Debanshu Bera

Drama Romance

2.4  

Debanshu Bera

Drama Romance

~নতুন ভাবে ফিরে পাওয়া~

~নতুন ভাবে ফিরে পাওয়া~

5 mins
17.5K


রাত কয়টা জানি না। সম্ভবত গভীর রাত হবে। সময় দেখার জন্য ফোনটা আছে কিন্তু সময়টা দেখবার মানসিকতা নেই। এই গভীর রাতে একা বসে আছি সমুদ্রের নীরব মাঝখানে। এটা এক ধরনের অভ্যাস। এখন প্রতিটা রাত এই রকম একা একা বসে থাকি, কখনও বা মধ্য রাত কখনও বা রাতের শেষ পর্যন্ত। গভীর রাতে নীরব সমুদ্র। বসে থাকতে খুব ভালো লাগে। এক সময় এই অভ্যাসটা ছিল না। এই অভ্যাসটা হয়েছে প্রায় এক বছর এর মতো হবে। এক জনের জন্য এই অভ্যাসটা হয়েছে। নিজের কষ্ট গুলো রাতের নীরবতার মাঝে ছড়িয়ে দিতে খুব ভালো লাগে। মনে হয় কষ্ট গুলো একটু কমেছে। আমার কষ্ট গুলো বিভিন্ন জিনিসের সাথে শেয়ার করি। কখন রাতের আকাশে চাঁদের সাথে শেয়ার করি, আবার কখনও রাতের নীরব তারকা গুলোর সাথে শেয়ার করি। মাঝে মধ্যে বৃষ্টির সাথেও শেয়ার করি আমার কষ্ট গুলো।

চাঁদের আলো নিচে জাহাজের উপর বসে আছি। মাঝে মাঝে কয়েকটা জাহাজ আমাদের জাহাজকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো, নাম্বারটা অচেনা, কণ্ঠিতবোধ হয়ে ফোনটা ধরলাম। কেউ একজন মেয়েলি কন্ঠে বলল ‘ এই Deb কেমন আছো?’। এটা শুনে মনটা অস্থির হয়ে গেল। এই নামটা শুধু একজনি ডাকত। কিন্তু সে মানুষটা তো এখন আর নেই, আমাকে ছেড়ে চলে গেছে প্রায় এক বছর আগে। মানুষটিকে আমি খুব ভালোবাসতাম এমনকি এখনও বাসি। কিন্তু সেই মেয়েটি আমাকে ভালোবাসে নি। শুধু আমার সাথে কিছুক্ষণ সময় ব্যয় করেছে। কিন্তু সেই মানুষটি এখন আবার ফিরে আসবে কেন?

আজ থেকে কয়েকবছর আগের কথা। আমি আর রাজীব ছিলাম খুব ভালো একজন বন্ধু। তার সাথে পরিচয় হয় স্কুলে। পঞ্চম শ্রেণীতে প্রথম দিনেই তার সাথে আমার পরিচয় হয়।ওই তবে থেকে আমাদের খুব ভালো বন্ধুত্ব। ওই ভাবে সময় কাটতে কাটতে অনেকটা বছর কেটে গেলো।

তারপর মাধ্যমিকের পর দুইজন একই ভূগোল টুইশানে ভর্তি হলাম।

ভূগোল টুইশানে প্রথম দিনই একটা মেয়ে পিছন থেকে বললো

সুশান্ত স্যারের টুইশানটা কোথায়?

আর মেয়েটা আমাকে বলল,

– এই তোমার নাম কী…?

আমি মেয়েটির দিকে তাকালাম। দেখি মেয়েটির মুখটা শীতের চাদর দিয়ে ঢাকা, সে জন্য তার মুখটি দেখতে পারছি না কিন্তু তার চোখ দুটি দেখতে পারছি অসাধারণ সুন্দর তার চোখ দুটি। আমি মনে হয় এমন সুন্দর চোখ প্রথম দেখলাম।

– হুম সুশান্ত স্যারের টুইশান এই উপরে, আর আমার নামটা দিবাংশু বেরা। আপনার..?(আমি)

– আমার নাম অনুপমা। আর শুন আমি তোমার ক্লাসমেট সো তুমি করে ডাকবে, আর তোমার নামটা বেশ বড় আমি তোমাকে Deb বলে ডাকব কেমন। (মেয়েটি)

– হুম আচ্ছা…।(আমি)

সেদিন মেয়েটির সাথে অনেক কথা হয়। কথার মাঝখানে মেয়েটি আমার ফেসবুক আইডি নিয়ে নিল। আমিও দিয়ে দিলাম। সেদিন টুইশান শেষ করে বাড়ি চলে আসলাম।

এরপর থেকে অনুপমার সাথে সবসময় কথা হতো। এক সময় আমাদের এই পরিচয়টা ভালো বন্ধুত্বে রুপ নেই। এই বন্ধুত্বের সম্পর্কটা বেশী দিন স্থায়ি হল না। আমি এক সময় অনুপমার চোখ দুটি প্রেমে পড়ে যায়। জানি না অনুপমা আমাকে ভালোবাসে কী না। তবে ওর চোখের দিকে তাকালে আমি একটি লেখা দেখতে পারি সেই লেখাটা হলো ভালোবাসি। তবে কাকে ভালোবাসে সেটা লেখা নেই। তাই আমি জানি না। আমি একদিন অনুপমাকে বললাম,

বলতে অবশ্য প্রায় একটা বছর লেগে গিয়েছিলো।

– অনু তোমাকে একটা কথা বলবো, জানি না কথাটা তুমি কী ভাবে নেবে। তবে কথাটা আমাকে বলতেই হবে না বলে থাকতে পারছি না। তোমার চোখ দুটি যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিনই সেই চোখ দুটির প্রেমে পড়ে যায়, কিন্তু সেটা বুঝতে একটু দেরী হয়েছে, কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আমার তোমার চোখদুটির প্রেমে তো পড়েছি সাথে সাথে তোমার মনটারও প্রেমে পড়েছি, অনু আমি তোমাকে ভালোবাসি।

ভেবেছিলাম অনুপমা আমাকে ভালোবাসবে না, কিন্তু সেদিন অনুপমা আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার ভালোবাসাটা গ্রহণ করে নিল। সেই দিন থেকেই আমাদের বন্ধুত্বটা ভালোবাসা নামক অনুভূতি গুলোতে রুপ নেয়। শুরু হয় আমাদের নতুন ভালোবাসাময় জীবন। কিন্তু এই জীবনটাও বেশি সময় স্থায়ী হলো না। কথায় আছে না পৃথিবীর কোন জিনিস স্থায়ী না।

আমাদের সম্পর্কের প্রায় দুই বছর পর অনু আমাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য আরেকটা ছেলের সাথে চলে যায়। ও যেদিন কথাগুলো আমাকে বলল সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। ভালোবাসা হারানোর কষ্টটা কিন্তু অন্য রকম। সেদিন আমার চোখ দিয়ে শুধু জল গড়িয়ে পড়েছিল। আমি শুধু অনুর কথাগুলো শুনেছিলাম, কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছি।

সেদিন থেকেই শুরু হয় আমার কষ্টময় জীবন। অবশ্য কষ্টগুলো এখন কিছুটা ভুলতে শুরু করেছি। কিন্তু এই নামটা শুনার পর আবার কষ্ট গুলো নতুন ভাবে ফিরে আসল। আমি বললাম আপনি কে বলছেন? অনু আমার কন্ঠস্বর বুঝতে পারলে না। আমি একটি থমকে গিয়ে বললাম তোমার কণ্ঠস্বর বুঝতে পারলেও বিশ্বাস করতে পারিনি।

– কী ব্যাপার এতো রাতে আমাকে ফোন করলে..?(আমি)

– প্লীজ আমাকে মাপ করে দাও….(অনু)

– মাপ তো সেদিনই করে দিয়েছি যেদিন আমাকে ছেড়ে চলে গেছ এখন আবার কেন ফোন করলে..?(আমি)

– আমি আবার তোমার জীবনে ফিরে আসতে চাই…।(অনু)

কথাটা শুনে আমি চুপ থাকলাম। কিছুক্ষন পর ভারী ভারী কণ্ঠস্বরে বললাম চোখদুটি অশ্রুসিক্ত হয়ে আছে কিন্তু আমার কিছু করার নেই।

– দুঃখিত আমি আর তোমার জীবনে যেতে চাই না… আমাকে যার জন্য ছেড়ে গেলে তার জীবনে যাও আমার এই কষ্টময় নোংরা জীবনে তুমি আর এসোনা..।(আমি)

– আমার ভুল হয়ে গেছে তোমাকে কষ্ট দিয়ে। আমি বুঝতে পারি নি কার ভালোবাসা কতটা সত্যি। তোমাকে ছেড়ে চলে যাবার পর আমার বুঝতে পেরেছি তুমিই আমার সত্যি কারের ভালোবাসতে। আমি তখন শুধু তোমাকেই মিস করেছে, যেখানে যায় সেখানেই শুধু তোমার কথা মনে পড়ে। তাই আমি আজ ওকে ছেড়ে দিয়ে তোমার কাছে চলে এসেছি। প্লীজ আমাকে আর একটিবার সুযোগ দাও..।(অনু)

– এটা হবার নয়। আমি হয়তো এখনও তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু তোমার জন্য এখন আর সেই আগের অনুভূতি গুলো তৈরি হয় না, তোমাকে দেখার জন্য মনটা এখন চটপট করে না। সো তুমি আর আমার এই অনুভূতি হীন জীবনে এসো না..।(আমি)

অনু নিশ্চুপ হয়ে আছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ শুনলাম। কিন্তু এই কান্না আমাকে আর নরম করতে পারবে না। আমি আর কিছু না বলে চুপ থাকলাম। কিছুক্ষন পর অনু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বললো আমাকে,

– আমি আর কখনও যাবো না তোমাকে ছেড়ে প্লীজ আমাকে একটিবার সুযোগ দাও। আমি আর কখনও তোমাকে কষ্ট দেবোনা। আর আমি তোমার অনুভূতিহীন সেই হৃদয়টাই চাই। প্লীজ আমাকে ফিরে দিও না। তোমাকে ছাড়া আমি শুন্য হয়ে যাব।

ও এভাবে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলতে লাগলো আমি আর থাকতে পারছি না। ওর কথা গুলো শুনে মুহূর্তের মধ্যে ভালো লাগা কাজ করছে। সত্যি ভালোবাসার কণ্ঠস্বর কোন তুলনা হয় না।

ভালোবাসার কণ্ঠস্বরে দিয়ে আমিও ওকে বললাম তোমায় খুব ভালোবাসি। কিছু কিছু ভালোবাসা আছে যা কখনও হারায় না। বরং দিন দিন তা আরো শক্তিশালী হয়। কিছু ভালোবাসার গল্পের হ্যাপি এন্ডিং হলে ক্ষতি কী..??


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama