Srijani Nath

Children Stories Classics Thriller

4.0  

Srijani Nath

Children Stories Classics Thriller

দক্ষিন রায় - শারদ সংখ্যা

দক্ষিন রায় - শারদ সংখ্যা

3 mins
271



মুখার্জী বাগানের এইদিকটা কদবেলতলা নামে পরিচিত । বাবার কাছে শুনেছি এককালে এখানে প্রচুর কদবেল গাছের বাগান ছিলো ।না, বাগান ঠিক নয়!জঙ্গল বললেই হয় ভালো । ষাটের দশকে নাকি বাঘের রাজত্ব ছিলো এই জঙ্গল ।এই জঙ্গলের দক্ষিন-পশ্চিম দিকে প্রায় দুশো বছরের পুরনো মুখার্জীদের জমিদারবাড়ি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহীর ধ্বংসাবশেষ নিয়ে বিনা সংস্কারে প্রায় জনমানবশূন্য হয়ে কোনমতে জমিদারি আভিজাত্যে বিরাজ করছে ।

ওরই পূর্ব দিকের খানিকটা অংশ প্রায় সত্তর বছর আগে আমার দাদু কিনেছিলেন ।তখন থেকেই আমাদের পরিবার এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা।


জমিদারবাড়ি আর জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে একটা সরু কাঁচা রাস্তা দিয়ে বাবা ডিউটি যেতেন।জমিদারবাড়ির উল্টো দিকে জঙ্গল ঘেঁষে ওদেরই বিশাল এক গোয়ালবাড়ি ছিলো ।খানিকটা এগোতেই আর এক অভিজাত বাড়ির পেছন দিকের বিশাল জঙ্গল, নাম "গোদাবরী বাগান "।সুতরাং লম্বা রাস্তার বেশ কয়েক মাইল নির্জন, কোনো বসত বাড়ি নেই ।


১৯৭১ সালে রাতের অন্ধকারে টিম টিমে স্ট্রিট ল্যাম্পই একমাত্র আলোর উৎস ।


বাবার প্রায়ই নাইট ডিউটি চলত । নির্জন কাঁচা রাস্তার খানা-গর্ত বাবার নখদর্পণে ছিলো ।সাইকেলের লাইটেই বাবা মোটামুটি স্বচ্ছন্দেই এবড়োখেবড়ো রাস্তায় যাতায়াত করতে অভ্যস্ত ছিলেন ।


কিছুদিন আগেই গঙ্গার ধারে কুমোর পাড়ার লোকেরা কদবেলতলায় বাঘের মতো কিছু দেখে খুবই হৈচৈ করেছিল , কেউ কেউ তো নাকি বাঘের গর্জন শুনতে পেয়েছে । এই অবস্থায় গঙ্গার ধার থেকে ওলাইচণ্ডীতলা, রায় বাজার, কোদালিয়া পর্যন্ত বিশাল এলাকা একদম থমথমে হয়ে আছে । ডিসেম্বরের শেষ, সন্ধ্যা ছটার মধ্যে রাস্তা-ঘাট জনমানব শূন্য, ঝি- ঝি পোকা ডাকছে, ঠাণ্ডাটাকে বাড়ানোর জন্য কেন জানিনা অসময়ে বরফ্গলা জলের মত এক্পশলা বৃষ্টি হয়ে গেলো ।

এখনও ঝির ঝির করে ঝরে চলেছে বৃষ্টি ।বাবাকে রাত নটায় বেরতে হবে, নাইট ডিউটি আছে।


প্রচন্ড ঠান্ডা পরেছে। ওভার কোট আর হাতমোজা লাগিয়ে বাবা ভাবছেন রেনকোট লাগাতে হবে কিনা । না, আকাশ পরিস্কার, একটা দুটো তারাও দেখা যাচ্ছে কিন্তু চাঁদ নেই আকাশে।জানিনা আজ কি তিথি, চাঁদ বোধহয় আরো দেরি তে দেখা দেবে ।


বাবা রোজকারের মতো আজও সাইকেলে প্যাডেল করে রওনা হলেন । মা দোর গোড়ায় দাড়িয়ে দুগ্গা-দুগ্গা বোলে "সাবধানে যবে!" বলে বাবাকে বিদায় জানালেন।

বাবা খানিকটা এগোতেই জমিদার বাড়ির বিশাল সেগুন কাঠের বন্ধ দরজার সামনে পৌঁছে গেলেন । দরজার ঠিক বিপরীতে জঙ্গলের গা ঘেষে মিউনিসিপ্যালিটির লাইট-পোস্টে টিম- টিম করে একটা বাল্ব জ্বলছে । গোয়াল বাড়িতে গরুগুলোকে মশার কামড় থেকে বাঁচানোর জন্য রামেশ্বর রাখাল ঘুঁটের ধোঁয়া জ্বালিয়েছে ।

হাপানীর জন্য বাবা ধোঁয়া একদম সহ্য করতে পারেন না । তাই বাবা বিরক্ত হয়ে গোয়াল বাড়ির দিকে তাকাতে তাকাতে সাইকেল চলাচ্ছেন । হটাত গোয়াল বাড়ির দেওয়াল ঘেঁষে দুটো জ্বল জ্বলে চোখ দেখতে পেলেন । বাবা সাইকেলের স্পিড একটু বাড়িয়ে দিলেন। ধোঁয়ার জন্য বাবার খুব কাশি শুরু হয়ে গেল ।

খানিকটা এগিয়ে বাবা দাড়িয়ে পড়লেন। বৃটিশ-আমলের বাঙালি,সহজে ভয় পাওয়ার মানুষ নন বাবা। কি মনে হলো বাবা ব্যাক করলেন। জঙ্গল পেরিয়ে আমাদের দরজা পর্যন্ত এলেন। তখনো আমাদের বাড়িতে ইলেকট্রিসিটি আসেনি । আমরা হ্যারিকেনের আলোতেই পড়াশোনা করেছি।


বাবা দরজায় নক না করেই আবার রওনা হলেন ফ্যাক্টরীর দিকে। জঙ্গলের কাছা কাছি আসতেই আবার স্ট্রিট ল্যাম্প আর সাইকেলএর আলোয় একই পজিশনে দুটো জ্বল জ্বলে চোখ জ্বলে উঠতে দেখলেন । জঙ্গল পেরিয়ে গোয়াল বাড়ি পর্যন্ত জেতেই বাবার কাশি আসছিল কিন্তু কাশি চাপবার চেস্টা করলেন,হটাত গোয়াল বাড়ির দেওয়ালের দিকে নজর জেতেই ভোজবাজির মতো জ্বল জ্বলে চোখ দুটো উধাও !!!! বাবা ভাবলেন, "এ আবার কি ভুতুড়ে কারবার!"

কি মনে হলো, বাবা খানিকক্ষণ লাইট পোস্টের নিচে দাঁড়ালেন । একটু পরে জমিদার বাড়ির সামনে সাইকেলটা রেখে টর্চটা হাতে নিয়ে ধীরে ধীরে এগোলেন চোখ দুটির দিকে। টর্চের আলায় চোখ দুটো আরো জ্বলজ্বল করে উঠল। বাবা খানিকটা পিছিয়ে এলেন। বেশ খানিকক্ষণ চোখ দুটোর ওপর টর্চের আলো ফেলে রাখলেন। তারপর দৃঢ় ভাবে ঝোপঝাড় মাড়িয়ে খানিকটা এগোতেই ছোট একটা ঝোপে আটকে থাকা কাচের টুকরো দুটো খসে পরলো নিচে। টর্চের জোড়ালো আলো তখনো জ্বলছে। বাবা নিচু হয়ে কাচের টুকরো দুটো হাতে তুলে নিয়ে পিছন দিকে তাকালেন । ল্যাম্প পোস্টের আলো পরে এই ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করেছিল ।


বৃষ্টি ধোয়া কাচের টুকরো দুটো দেখে বাবা ভেবেই নিয়েছিলেন আজ নির্ঘাত "দক্ষিন রায়"-এর সাক্ষাত মিলবে।


Rate this content
Log in