The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Manasi Ganguli

Thriller

4.7  

Manasi Ganguli

Thriller

এনকাউন্টার

এনকাউন্টার

4 mins
856


   দাপুটে পুলিশ অফিসার সুশান্ত পাল গুলিবিদ্ধ । অত্যন্ত সৎ ও ভদ্র মানুষটির গুলিবিদ্ধ হবার খবর ছড়িয়ে যায় নিমেষে,গুজব রটে যায় উনি মারা গেছেন বলে। কুখ্যাত মস্তান,এলাকার ডন,ন্যাড়া মিন্টে ও তার দলবলের সাথে এনকাউন্টারে আহত হন তিনি। সারাদিন ছোটাছুটির পর গিয়েছিলেন বাড়ি। স্ত্রীর সাথে বসে চা খাচ্ছিলেন। কেবল একবারই চুমুক দিয়েছেন চায়ে,ফোন বেজে উঠল ঝনঝন শব্দে। পেট্রোল পাম্পে ডাকাতির খবর এল ফোনে। আর একমুহূর্তও অপেক্ষা নয়,ছুটলেন। স্ত্রী বারবার বললেন, "চা টুকু খেয়ে যাও", কিন্তু শোনেননি তিনি। বললেন, "ডাকাতরা তো আর আমার জন্য অপেক্ষা করবে না",অতএব রইল চা খাওয়া। এমন কর্তব্যপরায়ণ পুলিশ অফিসার দীর্ঘদিন পায়নি এলাকার মানুষ। ছুটে গিয়েছিলেন ফোর্স নিয়ে। এভাবেই ছোটাছুটি করে এলাকাকে মোটামুটি ঠান্ডা করে রেখেছিলেন সুশান্ত পাল। মানুষজনও বড় শান্তিতে ছিল সেসময় তবে দুষ্কৃতিদের খুব অসুবিধা হয়ে পড়েছিল ওনার জন্য। রুজিরোজগার বন্ধ হতে বসেছে তাদের। আগে যেসব পুলিশ অফিসার এসেছিল এ তল্লাটে তাদের টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছিল এলাকার ত্রাস ন্যাড়া মিন্টে। এমন কোনো কুকাজ নেই যে সে করতে পারে না। কিন্তু যত বড় দুষ্কৃতিই হোক সে,সৎ সুশান্ত পালের সামনে দাঁড়াবার ক্ষমতা ছিল না তার,ঘুষ দেওয়া তো দূরের কথা। কি করে একটা সুযোগ পাওয়া যায়,তক্কে তক্কে ছিল ন্যাড়া মিন্টে। ন্যাড়া মিন্টের এই অদ্ভুত নামকরণের কারণ সে কখনও মাথায় চুল রাখত না,মাথা তার সর্বদা চাঁচা,ধবধবে সাদা আর মিন্টু নাম চলতিতে মিন্টে হয়ে ন্যাড়া মিন্টে নামে সে পরিচিত ছিল এলাকায়। 

    এদিকে খবর ছিল বড়বাবু থানা থেকে বাড়ি গেছেন,ওদিকে পেট্রল পাম্পে প্রচুর ক্যাশের খবর ছিল। সুযোগটা কাজে লাগাতে সময় নেয়নি সে,কতদিন চুপচাপ থাকা যায়। দল মোটামুটি রেডিই থাকে, জনাকয়েককে সাথে নিয়ে নিজেই এসেছিল গাড়ি নিয়ে। কাজ প্রায় সারা হয়ে এসেছিল,পাম্প থেকে বেরবার সময় বড়বাবু হাজির পুলিশের গাড়িতে। চলল গুলি দু তরফেই,আশপাশের মানুষজন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করল। একটা গুলি ড্রাইভারের পাশে বসা বড়বাবুর গায়ে এসে লাগল,সেই অবস্থাতেও বড়বাবু সুযোগ পেয়েই গাড়ির চাকায় গুলি করেন,নয়তো পালিয়ে যেত, থামানো যেত না। গাড়ি দাঁড়িয়ে গেল,নিমেষে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে পালাতে গেল ন্যাড়া মিন্টে কিন্তু বিধি বাম,হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ায় পালাতে পারেনি,বামাল ধরা পড়ে পুলিশের হাতে।

    এপর্যন্ত যে কাজেই গেছেন বড়বাবু,সফল হয়েই ফিরেছেন,তাই তাঁর স্ত্রী রুমার মনে কোনো অশান্তি ছিল না,এমন কতসময় খেতে বসে খাবার ছেড়ে উঠে যেতেও দেখেছে তাঁকে প্রয়োজন হলে। আগে নিজেও না খেয়ে বসে থাকত রুমা,কখনও রাত কাবার হয়ে যেত,রান্না খাবার পড়েই থাকত। সুশান্তবাবু স্ত্রীকে বুঝিয়েছেন, "পুলিশের চাকরী এমনই,তাই বলে তোমার শুধু শুধু শরীর নষ্ট করার কোনো যুক্তি নেই"। সুশান্তবাবু চায়ের কাপ ফেলে রেখে চলে গেলে রুমার খারাপ লাগে যদিও,তবু টিভিটা অন করে নিজের চা টুকু একাকীই বসে খেয়ে নেয়,এমন তো কতবারই হয়েছে। তারপর ফোনে এক বন্ধুর সঙ্গে গল্প করতে বসে। বারবার একটা অজানা নাম্বার থেকে ফোন আসছে,দেখেও গ্রাহ্য করে না রুমা। কিছু পরে ল্যান্ডলাইনের ফোনটা ঝনঝন শব্দে বেজে ওঠে। বন্ধুর ফোনটা না কেটেই,ল্যান্ডফোনের কলটা রিসিভ করে আর খানিক বাদেই চিৎকার করে ওঠে,"সে কি?উনি কোথায় এখন?" ওপারে বন্ধু কি হল,কি হল করতে থাকে,রুমার কানে আর তা পৌঁছায় না,ফোন তার হাত থেকে পড়ে গেছে মাটিতে। বিপদ বুঝে বন্ধু ছুটে আসে ঘন্টাখানেকের মধ্যে,আসতে যেটুকু সময় তার লেগেছিল। এসে দেখে বাড়ি ফাঁকা। দারোয়ানের কাছে খবর নিয়ে ছুটে যায় হসপিটালে। রুমা বন্ধুকে পেয়ে একটু ভরসা পেল,ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদল খানিক,এখানে কাছে নিজের লোক কেউ নেই,বৃদ্ধ মা-বাবা থাকেন অন্যরাজ্যে, শ্বশুরবাড়িও অন্যরাজ্যে।

    গুলি লেগে বড়বাবুর শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হয়েই চলেছিল। যদিও কাছেই নার্সিং হোম ছিল,যন্ত্রণাকাতর,ঝিমিয়ে পড়া বড়বাবুকে সেখানে ভর্তি না করিয়ে কেন যে থানায় ফেরত নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তার কোনো ব্যাখ্যা নেই ,এও হয়তো কারসাজি। পরে থানা থেকে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়,মাঝে অহেতুক কিছু মূল্যবান সময় পার হয়ে যায়। গুলি যেখানে লেগেছিল সময়মত চিকিৎসায় সুস্থ হবার সম্ভাবনা ছিল কিন্তু এত অধিক মাত্রায় রক্তক্ষরণ হওয়ায় ক'দিন যমে মানুষে টানাটানির পর মারা গেলেন তিনি।

     রুমার বন্ধু তাকে ছেড়ে যায়নি,সর্বদা থেকেছে পাশে ছায়ার মত। সব কাজ মিটে গেলে বাবামায়ের কাছে তাকে পাঠিয়েছে চোখের জল ফেলে। এদিককার সমস্ত খবর জানিয়েছে রুমাকে রোজ ফোনে। ন্যাড়া মিন্টেকে রুমা দেখেনি কোনোদিন,তার নামেই তাকে চেনে সে,সুশান্ত বাবুর মুখে বহুবার এ নাম সে শুনেছে। সে-ই যে তার স্বামীর মৃত্যুর কারণ হবে ভাবেনি কখনও রুমা।

     ন্যাড়া মিন্টের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ,ডাকাতি ও খুন,অতএব তার শাস্তিও যে তেমন জোরালো হবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তবু তাকে ছাড়ানোর জন্য তার স্ত্রী পূর্বপরিচিত উকিলবাবুর কাছে গেলে তার মারফত মিন্টে জানায় যে সে একটা গুলিও ছোঁড়ে নি। তার স্ত্রী উকিলবাবুকে বলে,"আপনি তো জানেন বাবু,আপনার কাছে সে কক্ষনো মিথ্যা কথা বলে না।" উকিলবাবু তা বিলক্ষণ জানেন আর তাই তিনি তা বিশ্বাসও করেছেন। এযাবৎ যা কিছু কুকর্ম সে করেছে,সেটা উকিলবাবুর কাছে স্বীকার করেছে,যদিও ছাড়া পেয়েছে উকিল বাবুর হাতযশে। কিন্তু এবার সে যা করেনি তার জন্য শাস্তি ভোগ করছে।

     অনেকদিনের মক্কেল উকিলবাবুর,বিনা দোষে দোষী হতে তিনি দেবেন না মিন্টেকে। অকুস্থল সরেজমিন তদন্ত করলেন,খোঁজখবর নিলেন পুলিশ অফিসারের কোথায় গুলি লেগেছিল,ওনার সাথে গাড়িতে আর কে কে ছিল ইত্যাদি। কদিন গভীর চিন্তায় মগ্ন তিনি। মেডিকেল অ্যানাটমী ঘাঁটছেন নিবিষ্টচিত্তে। ক'দিন পর যেন তিনি রহস্য উদঘাটন করতে পারলেন। অবাক বিস্ময় কপালে তার ভাঁজ পড়ল। 

     এলাকার সেন্সেশনাল কেস,আদালত কক্ষে ভিড় উপচে পড়ছে শুনানির ক'দিন। উকিলবাবু প্রমাণ করলেন যেখানে গুলি লেগে সুশান্তবাবু মারা গেছেন সে গুলি গাড়ির বাইরে থেকে কেউ ছুঁড়লে দেহের সেই অংশে লাগতে পারে না। এ গুলি করেছে গাড়িতে তার পাশে বসা সেকেন্ড অফিসার যিনি ক্রিমিনালদের সাথে হাত মিলিয়ে কিছু বাড়তি রোজগার করতেন,সুশান্তবাবুর জন্য যেটা সম্ভব হচ্ছিল না,কিন্তু ঊর্ধ্বতন হওয়ায় কিছু করতে বা বলতেও পারতেন না। এই এনকাউন্টারকে কাজে লাগিয়ে তিনি নিজের কাজ হাসিল করলেন,ভেবেছিলেন ন্যাড়া মিন্টের ওপরেই অভিযোগ চাপবে।

    কিন্তু ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। তাই সেকেন্ড অফিসার জেলের ঘানি টানলেন আর ন্যাড়া মিন্টে বেকসুর খালাশ। খুনের অভিযোগ থেকে মুক্তি তো হলই আর উকিলবাবুর হাতযশে ডাকাতির অভিযোগ থেকেও তার মুক্তি হয়েছিল। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller