Debanshu Bera

Abstract Drama Romance

2.3  

Debanshu Bera

Abstract Drama Romance

একটা সাধারণ ছেলের গল্প....😊

একটা সাধারণ ছেলের গল্প....😊

3 mins
11.3K


​প্রিয় জায়গায় সে একা একা বসে আছে। অনেকদিন হল এই জায়গায় একা একা বসতে চেয়েও বসা হয় না। আগে খুব করে আসত সে এখানে - প্রেমিকার মুখের মিষ্টি হাসি, কোলে শুয়ে বাদাম খাওয়া, সুন্দরী মেয়ে দেখলে বন্ধুদের কারো মুখ থেকে মৃদু আওয়াজে ‘দেখ মেয়েটা খুব সুন্দর’ কথাটা শোনা।

একি, দিবাংশু হাসছে! হ্যাঁ, সেই ​কথাগুলো মনে পড়তেই দিবাংশুর ঠোঁটের কোনায় হাসি দেখা দিল। অনেক দিন হয়ে গেছে দিবাংশুর মুখে এমন হাসি কেউ দেখেনি। দেখবেই বা কিভাবে - দিবাংশু সেই যে কবে হাসি ঠাট্টা ভুলে গেছে তা আর কে জানে!

​কিছুদিন হল সে টেনালি থেকে এসেছে। টেনালি থেকে আসার পরে বাড়িতে বসে থাকে। আগের মত কাজের জন্য সে বাড়ি থেকে বের হয় না। এই আজ ওই প্রিয় জায়গাটায় এসেছে, এটাই টেনালি থেকে ফিরে প্রথম বাড়ির বাইরে বের হওয়া। মোবাইলটা এতদিন বন্ধ ছিল। আজ সে মোবাইলটি সাথে করে এই জায়গাটায় নিয়ে এসেছে। মোবাইলের সুইচ অন করার তীব্র ইচ্ছে হচ্ছে; ইচ্ছে করছে অনুকে একটা কল করতে। না, মোবাইল অন করে সে আর সেই সাহস বুকে সঞ্চারিত করতে পারেনি। হ্যা, এই ​সেই মেয়ে যার কোলে শুয়ে দিবাংশু প্ৰায়েই বাদাম খেত, চুলের সুবাস গায়ে জড়াত।

এই কথা ভাবতে ভাবতেই দিবাংশুর চেহারাটা মলিন হয়ে গেছে। অনেক সুন্দর চেহারা ছিলো ওর; নেশায় আসক্ত হয়ে সবটাই নেশা খেয়ে নিয়েছে। এমনকি অনুর সেই চিরচেনা রৌণকের মুখটাও। তাইতো এখন মনে হয় অনু ওকে চিনতেই পারে না। তা না হলে এমন প্রেম কি কেউ ​ভুলতে পারে!

​নাহ!! টেনালি থেকে আসার পরে একটাও সিগারেট খাওয়া হয়নি। দিবাংশু ভেবেছিল আর সিগারেট খাবে না কখনো। কিন্তু অনুর কথা মনে পড়তেই সিগেরেটটা কেমন যেন সেডেটিভের মত লাগছে এখন। এই অনুর জন্যই তো দিবাংশুর সিগারেটের ​হাতেখড়ি। দিবাংশু ওকে প্রেম নিবেদন করল, অনু সরাসরি না বলে দিল। সেই দুঃখেই তো ও প্রথম সিগারেটে টান দিল। এখনও হাতে সিগারেট ​পুড়ছে দিবাংশুর আনন্দ দেওয়ার নিমিত্তে।

অনু অবশ্য এই সিগারেট খাওয়াটা পছন্দ করত। ​তবে সিগারেটের অন্তরালে এত নেশায় আসক্ত যে দিবাংশু, সেই দিবাংশুকে অনু দেখতে পায় টেনালি যাওয়ার কিছুদিন আগে। মনে মনে আজ সন্তুর সেই কথা দুটো মনে পড়ছে দিবাংশুর - ​"যে সিগারেট খেতে পারে সে সব কিছুই খেতে পারে, আর যে মিথ্যা কথা বলতে পারে সে সব পাপই করতে পারে।"

সন্তু হচ্ছে অনুর এক ফ্রেন্ড। সেই সুত্রে দিবাংশুর সাথেও ভালোই সখ্যতা ছিলো।

সিগারেটটা হাত থেকে ফেলেই ঘুরে তাকিয়ে দেখল কিছু পিচ্চি-পিচ্চি টোকাই ছেলেরা মানুষের খাওয়া সিগারেট মাটি থেকে তুলে আবার ধরিয়ে টানছে। এই দৃশ্য দেখে দিবাংশুর সেই ছোটবেলার একটা কথা মনে পড়ে গেল। তখন সে খুব দুষ্টু ছিল, একটা পিচ্চি ছেলের মাথায় পাটকেল ছুঁড়ে মাথা ফাটিয়ে আর বাড়ি আসে না। দিবাংশুর ঠাম্মা ওকে খোঁজার জন্য রাস্তায় গিয়ে দেখে দিবাংশু ​রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছে। ঠাম্মাকে দেখেই সে কি দৌড়! তার ঠাম্মা সাথে সাথে দৌড়াচ্ছে। পথে একটা মাঝ বয়সী লোক সিগারেট খেতে খেতে যাচ্ছিল। অর্ধেক সিগারেট খাওয়া হলে সে সিগারেটটা ফেলে দেয়; তখন দিবাংশু দৌড়ানো অবস্থায় সেই সিগারেট তুলে টান দিতেই সে কি কাশি! তখন আর দিবাংশুর বয়স কত? চার কি পাঁচ।

হা হা হা!! দিবাংশু এই কথা মনে করে একটু উচ্চস্বরেই হেসে উঠল। প্রিয় জায়গাটার আশেপাশে তাকিয়ে দেখছে কেউ আবার তার দিকে তাকিয়ে দেখছে কিনা। আবারও সে ভাবনা জগতে প্রবেশ করল। স্কুল শেষ, কলেজে উঠেই সিগারেট খাওয়া নিয়মিত হল। 15th মার্চ বন্ধুদের সাথে গাঁজা খাওয়া। তখন অবশ্য সে বলেছিল এই প্রথম এই শেষ। কিন্তু তার বন্ধুরা বলেছিল দিবাংশু নাকি গাঁজা খেয়ে মাতাল ​হয়নি, তাই সে গাঁজার আসল মজা পায়নি। এইজন্য দিবাংশু আবারও একদিন গাঁজা টেষ্ট করতে ইচ্ছা পোষণ করল। এর পর থেকে নিয়মিত গাঁজা খাওয়াও শুরু হল। তখন সময়টা আধুনিক আধুনিক টাইপের ছিলো। তাই কোনও অকেশন হলেই দিবাংশু ও তার বন্ধুরা মিলে সেই অকেশনটা বোতল খুলে উদযাপন করত। এভাবে অক​প্রফেশন হল, সেটা দিবাংশুও বুঝতে পারেনি।

এভাবেই বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে একসময় ড্রিংক শুরু করল। এরপর থেকে বাড়িতে নানান ঝামেলা শুরু হল। এক পর্যায়ে দিবাংশুকে বকাবকি করাই থামিয়ে দিল বাড়ির লোকে। কারণ কোনও লাভ নাই বকাবকি করে, যাচ্ছেতাই!! বাড়ি থেকে ঠিক করা হল ওকে টেনালি পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ততক্ষণে অবশ্য অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। অনু এরমধ্যে দিবাংশুকে ছেড়ে দিয়েছে। অবশ্য দিবাংশুর খুব ইচ্ছা ছিল টেনালি থেকে ফিরে নতুন করে আবার সব শুরু করার, কিন্তু...


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract