও সন্দীপন জড়িয়ে ধরলো । ওর চোখে জল। 

ও সন্দীপন অজান্তে, মা বাবার সাথে রোজ কথা বলতো। দূরত্ব যত হোক মা বাবার ভালোবাসা একটু কমেনি সন্দীপনের জন্য। সন্দীপন সাথে ভিডিও কলিং কথা হলো সন্দীপনের মা বাবার। ও অনুরোধ করলো ফিরে যেতে সন্দীপন দেশের বাড়ি। ব্যবসার করা জন্য ও ওর জমানো টাকা দিয়ে দিলো সন্দীপনকে ।সন্দীপন নিয়ে নিলো তবে একটাই শর্তে ও ফিরবে দেশে।ওর সাথে সন্দীপনএর বৌ হিসাবে অনিতা যেতে হবে ওকে। আর সন্দীপনের মায়ে হয়ে থাকবে সন্দীপনদের ছোট দেশের বাড়িতে।


মানব মন্ডল


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract