Krishna Nath

Comedy Romance

4.0  

Krishna Nath

Comedy Romance

একটু সময়

একটু সময়

7 mins
393


রাত প্রায় একটা হবে । সোনালী ফুলশয্যার খাটে বসে আছে । অতিথি সব চলে গেছে ,হইচই থেমে গেছে, হঠাৎ ভাসুরের ছেলে বাবলু এসে হাজির ," কাকিমা..... কাকিমা..... জোক শুনবে ? " বলেই এক লাফে খাটের উপর উঠে বসলো ।একের পর এক জোকস শোনাতে লাগলো। কাকু এসে বলল ,"এই শয়তান ভাগ !" বলেই চ্যাংদোলা করে ঘরের বাইরে বার করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল । বাইরে থেকে বৌদিদের খুব হাসির আওয়াজ আসছিল ।শুভেন্দু বুঝল , এটা তাহলে বৌদিদের ই "চক্রান্ত"। সে নিশ্চিন্ত হয়ে খাটের কাছাকাছি যেতেই পাশের জানলাটা খুলে গেল । বাবলু চেঁচিয়ে উঠলো," কাকু , ভূত আসছে !"সঙ্গে সঙ্গে এক ঝাঁক বৌদিদের মুখ জানলা দিয়ে উঁকি মারলো ।বড় বৌদি গলা খাঁকরে সুর করে বললেন," এই তোরা সব চল , ওদের একটু নিশ্চিন্তে আরাম করতে দে , যা ধকল গেছে সারাদিন। নাও ঠাকুরপো জানলাটা বন্ধ করে নাও। নিশ্চিন্তে থাকো , আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি আর কেউ বিরক্ত করবে না, হাহাহা ......"করে জোরে জোরে হাসতে হাসতে চলে গেল ।শুভেন্দু দরাম করে জানলা বন্ধ করে দিলো।


প্রাইভেট ফার্মের চাকরী, বেশি ছুটি পাওয়া যায় না, পরেরদিনই অফিসে ছুটতে হলো শুভেন্দুকে। অফিসে পৌঁছেই দেখল বসের বেশ ফুরফুরে মেজাজ। সে ভাবল এই সুযোগ। তাকে দেখে বস বললেন," তুমি তো দেখছি আজই চলে এসেছো , ভালো... ভালো... হ্যাঁ কাল তোমার রিসেপশনের ভুরিভোজ কিন্তু চমৎকার ছিল!" শুভেন্দু বললো," আপনার ভালো লেগেছে ,যাগ্গে তাহলে সবারই ভালো লেগেছে। তো স্যার আমার এক মাসের ছুটির অ্যাপ্লিকেশন টা..... বস বললেন ,"কিসের জন্য ?"শুভেন্দু বলল," একটু ঘুরতে যেতাম ,অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ তো ...বুঝতেই পারছেন "বস বললেন ,"বলছ কি !অফিসে কত কাজ! তাছাড়া তোমার বিয়ের এক মাস আগে আমার বিয়ে হয়েছে ,আমি বস, আমারিতো আগে হানিমুনে যাওয়া উচিত !এইতো বিয়ের জন্য এক হপ্তা ছুটি নিলে, ক্যারিয়ারের কথা একটু চিন্তা করো ।"শুভেন্দু," কিন্তু স্যার ..." বস বললেন," বলছি না। তাছাড়া তোমার সামনে প্রমোশন ,একটু খাটো, তোমার মুখ দেখে তো আর তোমায় প্রমোশন দেয়া হবে না ।"


প্রমোশনের কথা শুনেই চুপ করে গেল,মুখ কাচুমাচু করে পিছন ফিরতেই বস বললেন , "অত মন খারাপ করতে হবে না, বুঝি আমিও, আমার ব্যাপারটাও দেখো ,জানোই তো সব ,প্রথম পক্ষ আমার এই চকচকে টাকে হাওয়া দিতে পারবে না বলে ডিভোর্স নিয়েছেন ।অনেক কষ্টে দ্বিতীয় পক্ষ টি লাভ করেছি। এখন হানিমুন ক্যানসেল করলে অনাসৃষ্টি কান্ড ঘটে যাবে । তাছাড়া তোমার তো এইসবে প্রথম বিয়ে, হাহাহাহা ......জাস্ট জোকিং !তোমাদের বিয়ে দীর্ঘায়ু হোক ।আমি আগে ঘুরে আসি তারপরেই তুমি লাইনে আছো ,কথা দিচ্ছি তোমাদের হানিমুনের খরচা টাও না হয় আমি বহন করব ।"শুভেন্দু বেচারি কি আর করে সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে এইটুকু সারপ্রাইজের আনন্দও দিতে পারল না।


অপরাধীর মতো ঘরে ঢুকতেই দেখে ভাইপো কাকিমাকে তার আঁকা দেখাতে ব্যস্ত ।শুভেন্দু বলল, " এই বাবলু রিংকি আসবে না পার্কে ?ওর সাথে খেলতে যা, " বাবলু বলল "ও রাগ করেছে। কাল কে একটু জোরে দোল দিয়ে ফেলেছি তো ,দোলনা থেকে পড়ে গিয়ে হাত-পা ভেঙে গেলে ওর মা বলেছেন ওর নাকি বিয়ে হবে না।" কাকু বললেন , "কেন তুই আছিস তো , তুই বিয়ে করবি না?" বাবলু বলল ,"আমি তো তাই বললাম, রিংকি বলল যা !হাত পা ভাঙ্গা মেয়েকে কেউ বিয়ে করে নাকি ,বলে রাগ করে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে গেল ।ও ভীষণ রেগে গেছে।" শুভেন্দু কুড়ি টাকা বাবলুর হাতে দিয়ে বলল "যা পার্কের বেঞ্চিতে বসে চিপস খেতে খেতে রিংকির রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করগে ।"বাবলু বেরিয়ে যেতেই শুভেন্দু সোনালীকে নিয়ে ছাদে চলে গেল ।শুভেন্দুর মনটা বেশ খারাপ ।সোনালী বলল , "তোমাদের ছাদটা বেশ বড় তো ,বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়া বইছে।" শুভেন্দু কিছু বলতে যাবে, অমনি চিলেকোঠার পাঁচিলের আড়াল থেকে বাবার কাশির শব্দে সব ভেস্তে গেল ।বাবা শুভেন্দুর দিকে তাকিয়ে বললেন," শুভেন্দু ,বৌমা কে নিয়ে হাওয়া খেতে এসেছিস। তোরা বসনা , আমি অন্ধ আমার দু চোখে ছানি পড়েছে আমি কিছুই ঠাহর করতে পারিনা। আচ্ছা সামনের ওই গাছে একটা টিয়া পাখি বসে আছে বলে মনে হচ্ছে না ?টিয়া পাখি আর দেখাই যায় না ।"শুভেন্দু ভালো করে তাকিয়ে দেখে ,সত্যিই তো একটা টিয়া পাখি বসে আছে ।বাবাকে বললো, " এই যে তুমি বললে তোমার দু চোখে ছানি পড়েছে কিছু দেখতে পাও না ।"বাবা বললেন ,"ওই আবছা আবছা আর কি.... তোরা বসে গল্প কর না ! কান রেডিও টাও ভুলে নিচে ফেলে এসেছি।" শুভেন্দু বলল," এইতো আমার সব কথাই তো শুনতে পাচ্ছ," "না তুই রেগে গিয়ে জোরে জোরে কথা বলছিস তো তাই" বাবা বললেন।" আচ্ছা এই অসময়ে দূরে কোথায় মহালয়া বাজছে বলতো, এটা ফাগুন মাস না। এতক্ষণ শুভেন্দু খেয়াল করেনি , হ্যাঁ সত্যিই তো খুব আস্তে আস্তে মহালয়ার গান শোনা যাচ্ছে ।সে ভীষণ রেগে গিয়ে বাবাকে নিচে যেতে বলল ।আর তখনই পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে সোনালী কখন লজ্জায় নিচে চলে গেছে।


এই ভাবেই শুভেন্দুর বিয়ের পরের মিষ্টি দিনগুলো গেরোর ফেরের মত কাটতে লাগল। সোনালী খুব ভালো মেয়ে, ওর তরফ থেকে কোনো সমস্যা নেই। শুভেন্দু যতই ভাবে নতুন বউকে নিয়ে একটু নিরিবিলিতে সময় কাটাবে ততই যেন আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব দুষ্টু গ্রহের মতো আবির্ভূত হয়ে যায় তার জীবনে।


দিন চারেক পর দাদা তার ঘরে এসে হাজির ,শুভেন্দু অবাক ,দাদা তো বড় একটা তার ঘরে আসেনা, তার উপর ঘরে ভাইয়ের বউ রয়েছে। দাদা এসেই কোন ভনিতা না করে শুরু করে দিলেন , "শুভেন্দু একটা অনুরোধ নিয়ে তোর কাছে এসেছি ,দেখ তুই তো জানিস বিয়ের পরে আমাদের কোথাও যাওয়া হয়নি , বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ছেলেটা হলো ।তাই তোর বউদি বলছিল যদি ছেলেটাকে তোদের কাছে ক'দিনের জন্য রাখিস , তো আমরা মিঞা বিবি তে একটু বেরিয়ে আসতে পারি,বেশি নয় এই দিন 15 একটু ছেলেটার দুষ্টুমি সহ্য করতে হবে। না বলিস না ভাই প্লিজ!" শুভেন্দু কি বলবে ভাবছিল ।সোনালী হঠাৎ করে বলে উঠলো ,"হ্যাঁ! হ্যাঁ! দাদা আপনারা ঘুরে আসুন, আপনার ভাই অফিস চলে গেলে আমি তো একাই থাকি, বাবলু থাকলে বরং আমার সময় কেটে যাবে ।"শুভেন্দু ভেতরে ভেতরে গজরাতে লাগল। দাদা বললেন," বৌমা বাঁচালে, তোমার বড়দি শুনে খুশি হবে। ও একটু দ্বিধা করছিল ।পরশুদিনের ট্রেন ।যাই ওকে গোজগাজ করতে বলি ।"শুভেন্দু প্রচন্ডভাবে রাগ সামলে নিয়ে বলল , "দাদা সব ফাইনাল করে টিকিট ফিকিট কেটে তবে এসেছো ।" দাদা বললেন, " হ্যাঁ! আমি জানি সোনালী খুব ভালো মেয়ে ,তোর মত আহাম্মক নয় ,যাই তাহলে, বৌমা ভালো থেকো !এই আহাম্মক !বউকে নিয়ে কোথাও একটু ঘুরে আসতে পারিস না ,জানো বৌমা, ভাইটা আমার ঘরকুনোই রয়ে গেল ।" শুভেন্দুর মুখটা লাল হয়ে গেল। কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে আর কাকে বলে! সোনালী অবাক হয়ে বলল ,"এই তুমি এত ঘামছো কেন?" শুভেন্দু বললো , "ও কিছুনা। বড্ড গরম পড়েছে তো ।ফ্যানের রেগুলেটর যদি 5 নম্বরের পর 6 নম্বরে কোন ফুল স্পিড থাকে , তো চালিয়ে দিতে পারো। " সোনালী বলল , "ওমা ! কোন ফ্যানে আবার 6 নম্বর রেগুলেটর হয় নাকি !"


"এই জানো আমার সুকুমার কাকু আর শুক্লা মাসি পই পই করে আমায় বলে দিয়েছিলেন, বিয়ের পরের দিন গুলো যদি মনের মধ্যে সোনা দিয়ে মুড়ে রাখতে পারিস ,তবে বুড়ো বয়সে ঘনঘন দীর্ঘশ্বাস ফেলার কোনো সুযোগ ই থাকবে না, দিনগুলো সব সুখস্মৃতি হয়ে মনে গেঁথে থাকবে ।"


শুভেন্দু বললো ,"এরা আবার কারা?" সোনালী বলল,"ও হ্যাঁ ! তুমি তো জানো না, এদের দুজনের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু শুক্লা মাসির রাক্ষসগণ আর সুকুমার কাকুর নরগণ হওয়ায় বিয়ে ভেঙে যায়। বিধাতা, বিয়ের বন্ধনে না বাঁধলেও, কাকু আর মাসি মনে মনে কিন্তু এক হয়ে গেছে,দুজনেই চাকরি করেন প্রায় তারা একসাথে গঙ্গার ধারে বেড়াতে যান, সিনেমা দেখতে যান ,হোটেলে খেতে যান ।"


সিনেমা আর হোটেলের কথা শুনেই শুভেন্দুর মনটা নেচে উঠলো। " এই সোনালী ,কাল রোববার! চলো আমরা একটা সিনেমা দেখে আসি, তারপর হোটেলে খাওয়া-দাওয়া, করে বাড়ি ফিরবো," সোনালী বলল, "খুব ভালো হবে চলো!"


রোববার শুভেন্দু বেশ বেলা করে বিছানা ছাড়লো, মনটা বেশ খুশি খুশি লাগছে ।আজ নতুন বউকে নিয়ে অনেকটা সময় আলাদা থাকা যাবে। দুপুরে খাওয়ার টেবিলে বৌদি কি একটা সারপ্রাইজ দেবে বলেছিল ।শুভেন্দু খেতে খেতে বলল," বাঃ! বৌদি মাংসটা বেশ ভালো হয়েছে, যদিও তুমি চিরকালই মাংস ভালই রান্না করো।" নিজের প্রশংসা শুনে বৌদি আরো দু পিস মাংস শুভেন্দুর পাতে দিয়ে বললেন," হ্যাঁ !আজকের সারপ্রাইজ হচ্ছে, নাইট শিফটে আমরা সবাই মিলে সিনেমা দেখতে যাব, সমস্ত খরচ আমি দেব ।অ্যাডভান্স টিকিট কাটা হয়ে গেছে।" শেষের কথাগুলো যেন শুভেন্দু শুনতে পেলো না, চোখে অন্ধকার দেখতে লাগলো ,রাগে-দুঃখে বৌদির স্নেহভরা দু পিস মাংস তার আর খাওয়া হলো না। সে মনে মনে বলল ,"হে ভগবান !আমার সাথেই কেন এমন হয় ?লেখাপড়ায় আমি সব সময় টপ করে এসেছি ,ছোটবেলায় আমি কোনদিন কোন দিকে তাকাইনি, শুধু ঘাড় গুঁজে পড়াশোনা করেছি ,এই ভেবে যে ভবিষ্যতে আমি যা চাইবো তাই করবো, ফলে বেশি বন্ধু রাখিনি, মেয়ে বন্ধু তো দূরের কথা। তো এখন আমি আমার বউয়ের সাথে একটু মিষ্টি সময় কাটানোর ইচ্ছাও রাখতে পারিনা ?আমারও তো ইচ্ছে করে হাতে হাত রেখে, চোখে চোখ রেখে কথা বলতে....." বাবলু হঠাৎ বলে বসল ,"কি হয়েছে কাকু মুখ চোখ এমনি লাগছে কেন ,শরীর খারাপ নাকি? বমি পাচ্ছে ?"কাকু বলল ,"চুপ করতো !"বলেই তেরে মেরে উঠে গেল।


দাদা বললো," কি জানি ছেলেটার কি হয়েছে, আজকাল কেন এত গোমড়া মুখে থাকে জানিনা।" বৌদি বললো," নাগো ওর মনে হয় পেট খারাপ হয়ে গেছে। দুপুরের খাবারটা এত রিচ হয়েছিল!আর বেলা করে লুচি টাও তো খেয়েছে, হজম হয় নাকি? যাক, আজকে তাহলে প্রোগ্রামটা থাকুক, পরে হবে"। সোনালী বলল," না না! বড়দি আমি আছিতো ।তোমরা যাও, বাবাও তো বাইরে যাননা আর বাবলুরওতো পরীক্ষা এসে যাবে ,একটু মজা করে নিতে দাও ।"বৌদি বলল," ঠিক আছে ছোট ,তুমি যখন বলছো, দেখো বাপু ,ছেলেটার যে কি হলো..."


দুপুরের ঘুম ভাঙতেই শুভেন্দু দেখে ঘরে কেউ নেই। ঘরে কেন বাড়িতেই কেউ নেই ,সবাই চলে গেছে মনে হয় সোনালীও চলে গেছে ।" আমার কপালে মনে হয় বলদের মতো খাটাই লেখা আছে । কেউ আমাকে একটু ডাকলোও না। বললও না ।আমার ব্যাপারে কেউ ভাবেই না।" ভাবতে-ভাবতে ঘরের মধ্যে একটা সুগন্ধ পেলো ,দেখে সোনালী লাল শাড়ি পড়ে ,চুল এলো করে ,হাতে চা নিয়ে বলল ,"এনাও দুপুরের চা।" বলে শুভেন্দুর সামনে বসল ।শুভেন্দু অবাক হয়ে বলল," সোনালী তুমি যাওনি! তোমাকে ভারী মিষ্টি লাগছে দেখতে ...." সোনালী বলল "হু..."


এইভাবে দুজনে একটু মিষ্টি সময় পেল।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy