এ তুমি কেমন তুমি
এ তুমি কেমন তুমি
সপ্তবিংশতি অধ্যায়
ওদের তিনজনকে খাইয়ে দাইয়ে পাণ্ডেজী ওদের থানায় নিয়ে আসবেন ভেবেছিলেন; কি খেয়াল হল হঠাৎ তিনি পথ পরিবর্তন করে চললেন হাসপাতালে। ভাবলেন লাহিড়ী মশাইকে সারপ্রাইজ দেবেন - আসল সাহেবকে পাওয়া গেছে।
কিন্তু ফল হল উল্টো । লাহিড়ী মশাই কিংস্টনকে দেখে শিউরে উঠলেন। পাণ্ডেজী কিছু বলতে যাবার আগেই তিনি ভিরমি খেলেন । পাশের বেডে পৈতুণ্ডী মশাই এবং মিঃ পালের দশাও তথৈবচ । পাণ্ডেজী কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সিস্টারকে ডাকলেন । ডাক্তার বাবুও এলেন প্রায় সাথে সাথেই।
ডাক্তার বললেন - জ্ঞান হারিয়েছেন । ভয়ের কিছু নেই। আপনারা বাইরে অপেক্ষা করুন।
পৈতুণ্ডী মশাই লাফ দিয়ে উঠলেন !
- স্যার, স্যার ইনি আসল না নকল ?
মিঃ পাল বললেন - মনে হচ্ছে উনি আসলই। নকলটা তো সবসময় হাসিমুখে থাকে ; বিপদে পড়লেও ।
পাণ্ডেজী বললেন - ও মুস্কুরাহট বন্দ হো জায়েগা। লেকিন আপলোগ ঘবড়াইয়েগা নেহি লাহিড়ী মোশাইকো ভী সূচিত কর দিজিয়েগা অসলী সাহাবকা পতা লগ গয়া । ইন তিনোকো থানেমে লে জায়া রহা হ্যায় কিউঁকি উন লোগো সিকিউরিটি দেনা হ্যায় ।
ওঁরা থানায় গেলেন । মিঃ পাল এবং পৈতুণ্ডী মশাই লাহিড়ীর নিকট এসে ডাক দিলেন - রামু ! ও রামু !
রামতনু লাহিড়ী চোখ মেলে চাইলেন - আমি কি স্বপ্ন দেখছিলাম উমাদাস ?
মিঃ পাল বললেন - স্বপ্ন নয়; হকিকৎ দেখেছেন স্যার। এবার আমাদের জয় হবেই । ধুরন্ধর শয়তান এবার কাবু হবে ।
লাহিড়ীমশাই অবাক হয়ে বললেন - কি বলতে চাইছ নক্ষত্র ! মেঘ কেটে গেছে না কি ?
পৈতুণ্ডী মশাই বললেন - কতদিন আর মেঘ করে থাকবে রামু ? ঋতুচক্রে বর্ষা নেমেছিল ; এখন তা পেরিয়ে এসে শীতকাল হয়েছে ।
- আবার তুমি হেঁয়ালি করছ উমাদাস । উঃ কি বাঁচাটাই না বেঁচে গেছি । আচ্ছা কালী বা ছুটকির খবর পেয়েছ ?
মিঃ পাল বললেন - পেয়েছি কি ? ওরা তো আপনাকে দেখতে এসেছিল থানার বড়বাবুর সঙ্গে - এই তো কিছুক্ষন আগেই ।
- এসেছিল ! কিন্তু থানাম গেল কেন ?
- পাণ্ডেজী বললেন আসল সাহেবকে পাওয়া গেছে; তাঁকে নিয়েই তো তিনি আপনাকে দেখাতে এনেছিলেন। আপনি যে এমন করে আবার অজ্ঞান হয়ে যাবেন ভাবেননি ।
লাহিড়ী মশাই বললেন - তোমরা আর কোন মায়ায় জড়িয়ে যাওনি তো ? ঠিক বলছ, ওইই আসল সাহেব? তবে নকলটা গেল কোথায় ?
পৈতুণ্ডী মশাই বললেন - আরে সে তো পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সেদিন থেকে তো তার আর দেখাই নেই ।
লাহিড়ী মশাই বললেন - পুলিশ তো আসল লোককে পেয়ে গেছে কিন্তু তাকে ---
- সব হবে রামু। আগে তুমি সুস্থ হও। খবর পেয়ে তোমার মেয়েরা, তোমার ছেলে সবাই চলে এসেছে তোমার ঘরে ।
- ও । উমাদাস ! আমার কি আজ ছুটি হবে ? আর এখানে থাকতে ভালো লাগছে না ।
সিস্টার কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল । বলল - হ্যাঁ স্যার, আজ রাতেই আপনার ছুটি হয়ে যাবে । ছুটি দিয়েই দিয়েছিলেন ডাক্তারবাবু; কিন্তু ফের জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন বলে এই বেলা রেখে দিয়েছেন ।
- যাক ভালো লাগল । ও পালবাবু ! তোমরা কি চলে যাবে না আমার কাছে থাকবে ?
পৈতুণ্ডী বললেন - এমনি এমনি ছুটি নিয়ে এসেছি ? শেষ দেখব তবে যাব।
লাহিড়ী মশাই থানায় খবর দিলেন তিনি না বলা পর্য্যন্ত সাহেবকে রাঁচি পাঠাবেন না । এখন উনিই আমাদের তুরুপের তাস । শেষ চালটা দিতে দেবেন প্লীজ।
পাণ্ডেজী শুনে বললেন - লাহিড়ী সাবকো বতাইয়েগা উনকা মিশনমে অব পুলিশ ভী সামিল হো গিয়া ।
কাঁটায় কাঁটায় সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ লাহিড়ি, পৈতুণ্ডী এবং পালকে ছেড়ে দেওয়া হল ।
পাণ্ডেজী নিজে এসেছেন তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দিতে । বন্যা, অনন্যাও এসেছে । লাহিড়ী মশাই খুব খুশি। বন্যাকে বললেন - তোর রাধাগোবিন্দকে পাওয়া গেছে বনু । আমার আলমারিতে তালা মেরে রেখেছি ।
অনন্যা বলল - আগে বাড়ি চল তো ! তারপর সব কথা হবে। অনন্যার একটা কৌতূহল জেগেছিল । শ্বাপদের কামড় মানে তো গলায় দাঁত ঢুকে যাওয়া ! তার মানে কোন ক্ষতচিহ্ন থাকবে নিশ্চয় । বারবার বাবার ঘাড়ের দিকে তাকাচ্ছিল । লাহিড়ী মশাই বললেন
- কি দেখছিস মা ? ঘাড়ে কোন দাগ আছে কি না ?
অনন্যা সঙ্কুচিত হয়ে বলল - না না বাবা! দেখছিলাম ঘাড় সোজা রাখতে পারছ কি না !
- জানোয়ারে কামড়ালে দাগ হয়; পিশাচের কামড়ে রাগ হয়। এখন আমার খুব রাগ হচ্ছে মা । ওকে অনায়াসেই জব্দ করা যেত । আমাদের দুর্ভাগ্য সে পালাতে সক্ষম হয়েছে ।
রাত ন'টা নাগাদ এক ভ্যান পুলিশ নিয়ে পাণ্ডেজী মিঃ চার্লস কিংস্টন, কালীচরণ আর ছুটকিকে তাঁর ঘরে এনে দিলেন ।
- লাহিড়ীসাব ! আপনে বোলা তো সাহাবকো ছোড় নেহি দিয়া বল্কি আপকা পাস লে আয়া । আজ রাত মিল লিজিয়ে; সুবহকো রাঁচি ভেজনাহী পড়েগা । পুছিয়ে কিউঁ ?
- কেন ?
- এস পি সাহাবনে বতায়া কল উনকা ডি এন এ টেস্ট হোগা । স্লট বুকড ।
- কিন্তু আজ রাতেই যদি কিছু একটা ঘটে যায় ?
- কোই বাত নেহি। ঘট ভী সকতা হ্যায় । ইসলিয়ে পুলিশ ফোর্সকা ইন্তজাম কর দিয়া গয়া । চিন্তা কা কোই বাত নেহি। চালিশ পঁচাশ ফোর্স ছোড়কে যা রহা হুঁ। গুড নাইট।
লাহিড়ী মশাইও শুভ রাত্রি জানিয়ে পাণ্ডেজীকে বিদায় দিলেন ।
( ক্রমশ )
